১৭ জুলাই ২০২৫, বৃহস্পতিবার, ০৫:৩৯:১৭ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
গোপালগঞ্জ এখন মুজিববাদী সন্ত্রাসীদের আস্তানায় পরিণত হয়েছে- নাহিদ এনসিপি’র মার্চ টু গোপালগঞ্জ কর্মসূচি ঘিরে ব্যাপক সংঘর্ষ চারজন নিহত নিউইয়র্কে ২০ লাখ মানুষ মেডিকেইড ও ৩ লাখ পরিবার স্ন্যাপ সুবিধা হারাবে নতুন ভিসা ফিতে বাংলাদেশিদের খরচ বাড়বে আড়াই গুণ ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ২ কোটি ডলার ক্ষতিপূরণ দাবি মাহমুদ খলিলের টেক্সাসের অভিবাসন আইন এসবি ৪ অসাংবিধানিক ঘোষণা ফ্লোরিডার ‘সিনেট বিল ৪-সির কার্যকারিতা বন্ধ করলো যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট নতুন নীতি ঘোষণা : ৯ কারণে নাগরিকত্ব হারাতে পারেন জঙ্গিবাদে সতর্ক থাকার মার্কিনী পরামর্শে নানা প্রশ্ন এনসিপিসহ ১৪৪ নিবন্ধন প্রত্যাশী দলের তথ্যে ঘাটতি


বাংলাদেশকে ফাঁদে ফেলার ভারতীয় খেলার জের
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে ঘিরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জোট
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৭-২০২৫
দক্ষিণ এশিয়ায় চীনকে ঘিরে বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের জোট বাংলাদেশ, চীন ও পাকিস্তানের পতাকা


ভারতকেন্দ্রিক এশিয়ান উপমহাদেশকে চ্যালেঞ্জ করে নতুন করে চীনকেন্দ্রিক নয়া ভৌগোলিক বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে। আর সে পরিপ্রেক্ষিতে ভারতের জয়সওয়াল বাংলাদেশের সঙ্গে সৃষ্ট দূরত্ব দূর করতে নতুন করে আলোচনার জন্য প্রস্তাব দিয়েছে। বাংলাদেশ তাতে কোনো ধরনের সাড়া না দিয়ে চীন ও পাকিস্তানের সঙ্গে নতুন যোগসূত্র গড়ে তুলেছে। 

অতিসম্প্রতি চীনের নেতৃত্বে পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ত্রিপক্ষীয় বৈঠক অনুষ্ঠিত হয় চীনের কুংমিনে, যা বার্মা ও ভারত সীমান্তের কাছাকাছি চীনের অতীব গুরুত্বপূর্ণ শহর। ধারণা করা হচ্ছে, এই বৈঠক বা বন্ধন উপমহাদেশে ভারতের দীর্ঘমেয়াদি স্বার্থকে চ্যালেঞ্জ করেছে। গত সপ্তাহে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এ আলোচনায় চীন তিন দেশের সহযোগিতাকে আরো গভীরে নিয়ে যেতে চায় এবং একে অপরের সঙ্গে সম্পর্কের ক্ষেত্র জোরদারের সম্ভাবনাকে এগিয়ে নেওয়ার বিষয়ে আলোচনা জোরদার করেছে। গত মে মাসে এ সভার আদলে চীন, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের সঙ্গে আরেকটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছিল। তার লক্ষ্য ছিল চীন ও পাকিস্তানের মধ্যে অর্থনৈতিক করিডোর ও বর্ধিত সহযোগিতাকে আরো প্রসারিত করা। এই দুটি ত্রিপক্ষীয় বৈঠক এমন একসময় অনুষ্ঠিত হয়, যখন এ অঞ্চলে পাকিস্তানের তেমন গুরুত্ব নেই। আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ক বৃদ্ধি হচ্ছে এবং বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের মিত্রতার সম্পর্ক ক্রমাগত দূরে সরে যাচ্ছে। এই দুই ত্রিপক্ষীয় বৈঠক এই অঞ্চলে পাকিস্তানকে অন্যতম স্টেকহোল্ডার করে তোলা এবং ভারতকে নেহায়েত উদ্বেগসমূহ নিয়ে ব্যস্ত রাখা। ভারত একদিকে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে বাঁশ দিয়ে যাচ্ছে ক্রমাগত- কী বিদ্যুতের ক্ষেত্রে, কী পানি দেওয়ার ক্ষেত্রে, কী বন্দর ব্যবহারের ক্ষেত্রে, কী বাণিজ্যের ক্ষেত্রে। সর্বোপরি অভ্যন্তরীণ রাজনীতির ক্ষেত্রে। আবার বলছে তারা বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনা চায়। বিষয়টি কি হঠকারিতা মনে হয় না?

যে যুদ্ধ যৌথ সম্পর্কের প্রকৃতি নির্ধারক সেরকম যুদ্ধের মধ্যে ১৯৬২ সালের ভারত চীন যুদ্ধকে ধরা যায়। এই যুদ্ধ উপমহাদেশের ভূ-রাজনীতির গতি নির্ণিত করেছিল। এই যুদ্ধের পর চীন পাকিস্তানকে একটি মিত্রশক্তি হিসেবে দেখে, যা ভারতকে আশু হুমকি দিয়ে ব্যস্ত রাখা যায় এবং তাকে বেইজিংয়ের স্বার্থ, নিরাপত্তা ও স্ট্যাটাসকে চ্যালেঞ্জ করা থেকে দূরে রাখা যায়।

অন্যদিকে পাকিস্তান মনে করে চীন তার কাছে প্রশ্নাতীতভাবে এমন এক দেশ, যা ভারতের বিরুদ্ধে লড়তে তাকে আর্থিক ও সামরিক সহায়তা দিতে পারে। এখন পর্যন্ত পাকিস্তান তাদের সহায়তা, বিনিয়োগ ও অবকাঠামো উন্নয়নে বিশেষভাবে নির্ভরশীল। ২০২৪ সলের শেষদিকে চীনের কাছে পাকিস্তানের ঋণ ছিল ২৯ বিলিয়ন ডলার। অনুমান করা যায়, পাকিস্তান চীন থেকে ৮০ শতাংশ অস্ত্র আমদানি করে থাকে। তাছাড়া চীন জাতিসংঘের নিরাপত্তা কাউন্সিলে এবং অন্যান্য বহুমুখী সংগঠনে পাকিস্তানের সমর্থক সন্ত্রাসীদের রক্ষা করে। 

এ পারস্পরিক আস্থা ও সহায়তা ২০২৫ সালের মে মাসের অপারেশন সিঁদুরেও ব্যাপকভাবে দেখা গেছে। চীন ভারতের এ আক্রমণকে দুঃখজনক বলে অভিহিত করে এবং পেহেলগাম ঘটনাকে রাজনীতি ও আলোচনার মাধ্যমে নিষ্পত্তির আহ্বান জানায়। তারা এপ্রিল ২০২৫-এর পেহেলগাম ঘটনার জন্য তদন্ত অনুষ্ঠানের পাকিস্তানি দাবিকে সমর্থন করে। সর্বশেষ আক্রমণেও পাকিস্তান বিভিন্ন রকম চীনা তৈরি যন্ত্রপাতি, হাতিয়ার-এমনকি রাডার, ড্রোন, মিসাইল, গাইডেন্স সিস্টেম ও যুদ্ধ জেট মোতায়েন করে। অপারেশন সিঁদুরের পরপর পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিনেটপ্রধান মোহাম্মদ ইসহাক ধর চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ইয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তাদের ইস্পাত কঠিন বন্ধুত্বের পুনঃপ্রমাণ দেয়। এ সভা থেকে মনে করা হচ্ছে, বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ত্রিপক্ষীয় বন্ধুত্বের উন্মেষ ঘটে।

এ ত্রিপক্ষীয় বন্ধুত্বের প্রস্তাব বা চর্চা নতুন কিছু নয় বলে ভারত মনে করে। ১৯৬৫ সালের যুদ্ধের সময়ও পাকিস্তান তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান, চীন ও নেপালকে ভারতের শিলিগুড়ি করিডোরের বিরুদ্ধে ব্যবহারের আইডিয়া করেছিল। ভারতের বিরুদ্ধে দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোকে ব্যবহারের জন্য এ ত্রিপক্ষীয় মতলব আঁটছেন চীন ও পাকিস্তান। অন্তত ভারত তা-ই মনে করে থাকে। ২০১৯ সালে পালওমায় ও সাম্প্রতিক পেহেলগামে আক্রমণের হোতা পাকিস্তান আর তারা পাকিস্তানকে জবাব দিয়েছে ভালোভাবে। যাতে প্রমাণ হয়, পাকিস্তানের আনবিক বোমার তোয়াক্কা করে না ভারত। এ ছাড়া ভারত পাকিস্তানের মোকাবিলায় তার কূটনৈতিক চালকে ব্যবহার করেছে। তাছাড়া ভারত পাকিস্তানের সঙ্গে ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি বন্ধ করেছে, বাণিজ্য স্থগিত করেছে, বন্দর ব্যবহার এবং সুযোগ পাকিস্তান ও বাংলাদেশের জন্য কমিয়েছে। পাকিস্তানের সামরিক স্থাপনাগুলো ধ্বংস করেছে। তাতে তাদের আক্রমণের ক্ষমতা সীমিত করেছে। চীন ভারতের দোকলাম ও গালওয়ানে যে আক্রমণ তা মোকাবিলায় যে কূটনৈতিক উদ্যোগ নিয়েছে, তাতে বিস্মিত হয়েছে। এছাড়া চীনা প্রভাব মোকাবিলায় ভারত চীনবিরোধীদের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ছে। ভারত মনে করে মালদ্বীপ ও শ্রীলঙ্কা এমন ভারতের সঙ্গে ভালোটাই করছে। এসব কারণে চীন, আফগানিস্তান ও বাংলাদশের সঙ্গে সম্পর্ক আরো ঘনিষ্ঠ করছে। ২০২১ ও ২০২৪ সালে যথাক্রমে-আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের শাসকগোষ্ঠীর পতনের আগে দুই দেশের-ভারত, পাকিস্তান ও তার উদ্যোগে সন্ত্রাসী তৎপরতার বিরুদ্ধে ছিল। কিন্তু এখন তারা চীনের কাছাকাছি। এখন পাকিস্তান বাংলাদেশের নতুন সরকারের সঙ্গে নিরাপত্তা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক এনগেজমেন্টে কাজ করছে। ঐতিহাসিকভাবে আফগানিস্তান বাংলাদেশ ও পাকিস্তানের সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কে লিপ্ত। ভারত মনে করে পাকিস্তান এখন সন্ত্রাসী মদত দিয়ে ভারতের কাছ থেকে অন্যান্য দেশকে দূরে নিয়ে যেতে চায়। কিন্তু ভারত যে বাংলাদেশের সন্ত্রাসীদের তাদের দেশে আশ্রয় দিয়ে, তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছে তার হিসাব যে বাংলাদেশের আছে, তা গোনায় ধরে না। 

ভারত আর যাই হোক, এখন শাঁখের করাতে পরিণত হয়েছে। তাকে চীন ও পাকিস্তান কোণঠাসা করে ফেলেছে। শুধু তাই নয়, আমেরিকার কাছেও ভারত এখন এক ভেলকির নাম। মোদির পররাষ্ট্র নীতিকে আমেরিকা সমালোচনা করে। ট্রাম্প মোদিকে মনে করে না যে, সে শান্তির বাহক। গুজরাটে মুসলিম নিধনের জন্য সাম্প্রতিককালে ট্রাম্প মোদির সমালোচনা করেছে। বাংলাদেশে মানুষ হত্যাকারী আওয়ামী লীগ প্রধান ও অন্যান্য আওয়ামী লীগ নেতাদের ভারত আশ্রয় দিয়ে রেখেছে। শুধু তাই নয়, ইরান ছিল ভারতের বন্ধু। ভারত থেকে অনেক ইঞ্জিনিয়ার ইরান নিয়ে গিয়েছিল। কিন্তু তারা বিশ্বাসঘাতকতা করেছে ইরানের সঙ্গে। এতে ভারত যে বিশ্বাসঘাতকদের দেশ তা বিশ্বে প্রতীয়মান হয়েছে। এবার নতুন করে হিসাবনিকাশ করতে হবে। বাংলাদেশে ভারতের চরের অভাব নেই। এতোদিন ছিল আওয়ামী লীগ, এখন তার স্থলে আরেক বৃহৎ দল জুটেছে। কাজেই ভারত এ নিয়ে এখনো ধমকের সুরে কথা বলে। তবে বাংলাদেশের রাজনৈতিক খোলনচি বদলে গেছে। অতএব নতুন করে ভাবতে হবে সবাইকে।

শেয়ার করুন