বাংলাদেশের প্রতিটা মুহূর্তেই অতিবাহিত করছে সঙ্কটময় এক পরিস্থিতির মধ্যদিয়ে। গণঅভ্যুত্থানের পর তিন মাস পেরিয়ে চলছে চতুর্থ মাস। কিন্তু কুলকিনারা করতে পারছে না অন্তর্বর্তী সরকার। যদিও এ সময়ের মধ্যে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে ফেলেছে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন উপদেষ্টা পরিষদ। কিন্তু মানুষ সেগুলোতে দৃষ্টিপাত দিচ্ছে খুবই সামান্য। গুরুত্বপূর্ণ কাজের মধ্যে দেশের অর্থনীতি ছিল ভয়াবহ এক সঙ্কটের মধ্যে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময়ে ওই সঙ্কট প্রকট আকার ধারণ করে। সহায়তা চাইতে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীনের শরণাপন্ন হলেও ব্যর্থ হয়ে খালি হাতে ফিরেছেন। সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ফিরে মোকাবেলা করতে হয়েছে ছাত্র জনতার আন্দোলন। কিন্তু রেহাই পাননি। পালিয়ে যান ভারতে। তার সরকারও তছনছ হয়। কিন্তু দেশে বিরাজমান অর্থনৈতিক সঙ্কট কিন্তু ঠিকই ছিল। এর মধ্যে ডলার সঙ্কট, বেশ কয়টি ব্যাংক দেউলিয়ার দ্বারপ্রান্তে চলে যাওয়া, নিত্যপ্রয়োজনীয় বাজারের ক্রমবর্ধমান উর্দ্ধগতি, আমদানি- রপ্তানি স্থবির হয়ে যাওয়া ডলার সঙ্কটে এসব মহাসমস্যা বিরাজমান ছিল।
এমন সঙ্কটময় সময়ের মধ্যেই গণঅভ্যুত্থান ও এর মধ্যে দেশের হাল ধরেন প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। সে থেকে তিনি ডলার সঙ্কট, ব্যাংকগুলোকে অর্থ দিয়ে দেউলিয়ার পথ থেকে ফেরানো, বিভিন্ন মেগা প্রকল্পে বৈদেশিক লোনের কিস্তি, ছাড়াও আমদানি দায় মেটানো, বিদ্যুৎ খাতের বকেয়া প্রদানসহ নানাস্থানে বন্ধুপ্রতীম দেশসমূহ থেকে সহায়তা নিয়ে আসা ও রেমিটেন্স থেকে প্রাপ্ত ডলার দিয়ে সঙ্কট মিটিয়ে একটা সমান্তরাল পরিস্থিতিতে নিয়ে এসেছে দেশের অর্থনীতি ও রিজার্ভসহ এ সকল খাত।
পাশাপাশি মোকাবেলা করতে হচ্ছে তাকে ভীষণ সব চ্যালেঞ্জিং কার্যাদি। জুলাই আগস্টের গণহত্যার বিচারকার্য থেকে শুরু করে দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ পাচার- সেগুলো ফিরিয়ে আনা, বিগত সরকারের সময়ে এক দলীয় শাসন ব্যবস্থা চালুর জন্য সংবিধানে যে সংস্কারসমূহ করেছিল সেগুলোসহ আরো অন্যান্য স্থানে জনকল্যাণকর সংস্কার কাজে হাত দিয়েছেন ড. ইউনুস।
যদিও বিএনপিসহ অনেক রাজনৈতিক দলই দ্রুত নির্বাচন দেয়ার দাবি তুলছে, কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার না করে নির্বাচন দেয়ার পক্ষপাতি নয়। ইতিমধ্যে উপদেষ্টাদের মুখপাত্র সূত্র জানিয়েও দিয়েছে যে সংস্কার না করে নির্বাচন দিলে ছাত্ররা ধিক্কার দেবে অন্তর্বর্তী সরকারকে। ফলে সংস্কার কার্যাদি সম্পন্ন করেই নির্বাচনে যাবে অন্তর্বর্তী সরকার যে কদিন লাগুক।
তবে বাংলাদেশের বড় সমস্যা আন্তর্জাতিক পর্যায় মোকাবেলা। বিভিন্নভাবে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ চাপে ফেলতে চেষ্টা চালাচ্ছে। এবং নানা তৎপরতা চালাচ্ছে। সে সূত্রেই ত্রিপুরায় উপ হাইকমিশনে আক্রমণ ও জাতীয় পতাকায় আগুন ও ছিড়ে ফেলা। বাংলাদেশের মানুষ ত্রিপুরার রাস্তাঘাটে পেলে মারমুখী হচ্ছে মানুষ। হোটেল থেকে নামিয়ে দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশ চেক পোস্ট বরাবর সড়কে বাশ দিয়ে ব্যারিকেড দেয়া হয়েছে। কলকাতার বিধান সভা থেকে মমতা কেন্দ্রকে আহ্বান জানাচ্ছেন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের রক্ষায় জাতিসংঘের সেনা পাঠানোর অবেদন করার জন্য।
এমন নানা জটিলতা এখন বাংলাদেশের সামনে। এর আগে ট্রাম্প এর একটা ইস্যুও ছিল। সেটাও শেষ হয়নি। এ মাসে অর্থাৎ সপ্তাহ দুয়েকের মাথায় যেয়ে ট্রাম্প দায়িত্ব নেবেন। এরপর বাংলাদেশ প্রসঙ্গে তার কোনো ভূমিকা নেয় কিনা সে দুশ্চিন্তাও আছে। সব মিলিয়ে দেশের এমন এক প্রেক্ষাপটে সবার ঐক্য থাকাটা বেশ জরুরি। সম্ভবত এমন দৃষ্টিকোণ থেকেই প্রধান উপদেষ্টার সংলাপের এমন উদ্যোগ নিয়েছেন বলে মনে করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে তিনি জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন।
এদিকে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং জানিয়েছে, প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস জাতীয় ঐক্যের আহ্বান জানাবেন। কেন হঠাৎ করে তিনি এ ঐক্যের প্রয়োজন মনে করেছেন, তার বিস্তারিত জানা না গেলেও এ বিষয়ে তিনি প্রথমত বৈষম্য বিরোধী ছাত্রদের সঙ্গে, এরপর রাজনৈতিক দলসমূহের সঙ্গে এরপর ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে পর্যায়ক্রমে টানা তিনদিন সংলাপ চালাবেন। এরপর তিনি ওই ঐক্যের আহ্বান জানাবেন।
শফিকুল আলম আরো বলেন, জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এ লক্ষ্যে তিনি ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার ছাত্রনেতাদের সঙ্গে বৈঠকে বসেছেন। আগামীকাল ৪ ডিসেম্বর প্রধান রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে সংলাপ করবেন। এর পরদিন ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গেও সংলাপে বসবেন তিনি।
মঙ্গলবার রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ সম্মেলনে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম এ তথ্য জানান। শফিকুল আলম বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা সবার সঙ্গে সংলাপের আহ্বান করেছেন। তাদের সঙ্গে তিনি বসবেন। বৈঠকের উদ্দেশ্য জাতীয় ঐক্য। তিনি জাতীয় ঐক্যের ডাক দেবেন।’
ভারতীয় গণমাধ্যমে বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানো হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি ভারতীয় গণমাধ্যমের এই প্রয়াসের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। শফিকুল আলম বলেন, বাংলাদেশকে নিয়ে অপতথ্য ছড়ানোর একটা প্রয়াস আমরা দেখছি এবং অনেকাংশে ভারতীয় গণমাধ্যম ব্যাপকভাবে এই কাজটি করছে। এটার জন্য জাতীয়ভাবে ঐক্য তৈরি করে আমাদেরকে বলতে হবে তোমরা দেখো আমাদের এখানে প্রকৃতপক্ষে কী হচ্ছে। অপপ্রচার বন্ধে জাতীয় ঐক্যটা খুব জরুরি বলে তিনি মন্তব্য করেন। তিনি আরও বলেন, অপতথ্য ছড়ানোর সাথে দেশের ইমেজের প্রশ্ন জড়িত। তাই আমাদের পত্রিকাগুলোকে বলবো আপনারা এই ভয়াবহ তথ্য সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রকৃত ঘটনা তুলে ধরুন।
ভারতীয় গণমাধ্যমে অপতথ্য বন্ধে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে সেদেশের সরকারের নিকট সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে কি না, এমন এক প্রশ্নের উত্তরে প্রেস সচিব বলেন, আগস্টের শেষের দিকে প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠক হয়, সেখানে অধ্যাপক ইউনূস ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে বলেছিলেন ভারতীয় সাংবাদিকদের বাংলাদেশে আসার ক্ষেত্রে উৎসাহিত করুন, তারা বাংলাদেশে এসে দেখুক প্রকৃত ঘটনা কী বা সংখ্যালঘু নির্যাতন হয়েছে কি না বা আদৌ এমন ঘটনা ঘটছে কি না। তিনি বলেন, ভারতীয় সাংবাদিকরা নির্দিষ্ট কিছু জায়গা থেকে তথ্য নিচ্ছে, সেখান থেকে তারা ভুল তথ্য পাচ্ছে।
শফিকুল আলম বলেন, তারা তথ্য পাচ্ছে তাদের লাইকিংয়ে (পছন্দে) যারা পড়ছেন, সেটা হতে তথ্য নিচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রে নাম ছাড়া তথ্য নিচ্ছেন। আবার তারা বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ থেকেও তথ্য নিচ্ছেন। নেত্র নিউজ দেখিয়েছে তাদের তথ্যে বড় রকমের গলদ আছে। ৯ জনের মৃত্যুর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তার কোনোটি সাম্প্রদায়িক কারণে হয়নি। মৃত্যুগুলোর পেছনে ছিল রাজনৈতিক ও ব্যক্তিগত কারণ। সংগঠনটি নেত্র নিউজের প্রতিবেদনের নিয়ে কোনো প্রতিবাদ জানায়নি। তারা এটাও বলেনি আমরা ঘটনাগুলো পুনরায় দেখি।
তিনি বলেন, ‘আমরা আন্তর্জাতিক সকল গণমাধ্যমকে আমন্ত্রণ জানাচ্ছি, আপনারা আসুন দেখে যান বাংলাদেশে কী ঘটছে।’
বাংলাদেশ নিয়ে অপতথ্য চালানোর ফলাফল হলো আগরতলায় বাংলাদেশ মিশনে হামলা বলে জানান শফিকুল আলম। তিনি বলেন, এটার জন্য দায় চাপাবো ভারতীয় গণমাধ্যমকে। এ গণমাধ্যম কোনও তথ্য নিশ্চিত হওয়া ছাড়া মিথ্যা অপতথ্য ছড়াচ্ছে। তারা আগেই নির্ধারণ করে দিচ্ছে বাংলাদেশে কী হচ্ছে। অবস্থান পূর্বনির্ধারিত থাকলে বেশি এগোনো যায় না। ফলে ভারতীয় জনগণ সহিংসতা করছে। শফিকুল আলম বলেন, অপতথ্য প্রচারের বিরুদ্ধে আমাদের নাগরিক সমাজ, রাজনৈতিক দল, প্রবাসী সবাই মিলে সোচ্চার হওয়া উচিত। অপতথ্য ছড়ানোর মাধ্যমে আমাদের পুরো জাতিকে একটা কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর চেষ্টা চলছে বলে তিনি অভিযোগ করেন। এক প্রশ্নের জবাবে প্রেস সচিব বলেন, আমরা ভারতের সঙ্গে সুসম্পর্ক চাই। তারা আমাদের বৃহৎ প্রতিবেশী। আমরা মনে করি এ সুসম্পর্ক হতে হবে ন্যায্যতা ও সমতার ভিত্তিতে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র সমন্বয়কের সঙ্গে সংলাপ
জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একটি প্রতিনিধিদলের সঙ্গে মত বিনিময় করেছেন প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস। ৩ ডিসেম্বর মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় এ মতবিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয় বলে জানিয়েছে বাসস।
এসময় শিক্ষার্থীরা প্রধান উপদেষ্টার কাছে দ্রব্যমূল্যের দাম নিয়ন্ত্রণ, নিহতদের রাষ্ট্রীয় খেতাব দেওয়া, আহতদের সুচিকিৎসায় সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেওয়া এবং জুলাই গণহত্যায় জড়িতদের সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিতের জন্য জোর দিতে বলেন। এছাড়া গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চলছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীরা।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘খুচরাভাবে কয়েকজন শিক্ষার্থীর সঙ্গে আগে দেখা হয়েছে। আজকে অনেকের সাথে দেখা হলো। ভালো হলো। তোমাদের কথা শুনতেই মূলত আজকে বসা। তোমরা সরকারের কাছে কী চাচ্ছো, আশাগুলো কী, পরামর্শ আছে কি না কোনো এটি জানতে চাওয়া।’ অধ্যাপক ইউনূস আরও বলেন, ‘তোমরা রাষ্ট্রের অভিভাবক, তোমাদের কারণেই রাষ্ট্র। এই ভূমিকা ভুলে যেও না। নিজেদের ভূমিকা ভুলে যেও না। অনেকে এখানে আছে, অনেকে নেই। যারা নেই, তারাও রাষ্ট্রের অভিভাবক। তোমাদের দায়িত্ব আছে রাষ্ট্র যেন ঠিক পথে চলে, যেন বিচ্যুত না হয়। এইটুকু মনে রাখলে রাষ্ট্র ঠিক থাকবে। নিজের অভিভাবকতত্ব ভুলে যেও না।’
দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ প্রসঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরামর্শকে স্বাগত জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘দ্রব্যমূল্য ঠিক থাকতে হবে। সিন্ডিকেট নাকি কী এই ধরনের ব্যাখ্যা আমরা চাই না। কতগুলো লোক বাজারমূল্য কবজা করে থাকবে সেটা হতে পারে না। আমরা চেষ্টা করছি দ্রব্যমূল্য ঠিক রাখার। আমরা দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখতে চাই। রমজানেও দ্রব্যমূল্য স্টেবল রাখার ব্যাপারে সর্বোচ্চ উদ্যোগ নিতে হবে। হঠাৎ করে যেন কোনো পরিস্থিতি না হয়।’
স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘স্থানীয় সরকার সংস্কারের জন্য কমিশন আছে। তারা পরামর্শ দেবে আমরা কাজ করব। আমরা চাই স্থানীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা ছেড়ে দেওয়া। খুব কম জিনিস উচ্চ পর্যায়ে থাকবে। দুর্নীতিগ্রস্ত সিস্টেম, একবার একটা ফান্ড বানিয়ে দিলে কারা যেন খেয়ে ফেলে। সেজন্য সুশৃঙ্খলভাবে সঠিক ব্যবস্থা নিতে হবে। যেন স্থায়ী হয়।’ জুলাইয়ে শহীদদের রাষ্ট্রীয় সম্মান ও খেতাবের বিষয়ে শিক্ষার্থীদের পরামর্শে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘আমরা এটি নিয়ে কাজ করছি। জুলাইয়ে যারা শহীদ হয়েছে তাদের অবদান আমরা ভুলব না। তাদেরকে যথাযথ রাষ্ট্রীয় মর্যাদা দেওয়া হবে।’ শিক্ষাক্ষেত্রে সংস্কার প্রয়োজন শিক্ষার্থীদের এমন পরামর্শের প্রসঙ্গে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। যেন বাংলাদেশে কেউ শিক্ষিত না হয়ে উঠতে পারে, দক্ষ হয়ে উঠতে না পারে সেজন্য পরিকল্পিতভাবে এটা হয়েছে। বেকারত্ব তৈরি করা হয়েছে। উদ্যোক্তাদের জন্য উৎসাহব্যঞ্জন কিছু নেই। এটা আমদের ঠিক করতে হবে। তরুণদের দক্ষ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে।’
পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থীদের জন্য পর্যাপ্ত আবাসনের ব্যবস্থার করার পরামর্শ দিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। প্রধান উপদেষ্টা এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমি যখন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হই। আমাদের অর্থনীতি বিভাগে নারী শিক্ষার্থী ছিল মাত্র চারজন। তোমরা বলছো, এখন বিশ্ববিদ্যালয়ে নারী শিক্ষার্থী প্রায় ৫২ শতাংশ। এটি অত্যন্ত আনন্দের কথা। বিশ্ববিদ্যালয়ে যে রাজনৈতিক বলয়ের মধ্যে আগে সিট বন্টন হতো সেই দাসপ্রথা এখন ভেঙে গেছে। শিক্ষার পরিবেশ নষ্ট হতে দেওয়া যাবে না।’
মঙ্গলাবের মতবিনিময়ে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বারবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সরকারের বিরুদ্ধে অপপ্রচার ও গণমাধ্যমে সরকারের কাজ সঠিকভাবে প্রচার না হওয়ার বিষয়টি উঠে আসে। শিক্ষার্থীদের এমন বক্তব্যে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘যারা সোশ্যাল মিডিয়ায় কথা বলে তারা সরকারের বিরুদ্ধে সরব এটা ঠিক। সরকারের নিজের কোনো পত্রিকা নেই। আছে শুধু প্রেস উইং। তারা পত্রিকায় প্রেস রিলিজ পাঠায়। কেউ ছাপে, কেউ ছাপে না কিংবা তাদের মনমতো শেষ পাতায় বা কোণায় ছোট করে দেয়। প্রেস উইং ওদের মতো করে চেষ্টা করছে, কাজ করছে। সরকার কোনো গণমাধ্যম নিয়ন্ত্রণ করবে না। সংবাদপত্র স্বাধীনভাবে কাজ করবে-এটাই আমাদের নীতি। আমরা এই নীতিতে থাকব। আমি বুঝতে পারছি তোমরা কিছুটা মনোক্ষুণ্ণ। এটা আসলে কিছুটা মন খারাপ হওয়ার মতো যে সরকারের কাজ মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘পুরো সিস্টেমটাই ধ্বংস করে দিয়ে গেছে। চারদিকে চুরি-চামারি, ব্যাংক কাজ করে না। কমিটি অর্থনীতির শ্বেতপত্র দিয়েছে। আমি বলেছি, এটা একটা ঐতিহাসিক দলিল। আমি মনে করি এটা প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ানো উচিত। দেশের অর্থনীতিকে ধ্বংসস্তুপে পরিণত করার দায় আওয়ামী লীগের। তবে যারা উন্নয়নের জোয়ার বয়ে যাচ্ছে বলে ঘোষণা দিয়েছে তাদেরও ধরতে হবে।’
‘যে ধ্বংসস্তুপ রেখে গেছে সেখান থেকে বের হওয়া কঠিন। যেদিকে হাত দেই সেদিকেই ভাঙাচোরা। এই ভাঙাচোরা পরিষ্কার করেই যাচ্ছি। কাজ শুরু করতে গিয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে।’ শিক্ষার্থীরা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রতি পূর্ণ আস্থা ও সমর্থন জানিয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে সংস্কার কাজে সর্বোচ্চ সহযোগিতা দেওয়ার আশ্বাস দেন। তারা জানান, দেশের মানুষ সরকারের পাশে আছে। এটি গণমানুষের সরকার। জনগণ চায় অন্তর্বর্তী সরকার যেন প্রয়োজনীয় সংস্কারের কাজটি সম্পন্ন করে।
প্রধান উপদেষ্টা শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘দেশের মানুষ ছাত্রদের ওপর ভরসা করে। এই বিশ্বাস ধরে রেখো। হাতছাড়া করো না। তোমরা কখনোই আশাহত হবে না। তোমরা অসম্ভবকে সম্ভব করেছ। দেশ বদলিয়ে ফেলেছ। তোমরাই পারবে। মানুষের আশা তোমাদের পূরণ করতে হবে। অন্তত সে পথে তোমাদের অগ্রসর হতে হবে। এক বিজয় করেছো, আরেক বিজয় আসবে। তোমরা বারবার আমাদের মনে করিয়ে দেবে যেন আমরাও সতর্ক হই, সজাগ হই।’