৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:৪৪:২৯ অপরাহ্ন


জুলাইয়ের অর্জন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না
নতুন ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৫-০১-২০২৫
নতুন ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস


উত্থান-পতন! চিরদিনের এক রীতি। দিন কারোরই সমান যায় না। সময়ের পরিবর্তনে পরিস্থিতি বদলায়। পরিস্থিতি প্রেক্ষাপট পাল্টে দেয়। সকালের রাজা বিকালে রাস্তার ফকির হয়ে যেতে পারে। যুগে যুগে এটি হয়ে আসছে। ইতিহাস তাই বলে। কিন্তু ইতিহাস শেখায় ‘ইতিহাস থেকে কেউ শিক্ষা নেয় না’। বাংলাদেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এখন যারা নিজেদের রাজা মহারাজা ভেবে অকাতরে উপদেশ বিলিয়ে যাচ্ছেন তাদেরও কিন্তু ভাবা উচিত একসময় পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তাদের কিন্তু ইতিহাসের আস্তাকুঁড়ে নিক্ষিপ্ত হয়ে ধিকৃত হয়ে যেতে পারে। 

কিছু মানুষ বাংলাদেশ স্বাধীনতা সংগ্রামের ইতিহাস, নেতা নেত্রীদের চরিত্র বিকৃতির নেশায় মেতে উঠেছে। নিজেদের চেহারা, নিজেদের অবদান বিবেচনায় না নিয়েই নিজেদের আঙ্গিকে নতুন ইতিহাস রচনা করে তরুণদের বিভ্রান্ত করার অপচেষ্টা করছে। সবাই না জানলেও এই ক্ষুদ্র দেশে অনেক মানুষ কিন্তু অধিকাংশ মানুষের অতীত বিষয়ে অবহিত। মনেও রেখেছেন। তাই পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে কারোই এমন কিছু করা বা বলা উচিত না যার পরিণতিতে পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে যা তার সর্বনাশ ডেকে আনতে পারে।

এটা দিবালোকের মতো সত্য যে, বাংলাদেশ কারো দয়ার দান না। লাখো মানুষের জীবনের বিনিময়ে যুদ্ধ করে জয়ী একটি জাতি, কিন্তু এক শাসকের হাত থেকে মুক্তি অর্জন করে ভিন্ন শাসকের দাসত্ব করতে পারে না। বাংলাদেশের মুক্তিকামী মানুষ কিন্তু সুযোগের অপেক্ষায় ছিল। সময়মতো হুংকার দিয়েছে। আর তাই স্বাধীনতা অর্জনের ৫৩ বছর পরে ছাত্র-জনতার আন্দোলনে একটি পরাশক্তি নির্ভর কর্তৃত্ববাদী শাসন থেকে মুক্ত হয়েছে দেশ। কিন্তু কায়েমী স্বার্থবাদী শক্তির ষড়যন্ত্রে নতুন করে অর্জিত মুক্তির মাধ্যমে উন্নয়নের সম্ভাবনা কাঁটা মুক্ত হতে পারছে না। কিছু মানুষের ক্ষমতার লোভ, প্রতিষ্ঠিত সত্যকে অস্বীকার করে কিছু মানুষের নিজেদের মতো ইতিহাস রচনার অপচেষ্টার কারণে ছাত্র-জনতাকে মহাসড়কে অবস্থান করে আন্দোলন করতে হচ্ছে। ছাত্র-জনতা কিন্তু মৌলিক পরিবর্তন চায়। কিন্তু তাদের চাহিদারও সীমা পরিসীমা থাকা উচিত। দুর্নীতিবাজ, লুটেরারা রয়ে যাচ্ছে আড়ালে, হত্যাকাণ্ডের বিচার প্রক্রিয়া বিলম্বিত হচ্ছে। পুরোনো সিন্ডিকেটের স্থান নিয়েছে নতুন লুটেরা বাহিনী। এহেন অবস্থায় নন ইস্যুগুলোকে ইস্যু বানিয়ে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বিলম্বিত করা হচ্ছে। সরকারের পক্ষে পরিস্থিতি সামাল দেওয়া দুরূহ হয়ে পড়ছে।

মনে রাখতে হবে, বর্তমান সরকার কিন্তু সংবিধানের আওতায় শপথ নেওয়া একটি অনির্বাচিত সরকার। এদের কিন্তু দেশ শাসনের ম্যান্ডেট নেই। বাংলাদেশের মতো একটি দেশ শাসনের কূটকৌশল এদের জানা নেই। যত শিগগির কিছু মৌলিক সংস্কার করে অবাধ, নিরপেক্ষ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন করে গণতান্ত্রিক সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা যায় সেটাই মঙ্গল। অথচ কিছু অর্বাচীন মানুষের অতি কথন এবং অসৎ কর্মকাণ্ডের কারণে রাজনৈতিক বিভাজন সৃষ্টি হচ্ছে সেটি কিন্তু গণতন্ত্রায়নের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে।

ভৌগোলিক বাস্তবতায় প্রধান প্রতিবেশী ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক বজায় রাখা ছাড়া গত্যন্তর নেই বাংলাদেশ। ভারতের সঙ্গে বৈরী সম্পর্ক বজায় রেখে বাংলাদেশ কখনো লাভবান হবে না। কিন্তু কিছু ব্যক্তি, কিছু দল, কিছু মিডিয়ার কারণে ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক শীতল হয়ে পড়েছে। আমাদের বাস্তবতা বুঝতে হবে। সঠিক দ্যূতিয়ালির মাধ্যমে পারস্পরিক সার্বভৌমত্বের প্রতি শ্রদ্ধাবোধের ভিত্তিতে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। তবে ভারতকেও বাংলাদেশের সারভৌমত্বকে শ্রদ্ধা করতে হবে। কোনোভাবেই দাদাগিরি বরদাশত করবে না বাংলাদেশ।

বাংলাদেশে কিন্তু ১৯৭১, ১৯৭৫, ১৯৯০, ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৬ পরিবর্তনের অনেক সুযোগ এসেছে। কিন্তু কায়েমি স্বার্থবাদীদের কারণে কোনো সুযোগ কাজে লাগানো যায়নি। ২০২৪-এর অর্জন যদি একই কারণে ব্যর্থ হয়, তাহলে কিন্তু বাংলাদেশ কখনো কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন করতে পারবে না। ফলে জুলাইয়ের এ অর্জন ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই। 

বর্তমান সরকার কিন্তু কোনো অবস্থায় সর্বক্ষেত্রে সংস্কার বিষয়ে সব রাজনৈতিক দল এবং পক্ষকে সম্মত করাতে পারবে না। সেই পরিস্থিতিতে প্রয়োজন অত্যাবশ্যকীয় রাজনৈতিক সংস্কার করে ২০২৫ শেষ নাগাদ নির্বাচন করা। যারা এখন নানা মিডিয়ায় নানা কথা বলছেন, নিজেদের মতো করে ইতিহাস রচনার অপপ্রয়াস করছেন সময়ের বিবর্তনে এগুলো কিন্তু তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণাম ডেকে আনতে পারে। সময় কিন্তু নিষ্ঠুর। ইতিহাস কিন্তু কাউকে ক্ষমা করে না। প্রকৃতির বিচার কিন্তু নির্মম। 

শেয়ার করুন