২৫ মার্চ ২০২৫, মঙ্গলবার, ১১:৪৬:০৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
বাংলাদেশ ও মেক্সিকোর মধ্যে দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার এদেশে আওয়ামী লীগের পুনর্বাসন আমরা হতে দিব না- আখতার হোসেন সাংবাদিকতা ব্যবস্থাকে সাংবাদিকবান্ধব করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে- মাহফুজ আলম আমাদের যেকোনো মূল্যে ঐক্য ধরে রাখতে হবে- তারেক রহমান প্যারিসে বাংলাদেশ কমিউনিটি মসজিদ ও ইসলামিক সেন্টারে পুরস্কার বিতরণ সংস্কার ও নির্বাচনকে যেভাবে মুখোমুখি করা হচ্ছে তা ‘রাজনৈতিক উদ্দেশ্যমূলক- তারেক রহমান আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার কোনো পরিকল্পনা নেই- প্রধান উপদেষ্টা আ.লীগ নিষিদ্ধের দাবীতে মধ্যরাতে মিছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে ফেন্টানাইলের কারণে ৫৫ হাজার মৃত্যু ট্রাম্পকে থামাতে আদালতকে ভূমিকা রাখতে হবে


সর্তক অবস্থানে বিএনপি’র হাই কমান্ড
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৬-০২-২০২৫
সর্তক অবস্থানে বিএনপি’র হাই কমান্ড বিএনপির দলীয় পতাকা


দেশের বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রদলের সঙ্গে সেধে সেধে যে সংঘর্ষ করার চেষ্টা করছে কিছু ছাত্র সংগঠন সাধারণ ছাত্রের ব্যানারে এটা নিয়ে বেশ সর্তক অবস্থানে বিএনপির হাই কমান্ড। ছাত্রদলের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতাকর্মীদের মধ্যে বিরোধ বাধিয়ে ফায়দা লুটে নেওয়া হতে পারে। এমন একটি ভয়াবহ চক্রান্তের ব্যাপারে বিস্তারিত খবর বিএনপি ও ছাত্রদল সর্তক অবস্থানও নিয়েছে। 

কারা করছে

বিএনপি’র সহযোগী ছাত্র সংগঠন হচ্ছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। সংগঠনটি গত ১৭ বছরে দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের ফ্যাসিজমের শিকার হয়ে কেউ কেউ চিরতরে দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছে। আবার কেউ কেউ দীর্ঘ কারাবাসের পর সর্বশান্ত হয়ে গেছে। ছাত্রদলে বহু নেতাকর্মী গুম, হত্যার নির্মম শিকারও হয়েছে। কিন্তু ছাত্রদলের এমন ত্যাগকে কোনোভাবে গুরুত্ব না দিয়ে একটি চক্র সংগঠনটির বিরুদ্ধে একের পর কালিমা লেপনে লিপ্ত রয়েছে বলে বিএনপি’র নেতাকর্মী মনে করেন। আর এমন কাছে ব্যবহার করা হচ্ছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে তাদেরই সহানুভূতিশীল একটি অংশকে। 

কুয়েটের ঘটনা আসলে কী

সম্প্রতি বেশ কয়েকটি ঘটনায় ওই চক্রটির চক্রান্ত ফুটে উঠেছে। মাত্র কয়েকদির আগে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (কুয়েট) ছাত্রদল ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা–কর্মীদের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষ এবং পাল্টাপাল্টি ধাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। ঘটনার দিন দুপুর থেকে বিকেল পর্যন্ত থেমে থেমে সংঘর্ষ চলে। এতে শতাধিক আহত হন। এধরনের সহিংস ঘটনার পরপরই অবশ্য বিএনপি’র সমর্থিত কয়েকটি অঙ্গ সংগঠনের লাঠিসোটা ও ধারালো অস্ত্রের ঝনঝানি দেশবাসী প্রত্যক্ষ করেছে। আবার এর পাশাপাশি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে থাকা ওই চক্রটির একটি অংশ শিক্ষার্থীদের কাজে লাগিয়ে মারমুখী নির্মম আচরণও অবাক করেছে অনেককে। তবে ছাত্রদলসহ তাদের সাথে জোট বেধে নিজেদের সহযোগি সমর্থিতদের দ্বারা সংগঠিত ঘটনায় অবশ্য দুঃখপ্রকাশ করেছেন সংগঠনটির (ছাত্রদল) সাধারণ সম্পাদক নাছির উদ্দীন নাছির। 

রাজনীতি বন্ধ রাখাকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় দুঃখপ্রকাশ করে নাছির উদ্দীন নাছির অবশ্য বলেছেন, ছাত্রদলের ইতিবাচক রাজনীতিকে শিক্ষার্থীদের কাছে দোষারোপ করতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শিবিরের সন্ত্রাসীরা শুরুতে এ হামলা করেছে। কিন্তু লক্ষ্যনীয় ব্যাপার হচ্ছে এরপরে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ে যে ঘটনা ঘটেছে, সে জন্য খুব দ্রুত দুঃখপ্রকাশ করছে। তবে এর পাশাপাশি ছাত্রদলের নেতারা একটি প্রশ্ন রেখে গেছেন জাতির কাছে। তা হলো, যেই জড়িত থাকুক না কেন, সুষ্ঠু তদন্ত করে তাদের সবাইকে বিচারের আওতায় এনে সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের দাবি করেন ছাত্রদলের নেতারা। এটা তারা রাষ্ট্রের ওপর ছেড়ে দেয়। তারা জানালেন ছাত্রদল তার সংগঠনের নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে কোনো অপরাধের অভিযোগ পেলে বা তা প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে। কিন্তু তার বিচারের দায়িত্ব রাষ্ট্রকেই নিতে হবে। তবে পাশাপাশি এটাও আশা করা হয় ছাত্র সংগঠনটির পক্ষ থেকে যে, ওই হামলার সূত্রপাত ঘটানো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কুয়েটের নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা? এটা জানতে চান ছাত্রদলের এক নেতা। তিনি বলেন, ‘আমরা দেখব তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের) কোনো ব্যবস্থা নেয় কিনা দায় স্বীকার করে কিনা। যেভাবে যুবদলের একজনকে চিহ্নিত করে বহিষ্কার করা গেছে। কিন্তু ফেসবুকে যে ভিডিও সয়লাব হয়েছে বৈষম্যের ভূমিকা তাদের কোনো বক্তব্য পাচ্ছি না।’ উল্লেখ্য বৈষম্য বিরোধীদের কাউকে বহিষ্কার করা হয়নি। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ফেসবুকে দেখা গেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ছায়াতলে থেকে একটি অংশ ছাত্রদলের ওপর কি ধরনের নির্মমতা দেখিয়েছিলো ঘটনার দিন। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে ওই হামলাকারী কি প্রকৃতপক্ষে সাধারণ শিক্ষার্থী তা কি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেউ? না কোনো গুপ্ত সংগঠনের ক্যাডার? কেননা অভিযোগ আছে যে, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শুরুতে ছাত্রদলের ওপর হামলা করেছে।

গোপন তৎপরতার নেপথ্যে কি?

বিএনপি’র ও ছাত্রদলের নেতাদের আশঙ্কা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে সম্পৃক্ত একটি গুপ্ত সংগঠন বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছে। গুপ্ত সংগঠনটি চায় বিএনপি ও তার ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলের সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বৈরিতা বাড়ুক, সৃষ্টি হোক সংঘাত। সেই তিক্ততাকেই তারা কাজে লাগাতে চায় বলে অনেকে মনে করেন। আর একারণে বিষটি আঁচ করেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ রাখাকে কেন্দ্র করে খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে হামলার ঘটনায় খুব দ্রুতই দুঃখপ্রকাশ করেছেন ছাত্রদলের শীর্ষ নেতারা। কারণ বিএনপি ও ছাত্রদলের নেতারা বুঝতে পেরেছে শিক্ষাঙ্গনে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার নামে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে একটি চক্র কাজ করছে যাদের আসলে ভিন্ন উদ্দেশ্য রয়েছে। আর একারণে কুয়েটের ঘটনায় ছাত্রদল নেতা নাছির উদ্দীন অভিযোগ করেছিলেন, কুয়েটে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা শুরুতে ছাত্রদলের ওপর হামলা করেছে। সে হামলায় যদি তারা অংশ না নিত, তাহলে এরকম সংঘাত কখনোই ছড়িয়ে পড়ত না। তিনি এর ব্যাখ্যায় বলেন, বাংলাদেশে যত বড় বড় অগ্নিকাণ্ড হয়েছে, তার উৎস ছিল ছোট ছোট শর্টসার্কিট। 

কুয়েটে ওইদিন ঘটনায় সেই কাজ শুরু করেছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিশৃঙ্খল মব। এটির নেতৃত্ব দিয়েছে কুয়েটের বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক ওমর ফারুক। কেন্দ্রীয়ভাবে সেটি মনিটর করেছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক বা আহ্বায়ক হাসনাত আবদুল্লাহ। আরেকটি বিষয় হচ্ছে শিবির কুয়েট কার্যক্রমে প্রকাশ্য রুপ নিলেও আগে তাদের কাউকে কেউ চিনতোই না। এজন্যই ছাত্রদল নেতা নাছির শিবিরের কাছে প্রশ্ন রাখেন কুয়েটে তাদের কমিটি আছে কি-না। থাকলে কুয়েটে ওইদিন যে হামলা হয়েছে তার ব্যাখ্যা দিতে হবে। আর কোনো ক্যাম্পাসে যদি বিনা কারণে হামলার ঘটনা ঘটে, তাহলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে দায় নিতে হবে। 

কিন্তু এব্যাপারে ছাত্র শিবির তেমন উচ্চবাচ্য না করে গোপনে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ভেতরে থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দিয়ে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করিয়ে নিচ্ছে বলে শোনা যাচ্ছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে, এভাবে শিক্ষাঙ্গনে একের পর এক ঘটনা ঘটিয়ে আসলে গুপ্ত সংগঠনটি কি চায়? কারো কারো মতে, গুপ্ত সংগঠনটি আসলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে ছাতার তলে থেকে ছাত্রলীগের মতো ছাত্রদলকেও ফ্যাসিস্ট হিসাবে তুলে ধরতে চায়। আর এভাবে তারা বড়ো আঘাতটি বিএনপি’র বুকে করতে চায় বলে মনে করেন। এমন বিষয়গুলি টের পেয়ে বিএনপি সারাদেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্রআন্দোলনের সাথে কোনো ধরনের বিরোধে না জড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে দলের হাই কমান্ড।

শেয়ার করুন