৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৯:৪৯:৪৯ অপরাহ্ন


পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৬-১১-২০২৪
পরিবেশদূষণ নিয়ন্ত্রণে সমন্বিত উদ্যোগ জরুরি


বৈশিক দূষণের জন্য দায়ী না হলেও বাংলাদেশ কিন্তু বৈশ্বিক দূষণের প্রধান শিকার। এছাড়া জনসচেতনতার অভাব, অসুস্থ মানসিকতা এবং ধারণক্ষমতার অনেক বেশি জনসংখ্যা নিয়ে ঢাকা মহানগরী পৃথিবীর অন্যতম প্রধান দূষিত শহরগুলোর অন্যতম। আছে বায়ুদূষণ, শব্দদূষণ, যানজট, জলজটের শহর ঢাকা। ছাত্র-জনতার মহান আন্দোলন শেষে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এখন সুবর্ণ সুযোগ এসেছে তরুণ সমাজ, যুবশক্তিকে কাজে লাগিয়ে জনগণকে পরিবেশ সচেতন করা। 

খাল-বিল, ঝোপ-জঙ্গল পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন করে পরিবেশ দূষণমুক্ত মহানগরী গড়ে তোলা। দেখলাম, পরিবেশ উপদেষ্টা ইতিমধ্যে পলিথিন ব্যবহার নিষিদ্ধকরণ, খাল-বিল পরিষ্কার করার মতো কিছু শুভ উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন। এই কাজগুলো তদারকি করার কাজে সারা দেশে অঞ্চলভিত্তিক পরিকল্পনা করে যুবসমাজকে কাজে লাগানো যায়। পরিবেশ পরিচ্ছন্ন থাকলে নির্মল আলো-বাতাসে নাগরিকদের সুস্থ জীবনযাপন নিশ্চিত হবে। ডেঙ্গু, ডায়রিয়ার মতো সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণে আসবে। কোমল শিশু-কিশোররা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছে ওরা কতটুকু সমাজ সচেতন।

বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার পরিকল্পিতভাবে নিয়ন্ত্রণ। সড়ক যানজন নিয়ন্ত্রণ করে ধীরে ধীরে সড়কে ডিজেল ব্যবহার সংকুচিত করে ধীরে ধীরে বিদ্যুৎচালিত পরিবহনের দিকে যেতে পারে দেশ। ঢাকা মহানগরীর চারপাশে চারটি নদী, ঢাকার মধ্যে প্রবহমান খালগুলো দখল-দূষণমুক্ত করে জলযান চলাচলের জন্য উপযোগী করা হলে এমনিতেই পরিবেশ দূষণকারী যানবাহন কমে আসবে। তবে এ বিষয়ে সব অংশীজনকে সম্পৃক্ত করে একটি সামাজিক আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। আপাতদৃষ্টিতে বিষয়টি দুরূহ হলেও অসম্ভব নয়। এসব কাজেও ছাত্রশক্তির সৃজনশীলতা ব্যবহার করা যেতে পারে।

দূষণ নিয়ন্ত্রণের অন্যতম প্রধান কাজ ঢাকার চারপাশে চালু পরিবেশ দূষণকারী ইটভাটা বন্ধ করা এবং দেশে ইটের ব্যবহার সীমিত করে ব্লক বা অন্যান্য বিকল্প নির্মাণ উপকরণ ব্যবহার নিশ্চিত করা। সরকার পলিথিন নিয়ন্ত্রণ করার কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। পলিথিন ব্যবহার সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হলে সুলভ মূল্যে বিকল্প ব্যাগের সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে। দেখতে হবে এ কার্যক্রম যেন চিরাচরিত লোক দেখানো কার্যক্রমে পরিণত না হয়। পলিথিন ব্যবহার বন্ধ হলে জলপথ দূষণ নিয়ন্ত্রিত হবে, জলজট থেকে নগরগুলো মুক্তি পাবে।

ঢাকার অধিকাংশ বহুতল ভবন এবং ঢাকার উপকণ্ঠে থাকা শিল্পকারখানাগুলো ছাদে সৌরবিদ্যুৎ উৎপাদনব্যবস্থা করা গেলে গ্রিড বিদ্যুৎ ব্যবহার এবং এর মাধ্যমে জীবাশ্ম জ্বালানিভিত্তিক বিদ্যুৎ ব্যবহার কমিয়ে আনা যাবে।

আরেকটি প্রধান সমস্যা পুরোনো শতছিন্ন গ্যাস বিতরণ নেটওয়ার্ক থেকে অনিয়ন্ত্রিত মিথেন গ্যাস নিঃসারণ। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে হয় লাইনগুলো প্রতিস্থাপন করতে হবে অথবা বন্ধ করে দিতে হবে। নতুন বিতরণ লাইন নির্মিত হলে ডিজিটাল ম্যাপিং, জিআইএস নিশ্চিত করতে হবে।

মনে রাখতে হবে, এসব কাজে জনসচেতনতার বিকল্প নেই। সবাই সবার স্থান থেকে সচেতন হয়ে দেশের স্বার্থে সহায়তা করলে পরিচ্ছন্ন পরিবেশ নিশ্চিত হবে। আগামী প্রজন্ম সুন্দর, নির্মল পরিবেশে জীবনযাপনের সুযোগ পাবে। সব কথার শেষ কথা সমন্বিত উদ্যোগ।

শেয়ার করুন