৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০৭:৩২:০৯ পূর্বাহ্ন


ভোটের সমীকরণ
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৬-০৭-২০২৫
ভোটের সমীকরণ ভোটের বাক্স


শেষ পর্যন্ত সব বাধাবিপত্তি পেরিয়ে ধরে নিলাম ২০২৬ প্রথম দিকে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। সেই নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলগুলো নানাভাবে প্রস্তুতি শুরু করেছে। নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে পরিবর্তন এমনকি অন্তর্বর্তী সরকারেও কিছু পরিবর্তন হতে পারে। হয়তো কিছু সর্বসম্মত মৌলিক সংস্কার হবে। অনেকের ধারণা শর্তসাপেক্ষে আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়া হবে। নির্বাচন ঘিরে অংশগ্রহণ দলগুলোর মধ্যে মেরুকরণ শুরু হয়েছে। আওয়ামী লীগ যদি অংশগ্রহণ করে, তাহলে একধরনের না হলে সম্পূর্ণ ভিন্ন ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হবে। 

চলছে জুলাই সনদ ঘোষণার প্রস্তুতি। সরকারের ঐকমত্য কমিশন সংস্কার বিষয়ে কিছু বিষয়ে ঐকমত্য অর্জনের জন্য রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ অব্যাহত রেখেছে। কয়েকটি সংস্কার বিষয় নিয়ে বিএনপি এবং অন্য দলগুলোর মধ্যে মতবিরোধ সুস্পষ্ট। এগুলো নিয়ে সময় নষ্ট না করে সরকারের উচিত দ্রুত সম্মত সংস্কারগুলোর ওপর ভিত্তি করে জুলাই সনদ ঘোষণা করা। ইতিমধ্যে নবগঠিত রাজনৈতিক দল এনসিপি দেশব্যাপী গণসংযোগ শুরু করেছে। তারা দাবি করেছে সরকার জুলাই মাসের ভেতর জুলাই সংস্কার ঘোষণা করতে ব্যর্থ হলে এনসিপি সবাইকে নিয়ে ৩ আগস্ট ২০২৫ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সমাবেশ করে জুলাই সনদ ঘোষণা করবে।

অনেকের ধারণা আওয়ামী লীগের অবর্তমানে নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা লাভ করবে বিএনপি। হয়তো কিছু সমমনা দল নির্বাচনে বিএনপির সঙ্গে জোট বাঁধবে। বিএনপি অবশ্য প্রতিশ্রুতি দিয়ে রেখেছে নির্বাচনে জয়ী হলে তারা রাজপথের সঙ্গীদের নিয়ে বহুদলীয় সরকার গঠন করবে। অন্যদিকে জামায়াত, এনসিপি এবং ইসলামি দলগুলো নির্বাচনী মোর্চা গঠনের জন্য আলোচনা করছে। নির্বাচন অবাধ, নিরপেক্ষ হলে বর্তমান পরিস্থিতিতে কোন দল বা জোট জিতবে সেটি আগাম বলা কিছুটা অনিশ্চিত। নির্ভর করবে আওয়ামী লীগ নির্বাচন থেকে বাইরে থাকলে ওদের ভোট ব্যাংক কোনদিকে ঝুঁকে পড়ে। 

কিছু দল কৌশলের কারণে নানাভাবে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করছে। জানি না নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে পরিবর্তন হবে কি না। অন্তর্বর্তী সরকারে পরিবর্তন হবে কি না। তবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, সরকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির ওপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ স্থাপন করতে পারেনি। নতুন সংকট মব সন্ত্রাস চলছে। প্রতিপক্ষ মতামত দমনের এই নতুন কৌশল নির্মূলে সরকার ব্যর্থ হলে নির্বাচনকালে এটি মহামারি রূপ নিতে পারে। দেশীয় এবং আন্তর্জাতিক চাপে সরকার হয়তো শেষ পর্যন্ত আওয়ামী লীগের ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে বাধ্য হবে। জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ড এবং ধ্বংসযজ্ঞের বিচার প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা এবং নিরপেক্ষতা নিয়ে নানা ধরনের বিতর্ক আছে। অজস্র ভুয়া মামলার ভিড়ে প্রকৃত অপরাধীদের গ্রহণযোগ্য হবে কি না সন্দেহ। যেটুকু সংস্কার সম্ভব সেগুলো সম্পাদন করে এবং বিচার প্রক্রিয়ার বিতর্ক পরিহার করে সরকার দ্রুত নির্বাচন অনুষ্ঠানের জোর প্রস্তুতি শুরু করা জরুরি। 

জুলাই-আগস্ট পরিবর্তনের পর এক বছরেও জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হয়নি। সাধারণ মানুষ এবং ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী হতাশ এবং দ্বিধাগ্রস্ত। নির্বাচনে তাদের হতাশার প্রতিফলন হতে পারে। তরুণদের দল এনসিপি তৃণমূলে সম্পৃক্ত হয়ে দায়িত্ববোধের পরিচয় দিলে নির্বাচনের সমীকরণ পাল্টে যেতে পারে। বিশেষ করে তরুণ ভোটাররা চটকদার সেøাগানে বিভ্রান্ত হবে না বলেই মনে করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে।

সরকারের উচিত হবে দ্রুত দেশব্যাপী নিরপেক্ষ নির্বাচনী পরিবেশ সৃষ্টি। সব স্টেকহোল্ডারকে সম্পৃক্ত করে সুষ্ঠু নির্বাচনের সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা নেওয়া। নির্বাচন হওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। রাজনৈতিক দলগুলোর উচিত সুস্পষ্ট নির্বাচনী ইশতিহার নিয়ে জনগণের কাছে যাওয়া। আশা করি, নির্বাচনের সময় যেন সহিষ্ণুতা, শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান বজায় থাকে।

শেয়ার করুন