৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ৬:৩৫:৩১ অপরাহ্ন


এবার লু হাওয়া বয়ে গেলো দিল্লীর ওপর দিয়ে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৯-২০২৪
এবার লু হাওয়া বয়ে গেলো দিল্লীর ওপর দিয়ে ডোনাল্ড লু ও জয়শঙ্কর


সুর বদলে গেলো বাংলাদেশে ৭১’এ মুক্তিযুদ্ধে সমর্থন দেয়া প্রতিবেশী দেশ ভারতের। বাংলাদেশে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে পশ্চিমা বিশ্বের শক্তিধর দেশ যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে পাশে দাঁড়ানোর দৃঢ় ঘোষণার পরপরই দিল্লীর সুর বদলে গেছে। ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখের গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এরপর থেকে তিনি ভারতেই অবস্থান করছেন। আর এবিষয়টি নিয়ে বর্তমানে বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যকার সম্পর্ক তলানিতে বলে বিভিন্ন গলমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়ে যাচ্ছে। এরপর থেকে এমন খবরের মধ্যে আরো যোগ দেয় নতুন আরেটি খবর। তা হলো জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠক। বিদেশী কয়েকটি গণমাধ্যমের বরাত দিয়ে প্রচার করা হয় ভারতের প্রধানমন্ত্রী ওই বৈঠকে এতটা আগ্রহী নন। আর এনিয়ে ঢাকার আকাশে বাতাসে চলে নানান ধরনের গুঞ্জন। এরই মধ্যে খবর বের হয় যে যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব দপ্তরের ডেপুটি আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল তিনদিনের সফরে ঢাকায় আসছেন। আর এ প্রতিনিধি দলে থাকছেন বহুল আলোচিত মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু। এর পাশাপাশি ইউএসএইডের এশিয়াবিষয়ক উপসহকারী প্রশাসক অঞ্জলি কৌর। তবে খবরটি এখানেই থেমে থাকেনি। কেননা বলা হয়েছিল যে তারা ওয়াশিংটন থেকে সরাসরি ঢাকা আসছেন না, দিল্লি হয়েই আসছেন তিনি। সেখানে ওয়াশিংটন-দিল্লি প্রতিরক্ষাবিষয়ক ইন্টারসেশনাল সংলাপে যৌথভাবে সভাপতিত্ব করবেন লু। তারপর প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় আসেন। 

যুক্তরাষ্ট্রের শক্ত অবস্থানের জানান

দেশের গণমাধ্যমে আশঙ্কা প্রকাশ করে কেউ কেউ পকাশ করে যে,মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবার অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে আসছে বাংলাদেশে। আসছে ভিন্ন কোনো এজেন্ডা নিয়ে। কারণ তা প্রথমেই তার পা দিল্লীতেই পড়ছে। এমনসব জল্পনা কল্পনায় ঘি ঢেলে দেয়া হয় আরেকটি খবরে। সেটি ছিল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে ঝুঁকিপূর্ণ দেশের লাল তালিকায় বাংলাদেশকে রাখা নিয়ে। গত সপ্তাহের ১১ সেপ্টেম্বর বুধবারে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের এক্স হ্যান্ডেলে প্রকাশ করা ভ্রমণ ঝুঁকিপূর্ণ দেশের তালিকায় এখনও বাংলাদেশের নাম দেখা গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়। তালিকা প্রকাশ করে দেশটি মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যস্ত এ দেশগুলো ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অবশ্য পরে সেই নির্দেশনা শিথিল করেছে দেশটি। কিন্তু তারপরেও জল্পনা-কল্পনার শেষ ছিল না। বলা হচ্ছিল মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু এবার ভারতীয় স্বার্থে, বিশেষ করে বাংলাদেশে পতিত আওয়ামী লীগ সরকার প্রসঙ্গে কিছু বক্তব্য বা তাদের অবস্থান জানাবে। কিন্তু জানা গেছে, ডোনাল্ড লু’ বা যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের পক্ষে শক্ত অবস্থানের জানান দিয়ে গেছেন। খবরে দেখা গেলো বাংলাদেশের জনগণের জন্য উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধশালী ভবিষ্যৎ গড়তে এবং সেখানে সুশাসন ও বাণিজ্য প্রসারিত করতে ২০০ মিলিয়ন ডলারের বেশি মূল্যের একটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করে ফেলে যুক্তরাষ্ট্র। সাফ জানিয়ে দেয়া হলো অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের নেওয়া নানা সংস্কার, দেশ পুনর্গঠন, অর্থনৈতিক সংকট নিরসনসহ নানা পদক্ষেপে সব ধরনের সহযোগিতায় পাশে থাকবে যুক্তরাষ্ট্র। এর পাশাপাশি সহায়তা করবে পাচার হওয়া অর্থ দেশে ফিরিয়ে আনতে। এছাড়াও যুক্তরাষ্ট্রের রাজস্ব ও অর্থ দপ্তরের আন্তর্জাতিক অর্থায়নবিষয়ক সহকারী আন্ডার সেক্রেটারি ব্রেন্ট নেইম্যানের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রতিনিধিদল অধ্যাপক ড. ইউনূসের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। বলেন, ওয়াশিংটন অন্তর্বর্তী সরকারের সংস্কার কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারলে আনন্দিত হবে। বৈঠকে মার্কিন কর্মকর্তারা জানান, ড. ইউনূস সরকারের বাস্তবায়নাধীন সংস্কার কর্মসূচিতে তারা প্রযুক্তি ও আর্থিক সহায়তা দিতে আগ্রহী। জানা গেছে ঘণ্টাব্যাপী ওই বৈঠকে আর্থিক খাতের সংস্কার, বিনিয়োগ, শ্রম পরিস্থিতি, রোহিঙ্গা সংকট এবং জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে যোগদান উপলক্ষ্যে প্রধান উপদেষ্টার আসন্ন নিউইয়র্ক সফর নিয়ে আলোচনাও হয়, যা ছিল খুবই ইতিবাচক। 

বদলে গেলো দিল্লী

জাতিসংঘের ৭৯তম সাধারণ অধিবেশনে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সাথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সঙ্গে সাইডলাইনে বৈঠকের অনিশ্চিত খবর যখন ঢাকায় তোলাপাড়, ঠিক তখনই বলা চলে দিল্লীর সুর পাল্টে গেলো। নরেন্দ্র মোদি সরকারের তৃতীয় দফার শাসনের ১০০ দিন অতিক্রান্ত উপলক্ষে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর কিছু কথা বলেছেন এনডিটিভির সঙ্গে। বলা চলে এই প্রথম বাংলাদেশের পালাবদল ও সে দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক নিয়ে সরকারের পক্ষে বিস্তারে কেউ মতামত জানালেন।

কি বললেন জয়শঙ্কর?

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে দেখা যায় ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর বলেছেন, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক ঘটনাবলি সে দেশের ‘অভ্যন্তরীণ বিষয়’। তা নিয়ে কোনো মন্তব্য করা সমীচীন নয়। কিন্তু প্রতিবেশী হিসেবে সে দেশের সঙ্গে স্থিতিশীল সম্পর্ক অব্যাহত রাখতে ভারত আগ্রহী। সম্পর্ককে ভারত আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে চায়। জয়শঙ্কর আরো বলেন, ‘প্রতিবেশীরা একে অন্যের সঙ্গে জুড়ে থাকে। বাংলাদেশের সঙ্গে আমাদের ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্পর্ক রয়েছে। মানুষের সঙ্গে মানুষের ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ রয়েছে। এই সম্পর্ক ও যোগাযোগ আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে আমরা আগ্রহী।’

লু’র লু হাওয়া বয়ে গেলো দিল্লীর ওপর দিয়ে

ছাত্র-জনতার তুমুল আন্দোলনের মুখের গত ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে শেখ হাসিনা ভারতে পালাতে বাধ্য হন। এখন বলা চলে সেখানে দেশটির আশ্রয়েই আছেন তিনি। তার সেখানে অবস্থানের পাশাপাশি তার পক্ষ থেকে বিভিন্ন ধরনের রাজনৈতিক বক্তব্য বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে একধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে। সবার মধ্যে প্রশ্ন দেখা দেয় কি হচ্ছে? কি হবে? দিল্লীতে বসে বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী কি কূটকৌশল করে? আবার এর পাশাপাশি ভারতেরই বা কি ভূমিকা হয়? আর তা নিয়ে জল্পনা কল্পনার মাঝেই ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের এমন বক্তব্য নিয়ে কূটনৈতিক পাড়ায় নানান ধরনের মন্তব্য করছেন কেউ কেউ। কারো কারো মতে, মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়াবিষয়ক অ্যাসিস্ট্যান্ট সেক্রেটারি ডোনাল্ড লু’র লু হাওয়া এবার বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ওপর বয়ে যায়নি। বরং এই লু হাওয়া বয়ে গেছে দিল্লীর ওপর দিয়ে। আর এতে করেই দিল্লী পাল্টিয়েছে সুর., হয়েছে নরম।

উল্লেখ্য, মার্কিন সহকারী পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডোনাল্ড লু তার দেশের হয়ে দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ক দায়িত্ব পালন করছেন। লু-কে নিয়ে আলোচনার শুরু পাকিস্তানে ইমরান খানের পতনের সময়। ইমরান খান দাবি করেন, ২০২২ সালে তার সরকার পতনের পেছনে যুক্তরাষ্ট্রের হাত আছে। অবশ্য ইমরান খানকে ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের জড়িত থাকার অভিযোগ পরে অস্বীকার করেছেন ডোনাল্ড লু।

শেয়ার করুন