০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০২:২৮:০৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


কঠিন ইমেজ সঙ্কটে এনসিপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৩-২০২৫
কঠিন ইমেজ সঙ্কটে এনসিপি এনসিপির লগো


শুরুতে কঠিন ইমেজ সঙ্কটে পড়েছে ২৪‘র ছাত্র-জনতার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি)। দলটির পেছনে কারা? কে-ই এদের বিপুল অর্থের যোগানদাতা? এর পাশাপাশি প্রকৃতপক্ষে এরা কোন মতাদর্শে আছে তা নিয়ে জল্পনা-কল্পনার শেষ নেই। আর এমন জল্পনা কল্পনা- মাঝেই দেখা দিয়ে ইমেজ সঙ্কট। আলেচিত হচ্ছে এনসিপি গতানুগতিক ধারার একটি রাজনৈতিক দল না-কি ব্যতিক্রম কিছু করে দেখাবে?

গণমাধ্যমের খবরে যা আসলো

জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশের পর থেকে গত কয়েকদিনের দলটি নিয়ে গণমাধ্যমের খবরে দলটি সর্ম্পকে বিভিন্ন ধরনের নেতিবাচক খবর প্রকাশিত হচ্ছে। প্রশ্ন উঠেছে দলটি কিভাবে পরিচালিত হচ্ছে কারা এর পেছনে অর্থের যোগান দিচ্ছে। ইতোমধ্যে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম জানিয়েছেন, তাদের দলকে বিভিন্ন ধনী ব্যক্তি আর্থিক সহায়তা প্রদান করছেন। এছাড়া, ভবিষ্যতে ক্রাউডফান্ডিংয়ের (গণ-অর্থায়ন) মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যার মাধ্যমে দলের জন্য তহবিল গঠন করা হবে। এমন খবরে রাজনৈতিক মহলে বেশ গুঞ্জন দেখা দিয়েছে। নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) প্রতিদিন লাখ লাখ টাকার ইফতার আয়োজনের অর্থ কোথায় পায়, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে জাতীয়তাবাদী ছাত্রদল। ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন বলেন, ‘এনসিপির নেতারা বলেছেন, প্রতিদিন ইফতার করাতে ৩ লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে। সে হিসাবে মাসে ৯০ লাখ টাকা খরচ হবে। আমরা জানতে চাই, সাধারণ ছাত্রদের একটি সংগঠনের পক্ষে তারা কীভাবে এই বিপুল টাকা উপার্জন করছেন। তাদের এই অর্থের উৎস কী, আমরা জানতে চাই।’

বসুন্ধরায় গোলযোগ ও ছাত্রলীগ পুনর্বাসন

সম্প্রতি বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় একটি ঘটনায় ছাত্রদলের নেতারা বেশ কয়েকটি বিষয় তুলে ধরেছেন। অভিযোগ ছিল বসুন্ধরায় অপ্রীতিকর ঘটনার সাথে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কয়েকজনকে হেনস্থার পেছনে ছাত্রদল জড়িত। এব্যাপারে ছাত্রদলের নেতারা ঘটনাস্থলে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের কোনো সাংগঠনিক কার্যক্রম ছিল না উল্লেখ করে কিছু তথ্য দেন। তারা জানান নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রদলের নেতাকর্মীরাও ঘটনাস্থলে ছিলেন না। সারজিস আলমের সঙ্গে ছাত্রদলের কোনো বিরোধ হয়নি। উল্টো সারজিস আলমের শোডাউনে নিষিদ্ধ ঘোষিত ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসী এবং জুলাই আগস্টের গণহত্যার আসামিদেরকে দেখা গেছে। এভাবেই জাতীয় নাগরিক পার্টি ও তাদের ছাত্রসংগঠনে নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের পুনর্বাসন নেতাকর্মীদের পুনর্বাসন হচ্ছে। আমরা নিষিদ্ধ সংগঠনের নেতাকর্মীদের পুনর্বাসনের নিন্দা জানাই। 

অন্যদিকে ছাত্রদলের সভাপতি রাকিব বলেন, নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সারজিস আলমের বিরোধের মধ্যে কোনো ছাত্রদল নেতাকর্মীর উপস্থিতি ছিল কিনা আমরা পর্যালোচনা করে দেখছি, তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ করার কাজ চলছে। যদি ছাত্রদলের কারও কোনো ন্যূনতম সংশ্লিষ্টতা থেকে থাকে, তাহলে আমরা ছাত্রদলের পক্ষ থেকে আন্তরিকভাবে দুঃখ প্রকাশ করছি। একইসঙ্গে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ঘটে যাওয়া ঘটনার দায় ছাত্রদলের ওপর চাপানোর কৌশলের বিরুদ্ধে আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। 

উল্লেখ্য সম্প্রতি রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় সারজিস আলমের উপস্থিতি ঘিরে একপক্ষের প্রতিবাদী স্লোগান ও পরবর্তী সময়ে মারামারির ঘটনায় নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মো. মুশতাক তাহমিদ নামের এমবিএর ওই শিক্ষার্থীর পিঠে ধারালো অস্ত্রের আঘাত লেগেছে। সেখানে ১৩টি সেলাই দেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানিয়েছেন। জানা গেছে বৈষম্যবিরোধীদের নতুন ছাত্র সংগঠন ও নতুন দলে প্রতিনিধিত্ব নিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের অসন্তোষ ছিল। তার মধ্যেই এই ঘটনাটি ঘটে নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮ নম্বর ফটকে। 

সে-ই পুরানা খেলা.. চাঁদা দাবি..

এদিকে দুই বড় দলের মতো বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন কর্মীদেরও চাদাবাজিতে জড়িয়ে পড়ার হিড়িক লক্ষ্য করা গেছে। এমন একট ঘটনার কারণে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন রংপুর মহানগরের মুখপাত্র নাহিদ হাসান খন্দকারকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। চাঁদা দাবির একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর তাকে অব্যাহতি দেওয়া হয়। রাজধানীর পান্থপথে শেখ কবির কাবিকো কনস্ট্রাকশন লিমিটেডে ভাঙচুর ও তিন লাখ টাকা লুট করার অভিযোগে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কলাবাগান থানার আহ্বায়ক সালাউদ্দিন সালমানসহ সাতজনকে কারাগারে পাঠিয়েছে আদালত।

শেষ কথা

জুলাই অভ্যুত্থানের সামনের সারির নেতাদের নিয়ে নতুন দলের যাত্রা শুরু হয়েছে। এই নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক হয়েছেন নাহিদ ইসলাম। সদস্য সচিব হয়েছেন আখতার হোসেন। জাতীয় নাগরিক পার্টির ২১৭ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটি অনুমোদনও দেওয়া হয়েছে। দেশের জনগণের স্বার্থকে সামনে রেখে রাষ্ট্রকে বিনির্মাণ করার কথা ঘোষণা করেছেন দলের তরুণ ওই নেতারা। বলেছেন, তারা সামনের কথা বলতে চায়। পেছনের ইতিহাস অতিক্রম করে সম্ভাবনার বাংলাদেশের কথা বলতে চায়। এর পাশাপাশি নাগরিক পার্টির নেতারা ভারত ও পাকিস্তানপন্থি রাজনীতির ঠাঁই বাংলাদেশে হবে না বলেও সাফ সাফ জানিয়ে দিয়েয়েছেন। আর বলা হচ্ছে, সংসদে কে যাবে তা জনগণ নির্ধারণ করবে, ভারত নয়। আশাবাদের বাণী শুনিয়ে বলেছেন, বিভাজনের রাজনীতির দিন শেষ। তরুণরা নেতৃত্ব দিয়ে চাঁদাবাজ ও দখলদারমুক্ত বাংলাদেশ গড়বে। সেখানে দিনের ভোট রাতে হবে না। বলেছেন, নেতা নির্ভর নয় নীতিনির্ভর বাংলাদেশ হবে। থাকবে না পরিবারতন্ত্র। ক্ষমতা শুধু ব্যক্তি বা পরিবারের কাছে কুক্ষিগত থাকবে না। প্রশ্ন হচ্ছে এমন সুন্দর সুন্দর আশার বাণী শুনিয়ে যখন নেতারা দামি দামি গাড়ি হাকিয়ে চষে বেড়ানোর সেলফি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে, তখন সাধারণ মানুষের মনে নানান ধরনের হতাশার জন্ম নেয়। কার জন্য তারা বারবার রক্ত দিচ্ছে রাজপথে? কারণ ২৪’এর ছাত্র-জনতার আন্দোলনকে সবাই মনে করেছিল এ-টি ছিল ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে একেবারে সাধারণ ছাত্রদের আন্দোলন। যেখানে কোনো রাজনৈতিক পরিচয় ছিল না। আর সেকারণে দলমত নির্বিশেষে মকলে অংশ নেয়, ঝাপিয়ে পড়ে। আর এমন সর্বস্তরের স্বতঃস্ফূর্ত ছাত্র-জনতার সম্পৃক্ততায় গড়ে উঠা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে বুকে গুলি চালাতে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনী-ও রাজি হয়নি। ফলে ছাত্র-জনতার আন্দোলন সফলতার মুখ দেখে। কিন্তু এমন শক্ত ভিত্তির ওপর গড়ে উঠা আন্দোলনে সম্পৃক্ত অকুতোভয় সৈনিকদের কারো কারো বর্তমান আচরণ জনমনে বিষ্ময়ের জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে ২৪’র আন্দোলনে সম্পৃক্তরাওতো অতীত থেকে শিক্ষা নিচ্ছে না? কারো কারো মতে, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে গড়ে উঠা নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টিতে-ও যদি অতীতের ছাপ ফুটে উঠে তাহলে ভবিষ্যত দলমত নির্বিশেষে সর্বস্তরের ছাত্র-জনতা কেউ এমন ত্যাগ স্বীকার করবে না। সেক্ষেত্রে জাতি বড়ো ধরনের বিপর্যয়ের মুখেই পড়বে বলে তাদের আশঙ্কা।

শেয়ার করুন