০২ অক্টোবর ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ১০:৩২:৫৬ অপরাহ্ন


এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার
চালু হলো ১০ লাখ ডলারের গোল্ডকার্ড
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০৯-২০২৫
চালু হলো ১০ লাখ ডলারের গোল্ডকার্ড এইচ-১বি ভিসা


মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গত ১৯ সেপ্টেম্বর এক নির্বাহী আদেশে এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার ফি আরোপ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ১০ লাখ ডলারের ‘গোল্ডকার্ড’ ভিসা চালু করেছেন। এ গোল্ডকার্ড ভিসা ধনী বিদেশি নাগরিকদের জন্য দ্রুত মার্কিন নাগরিকত্বের পথ হিসেবে কাজ করবে। প্রশাসন জানিয়েছে, এ পদক্ষেপের মাধ্যমে বিদেশি দক্ষ কর্মীদের নিয়োগের খরচ বাড়ানো এবং মার্কিন কর্মীদের জন্য আরো কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা হবে। তবে সমালোচকরা বলছেন, ট্রাম্প একপাক্ষিকভাবে নীতি গ্রহণ করছেন এবং কংগ্রেসকে এড়িয়ে যাওয়ায় এটি আইনগত চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হতে পারে।

নতুন নীতির ফলে এইচ-১বি ভিসার ফি ২১৫ ডলার থেকে ১ লাখ ডলারে বৃদ্ধি পাবে। বিনিয়োগকারী ভিসার ফি, যা ইউরোপের অনেক দেশে প্রচলিত, বছরে ১০ হাজার থেকে ২০ হাজার ডলার পর্যন্ত বাড়বে। এইচ-১বি ভিসা সাধারণত প্রযুক্তি খাতে উচ্চ-দক্ষকর্মীদের নিয়োগের জন্য ব্যবহৃত হয় এবং অন্তত ব্যাচেলর ডিগ্রির প্রয়োজন হয়। সমালোচকরা বলছেন, এ প্রোগ্রাম প্রায়শই কম বেতনে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগের মাধ্যমে মার্কিন কর্মীদের প্রতিস্থাপন করে।

ট্রাম্প শুক্রবার নিশ্চিত করেছেন, প্রযুক্তি শিল্প এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করবে না। কমার্স সেক্রেটারি হাওয়ার্ড লুটনিক বলেছেন, সব বড় কোম্পানি এই পরিবর্তনের সঙ্গে একমত। তবে অ্যামাজন, অ্যাপল, গুগল, মেটা এবং মাইক্রোসফটের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি। লুটনিক আরো জানিয়েছেন, নতুন ফি প্রবর্তনের ফলে এইচ-১বি ভিসার সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমে যেতে পারে। তিনি বলেন, যদি আপনি মানুষকে প্রশিক্ষণ দিতে চান, তাহলে প্রথমে আমেরিকানদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে। কিন্তু যদি আপনি অত্যন্ত দক্ষ একজন প্রকৌশলী আনতে চান, তাহলে ১ লাখ ডলার বার্ষিক দিতে হবে। ট্রাম্প আরো ঘোষণা করেন, বিদেশিরা ১০ লাখ ডলারের বিনিময়ে গোল্ডকার্ড ভিসা পেতে পারবেন। কোম্পানি স্পন্সর করলে খরচ দাঁড়াবে ২০ লাখ ডলার। এছাড়া ট্রাম্প প্লাটিনাম কার্ড নামে ৫০ লাখ ডলারের নতুন ভিসা চালু হবে, যা বিদেশিকে বছরে ২৭০ দিন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে থাকার অনুমতি দেবে এবং বিদেশি আয়ের ওপর কর থেকে অব্যাহতি দেবে। এ প্লাটিনাম কার্ড বিদ্যমান বিনিয়োগকারী ভিসার পরিবর্তে প্রবর্তিত হবে।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, এইচ-১বি ভিসা প্রায়শই নবীন পর্যায়ের কাজের জন্য ব্যবহৃত হয়, যেখানে প্রকৃত দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও কোম্পানিগুলো কম মজুরি দিয়ে বিদেশি শ্রমিক নিয়োগ করে। ফলে অনেক মার্কিন কোম্পানি হেল্পডেস্ক, প্রোগ্রামিং ও অন্যান্য সাধারণ কাজ আউটসোর্সিং করে ভারতীয় বা মার্কিন কনসালটিং প্রতিষ্ঠান থেকে কর্মী নেয়। প্রথম লেডি মেলানিয়া ট্রাম্পও ১৯৯৬ সালে এইচ-১বি ভিসা পেয়েছিলেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ নতুন নীতি প্রযুক্তি খাত এবং উচ্চ-দক্ষ বিদেশি শ্রমিকদের নিয়োগে দীর্ঘমেয়াদে বড় প্রভাব ফেলবে। মার্কিন সরকারের লক্ষ্য দেশীয় শ্রমিকদের প্রাধান্য দিয়ে অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ করা হলেও আন্তর্জাতিক ব্যবসায়িক সম্পর্ক ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার ওপর এর প্রভাবও বিবেচনা করতে হবে।

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন নির্বাহী আদেশ অনুযায়ী এইচ-১বি ভিসার জন্য বার্ষিক ১ লাখ ডলার ফি আরোপ এবং ১০ লাখ ডলারের গোল্ডকার্ড ভিসা চালু হওয়ার ফলে ভারতের নাগরিকদের ওপর বড় প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। প্রতি বছর ভারতের নাগরিকরা এইচ-১বি ভিসার ৭০ শতাংশের বেশি সুবিধা পান, বিশেষ করে তথ্যপ্রযুক্তি খাতে। নতুন ফি বৃদ্ধির কারণে ভারতীয় উচ্চ-দক্ষ কর্মীদের জন্য ভিসা পাওয়া আরও কঠিন হয়ে যাবে। ছোট ও মাঝারি প্রযুক্তি কোম্পানিগুলো, যেগুলো ভারতীয় আইটি পেশাজীবীদের ওপর নির্ভর করে, তারা ব্যয় বৃদ্ধির কারণে এইচ-১বি স্পন্সর করা কমিয়ে দিতে পারে বা বন্ধ করতে পারে। ফলে আইটি সেক্টরে কাজ করতে আগ্রহী ভারতীয়দের সুযোগ কমে যাবে। উপরন্তু বড় কোম্পানিগুলো এখন ১ লাখ ডলার বার্ষিক খরচ বহন করতে প্রস্তুত শুধু অত্যন্ত দক্ষ বা বিশেষজ্ঞ কর্মীদের নিয়োগের জন্য। ফলে অনেক ভারতীয় আইটি পেশাজীবী, যারা সাধারণ বেতনে কাজ করতে আগ্রহী, তারা এই সুযোগ হারাবেন। নতুন ভিসা নীতি ভারতের উচ্চ-দক্ষকর্মীদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হিসেবে দাঁড়াবে।

শেয়ার করুন