বিশ্বব্যাপী চলমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও মানবিক সংকটের প্রেক্ষাপটে ২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য মোট ২ মিলিয়নেরও বেশি আবেদন জমা পড়েছে। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ব্যবস্থার ওপর ব্যাপক চাপ সৃষ্টি হয়েছে। ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশন এর দেয়া ডাটা অনুসারে ২০২৩ সালে বাংলাদেশ থেকে ৩ হাজার ৭৩৫ জন নাগরিক যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছেন। এর মধ্যে ২ হাজার ১২১ জনের আবেদন পর্যালোচনা করা হয়েছে, যার মধ্যে ৮৯৯ জনের আবেদন মঞ্জুর হয়েছে এবং ২৯৯ জনের আবেদন প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। এর মানে, গৃহীত আবেদনের হার প্রায় ৭৫ শতাংশ। বাকি ১ হাজার ৬১৪টি আবেদন বর্তমানে প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
বিশ্বজুড়ে আশ্রয় প্রার্থীদের প্রবণতা
২০২৩ সালে যুক্তরাষ্ট্রে সবচেয়ে বেশি আশ্রয় আবেদন জমা পড়েছে ভেনেজুয়েলা থেকে প্রায় ৩ লাখ ৭০ হাজার। এরপরেই গুয়াতেমালা, এল সালভাদর, এবং হন্ডুরাস থেকে যথাক্রমে ৩ লাখ ৩৬ হাজার, ৩ লাখ ৩২ হাজার এবং ২ লাখ ৪২ হাজার আবেদন জমা পড়েছে। এসব দেশের নাগরিকরা মূলত তাদের নিজ দেশে চলমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক সংকটের কারণে আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে আবেদন করেছেন। চীন থেকেও প্রায় ১ লাখ ৫ হাজার আবেদন জমা পড়েছে, যা দেশটির সরকারের কঠোর নীতির পরিপ্রেক্ষিতে বেড়েছে। আফগানিস্তান (৮০,০০০), রাশিয়া (৭৩,০০০), ইউক্রেন (৬৬,০০০), কিউবা (৬৫,০০০) এবং ভারত (৫৫,০০০) থেকেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আবেদন জমা পড়েছে।
আশ্রয় প্রক্রিয়া : আফারমেটিভ বনাম ডিফেন্সিভ
যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় প্রক্রিয়া দুটি মূল ধাপ-আফারমেটিভ এবং ডিফেন্সিভ মাধ্যমে পরিচালিত হয়। আফারমেটিভ প্রক্রিয়ায়, সেসব ব্যক্তি আবেদন করেন, যারা যুক্তরাষ্ট্রে বৈধভাবে প্রবেশ করেছেন বা ভিসার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আবেদন করেছেন। অন্যদিকে ডিফেন্সিভ প্রক্রিয়া সাধারণত তাদের জন্য যারা অবৈধভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছেন বা যারা অপসারণ প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছেন। এই দুটি প্রক্রিয়া দীর্ঘসময় ধরে চলতে থাকে, ফলে বর্তমানে প্রায় ২ মিলিয়ন কেস প্রক্রিয়াধীন রয়েছে, যা যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ব্যবস্থার জন্য একটি বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করেছে।
আশ্রয় আবেদন ও প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জ
২০২৩ সালে আশ্রয় আবেদনকারীদের সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ব্যবস্থায় বড় চাপ পড়েছে। নতুন আগমনকারীদের ভিড়ে অভিবাসন আদালত এবং আশ্রয় অফিসগুলো সেবা প্রদান করতে পারছে না। বাইডেন প্রশাসন নতুন সীমান্ত ব্যবস্থাপনা প্রবর্তন করলেও, নতুন আগমনকারীদের সংখ্যার কারণে ২০২৩ অর্থবছরে ২ মিলিয়নেরও বেশি কেসের ব্যাকলগ তৈরি হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র দীর্ঘদিন ধরে শরণার্থীদের আশ্রয় প্রদান করে আসছে, তবে ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে স্থানচ্যুতির পরিপ্রেক্ষিতে নতুন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। বাইডেন প্রশাসন অভিবাসন প্রক্রিয়া আধুনিকীকরণে মনোনিবেশ করছে এবং সীমান্তে অতিরিক্ত চাপ কমানোর জন্য নতুন প্রোগ্রাম চালু করেছে। তবে, এই পদক্ষেপগুলো সত্ত্বেও, কংগ্রেসের অংশগ্রহণ ছাড়া স্থায়ী পরিবর্তন সম্ভব নয়।
যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য ২০২৩ সাল ছিল একটি চ্যালেঞ্জিং বছর। বিশ্বব্যাপী বিভিন্ন দেশের নাগরিকরা আশ্রয়ের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের দিকে তাকিয়ে, আশ্রয় প্রক্রিয়া দীর্ঘ এবং জটিল হয়ে উঠেছে। বাংলাদেশের জন্য ৭৫ শতাংশ আবেদন গৃহীত হওয়া সত্ত্বেও যুক্তরাষ্ট্রের আশ্রয় ব্যবস্থার সংকট এবং প্রশাসনিক চ্যালেঞ্জগুলো আরো সমাধান প্রয়োজন।