২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:১৫:১৭ পূর্বাহ্ন


ফিরে যাবার প্রাক্কালে সংবাদ সম্মেলনে মিশেল ব্যাচেলেট
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা চায় জাতিসংঘ
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৮-০৮-২০২২
গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগে স্বাধীন তদন্ত সংস্থা চায় জাতিসংঘ ঢাকায় সংবাদসম্মেলনে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিচেল ব্যাচেলেট/ছবি সংগৃহীত


গুরুত্বপূর্ণ বেশ কিছু সময় অতিবাহিত করে ঢাকা ছেড়ে গেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। যাবার আগে সংবাদ সম্মেলনে যা বলেছেন তার সংক্ষিপ্তরুপ, নিয়মিতহারে গুমের অভিযোগ আসছে। যে বিষয়টা প্রথম দিন চার মন্ত্রীর সঙ্গে আলাপ কালে তিনি শুনেছেন তাদের কাছ থেকে, সাংবাদিকদের কাছে তিনি তুলে ধরেছেন তার বিপরীত চিত্র। কারন প্রধানমন্ত্রী,সিনিয়র চার মন্ত্রী ছাড়াও তিনি মানবাধিকারকর্মী সহ বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজনের সঙ্গে সাক্ষাত হয়। সেখান থেকেও অনেক তথ্য তিনি পেয়েছেন। পরিশেষে তার কাছে যেটা গ্রহনযোগ্য সে আলোকেই জানিয়েছেন তিনি সাংবাদিকদের। 

তবে এ বিষয়ে মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ থাকলে- তা অস্বীকার না করে সরকারকে আমলে নিতে বলেছেন জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাচেলেট। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশে গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতনের গুরুতর অভিযোগের বিষয়গুলো নিয়ে সরকারের কাছে গভীর উদ্বেগ জানিয়েছেন। মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগগুলো সুরাহার স্বার্থে স্বাধীন, নিরপেক্ষ ও স্বচ্ছ তদন্ত সংস্থা গঠনের প্রয়োজনীতার কথাও বলেছেন। সম্মেলনে প্রথম লিখিত বক্তব্য দেয়ার পর সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন তিনি। 

লিখিত বক্তব্যে মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, নির্যাতনবিরোধী কমিটিসহ জাতিসংঘের মানবাধিকার পরিষদের বিভিন্ন কমিটি কয়েক বছর ধরে বাংলাদেশের গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা এবং নির্যাতন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়ে আসছে। এসব অভিযোগের অনেকগুলোতেই র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নকে (র‌্যাব) দায়ী করা হয়েছে। মানবাধিকার লঙ্ঘনের ওই ঘটনাগুলোর ক্ষেত্রে জবাবদিহির অভাব রয়েছে। সরকারের মন্ত্রীদের কাছে এই গুরুতর অভিযোগ সম্পর্কে গভীর উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন তিনি। এসব অভিযোগের বিষয়ে নিরপেক্ষ, স্বাধীন ও স্বচ্ছ তদন্তের প্রয়োজনীয়তার পাশাপাশি বাংলাদেশের নিরাপত্তা বাহিনীগুলোর সংস্কারের প্রয়োজনীয়তার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

সম্মেলনে জাতিসংঘের মিশেল ব্যাচেলেট বলেন, নিয়মিতভাবে স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদে গুমের অভিযোগ আসছে। যথাযথ প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে এসব অভিযোগের সুরাহা  এবং বিচারিক সুরক্ষার বিষয়েও উদ্বেগ আছে। বিশেষ করে তদন্তে অগ্রগতির অভাব এবং ন্যায়বিচার পেতে কিছু বাধা থাকায় এ বিষয়ে দীর্ঘস্থায়ী হতাশা তৈরি হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে সরকারকে গুম ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগ তদন্তে একটি বিশেষায়িত সংস্থা গঠনের প্রস্তাব করেছেন তিনি। প্রস্তাবিত ওই সংস্থায় ভুক্তভোগী, তাঁদের পরিবার এবং নাগরিক সমাজের সঙ্গে সরকার নিবিড়ভাবে কাজ করবে। আন্তর্জাতিক মানদণ্ড অনুসরণ করে সংস্থাটি কীভাবে গঠিত হবে, সে বিষয়ে পরামর্শ দেওয়ার জন্য জাতিসংঘের দপ্তর তৈরি আছে বলেও তিনি জানান। একই ভাবে তিনি জানান দেন, জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে সর্বোচ্চ সেনা পাঠানো দেশ হিসেবে বাংলাদেশের উচিত, মানবাধিকার রক্ষাকে গুরুত্ব দেওয়া।

তিনি এক প্রশ্নের উত্তরে বলেন, ‘আমি আমার উদ্বেগের বিষয়গুলো তাঁদের (মন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকে) কাছে তুলে ধরেছি। তাঁরা যা বলেছেন, আমি তা শুনেছি।’ 


জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মনে করেন, বাংলাদেশের অগ্রযাত্রায় গণতান্ত্রিক ও রাজনৈতিক পরিসরের পাশাপাশি কার্যকর ভারসাম্য এবং জবাবদিহি থাকাটা জরুরি। এতে দুর্নীতির ঝুঁকি কমবে এবং টেকসই অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রতিবন্ধকতাও কমাবে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশন, নির্বাচন কমিশন ও বিচার বিভাগসহ প্রতিষ্ঠানগুলোর স্বাধীনতা জরুরি বলেও মনে করেন তিনি।

এদিকে  বাংলাদেশে নির্বাচনকালে নাগরিক ও রাজনৈতিক চর্চার পরিধি বাড়ানো গুরুত্বপূর্ণ বলে অভিমত রেখেছেন মিশেল ব্যাচেলেট। একইভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যাতে মাত্রাতিরিক্ত বল প্রয়োগ না করে বিক্ষোভ দমন করতে পারে, এ জন্য তাদের প্রশিক্ষণের বিষয়টি নিশ্চিত করা জরুরি। তিনি মতপ্রকাশের স্বাধীনতা, রাজনৈতিক কর্মী, মানবাধিকারকর্মী, বিরোধী দল এবং সাংবাদিকদের শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশের অধিকার এই চর্চার অন্তর্ভুক্ত। তাঁর মতে, বিক্ষোভ থেকে যাতে সামাজিক অসন্তোষ ছড়িয়ে না পড়ে, সে জন্য রাজনৈতিক দল এবং নাগরিক সমাজের মধ্যে সংলাপের চর্চার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। নারী, ধর্মীয় সংখ্যালঘু, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী এবং তরুণ সম্প্রদায় যেন মতপ্রকাশ করতে পারে। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের সংস্কারের বিষয়ে তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন এবং মানদণ্ড নিশ্চিত করতে এবং নির্বিচারে এই আইনের (ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন) প্রয়োগ বা অপব্যবহার রোধ করতে এর কিছু ধারা বাতিল ও সংশোধনের সুপারিশ করার কথাও তিনি জানান। এ বিষয়ে সরকারের জবাবের অপেক্ষায় থাকার কথা বলেছেন তিনি।


শেয়ার করুন