ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট
গভর্নমেন্ট এক্সিকিউটিভ গত ১৮ ডিসেম্বও প্রকাশিত হুইসেলব্লোয়ার রিপোর্টে জানা গেছে, ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস) আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে। আদালতের নির্দেশ অনুযায়ী, অভিবাসীদের এ ফাইল বা সম্পূর্ণ অভিবাসন রেকর্ড ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী নির্ধারিত সময়ের মধ্যে সরবরাহ করতে হবে। তবে ইউএসসিআইএস নতুন প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে, যার ফলে হাজার হাজার অনুরোধ বাতিল হচ্ছে এবং আইনগত সময়সীমা মানা হচ্ছে না। রিপোর্টে উঠে এসেছে, এই পদক্ষেপ অভিবাসীদের প্রক্রিয়াগত অধিকার ও সংবিধানিক নিরাপত্তাকে হুমকির মুখে ফেলছে।
জুন ২০১৯-এ নাইটিংগেল বনাম ইউএসসিআইএস মামলায় তিন অভিবাসন আইনজীবী এবং দুই অভিবাসীর পক্ষ থেকে ইউএসসিআইএসকে আদালতের নির্দেশ মেনে চলতে বাধ্য করার জন্য মামলা করা হয়। মামলায় লক্ষ্য ছিল অভিবাসীরা ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্টের মাধ্যমে তাদের এ ফাইল বা অভিবাসন রেকর্ড নির্ধারিত সময়ের মধ্যে পেতে পারুক। ২০২০ সালের ডিসেম্বর মাসে ক্যালিফোর্নিয়ার উত্তর জেলা আদালতের বিচারক উইলিয়াম এইচ ওরিক রায় দেন যে, ইউএসসিআইএসকে ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুযায়ী ২০-৩০ কার্যদিবসের মধ্যে এ ফাইল অনুরোধ পূরণ করতে হবে এবং ত্রৈমাসিক ভিত্তিতে আদালতে রিপোর্ট জমা দিতে হবে। আদালত রায়ে বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন, এ ফাইল অভিবাসীদের ভিসা, কাজ, শিক্ষা এবং বহিষ্কারের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।
তবে হুইসেলব্লোয়ার রিপোর্টে প্রকাশ, ইউএসসিআইএস নতুন কিছু প্রক্রিয়া গ্রহণ করেছে যা অনুরোধ বাতিলের সংখ্যা বাড়াচ্ছে। মার্চ ২০২৪ থেকে সংস্থা এ ফাইলের তথ্য অতিরিক্তভাবে লুকাচ্ছে, এমনকি জন্মসনদ বা অনুরোধকারীর নিজস্ব তথ্যও বাদ দিচ্ছে। আই-২১৩ ফরমের গুরুত্বপূর্ণ তথ্যও প্রায়শই প্রকাশ করা হচ্ছে না। সামান্য তথ্যগত পার্থক্য থাকলেও অনুরোধ বাতিল হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, অনুরোধকারীর পিতামাতার নামের ভিন্নতা থাকলেও ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুরোধ বাতিল করা হচ্ছে, এমনকি ইউএসসিআইএস এ ফাইল শনাক্ত করতে পারলেও।
এছাড়া আইনজীবীরা প্রায়শই সংরক্ষিত বা সুরক্ষিত ঠিকানা ব্যবহার করে ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুরোধ জমা দেন, বিশেষত গৃহপালিত সহিংসতা বা বিশেষ অভিবাসী নাবালকদের জন্য। ইউএসসিআইএস এমন ঠিকানা গ্রহণ না করে অনেক অনুরোধ বাতিল করছে। হুইসেলব্লোয়ার দাবি করেছেন, এই পরিবর্তনগুলো বিশেষভাবে আদালতের নির্দেশ এড়ানোর জন্য গৃহীত হয়েছে। ইউএসসিআইএস তার রিপোর্টে দেখাচ্ছে যে, তারা ৯৯ শতাংশের বেশি এ ফাইল ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুরোধ সময়সীমার মধ্যে সম্পন্ন করেছে। কিন্তু হুইসেলব্লোয়ার জানান, এই উচ্চ সম্পূর্ণতার হার প্রায়শই কৃত্রিমভাবে তৈরি করা হয়েছে, যাতে আদালত সংস্থার ওপর নজরদারি কমিয়ে দেয়। এ-ফাইলের দেরিতে অ্যাক্সেস অভিবাসীদের জন্য গুরুতর প্রভাব ফেলছে। এটি ভিসা আবেদন, ওয়ার্ক পারমিট, শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা সুবিধা গ্রহণে বিলম্ব ঘটাচ্ছে। এছাড়া অভিবাসী আদালতে উপস্থিত হলে আইনজীবীরা ক্লায়েন্টের ইতিহাস দেখার জন্য শুনানি পিছিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন।
হুইসেলব্লোয়ার রিপোর্টে আরও বলা হয়েছে, ইউএসসিআইএসের এ ফাইল প্রক্রিয়ায় এই জটিলতা এবং অনিয়মিত ব্যবস্থাপনা নিয়মিত বিচার প্রক্রিয়ার অধিকারকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। বিশেষ করে যারা বহিষ্কারের প্রক্রিয়ায় রয়েছেন বা বিশেষ অভিবাসী প্রোগ্রামের আওতায় আছেন, তাদের জন্য এ-ফাইলের তথ্য জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। প্রাক্তন রিপোর্ট অনুসারে, আদালতের নির্দেশের আগে ইউএসসিআইএস প্রায় ৯০ শতাংশ ফ্রিডম অব ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুরোধ সময়মতো সম্পন্ন করতো। বর্তমানে ইউএসসিআইএস ৯৯ শতাংশ সম্পূর্ণতার হার রিপোর্ট করছে। কিন্তু হুইসেলব্লোয়ার জানিয়েছেন, এই রিপোর্ট কৃত্রিম এবং বাস্তবে অনেক অনুরোধ বাতিল হচ্ছে। উদাহরণস্বরূপ, শুধু ২০২৪ সালের প্রথম ছয় মাসে হাজার হাজার ফ্রিডম অফ ইনফরমেশন অ্যাক্ট অনুরোধ বাতিল হয়েছে। এতে বোঝা যায় যে, ইউএসসিআইএস সংখ্যা দেখাতে চাইছে যেন আদালত মনে করে তারা আইন মানছে, বাস্তবে অনেক অভিবাসীর রেকর্ড পাওয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
হুইসেলব্লোয়ার অনুযায়ী, ইউএসসিআইএস এ ফাইল প্রক্রিয়ার নিয়ম পরিবর্তন করেছে, যেমন অতিরিক্ত তথ্য লুকানো, নাম বা ঠিকানার সামান্য পার্থক্য থাকলেই অনুরোধ বাতিল করা এবং আইনজীবীর ঠিকানা গ্রহণ না করা। এসব পদক্ষেপ আদালতের নির্দেশ এড়ানোর জন্য করা হয়েছে। ইউএসসিআইএস এমনকি এই পরিবর্তনগুলো প্রকাশও করেনি। ফলে অনুরোধকারীরা জানতেও পারেননি কীভাবে তাদের আবেদন সঠিকভাবে জমা দিতে হবে। অভিবাসী অধিকারকর্মী ও মানবাধিকার সংগঠনগুলো বলছেন, ইউএসসিআইএস-এর এই পদক্ষেপ সংবিধানিক অধিকার ও প্রক্রিয়াগত ন্যায়বিচারকে হুমকির মুখে ফেলছে। এ ফাইলের তথ্যের অনিয়মিত প্রাপ্তি অভিবাসীদের আইনগত অবস্থান দুর্বল করছে এবং ইউএসসিআইএসের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এতে অভিবাসীরা ভিসা, কাজ, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্যসেবার মতো মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।
উল্লেখ্য, ইউএসসিআইএসের এ কার্যক্রম সরকারের ‘বড় বাজেট প্রোগ্রাম’, অর্থাৎ বিগ বিউটিফুল বিলের মাধ্যমে প্রাপ্ত কোটি কোটি ডলারের অর্থ সত্ত্বেও হচ্ছে। সংস্থা আগের অপ্রতুল সম্পদ বা কর্মী ঘাটতির অজুহাত ব্যবহার করতে পারছে না। ফলে বোঝা যায়, সমস্যার মূল হলো প্রশাসনিক অমান্যতা এবং আদালতের নির্দেশ এড়ানোর কৌশল। হুইসেলব্লোয়ার রিপোর্টের মাধ্যমে স্পষ্ট হয়েছে, ইউএসসিআইএস আদালতের নির্দেশ অমান্য করছে এবং অভিবাসীদের সময়মতো রেকর্ড প্রাপ্তি বাধাগ্রস্ত করছে। এ ফাইলের অ্যাক্সেস না থাকা অভিবাসীদের ন্যায়বিচার, শিক্ষা, কাজ এবং জীবনযাত্রাকে সরাসরি প্রভাবিত করছে। এটি শুধু প্রশাসনিক নয়, বরং সংবিধানিক অধিকার ও মানবিক নীতিরও লঙ্ঘন।