একবছরের ব্যবধানে বর্তমান তরুণ প্রজন্মের সহিংস আন্দোলনে ধসে পড়েছে দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ নেপালের কথিত স্বৈরশাসন। দুদেশের সরকার প্রবল গণআন্দোলনে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে দেশ ছেড়ে পালিয়ে প্রাণরক্ষা করেছে। বাংলাদেশের মন্ত্রী-সাংসদদের বিশাল অংশ দেশত্যাগ করে বিভিন্ন দেশে অংশ নিয়েছে। নেপালের অনেক মন্ত্রী জনতার হাতে নাজেহাল হয়েছে। বাংলাদেশের শাসক দলের অনেকে কারাগারে বন্দি হয়ে বিচারের মুখোমুখি। বাংলাদেশে নোবেল লরিয়েট সামাজিক ব্যবসার প্রণেতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্র্বর্তী সরকার এক বছরের বেশি সময় যাবৎ তথাকথিত গণহত্যার বিচার, ব্যাপক সংস্কার পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং নির্বাচন নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে। সরকার প্রধান ফেব্রুয়ারি ২০২৬ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা দিলেও নির্বাচনের পথনকশা ঘোষিত হয়নি। অন্যদিকে নেপালে অন্তর্বর্তী সরকারপ্রধান দায়িত্ব নিয়েই মার্চ ২০২৬ নতুন নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছে।
দুটি ক্ষেত্রেই ব্যাপক দুর্নীতি এবং অপশাসনের জন্য জনমনে সৃষ্ট গভীর ক্ষোভের কারণে আন্দোলনের সময় ব্যাপক ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ এবং ধ্বংসযজ্ঞ হয়েছে। নেপালের অন্তর্বর্তী সরকার এগুলোকে অপরাধ বিবেচনা করে আইন অনুযায়ী বিচারের ঘোষণা দিয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকার মব সন্ত্রাস এবং আন্দোলনকালে পুলিশ হত্যা, গণভবনসহ নানা সরকারি স্থাপনায় ভাঙচুরের ঘটনায় দায়ীদের বিচারের বাইরে রেখে ইনডেমনিটি ঘোষণা করেছে। নেপালে আন্দোলনকারীরা নতুন সরকারের অংশীদার না হয়ে যার যার পেশায় ফিরে গাছে। অথচ বাংলাদেশে ছাত্রদের একটি অংশ সরকারের অংশীদার হয়েছে। ওপর অংশ রাজনৈতিক দল গঠন করে সরকারি প্রণোদনায় কার্যক্রম চালু রেখেছে। আন্দোলনের সুবিধাবাদী একটি গোষ্ঠী দেশব্যাপী ব্যাপক চাঁদাবাজি, দখলদারিত্বে দেশব্যাপী ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি করেছে। দেশের গৌরব মুক্তিযুদ্ধকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে, জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান মুক্তিযোদ্ধাদের অপমান অপদস্ত করছে। ১৯৭২ সংবিধান বাতিল তথা স্বাধীনতার মূলমন্ত্র মুছে ফেলার দাবি জানাচ্ছে। নেপালে কিন্তু এমন কিছুই হয়নি। আন্দোলনকারীদের চাপে সরকার নিরপেক্ষ বিচার না করেই শাসক দল তথা স্বাধীনতা আন্দোলনে নেতৃত্বদানকারী রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং অঙ্গ প্রতিষ্ঠানসমূহের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে। নির্বাচন কমিশন তাদের অনুমোদন স্থগিত করেছে। রাজনৈতিক নেতা, সরকারি কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ অনেক মানুষের বিরুদ্ধে হয়েছে। নেপালে কিন্তু এমন কিছু হয়নি।
এখন প্রশ্ন-হলো বাংলাদেশ এবং নেপাল দুটি দক্ষিণ এশিয়ার দেশ। বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ এবং নেপাল বিশ্বের একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র। দুটি দেশ সার্ক সদস্য। অনেক ক্ষেত্রে ব্যাপক মিল এবং বেশ কিছু অমিল আছে। তবে গণআন্দোলনে একই ঢঙে সরকার পরিবর্তনের পর পরিস্থিতির ভিন্ন মাত্রার জন্য নেপথ্যে লুকিয়ে থাকা নানা কারণ দায়ী। দুটি দেশের ওপর প্রতিবেশী ভারতের ব্যাপক প্রভাব ছিল, আছে, থাকবে। নেপালের উপর আবার চীনের প্রভাব আছে। বাংলাদেশ নিয়ে অবশ্য ভারত, চীন, রাশিয়া, জাপান, কোরিয়ার পাশাপাশি ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের গভীর আগ্রহ রয়েছে।
দেখতে হবে দুদেশের অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতি মতো নির্দিষ্ট সময়ে অবাধ, নিরপেক্ষ। অংশগ্রহমূলক নির্বাচন করতে পারে কি না? সরকার দুটি দেশে সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে সত্যিকারের প্রতিনিধিত্বমূলক সরকার প্রতিষ্ঠা করতে না পারলে কোন মৌলিক সংস্কার হবে না। দেশ দুটির অর্থনীতি ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে, বিনিয়োগের অভাবে প্রবৃদ্ধি সংকুচিত হয়ে অগ্রগতি ব্যাহত হবে।