২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:১৭:৪১ অপরাহ্ন


ভেন্ডারদের বিরুদ্ধে ভারতীয় ব্যবসায়ীদের অভিযোগ
বাংলাদেশের চাঁদরাত এখন প্রবাসে
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
বাংলাদেশের চাঁদরাত এখন প্রবাসে গত ৮ জুলাই রাতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদরাত পালন করা হয়। বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলো ওইসব এলাকা /নিজস্ব ছবি


ঈদের সময় বাংলাদেশে সবচেয়ে আকর্ষণীয় ছিলো চাঁদরাত। পাড়া বা মহল্লার ছেলেমেয়েরা দলবেঁধে এই চাঁদরাত পালন করতো। বাংলাদেশের বড় বড় শহর এবং মফস্বল শহরে চাঁদরাতে হাতে মেহেদি লাগানো হতো, অনেকেই কেনাকাটা করতো এবং গান-বাজনা করতো। বর্তমানে বাংলাদেশে নানা পরিস্থিতির কারণে চাঁদরাত হয় না। অনেকেই বলেছেন, বাংলাদেশের নতুন প্রজন্ম জানেই না চাঁদরাত কী। চাঁদরাতের উৎসব কী তারা তা জানে না। হারিয়ে যেতে বসেছে বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশ। বাংলাদেশে একে একে সব ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশে ঐতিহ্য হেরে যেতে বসলেও প্রবাসে বাংলাদেশের ঐতিহ্য হারিয়ে যাচ্ছে না। বাংলাদেশ থেকে আসার সময় তারা তাদের মাথার মধ্যে বাংলাদেশকে নিয়ে এসেছেন। বাংলাদেশের ঐতিহ্যের অংশগুলোকে নিয়ে এসেছেন। যে কারণে নিউইয়র্কসহ উত্তর আমেরিকার বাংলাদেশি অধ্যুষিত স্টেটগুলোতে এসব অনুষ্ঠান পালন করা হয়। গত ৮ জুলাই রাতে বাংলাদেশি অধ্যুষিত জ্যাকসন হাইটস, জ্যামাইকা, ব্রঙ্কসসহ বিভিন্ন এলাকায় চাঁদরাত পালন করা হয়। বাঁধভাঙা আনন্দের জোয়ারে ভেসে গিয়েছিলো ওইসব এলাকা।

তবে এবার জ্যাকসন হাইটসের চিত্র ছিলো ভিন্ন। কারণ যারা ভাসমান স্টোর এবং চেয়ার-টেবিল নিয়ে মেহেদি লাগাতে বসেতেন- তারা এবার বাধার মুখে পড়েন। ভেন্ডারদের ঈদের সময় জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রিট এবং ৭৩ স্টিটে বসতে দেয়া হয়নি। তাদের বসতে দেয়নি সিটি কর্তৃপক্ষ। জানা গেছে, এক সপ্তাহ আগে জ্যাকসন হাইটসের ব্যবসায়ীদের সাথে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের বৈঠক হয়। সেই বৈঠকেই ভারতীয় ব্যবসায়ীরা ভেন্ডারদের নিয়ে অভিযোগ করেন। সেই অভিযোগের কারণেই ঈদের সময় ভেন্ডারদের বসতে দেয়া হয়নি। তবে সিটির কর্মকর্তারা সন্ধ্যা ৬টার পর চলে যায়। তারপরই ভেন্ডাররা তাদের স্টল নিয়ে বসেন। এ নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন ভেন্ডার। তারা ক্ষোভের সাথে বলেন, এই কাজ করেই আমরা আমাদের সংসার চালাই। কিন্তু আমাদের পেটে লাথি দিয়ে ব্যবসায়ীদের কী লাভ হলো? তাছাড়া যারা মেহেদি লাগাতে এসেছেন তাদের অনেক ভোগান্তির শিকার হতে হয়েছে। তারা তো মাত্র একদিনের জন্য মেহেদি লাগাতে এসেছেন তাদেরও কী দোষ? এটাতো উৎসবের অংশ ছিলো, বাঙালির ঐতিহ্যের অংশ ছিলো। তারা সারাদিন অপেক্ষা করে সন্ধ্যা ৬টা পর চেয়ার টেবিল নিয়ে বসেছিলেন। নতুন প্রজন্মের কলেজপড়ুয়া ছেলেমেয়ের মেহেদি লাগাতে বসেছিলেন। অনেকেই লাইন ধরে অপেক্ষা করে হাতে মেহেদি লাগিয়েছেন। বিশেষ করে জ্যাকসন হাইটসের ৭৪ স্ট্রিট, ৭৩ স্ট্রিট এবং ডাইভারসিটি প্লাজায় চেয়ার টেবিল নিয়ে বসেন। জ্যামাইকার ১৬৮ স্ট্রিটের ওপরে, ব্রঙ্কসের স্টারলিং বা বাংলাবাজার অ্যাভিনিউতে।

অনেকেই জানিয়েছেন, মেহেদি লাগানোর ক্ষেত্রে ছিলো ভিন্ন ভিন্ন দাম। কারণ মেহেদির ওপরই নির্ভর করেছে দাম। এক হাতে মেহেদি লাগাতে নেয়া হয়েছে ১৫ ডলার, দুই হাতে ৩০ ডলার। আবার কেউ কেউ নিয়েছেন এক হাত ১০ ডলার এবং দুই হাতে ২০ ডলার। মহিলাদের পাশাপাশি নতুন প্রজন্মের শিশুদের হাতে মেহেদি দিতে দেখা যায়। আবার ভিনদেশিরাও তাদের হাতে মেহেদি লাগিয়েছেন।

মেহেদির পাশাপাশি ছিলো নতুন প্রজন্মের ছেলের উৎসব এবং আতশবাজি। সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত আতশবাজির উৎসব চলে। সেই সাথে ছিলো বিভিন্ন গাড়িতে ফুল ভলিউমে গান চালানো। গানের সাথে তাদের নাচ এবং উচ্ছ্বাস পুলিশকে হার মানতে বাধ্য করেছে। প্রথম দিকে পুলিশ বাধা দেয়ার চেষ্টা করলেও গভীর রাতে যখন মানুষের উপস্থিতি বাড়তে থাকে এবং উৎসবের রঙ বাড়তে থাকে তখন পুলিশ এলাকা ছেড়ে চলে যায়। তারপরেই চলে উৎসবের রঙ নানা রূপ ধারণ করে। নিউইয়র্ক ছাড়াও আশপাশের স্টেট থেকে অনেকেই আসেন উৎসবের রঙ বাড়াতে।


শেয়ার করুন