২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ৬:৩২:২৫ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া ছাড় পাচ্ছে না বাংলাদেশ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া ছাড় পাচ্ছে না বাংলাদেশ


একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন ছাড়া বাংলাদেশ এবার কিছুতেই কোনো ধরনের ছাড় পাবে না মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আন্তর্জাতিক মহলের। এমনকি সুষ্ঠু নির্বাচন করতে গিয়ে এর আগে পরে রক্তারক্তি পরিস্থিতিও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ আর্ন্তজাতিক মহল মেনে নেবে না। এমন কঠোর বার্তাই সরকারের ঘাড়ে পড়েছে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বৈঠকে। খবর বিভিন্ন সূত্রের। 

মোমেন-ব্লিঙ্কেন বৈঠক

মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে গত ১০ এপ্রিল সোমবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনের সঙ্গে বৈঠক হয়ে গেছে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর দেশের প্রত্যাশা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশের আগামী নির্বাচনের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি সারা বিশ্বের দৃষ্টি রয়েছে। এই অঞ্চল এবং সারা বিশ্বের অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যেন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত হয়, তা নিশ্চিতের বিষয়ে সবার মনোযোগ রয়েছে।

ব্লিঙ্কেন বললেন অবশ্যই...

স্টেট ডিপার্টমেন্টের থমাস জেফারসন হলে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে এবারে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিক রয়েছে। বৈঠকের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ দিকের একটি হচ্ছে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকের শুরুতেই ব্লিঙ্কেন বলে বসেন বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের বিষয়ে তাঁর দেশ গভীর আগ্রহভরে তাকিয়ে আছে। এর পাশাপাশি তিনি আর্ন্তজাতিক মহলের কথাও স্মরণ করিয়ে দেন। এই ইস্যুতে টেনে আনেন সারা বিশ্বকে। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন বললেন, তিনি মনে করেন বাংলাদেশের আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন কেমন হবে, সে বিষয়ে সমগ্র বিশ্ব আগ্রহী। আর সবচয়ে কঠোর বার্তা বা আরো গুরুত্বপূর্ণ দিক হচ্ছে ব্লিঙ্কেন বলেছেন ’অবশ্যই’। তিনি বলেন, এবং অবশ্যই, আমরা দেখছি, বিশ্ব তাকিয়ে আছে- বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য, যাতে তারা এই অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ স্থাপন করে।

মোমেন গ্যারান্টি দিয়ে এলেন?

দুই পররাষ্ট্রমন্ত্রীর বৈঠকের পর সাংবাদিকদের আব্দুল মোমেন জানান, যে বিষয়গুলোতে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী গুরুত্ব দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম ছিল অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তাঁরা অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে কথা বলেছেন। একটা মডেল নির্বাচন করতে হবে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, আমি বলেছি, অবশ্যই। এটা আমাদের উদ্দেশ্য। আমরাও একটি মডেল নির্বাচন চাই। এ ব্যাপারে আপনারাও আমাদের সাহায্য করেন, যাতে আমরা একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ নির্বাচন করতে পারি। এসময় আব্দুল মোমেন আরো বলেন, ‘অবাধ, সুষ্ঠু, স্বচ্ছ এবং বিশ্বাসযোগ্য নির্বাচনের ব্যাপারে আমাদের অঙ্গীকার রয়েছে। 

রক্তারক্তির বিরুদ্ধে আমেরিকা..

এবারে মোমেন-ব্লিঙ্কেন বৈঠকে এটাও জোর দেয়া হয়েছে যা বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের বক্তব্যে ফুটে উঠেছে। তা ছিল পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেছেন, ‘আমাদের দেশে নির্বাচনে লোক মারা যায়। আমরা চাই না একটা লোক মারা যাক। আমাদের এখানে হাসি-আনন্দে নির্বাচন হয়। তবে আমরা খুব ইগোস্টিক, এত উদ্বেলিত হই যে; লোক মাইরা ফেলি। আমরা চাচ্ছি, নির্বাচন ইস্যুতে আমাদের একটা লোকও যেন না মারা যায়। আমরা পরিবেশ তৈরি করেছি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ব্যাপারে। এতে অন্য লোকদেরও সাহায্য করতে হবে।’ প্রশ্ন হচ্ছে বৈঠকে কি নির্বাচনী সহিংসতার ব্যাপারে সরকারের বিরুদ্ধে কোনো পক্ষ আংগুল উঠিয়েছে। কেননা একদিকে যখন মোমেন-ব্লিঙ্কেন বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে তার মাত্র তিন দিন আগে বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা-মামলার খবর ছিলো দেশের পত্র-পত্রিকা জুড়ে। প্রশ্ন হচ্ছে নির্বাচনের আগে পরে এমন ঘটনাও যে দেশের একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের ব্যাপারে বাধা রযেছে তা সম্ববত কোনো পক্ষ তুলে ধরেছে। যার কারণে এমন রক্তারক্তি প্রসঙ্গ এসেছে। এখানে উল্লেখ্য, তিন দিন আগেই ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী, সিলেটসহ ১৩টি মহানগরীর ১২৮টি সাংগঠনিক থানায় এবং সাড়ে ৫০০ উপজেলা মিলে প্রায় সাড়ে ৬০০ স্থানে একযোগে এ কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। এতে বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য, দলের সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা অংশ নেন। তবে কয়েকটি স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কর্মসূচি পালন করতে দেয়নি। মাদারীপুর, ভোলা, যশোর, লক্ষ্মীপুর, মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, পটুয়াখালী, শরীয়তপুর, নাটোর, ফেনীসহ বিভিন্ন জেলায় বিএনপি’র অবস্থান কর্মসূচিতে হামলা ও ভাঙচুরের খবর গণমাধ্যমেই এসেছে।  কোথাও কোথাও দুই ঘণ্টার কর্মসূচি এক ঘণ্টা বা এরও আগে শেষ করতে হয়েছে। এদিকে ঢাকার কর্মসূচি থেকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে অন্তত ৩৪ জনকে।

একিই আওয়াজ ইইউ দিয়ে গেছে..

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দেখতে চায় তা ছিল সর্বশেষ খবর। কিন্তু এর আগে একিইভাবে সরকারকে জানান দিয়ে গেছে ইইউ। তারা বলেছে, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হলে পর্যবেক্ষক পাঠাবে না ইইউ। দশম ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক না হবার অভিযোগ তুলে পর্যবেক্ষক পাঠায়নি ইউরোপীয় ইউনিয়ন। আসছে নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করতে চায় ২৭ দেশের এই জোট। তবে আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যদি অংশগ্রহণমূলক না হয় তাহলে পর্যবেক্ষক দল পাঠাবে না ইইউ। গত ১২ মার্চ ইইউ ডেলিগেশনের প্রধানের বাসায় হওয়া বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন, জোটের অন্যান্য রাষ্ট্রদূত। যেখানে নির্বাচন নিয়ে নিজেদের অবস্থানের কথা তুলেন ধরেন ইইউ প্রধান চার্লস হোয়াইটলি।

শেষ কথা..

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনে আয়োজনের ব্যাপারে নিজেদের সরকারের নানান উদ্যোগের কথা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বরবরের মতো অনেক তথ্য তুলে ধরেন বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি জানান সরকার  স্বচ্ছ ব্যালট বাক্স করেছে। স্বাধীন নির্বাচন কমিশন করা হয়েছে। আর এজন্য তার সরকার আশা করছে, এই কমিশন অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করবে। কিন্তু এতো কিছু বলার  পরও এবারের বৈঠকে অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেনকে বলতে হয়েছে যে, এবং অবশ্যই, আমরা দেখছি, বিশ্ব তাকিয়ে আছে- বাংলাদেশের পরবর্তী নির্বাচনের জন্য, যাতে তারা এই অঞ্চল এবং বিশ্বের জন্য অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য একটি শক্তিশালী উদাহরণ স্থাপন করে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহলসহ কুটনৈতিক বিশ্লেষণে এটি বাংলাদেশ সরকারের জন্য কঠোর বার্তা। ধারণা করা হচ্ছে বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু অঙশগ্রহণমূলক নির্বাচন আয়োজনের ব্যাপারে আমেরিকা তথা দেশটির মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বাইডেনেরই অত্যন্ত প্রেস্টিজ ইস্যু।  আর এজন্য এবারে বাংলাদেশে আরো একটি ২০১৪ বা ২০১৮ মতো নির্বাচন করে গর্ব করে ক্ষমতায় থাকার মতো পরিস্থিতি তৈরিতে সরকার কতটা পারঙ্গম হবে তা অনেকের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। 

শেয়ার করুন