২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ১১:১২:৩৮ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


গ্যাস সংকট চলছেই
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৯-২০২২
গ্যাস সংকট চলছেই


নানাধরনের কৃচ্ছ্রতাসাধন ও বিভিন্ন উদ্যোগ নেয়া সত্ত্বেও দেশ জুড়ে তীব্র গ্যাস সংকট চলছেই। ঢাকা এবং গ্যাস বিতরণ এলাকায় গৃহস্থালি, বাণিজ্যিক, শিল্পগ্রাহক- কারো কাছ থেকে উৎসাহজনক কিছুই কানে আসছে না। দেশের কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় শিল্পগ্রাহক জানিয়েছেন দিনের অধিকাংশ সময়ে ক্যাপটিভ জেনারেটারগুলোতে গ্যাস সরবরাহ শুন্য হয়ে যাচ্ছে। নির্দিষ্ট চেইনে নির্দিষ্ট পরিমাণ গ্যাস না পাওয়ায় বয়লার চালাতে হচ্ছে ডিজেল দিয়ে। দেশ জুড়ে বিস্তৃত বেশকিছু অঞ্চলে গ্যাসের চাপ আশঙ্কাজনকভাবে নিম্নমুখী দেখেছি। দেশের গ্যাস উৎপাদন দ্রুতহারে কমছে। পেট্রোবাংলা-জ্বালানি মন্ত্রণালয়ের গ্যাস উৎপাদন বৃদ্ধির কার্যক্রমে আদৌ ভরসা পাচ্ছি না। 

দেশে ব্যাপক উৎপাদন ঘাটতি সামাল দিতে ২০১০ থেকে এলএনজি আমদানির কার্যক্রম শুরু হয়। ২০১৮ এবং ২০১৯ দুটি ফ্লোটিং এলএনজি টার্মিনাল স্থাপিত হয়। দেশের উপকূল ভাগে ড্রাফট সীমিত থাকায় একমাত্র মাতারবাড়ি ছাড়া কোথাও ল্যান্ড টার্মিনাল করার সুযোগ নেই। বাংলাদেশ সরকার কাতার এবং ওমান থেকে দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির ভিত্তিতে এলএনজি আমদানি করে। এফেসারু অপারেটরস এলজিকে গ্যাসে রূপান্তর করে গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি পরিচালিত গ্যাস গ্রিডে সরবরাহ করে। ১ হাজার এমএমসিএফডি ক্ষমার ৮৫ শতাংশ দীর্ঘস্থায়ী চুক্তির আওতায় আমদানি হয়। বাকি ১৫ শতাংশ আমদানির ব্যবস্থা হয়ে থাকে স্পট মার্কেট থেকে। বর্তমানে স্পট মার্কেট এলএনজি মূল্য গগনচুম্বী থাকায়, প্রধানমন্ত্রী নিতান্ত অপরিহার্য না হলে স্পট মার্কেট থেকে ক্রয় স্থগিত করার নির্দেশ দিয়েছেন। 

এলএনজি বাজারে অগ্নিমূল্য সহসা কমবে বলে মনে হয় না। ফলে বিভিন্ন কারণে এলএনজি আমদানি কার্যক্রম ঝিমিয়ে পড়েছে। এমতাবস্থায় গ্যাস চাহিদা সরবরাহে অন্তত দেড় হাজার এমএমসিএফডি ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। নিজেদের গ্যাস উৎপাদন দ্রুত কমতে থাকায় ২০১৫ নাগাদ মহাসংকট হতে পারে। 

গ্যাস সাপ্লাই চেনে উল্লেখযোগ্য পরিমাণ লিকেজ, চুরি আর অবৈধ ব্যবহার আছে। গ্যাস সিস্টেম রক্ষণাবেক্ষণে খুব একটা ভ্রুক্ষেপ নেই। সবাই শুধু নতুন অবকাঠামো নির্মাণ, নতুন ক্রয় নিয়ে মহাব্যস্ত। এমতাবস্থায় গ্যাস সাপ্লাই নেটওয়ার্ক নাজুকভাবে চলছে। কারো কোনো দায়িত্ববোধ আছে এটাই তারা মনেও করছে না। এভাবে চললে কিন্তু মহাসংকট এড়ানো যাবে না। বিস্তারিত লিখবো না। শুধু কৈফিয়ত চাইবো উচ্চগলায় কথা বলা ২০১০-২০২২ পেট্রোবাংলা- জ্বালানি সেক্টর শীর্ষ কর্মকর্তাদের কাছে। কেন আজকের এই সংকট? কারা লক্ষ লক্ষ অবৈধ সংযোগ আর অরক্ষিত সাপ্লাই চেনের জন্য দায়ী? দুর্বৃত্তদের দায়িত্বে রেখে লক্ষ্য অর্জন করা যাবে না। 

এভাবে চললে গ্যাস সংকটে শিল্পকারখানাগুলো ধীরে ধীরে বন্ধ হয়ে যাবে। রফতানি বাণিজ্যে ব্যাপক সংকট সৃষ্টি হবে। আমি সরকার প্রধানকে ( যিনি আবার জ্বালানিমন্ত্রীও ) অনুরোধ করবো যুদ্ধ প্রস্তুতি নিয়ে নিজেদের প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণের দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণ করুন। বাংলাদেশ বিশ্ববাজার থেকে উচ্চমূল্যে কোনো জ্বালানি আমদানি করতে সক্ষমতা হারিয়েছে। কোনো দেশ এই অবস্থায় নিজেদের জ্বালানি (কয়লা, গ্যাস) মাটির নিচে রেখে দেয়ার বিলাসিতা দেখতে পারে না। 

অবিলম্বে কয়লা উৎপাদনের সিদ্ধান্ত নিতে হবে, জলে স্থলে গ্যাস অনুসন্ধান উন্নয়ন জোরদার করতে হবে। বিকল্প জ্বালানি সোলার, উইন্ড, পারমাণবিক বিদ্যুৎ ব্যবহার বহুল পরিমাণে বাড়াতে হবে। সিস্টেম লসের নামে গ্যাস চুরি শূন্যের কোঠায় নামাতে হবে। সিস্টেম লিকেজ বন্ধ করতে হবে। 

জ্বালানি বিষয়টি কারিগরি ঘন বিষয়। এখানে নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণ বর্তমান সংকট সৃষ্টির অন্যতম প্রধান কারণ। পেট্রোবাংলা এবং জ্বালানি মন্ত্রণালয়ে সঠিক পেশাদারদের দায়িত্ব দিতে হবে। পেট্রোবাংলা কোম্পানিগুলোর পরিচালনা পরিষদ সঠিক পেশাদারদের দিয়ে প্ল্যান বিন্যাস করতে হবে। গ্যাস সংকট মুক্তি ছাড়া কাক্সিক্ষত জাতীয় অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হবে না। আর সেটা যদি সঠিকভাবে না হয়, তাহলে ২০৪১ সনে উন্নত অর্থনীতির দেশ হবার যে স্বপ্ন- সেটা মরীচিকা হয়ে পালাবে।

শেয়ার করুন