জুলাই আগস্ট ২০২৪ ছাত্র জনতার আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর সম্ভাব্য দ্রুততম সময়ে প্রয়োজনীয় সংস্কার সাধন করে একটি অবাধ, স্বাধীন, স্বচ্ছ, অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনকে মূল লক্ষ্য করে বিদ্যমান শাসনতন্ত্রের রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আসীন হয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। ভঙ্গুর অর্থনীতি, দলদূষিত সামরিক এবং বেসামরিক প্রশাসন, বৈরী ভূ-রাজনীতি সামাল দিয়ে দেশকে নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করা সন্দেহ নেই। সরকার নিজেও নানা মহলের দুষ্টু প্রভাবে প্রভাবিত হয়ে বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নিয়ে নিজেদের নিরপেক্ষ ভাবমূর্তি ক্ষুন্ন করেছে বলে সুধীজন মনে করে। সরকার যত কার্যক্রম বিস্তৃত করবে ততই তাদের পক্ষে প্রতিশ্রুত সময়ে নির্বাচন অনুষ্ঠান করা দুরূহ হয়ে পড়বে। দেশের অন্যতম প্রধান রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ এবং তার সহযোগী সংগঠনগুলোর কার্যক্রম নির্বাহী আদেশে নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া, জুলাই আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু নিরপেক্ষ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সরকার দেশ- বিদেশে প্রচণ্ড চাপে আছে। দেশে আইনের শাসন শিথিল। চাঁদাবাজি দখলদারি পোশাক পরিবর্তন করেছে মাত্র। অনেক মব হত্যাকান্ড হয়েছে, হচ্ছে, বিগত আমলে সংগঠিত দেশে আলোড়ন সৃষ্টিকারী অনেক হত্যাকাণ্ডের বিচার হয় নি।
অনিশ্চিত রাজনৈতিক পরিবেশে বিনিয়োগ মুখ থুবড়ে পড়েছে। জ্বালানি বিদ্যুৎ সংকটে শিল্প কারখানাগুলো আছে সংকটে। এই পরিস্থিতিতে যত শীঘ্র সম্মত সংস্কারগুলো সম্পাদন করে সরকার নির্বাচন আয়োজন করবে ততই মঙ্গল। সরকার ভূ-রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে মায়ানমারের জন্য মানবিক করিডোর দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়া বা দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দরসমূহ প্রতিযোগিতাহীনভাবে বিদেশী কোম্পানিদের কাছে অর্পণ করা সঠিক হবে না। সরকার পুলিশ প্রশাসশনকেই পুনঃগঠিত করতে পারেনি। আমলানিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন সেবা খাতের মৌলিক পরিবর্তন হয় নি। শিক্ষা, স্বাস্থ ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। প্রতিদিন দাবি দাওয়া নিয়ে চলছে সড়ক অবরোধ। ইদানিং সড়কে রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব সৃষ্টির লক্ষণ দেখা যাচ্ছে। সরকারের কিছু কিছু কার্যক্রম থেকে জনমনে সরকার বিষয়ে ভ্রান্ত ধারণা সৃষ্টির অবকাশ আছে।
ডিসেম্বর ২০২৫ থেকে জুন ২০২৬ ঘোষিত সময়ের মধ্যে নির্বাচন করতে হলে সরকার তাদের কার্যক্রম ধীরে ধীরে গুটিয়ে এনে নির্বাচন মুখী পরিবেশ সৃষ্টিতে মনযোগ দেয়া উচিত। নির্বাচন করার জন্য পুলিশ এবং বেসামরিক প্রশাসনকে প্রস্তুত করার অনেক কাজ বাকি আছে। সরকার নিজে থেকে দেশে রাজনৈতিক বিভেদ উস্কে দিলে পরিণতি শুভ হবে না। জুলাই অভ্যুত্থানের মাধ্যমে বিগত সরকারকে হাটিয়ে গঠিত অন্তবর্তী সরকার দেশ চালাচ্ছে। নির্বাচনি পরিবেশ তৈরি করাই মূল দায়িত্ব। তবে সরকার বিভিন্ন ইস্যুতে গুরুত্বপূর্ণ সব সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন। বন্দর থেকে শুরু করিডোর এমন নানা ইস্যু যেটা একটা নির্বাচিত সরকার দেয়ার ক্ষমতা রাখে সে রকম স্পর্শকাতর বিষয়গুলো অন্তবর্তী সরকার কিভাবে সিদ্ধান্ত নেয় এটা নিয়ে ইতিমধ্যে জনমনে ব্যাপক প্রশ্নের উদ্রেক ঘটাচ্ছে। চলমান বেশ কিছু বিষয়ে সংস্কারের কাজ চলছে। কিন্তু আপাতত দৃষ্টিতে দেখলে মনে হবে সে সংস্কারসমূহের কার্যক্রম ধীরালয়ে চলছে। যা মোটেও কাম্য নয়।
এর পাশাপাশি দেশের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব সংশ্লিষ্ট কোনো সিদ্ধান্ত এককভাবে নেয়ার ম্যান্ডেট কিন্তু সরকারকে দেয়া হয়নি।