২০২৫ সালের ২০ জানুয়ারিতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় ক্ষমতায় ফিরে আসার পর, যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন ও কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট (আইসিই) ১ লাখ ১৩ হাজার জনেরও বেশি অভিবাসীকে গ্রেফতার করেছে এবং ১ লাখেরও বেশি অভিবাসীকে তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠিয়েছে। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের এক সূত্র এই তথ্য নিশ্চিত করেছে। আইসিইর দাবি, ট্রাম্প প্রশাসন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী অবৈধ অভিবাসী, গ্যাং সদস্য এবং সন্ত্রাসবাদীদের দেশে ফেরত পাঠানোর জন্য কঠোরভাবে কাজ করছে।
তবে মানবাধিকার সংগঠনগুলো অভিযোগ করেছে যে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ল্যাটিন অভিবাসীদের গ্যাং সদস্য এবং মুসলিমদের সন্ত্রাসবাদী হিসেবে চিহ্নিত করে তাদের আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া ডিপোর্ট করছেন। ট্রাম্প প্রশাসন নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণ করলেও, এই পদক্ষেপগুলির ফলে আইনি প্রক্রিয়া ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বেড়েছে, যা ভবিষ্যতে আরো বিস্তারিত বিচার এবং আলোচনা প্রয়োজনীয় করে তুলেছে।
প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রথম থেকেই অভিবাসন নীতি নিয়ে কঠোর অবস্থান গ্রহণ করেছেন। সীমান্তে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করে, তিনি হাজার হাজার অতিরিক্ত সেনা পাঠান এবং অবৈধভাবে সীমান্ত পার হওয়া অভিবাসীদের জন্য আশ্রয় ব্যবস্থা বন্ধ করে দেন। ডিপোর্টেশন ক্যাম্পে চাপ বাড়লে, আইসিই আরো স্লিপার ক্যাম্পের জন্য কংগ্রেসের কাছ থেকে অর্থ সহায়তা চেয়েছে। বর্তমানে আইসিইর ডিটেনশন স্পেস পূর্ণ হয়ে গেছে।
এদিকে মার্কিন সীমান্তে অবৈধ অভিবাসীর প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে। মার্চ মাসে মাত্র ৭ হাজার অভিবাসী সীমান্ত পার করেছেন, যা গত বছরের একই সময়ে ১ লাখ ৩৭ হাজার জনের তুলনায় ৯৪ শতাংশ কম। ফেব্রুয়ারি মাসে মাত্র ৮ হাজার ৩০০ অবৈধ অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে, যা গত ২৫ বছরে সর্বনিম্ন। মার্কিন হোমল্যান্ড সিকিউরিটির এক সূত্র এটি ট্রাম্প প্রশাসনের কঠোর পদক্ষেপের ফল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। বর্তমানে সীমান্তে ধরা পড়া অভিবাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। সবচেয়ে বেশি অবৈধ অভিবাসী মেক্সিকোর সান দিয়েগো এবং এল পাসো সেক্টর থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, যদি এই প্রবাহ অব্যাহত থাকে, তবে যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসীর সংখ্যা ১৯৬৮ সালের পরবর্তী সবচেয়ে কম হতে পারে।
ট্রাম্প প্রশাসন ব্যাপকভাবে অবৈধ অভিবাসীদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং তাদের ডিপোর্টেশন করেছে। যদিও সীমান্তে অভিবাসীদের প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস পেয়েছে, তবে আইনি প্রক্রিয়া ছাড়া অনেক অভিবাসীকে ফেরত পাঠানো হচ্ছে, যা মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মধ্যে উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। এই পদক্ষেপগুলোর মাধ্যমে ট্রাম্প প্রশাসন তার নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়ন করতে চাইছে, তবে এটি বৈধ আইনি প্রক্রিয়া এবং বিচারব্যবস্থার ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলছে। ভবিষ্যতে এই নীতির প্রভাব এবং এর বিচারবিভাগীয় পরিণতির বিষয়ে আরো আলোচনা ও বিচার প্রয়োজন।