গত কয়েক বছরে দক্ষিণ সীমান্ত দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসনের চেষ্টা করা মানুষের সংখ্যা রেকর্ড স্তরে পৌঁছেছে। অভিবাসী শ্রমিকরা দেশের অর্থনীতিতে অপরিহার্য হলেও দুই প্রেসিডেন্ট প্রার্থীর মধ্যে এ ইস্যু নিয়ে তীব্র বিতর্ক চলছে। যুক্তরাষ্ট্রের কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশনের নতুন তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের তুলনায় এ বছরের আগস্ট মাসে সীমান্তের নির্দিষ্ট পয়েন্টের বাইরে অভিবাসীদের মুখোমুখি হওয়ার হার ৬৮ শতাংশ কমেছে। কাস্টমস এবং বর্ডার প্রোটেকশনের এক কর্মকর্তা বলেন, এ হ্রাস সীমান্ত পরিস্থিতি আরো নিয়ন্ত্রণযোগ্য করে তুলেছে।
কিন্তু এ অগ্রগতি সত্ত্বেও সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের নীতির কঠোর সমালোচনা করেছেন এবং পুনর্নির্বাচিত হলে সেগুলো বাতিল করার ঘোষণা দিয়েছেন। ডোনাল্ড ট্রাম্প উইসকনসিনের মিলওয়াকিতে অনুষ্ঠিত রিপাবলিকান ন্যাশনাল কনভেনশনে বলেন, ‘আমি এসব খুনি এবং অপরাধীদের আমাদের দেশে ঢুকতে দেবো না। রিপাবলিকান প্ল্যাটফর্ম আমাদের দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় নির্বাসন অভিযান চালানোর ঘোষণা দিয়েছে।’
সম্প্রতি প্রকাশিত স্ক্রিপস নিউজ/ইপসোস জরিপ অনুযায়ী, বেশির ভাগ আমেরিকান ব্যাপক ডিপোর্টেশনের পক্ষে। তবে অলাভজনক সংস্থা গ্লোবাল রিফিউজি বলেছে, অতীতের অনুরূপ প্রচেষ্টা ভয়াবহ ছিল। গ্লোবাল রিফিউজির প্রেসিডেন্ট এবং সিইও কৃষ ও’মারা ভিগনারাজা বলেন, ‘আপনি দেখেছেন, মার্কিন নাগরিকদের ভুল করে আটক করা এবং নির্বাসন করা হয়েছে। তাদের পরিবারগুলো বিচ্ছিন্ন হয়ে সম্পূর্ণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এছাড়াও নীল কলার বা শ্রমজীবী নিয়োগকারীরা হাজার হাজার কর্মী হারাবে। রক্ষণশীলরা বলছে, এর সমাধান হলো কাজের ভিসার প্রসার ঘটানো।
হেরিটেজ ফাউন্ডেশনের বর্ডার সিকিউরিটি এবং ইমিগ্রেশন সেন্টারের সিনিয়র রিসার্চ ফেলো সাইমন হ্যানকিনসন বলেন, আমি যা মনে করি তাহলো দেশের সংস্কৃতির জন্য সত্যিই ক্ষতিকর যদি আইন অমান্য করে অভিবাসন চলতে থাকে। অবৈধ অভিবাসন না থাকলে খাবার রান্না হবে না, লন পরিষ্কার হবে না। এটা বলতে গেলে তা আইনের বাইরের কাজ করে যাচ্ছে।
ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী ভাইস প্রেসিডেন্ট কমলা হ্যারিস যদি নির্বাচিত হন তিনি দ্বিপক্ষীয় সিনেট বিলটি পুনরুজ্জীবিত করতে এবং সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে একটি চুক্তি সই করতে চান। এই দ্বিপক্ষীয় বিলটি এক দশকেরও বেশি সময়ের মধ্যে প্রথম গুরুত্বপূর্ণ ইমিগ্রেশন সংস্কারের প্রচেষ্টা ছিল। শিকাগোতে ডেমোক্রেটিক ন্যাশনাল কনভেনশনে কমলা হ্যারিস বলেন, ‘বর্ডার পেট্রোল এটিকে অনুমোদন করেছিল। কিন্তু ডোনাল্ড ট্রাম্প বিশ্বাস করেন যে, একটি সীমান্ত চুক্তি তার প্রচারণায় ক্ষতি করবে। তাই ডোনাল্ড ট্রাম্প তার কংগ্রেসের মিত্রদের এ চুক্তি বাতিল করার নির্দেশ দিয়েছিলেন। আমি আমাদের নিরাপত্তার সঙ্গে রাজনীতি খেলতে চাই না।’ ইমিগ্রেশন ইস্যুতে এখনো কোনো নির্দিষ্ট নীতি প্ল্যাটফর্ম ঘোষণা করেননি ডেমোক্রেটিক প্রেসিডেন্ট প্রার্থী কমলা হ্যারিস। প্রচারাভিযানের বিভিন্ন ইভেন্টে তিনি বেশির ভাগ সময়ে দ্বিপক্ষীয় সীমান্ত নিরাপত্তা চুক্তির কথা উল্লেখ করেছেন, যা এ বছরের শুরুতে কংগ্রেসে ধসে পড়ে, বিশেষ করে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের রিপাবলিকান আইনপ্রণেতাদের কাছে চুক্তিটি প্রত্যাখ্যান করার আহ্বানের পর। হ্যারিস প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন যে, তিনি এ বিলটি পুনরুজ্জীবিত করবেন এবং অভিযোগ করেছেন যে, ট্রাম্প রাজনৈতিক কারণে এটি ব্যর্থ করেছেন।
এ প্রস্তাবিত আইনটি স্থায়ীভাবে আশ্রয়-সংক্রান্ত বিধিনিষেধ আরোপ করতো, প্রেসিডেন্টকে দ্রুত অভিবাসীদের নির্বাসনের ক্ষমতা প্রদান করতো, যখন সীমান্ত অতিক্রমের হার বৃদ্ধি পেতো এবং সীমান্তরক্ষী, নির্বাসন কর্মকর্তাদের সংখ্যা, ইমিগ্রেশন বিচারক এবং আশ্রয় আবেদনকারীদের পর্যালোচনাকারীর সংখ্যা বাড়ানোর পদক্ষেপ নিতো। এটি বৈধ অভিবাসনের পথও প্রসারিত করতো, যখানে প্রতি বছর পাঁচ বছরের জন্য ৫০ হাজার নতুন অভিবাসী ভিসা বরাদ্দ করা হতো। হ্যারিসের প্রচারণা ব্যবস্থাপক জুলি শাভেজ রদ্রিগেজ ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, হ্যারিস সম্ভবত প্রেসিডেন্ট বাইডেনের সেই জুন মাসের আদেশটি অব্যাহত রাখবেন। আদেশটি মার্কিন আশ্রয়প্রাপ্তির প্রবেশাধিকারের ওপর কঠোর নিয়ন্ত্রণ আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপের ফলে অবৈধ সীমান্ত অতিক্রমের হার চার বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম পর্যায়ে নেমে এসেছে। প্রেসিডেন্ট বাইডেনের কর্মকর্তারা একে সফল হিসেবে দেখছেন।
ট্রাম্প এবং তার মিত্রদের পরিকল্পনা : সামরিকীকৃত গণনির্বাসন ও আটক শিবির
সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং তার মিত্ররা নতুন করে একটি পরিকল্পনা নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছেন, যেখানে সামরিক শক্তি ব্যবহার করে অভিবাসীদের গণনির্বাসন এবং আটক শিবির স্থাপন করার প্রস্তাব নিয়ে কথা বলেছেন। যদিও বর্তমান ও সাবেক কর্মকর্তারা এ ধরনের প্রচেষ্টাকে অবাস্তব এবং বিপজ্জনক বলে সতর্ক করেছেন। অনেক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক কর্মকর্তারা সতর্ক করেছেন যে, এ ধরনের পদক্ষেপ বিপজ্জনক এবং অনৈতিক হতে পারে। গণনির্বাসন এবং সামরিক শক্তি ব্যবহার করলে যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের আইনি এবং মানবিক নীতিমালার লঙ্ঘন হতে পারে। তবুও ট্রাম্প তার সমর্থকদের মধ্যে অভিবাসন ইস্যুতে কড়া অবস্থানের কারণে জনপ্রিয়তা অর্জন করছেন এবং ২০২৪ সালের নির্বাচনে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু হতে চলেছে। গত সপ্তাহে মনমাউথ ইউনিভার্সিটির একটি জরিপে দেখা গেছে, বেশির ভাগ ভোটার ট্রাম্পের চেয়ে হ্যারিসকে ইমিগ্রেশন ইস্যুতে বেশি বিশ্বাস করে।