২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১১:২০:৪৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


আন্দোলন দমাতে হামলা-মামলার কৌশল
হামলা-মামলায় অস্থির বিএনপির নেতাকর্মীরা
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৮-০৯-২০২২
হামলা-মামলায় অস্থির বিএনপির নেতাকর্মীরা


বিএনপির নেয়া ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ এ ঘোষণা বিএনপি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের। সিদ্ধান্তটা বিএনপি শীর্ষ কমিটির সভাতেই অনুমোদিত। এর উদ্দেশ্য প্রসঙ্গে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী বলেন, ‘সরকার পতন আন্দোলন শুরু হয়ে গেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ইতোমধ্যে ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন। ‘টেক ব্যাক বাংলাদেশ’ আন্দোলন শুধু বিএনপির ক্ষমতায় যাওয়ার আন্দোলন নয়, এই আন্দোলন মাতৃভূমির স্বাধীনতা রক্ষার আন্দোলন, জনগণের বাংলাদেশ জনগণের কাছে ফিরিয়ে দেওয়ার আন্দোলন। গণতন্ত্র, ভোটাধিকার, বাক ও ব্যক্তিস্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার আন্দোলন। জ্বালানি তেলসহ দ্রব্যমূল্য লাগামহীন বৃদ্ধির কারণে মানুষ আজ দিশেহারা। বেঁচে থাকার প্রয়োজনে মানুষ জেগে উঠেছে। এখন সবাই চায় এই সরকারের পতন। বিএনপি আন্দোলনে আছে।’ 

২২ আগস্ট থেকে তৃণমূল পর্যায়ে যে ধারাবাহিক কর্মসূচি শুরু হওয়ার কথা সেটা চলছে। মূলত জ্বালানি তেল, পরিবহণ ভাড়াসহ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে দেশব্যাপী ধারাবাহিক কর্মসূচি দিয়ে মাঠে নেমেছে বিএনপি। জনসম্পৃক্ত এসব ইস্যুতে গত ২২ আগস্ট থেকে সারা দেশের উপজেলা, থানা, ইউনিয়ন ও ওয়ার্ড পর্যায়ে সভা, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে দল। এ ব্যাপারে কেন্দ্রীয় দপ্তর থেকে ৮২টি সাংগঠনিক জেলায় চিঠি দেওয়া হয়। কঠোরভাবে নির্দেশনা দেয়া হয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে। ফলে অনেক স্থানে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা সম্ভব হলেও ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চেয়ে বহু স্থানেই আক্রান্ত হয়েছেন বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী। হামলার শিকার হয়েও মামলা খেয়েছেন। এখন প্রতিনিয়ত হয়রানির শিকার। ধরপাকড়ের জন্য গা-ঢাকা দিচ্ছেন অনেকেই।    

আসলে বিএনপি ওই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে যেয়ে প্রচন্ডরূপে বাধার সম্মুখীন হয়েছে। বিএনপির এ কর্মসূচি যাতে সফলভাবে বাস্তবায়িত না হয় সে জন্যই প্রতিনিয়ত বলা হচ্ছে ‘খেলা হবে’। আওয়ামী লীগ তৃণমূলে অনেকটা নীরব থাকলেও বিএনপির ওই কর্মসূচিতে বাধাদানের মাধ্যমে বেশ সরব ভূমিকা পালন করে। এখন চলছে সে ধারাবাহিকতা। কর্মসূচি তেমন না থাকলেও বিভিন্ন অজুহাতে মামলার পর মামলা। কর্মসূচি পালন করতে যেয়ে হামলার শিকার তো হয়েছেই বিএনপি নেতা কর্মীরা। আওয়ামী লীগ, যুব লীগ ও ছাত্রলীগের মার, ধাওয়া খাওয়ার পর এবার পুলিশি হামলা ও মামলার শিকার। ঘরবাড়ি ছাড়া হচ্ছেন এখন বিএনপি নেতা কর্মী। কারণ চলছে মামলা ও ধরপাকড়। কোনো কোনো মামলায় তিনশ, চারশ জনের নাম দেয়ার পর অজ্ঞাত দেখানো হয় শত শত। মামলা হচ্ছে একাধিক। ফলে নাম না থাকলেও ওই অজ্ঞাত থাকার সুবাদে বিএনপির সমার্থকদেরও হয়রানি, ধরপাকড় করার অভিযোগ আসছে। 

এদিকে বিএনপি নেতাকর্মীদের উপর হামলা-মামলা বেড়ে যাওয়া প্রসঙ্গে বিএনপি সূত্রে জানা জানায়, পুলিশ ও আওয়ামী লীগের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনায় চার জেলায় বিএনপির সাত হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করে ১৬টি মামলা করা হয়েছে। পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় নোয়াখালীর পাঁচ উপজেলায় ১৩টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় কেন্দ্রীয় বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব ও সাবেক সংসদ-সদস্য ব্যারিস্টার মাহবুব উদ্দীন খোকনসহ ৪ হাজার ৬২০ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে।

এছাড়া পুলিশ ও আওয়ামী লীগের ত্রিমুখী সংঘর্ষের ঘটনায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট জালাল উদ্দিনসহ দেড় হাজার নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সংঘর্ষের ঘটনায় বরগুনার পাথরঘাটায় সাবেক সংসদ-সদস্য নুরুল ইসলাম মনিসহ ৪০০ জনকে এবং ফরিদপুরে ৫০০ জনকে আসামি করে হামলা হয়েছে। এসব মামলার পর বিএনপির হাজার হাজার নেতাকর্মী বাড়িঘর ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। 

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল 

এ প্রসঙ্গে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিএনপির শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে হামলা ও মামলার  তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘দেশব্যাপী বিএনপি’র চলমান শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীরা নৃশংস হামলা চালিয়ে নেতাকর্মীদেরকে গুরুতর আহত করেছে। পুলিশ গ্রেফতার করেছে অসংখ্য নেতাকর্মীকে।’ পুলিশ ও আওয়ামী সন্ত্রাসীদের দ্বারা সংঘটিত এসব ন্যাক্কারজনক ও পৈশাচিক ঘটনায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সংবাদপত্রে পাঠানো এক বিবৃতিতে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “বর্তমান গণবিরোধী সরকার বিএনপিসহ বিরোধী দলীয় নেতাকর্মীদের ওপর চালাচ্ছে সীমাহীন অত্যাচার। সরকারের মদদে পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের সন্ত্রাসীরা বিএনপিকে ধ্বংস করার মিশন নিয়ে প্রতিদিন শহর থেকে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে বিএনপি’র শান্তিপূর্ণ সভা-সমাবেশে হামলা চালাচ্ছে, গুলি চালিয়ে নেতাকর্মীদেরকে হত্যাসহ গুরুতর আহত করছে। চারিদিকে শুধু ভয়, আতঙ্ক ও নৈরাজ্য বিরাজ করছে। কিন্তু সরকারের ভয়াবহ দুঃশাসনের বিরুদ্ধে জনগণ এখন ফুঁসে উঠেছে। তাদেরকে ক্ষমতা থেকে সরাতে জনগণ ঐক্যবদ্ধভাবে রাস্তায় নামতে শুরু করেছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল-বিএনপি’র নেতাকর্মী তথা জাতীয়তাবাদী শক্তি জনগণকে সাথে নিয়ে সরকারের পতন ঘটাতে আন্দোলন-সংগ্রামকে বেগবান করতে রাজপথ থেকে ঘরে ফিরে যাবে না। আওয়ামী সরকারকে বিদায় নিতেই হবে।”

এছাড়াও রাজধানী সহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিএনপি নেতাকর্মীদের তালিকা করে গ্রেফতার ও যে কোনো কর্মসূচিতে বাধাদান। এর সঙ্গে সঙ্গে অন্তত তিনজন নিহত হওয়ার ঘটনা তো রয়েছেই। বিএনপির অভিযোগ ভোলাতে যেমন শান্তিপূর্ণ সমাবেশ শেষে বিক্ষোভের চেষ্টাকালে যেমন পুলিশের গুলিতে দুইজন নিহত হয়েছেন, তেমনি নারায়ণগঞ্জেও বিএনপির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর শোভাযাত্রায় পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে শাওন প্রধান নামে যুবদল কর্মী গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হয়েছে। 

২০১৮ সনের জাতীয় নির্বাচনের আগেও বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে একের পর এক মামলা হয়। সেগুলো সামাল দিতে বেসামাল হয়ে যান বিএনপির কর্মীরা। এবারের নির্বাচন সামনে রেখেও ওই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে বলে মনে করছে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা। তবে সুযোগ তৈরি হয়েছে বিএনপির তৃণমূলের কর্মসূচিতে।  এটাতে কারা সরব তাদেরকে চিহ্নিতকরণ সহজ হয়ে গেছে। কারণ বিএনপি শীর্ষ পর্যায় থেকে সংশ্লিষ্ট সকলকে সরব হতে বলা হয়েছিল। নতুবা সাংগঠনিক অ্যাকশন। ফলে অনেকে হুমকি জানা স্বত্ত্বেও বাধ্য হন আন্দোলনে নামতে। এখন হামলা মামলার মুখে বাড়ি ছাড়া হচ্ছেন তারা। আবার কেউ কেউ ধরাও পরছেন। 

আসছে নতুন কর্মসূচি 

তৃণমূলে কর্মসূচি শেষ হবে আগামী শনিবার। কিন্তু ইতিমধ্যে আবারও নতুন কর্মসূচির সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। এতে ১০ সাংগঠনিক বিভাগে সমাবেশের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়েছে দলটির শীর্ষ পর্যায়ে। তবে তেল-গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচি শেষ হওয়ার পর এই কর্মসূচি ঘোষণা করবে দলটি। বিভাগীয় সমাবেশ শেষ করে ঢাকায় মহাসমাবেশ করারও পরিকল্পনা করা হচ্ছে। 

জানা গেছে, গত ৫ সেপ্টেম্বর সোমবার বিকালে দলটির যুগ্ম মহাসচিব, সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহ-সাংগঠনিক সম্পাদকদের বৈঠকে এসব কর্মসূচির বিষয়ে প্রস্তাব করা হয়। পরে ওইদিন রাতে স্থায়ী কমিটির বৈঠকে তা নীতিগতভাবে সিদ্ধান্ত হয়। একই সঙ্গে তৃণমূলকে আরও চাঙা রাখতে শীর্ষ নেতাদের এলাকায় অবস্থান নিশ্চিত করতে চায় দলটি। এজন্য ঢাকায় অবস্থানরত তৃণমূলের শীর্ষ নেতাদের তালিকা করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। 

তৃণমূলের থানা-উপজেলা-পৌর-ইউনিয়ন পর্যায়ে চলমান কর্মসূচিতে নেতাকর্মীরা উজ্জীবিত বলে মনে করছেন বিএনপি নেতারা। তবে কয়েকটি জেলায় নতুন করে মামলার কারণে শঙ্কার কথাও জানিয়েছেন তারা।

শেয়ার করুন