যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধ অভিবাসন নিয়ে ট্রাম্প প্রশাসনের কড়া অবস্থানের মধ্যে উইসকনসিনের গভর্নর টনি ইভার্সকে উদ্দেশ্য করে গ্রেফতারের ইঙ্গিতপূর্ণ হুমকি দিয়েছেন হোয়াইট হাউসের সীমান্ত নীতিবিষয়ক উপদেষ্টা টম হোম্যান। এক ডানপন্থী সংবাদমাধ্যমে দেওয়া সাক্ষাৎকারে হোম্যান বলেন, অপেক্ষা করুন, সামনে কী হচ্ছে দেখবেন যা গভর্নর ইভার্সসহ অনেকেই সরাসরি গ্রেফতারের হুমকি হিসেবে দেখছেন। এই মন্তব্যের জবাবে গভর্নর ইভার্স এক ভিডিও বার্তায় বলেন, একজন নির্বাচিত কর্মকর্তাকে এইভাবে হুমকি দেওয়া শুধু ভয়াবহই নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও আইনের শাসনের পরিপন্থী। ইভার্সের অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা ঘিরে এই বিতর্কের সূত্রপাত হলেও, বিশ্লেষকরা মনে করছেনএটি মূলত অভিবাসন ইস্যুতে প্রশাসনিক নীতি ও রাজনৈতিক অবস্থানের সংঘর্ষেরই একটি বহিঃপ্রকাশ।
গত ২ মে, উইসকনসিনের গভর্নর টনি এভার্স স্টেট কর্মীদের জন্য একটি অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকা জারি করেছেন। অভ্যন্তরীণ নির্দেশিকায় তিনি বলেন, যদি কোনো ইমিগ্রেশন অ্যান্ড কাস্টমস এনফোর্সমেন্ট এজেন্টস্টেট ভবনে প্রবেশ করেন, তবে কর্মীদের কীভাবে প্রতিক্রিয়া জানাতে হবে। এই নির্দেশিকাটি স্টেট এবং ফেডারেল আইন মেনে চলার পাশাপাশি ভবনে থাকা ব্যক্তিদের অধিকার রক্ষার জন্য স্পষ্ট নির্দেশনা প্রদান করেছে। এছাড়াও নির্দেশনায় বলা হয়েছে যে, যদি কোনো আইস এজেন্টস্টেট ভবনে প্রবেশ করেন, তবে স্টেট কর্মচারীরা যেন তাদের পরিচয় যাচাই করে, গ্রেফতারি পরোয়ানা দেখতে চান এবং আইনজীবীর পরামর্শ না নিয়ে কোনো তথ্য বা কাগজপত্র সরবরাহ না করেন। নির্দেশিকায় আরো বলা হয়েছে, কর্মীরা আইনজীবীর পরামর্শ ছাড়া কাগজপত্র বা কম্পিউটার সিস্টেমে প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবেন না এবং বৈধ আইনগত দলিল না থাকলে কোনো অপ্রকাশ্য এলাকায় প্রবেশের অনুমতি দিতে পারবেন না।
এই নির্দেশনা জারির পর, উইসকনসিন থাকে প্রকাশিত ডানপন্থী সংবাদমাধ্যম গেটওয়ে পণ্ডিত এক প্রতিবেদনে অভিযোগ তোলে যে গভর্নর ইভার্স অভিবাসন আইন বাস্তবায়নে বাধা দিচ্ছেন। সংবাদমাধ্যমটির এক প্রতিবেদক হোয়াইট হাউসের সীমান্ত উপদেষ্টা টম হোম্যানকে জিজ্ঞেস করেন, যারা এইসব আদেশ দিচ্ছেন, তাদের কেন গ্রেফতার করা হচ্ছে না? উত্তরে হোম্যান বলেন, অপেক্ষা করুন, সামনে কী হচ্ছে দেখুন। আপনি যদি জানেন যে কেউ অবৈধ অভিবাসী, তাকে আড়াল করছেন বা লুকাচ্ছেন, তবে সেটা একটি অপরাধ আর আমরা সেটাকে অপরাধ হিসেবেই দেখবো। গভর্নর ইভার্স বলেন, এই হুমকি শুধু আমার বিরুদ্ধে নয়, বরং দেশের প্রতিটি নাগরিকের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার ওপর আঘাত। যুক্তরাষ্ট্রে কারো রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে তাকে গ্রেফতার করা যায় না। তিনি আরো বলেন, আমি ভীত নই, আমি কখনো সঠিক কাজ করা থেকে পিছপা হইনি, এবারও হবো না।
হোম্যানের এই বক্তব্যে গভর্নর ইভার্সকে উদ্দেশ্য করে সরাসরি হুমকি দেওয়া হয়েছে বলে ধরে নেওয়া হয়। ইভার্স বলেন, এই নির্দেশনার একমাত্র উদ্দেশ্য ছিল স্টেট কর্মীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা এবং তাদের ফেডারেল আইন মেনে চলতে সহায়তা করা। আমি কাউকে কখনো আইন ভাঙতে বলিনি, নিজেও কোনো অপরাধ করিনি। গভর্নর ইভার্স অভিযোগ করেন, ডানপন্থী রাজনীতিক ও তাদের অনলাইন মিত্ররা, এমনকি এলন মাস্ক পর্যন্ত, এই নির্দেশনা নিয়ে মিথ্যা প্রচার চালিয়েছেন, আমার বিরুদ্ধে ভিত্তিহীন অভিযোগ এনেছেন এবং একটি কৃত্রিম বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন।
রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা ইভার্সের এই নির্দেশনা প্রত্যাহারের দাবি জানিয়েছেন। এমনকি রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান ক্যালভিন ক্যালাহান সামাজিক মাধ্যমে গভর্নর ইভার্সকে গ্রেফতারের আহ্বান জানান এবং একটি এআই উৎপাদিত ছবি শেয়ার করেন যাতে ইভার্সকে হাতকড়া পরানো অবস্থায় দেখানো হয়েছে। তিনি লেখেন, এই নির্দেশনাই টনি ইভার্স পাঠিয়েছেন; ওকে মিলওয়াকি জজের সেলে রাখো! উল্লেখ্য, মিলওয়াকি কাউন্টির বিচারক হান্না ডুগান সম্প্রতি আইস কর্মকর্তাদের একটি গ্রেফতারে বাধা দেওয়ার অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছেন।
এই ঘটনার মধ্য দিয়ে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতির রাজনৈতিক মেরুকরণ আরো স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। যেখানে অভিবাসন কার্যক্রমের প্রশাসনিক দিক নিয়ে বৈধ প্রশ্ন তোলা হচ্ছে, সেখানে তা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহৃত হুমকির অস্ত্র হয়ে উঠছে-যা গণতন্ত্র, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের ভিত্তিকে প্রশ্নের মুখে ফেলছে।