বিশ্বজুড়ে আবারও কোভিড-১৯ নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ বাড়ছে। চীনে সম্প্রতি সংক্রমণের নতুন ঢেউ সৃষ্টি করা কোভিড-১৯ এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট যেটিকে অনেকেই ‘নিম্বাস’ বা ‘রেজর গলা’ নামে চিহ্নিত করছেন। এখন যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ১৫টি রাজ্যে ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন, এই ভ্যারিয়েন্ট দ্রুত সংক্রমণ ঘটাতে পারে এবং বিশ্বব্যাপী নতুন স্ট্রেইন হিসেবে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
চীনের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি গবেষণায় বলা হয়েছে, কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্টের ফলে রোগীরা ‘গলায় কাটার মতো ব্যথা’, উচ্চ জ্বর, সর্দি, বমি এবং ডায়ারিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছেন। এই উপসর্গগুলো আগের কোভিড ভ্যারিয়েন্টগুলোর তুলনায় কিছুটা ভিন্ন ও তীব্র। রোগীদের অনেকে একে ‘রেজর ব্লেড থ্রোট’ বা ‘রেজর গলা’ বলে বর্ণনা করছেন, যা বর্তমানে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমেও উঠে এসেছে।
গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা ডাটার তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর নতুন ভ্যারিয়েন্ট ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া, নিউইয়র্ক, নিউজার্সি, ম্যাসাচুসেটস, ভার্জিনিয়া, ওহাইও, মেরিল্যান্ড, হাওয়াই, আরিজোনা, কলোরাডো, রোড আইল্যান্ড, ইউটাহ, ভারমন্ট, ওয়াশিংটন এবং ইলিনয় এই ১৫টি রাজ্যে শনাক্ত হয়েছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশনের সর্বশেষ তথ্যমতে, নতুন ভ্যারিয়েন্ট বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে মোট কোভিড সংক্রমণের প্রায় ৩৭ শতাংশের জন্য দায়ী। এর আগেও এই ভ্যারিয়েন্টটি সিডিসি এর পর্যবেক্ষণের তালিকায় ছিল না। তবে এখন এটি এলপি .৮.১-এর পর যুক্তরাষ্ট্রে দ্বিতীয় সর্বাধিক সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট হিসেবে গণ্য হচ্ছে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এন বি.৮.১ কে ‘ভ্যারিয়েন্ট আন্ডার মনিটরিং’ হিসেবে তালিকাভুক্ত করেছে এবং জানিয়েছে, এই ভ্যারিয়েন্টটি এখন পর্যন্ত অন্য স্ট্রেইনগুলোর তুলনায় তেমন মারাত্মক নয়। তবে পূর্ব এশিয়া ও প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে এর সংক্রমণের হার দ্রুত বাড়ছে। সংস্থাটি আরো বলেছে, বর্তমানে অনুমোদিত কোভিড টিকা এই ভ্যারিয়েন্টের বিরুদ্ধে উপসর্গ ও গুরুতর অসুস্থতা থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম। চীনা স্বাস্থ্য ব্যবস্থার ওপর দীর্ঘদিন ধরে তথ্য গোপনের অভিযোগ থাকায়, চীনের চিকিৎসকদের সরাসরি অভিজ্ঞতা আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে। তারা মনে করছেন, সরকারি পরিসংখ্যানের বাইরে স্থানীয় পর্যায়ে যা জানা যাচ্ছে, তা ভবিষ্যতের জন্য একটি সতর্ক সংকেত।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যমন্ত্রী রবার্ট এফ কেনেডি জুনিয়র সম্প্রতি ঘোষণা দিয়েছেন যে, এখন থেকে সুস্থ শিশু ও গর্ভবতী নারীদের জন্য আর কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের সুপারিশ করা হবে না। এ সিদ্ধান্তকে ঘিরে নানা বিতর্ক দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে নতুন ভ্যারিয়েন্টের প্রেক্ষাপটে। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ, এন বি.৮.১.১-এর মতো নতুন উপসর্গ দেখা দিলে দ্রুত পরীক্ষা ও চিকিৎসা নিতে হবে। একই সঙ্গে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নির্দেশনা মেনে চলা উচিত। পরিস্থিতির ওপর নজর রেখে ভবিষ্যতে টিকার আপডেট বা নতুন প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করা হতে পারে।
এন বি.৮.১.১ ভ্যারিয়েন্টের দ্রুত বিস্তার বিশ্ববাসীর জন্য এক নতুন সতর্ক সংকেত। যদিও এটি আগের মতো প্রাণঘাতী নয় বলেই বলা হচ্ছে, তবে এর উচ্চ সংক্রমণ ক্ষমতা ও ভিন্ন উপসর্গ চিকিৎসকদের ভাবিয়ে তুলেছে। তাই আগাম সতর্কতা ও সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণই হতে পারে সর্বোত্তম পথ।