২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:৪৫:৫১ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


উত্তরাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন অপরিহার্য
খন্দকার সালেক
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৭-২০২২
উত্তরাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়ন অপরিহার্য গাইবান্ধা,রংপুর অঞ্চলের একটি নদীর দৃশ্য/ছবি সংগৃহীত


অস্বীকার করার উপায় নেই যে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে অসামান্য অবদান রাখা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫১ পরেও রাজশাহী, রংপুর বিভাগের বৃহত্তর জেলাসমূহ এবং দক্ষিণাঞ্চলের খুলনা, বরিশাল বিভাগ এবং ফরিদপুরের  উন্নয়ন  হয়নি। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু উত্তরাঞ্চলের উন্নয়ন সুবিধা উন্মোচন করলেও রংপুর, দিনাজপুরের খনিজসম্পদ মাটির নিচে রেখে কাংখিত  অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়নি। সবে পদ্মা সেতু সড়ক যোগাযোগের জন্য খুলে দেয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের সমন্বিত উন্নয়নের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দক্ষিণাঞ্চল নিয়ে আলাদা আলোকপাত করবো। আজ এখানে উত্তরাঞ্চল নিয়ে লিখছি। 

এই সরকারের আমলে গোটা দেশ বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় আসা একটি বিশাল অর্জন। কিন্তু ভুল জ্বালানি কৌশলের কারণে দেশের জ্বালানি সম্পদ আহরণে স্থবিরতা থাকায় টেকসই জ্বালানি নিরাপত্তা হুমকির মুখে। তথাপি যতোটুকু সুযোগ আছে সেটির সমতাভিত্তিক বণ্টন হয়নি। কবে হবে সেটিরও নিশ্চয়তা নেই।রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর অঞ্চল খাদ্যশস্য, ফল-ফসলের অফুরন্ত ভাণ্ডার। কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।  কিন্তু দীর্ঘদিন আগে রাজশাহী, পাবনা, বগুড়া পর্যন্ত গ্যাস সঞ্চালন-ব্যবস্থা পৌঁছে গেলেও শিল্পে গ্যাস সরবরাহ না করায় কাক্সিক্ষত উন্নয়ন হয়নি।

এমনকি বঙ্গবন্ধু যমুনা সংলগ্ন শিল্পপার্ক, ঈশ্বরদী এলাকায় কাক্সিক্ষত শিল্প গড়ে ওঠেনি। একসময় ভারতের টাটা গ্রুপ ঈশ্বরদীতে স্টিল মিল, তাপবিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রস্তাব দিয়েছিলো। বিএনপি-জামাত সরকার বিষয়টি যথাযথভাবে পর্যালোচনা না করে ওদের চাহিদা অনুযায়ী কয়লাখনি দেয়া নিয়ে জটিলতার সৃষ্টি করে। চলে যায় টাটা, ফুলবাড়ী কয়লাখনি নিয়ে সংকট সৃষ্টি হয়। সেই থেকে মাটির নিচে পড়ে রয়েছে উন্নত মানের কয়লা, যা দিয়ে ১০ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ খনিমুখে উৎপাদন করা গেলে গোটা অঞ্চলের দৃশ্য পাল্টে যেতো। না হয়েছে কয়লা উৎপাদন, না হয়েছে টাটার স্টিল কারখানা। তবুও স্বস্তি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র গড়ে উঠছে। বঙ্গবন্ধু সেতুর সিরাজগঞ্জ বগুড়া রেললাইনেরকাজ শুরু হচ্ছে।

রাজশাহী অঞ্চলের আম, দিনাজপুরের লিচু যদি প্রসেস করে রফতানি করা হতো তাহলে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা যেতো। কিন্তু না আছে কোল্ড স্টোরেজ, না আছে কৃষিভিত্তিক শিল্পপ্রতিষ্ঠান। সৈয়দপুরের রেল-কারখানাটি আধুনিকায়ন করা হলে বাংলাদেশের রেলব্যবস্থা রক্ষণাবেক্ষণে বিশাল ভূমিকা পালন করতে পারতো। এখন বগুড়া থেকে গ্যাস সঞ্চালনব্যবস্থা রংপুর পর্যন্ত সম্প্রসারণ হচ্ছে। জানিনা বাড়তি গ্যাস কোথা থেকে আসবে।  তবে গ্যাস পাওয়া গেলে এই অঞ্চলে ব্যাপক কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা গড়ে ওঠার ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।

নাটোরে একসময় বঙ্গবন্ধু উত্তরা গণভবন করেছিলেন। এই অঞ্চলের ইতিহাসে নাটোর, দিনাজপুর, বগুড়ার বিশেষ ঐতিহ্য আছে। অনেক দর্শনীয় স্থান আছে- সেগুলো পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তোলা হলে পর্যটনশিল্পে বিকাশ ঘটবে। আমি সৈয়দপুর এবং রাজশাহী বীণবন্দর দুটির আশু আধুনিকায়ন জরুরি বলে মনে করি। 

উত্তরাঞ্চল কিছুটা পিছিয়ে পড়েছে শিক্ষা, খেলাধুলা আরসংস্কৃতি বিকাশে। রাজশাহী, বগুড়া, রংপুর, দিনাজপুর,পাবনা অঞ্চলে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম থাকলে খেলাধুলার ব্যাপক প্রসার হতো। এই অঞ্চলে আরেকটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়টি বিবেচনা করা যেতে পারে। 

রাজশাহী জেলা এখন বিশ্বের সবুজ শহর। এটিকে মডেল করে সমগ্র অঞ্চল সবুজায়ন করা যেতে পারে। তবে একটি বিষয়ে অবশ্যই বর্তমান সরকার সাধুবাদ পাবে রংপুর অঞ্চলের মঙ্গাকে জাদুঘরে পাঠিয়েছে। আমি আশা করি, সরকার অবশিষ্ট সময়ে এবং নতুন যে সরকার আসুক তারা নিম্ন বর্ণিত সুপারিশগুলো পর্যায়ক্রমে বাস্তবায়ন করবেন। তিস্তা নদীর পানিবণ্টন বিষয়ে ভারতের সঙ্গে যথাসত্বর দফারফা করা। অবিলম্বে দিনাজপুর-রংপুরের কয়লা এবং খনিজসম্পদ আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে আরোহন,উত্তোলন এবং মাইন মুখে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন। 

রংপুর পর্যন্ত গ্যাস পাইপলাইন দ্রুত শেষ করে সকল জেলায় অন্তত শিল্প সরবরাহ করা রাজশাহী এবং সৈয়দপুর বিমানবন্দর আধুনিকায়ন। রাজশাহী, বগুড়া, রংপুরে আন্তর্জাতিক মানের স্টেডিয়াম নির্মাণ করে নিয়মিত ফুটবল ক্রিকেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচ চালু করা। কৃষিভিত্তিক শিল্পকারখানা প্রতিষ্ঠায় প্রণোদনা দেয়া রংপুর বা দিনাজপুরে একটি কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তোলা। অবিলম্বে সিরাজগঞ্জ- বগুড়া রেল নির্মাণ কাকতলীয়ভাবেই আওয়ামী লীগ, বিএনপি এবং জাতীয় পার্টির শীর্ষনেতা উত্তরবঙ্গের সঙ্গে আত্মার বন্ধনেবন্দি। তাই উত্তরবঙ্গের সুষম উন্নয়ন বিষয়ে কারো দ্বিমত থাকার কথা না।


শেয়ার করুন