২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:৪৯:৪৭ পূর্বাহ্ন


বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচন
মানিক-ইউছুপ প্যানেলের জয়োল্লাস
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৩-১১-২০২২
মানিক-ইউছুপ প্যানেলের জয়োল্লাস নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করছেন মোহাম্মদ সোহেল হেলাল


যেমনটা ধারণা করা হয়েছিলো, ঠিক তেমনটিই হয়েছে। কোনো কোনো নির্বাচনের পূর্বে বলা যায় কারা বা কোন প্যানেল নির্বাচিত হচ্ছেন। তারপরও কিছু মানুষের জিদ থাকে। ভুল ধারণা থাকে। তাদের ভুলের কারণ হচ্ছে বাস্তবতার সাথে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই। চিন্তা করে ঢিল ছুড়ে দিলেই কাজ হবে। সব জায়গায় যে ঢিল ছুড়ে লাভ হয় না, তা তারা তাদের চিন্তা-চেতনায় ধারণ করেন না। তারা মনে করে মৌচাকে ঢিল মারলেই তো কাজ হয়। কিন্তু মৌচাকে ঢিল মারা আর সামাজিক বা আঞ্চলিক সংগঠনের নির্বাচনে ঢিল এক নয় তারা তা আমলে নিতে চান না। সারা বছর কোনো খবর নেই, সংগঠন কীভাবে চলছে তারও ইয়ত্তা নেই, ভোটার বানানোর মুরদ নেই। কিন্তু নির্বাচন এলেই মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে নেতা হবার স্বপ্ন। নিশ্চিত জানে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হবে তারপরও নির্বাচন করতে হবে। বোঝাতে হবে মুই কোন হনুরে। ঢাল নেই, তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার! নিজের সামন্য স্বার্থের জন্য সংগঠনের যে হাজার হাজার ডলারের শ্রদ্ধ হচ্ছে- তাতে তা নিয়ে তাদের কোনো চিন্তা নেই। সংগঠনকে ভালোবাসলে এমন চিন্তা মাথায় আসতে পারে না। আর যদি মনে করেন সংগঠনের অর্থ খরচ হলে আমার কী? গণতন্ত্র বলে কথা আছে না! সেই গণতান্ত্রিক চর্চা তো করতে হবে! গণতন্ত্র চর্চা করতে গিয়ে সংগঠনের অর্থের অপচয়ে কোনো যৌক্তিতা নেই।

বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচনে তেমনটিই হয়েছে। নোয়াখালী সোসাইটির ১৭টি কার্যকরি পরিষদের নির্বাচনে ১৪ জন প্রার্থী আগেই নির্বাচিত হয়ে গিয়েছিলেন। অর্থাৎ প্রতিদ্বন্দ্বী কোনো প্রার্থী না থাকায় তাদের আগেই বেসরকারিভাবে নির্বাচিত ঘোষণা করা হয়। অবশিষ্ট তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। একজন সদস্য প্রার্থী নিজেকে বলি দেন আরেকজন সদস্য প্রার্থীকে সম্মান দেখানোর জন্য। এটাই ছিলো নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচনের বিউটি, অর্থাৎ সুন্দর দিক। অসুন্দর দিকটি ছিলো জিদের বসে তিন পদে নির্বাচন করা। নির্বাচন করে কী লাভ হলো? পরাজয় তো আগেই ললাটে লিখা ছিলো। ললাটের লিখন খণ্ডায় কে? অন্যদিকে বর্তমান সময়ে মানুষকে বোকা ভাববার কোনো কারণ নেই। কে ভালো, কার দ্বারা সংগঠন উপকৃত হচ্ছে তা তারা ভালোই বোঝেন। যার রেজাল্ট পাওয়া গেল বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির ৩০ অক্টোরের দিনব্যাপী নির্বাচনে।

নির্বাচনটি অনুষ্ঠিত হয়েছিলো ব্রুকলিনের পিস ১৭৯ স্কুলের অডিটোরিয়ামে। সকাল ৮টায় নির্বাচন শুরু করার কথা থাকলেও যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে নির্বাচন কিছুটা দেরিতে শুরু হয়। যেটুকু দেরি হয়েছিলো সেটুকু সময় পরে দেয়া হয়। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচনে ৪টি মেশিনে ১৬২০ জন ভোটারের মধ্যে ৮৮০ জন ভোটার তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করেন। নির্বাচনে মানুষের ভোট দেয়ার এই প্রবণতা ছিলো লক্ষণীয়। কারণ যে তিনটি পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে কোষাধ্যক্ষ ছাড়া অন্য কোনো পদ তেমন গুরুত্বপূর্ণ ছিলো না। কোষাধ্যক্ষ ছাড়া সহ-কোষাধ্যক্ষ এবং সাংগঠনিক সম্পাদক পদে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ভোটকে কেন্দ্র সকাল থেকেই ব্রুকলিনে ছিলো উৎসবের আমেজ। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির অনেক ভোটার বাফেলোসহ অন্যান্য স্টেটে মুভ করেছে, তা না হলে ভোট হতো আরো জমজমাট। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হতো না, জয়-পরাজয়ের পারদ আরো উচ্চ হতো। সকালের দিকে ভোটারের উপস্থিতি একটু কম থাকলেও বিকেলের দিকে মানুষ চাপ বেড়ে যায় এবং লাইন ধরে দাঁড়িয়ে অনেককে ভোট দিতে দেখা যায়। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সোহেল হেলাল জানান, ২-১টি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের সদস্যরাও প্রশংসনীয় দায়িত্ব পালন করেন। অন্য সংগঠনের নির্বাচনের মতো ভোটের দিক সকাল থেকেই প্রতিদ্বন্দ্বী প্যানেলের প্রার্থী এবং সমর্থকরা ভোটকেন্দ্রের বাইরে জায়গা দখল করেন এবং বাংলাদেশি স্টাইলে ভোটার আনতে থাকেন। বৃহত্তর নোয়াখালী সোসাইটির নির্বাচনের আরেকটি বিউটি ছিলো বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তাদের উপস্থিতি এবং সংগঠনের ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্যদের উপস্থিতি। তারা পুরোটা সময় ভোট পর্যবেক্ষণ করেন।

 সারাদিন শান্তিপূর্ণ ভোট শেষে রাতেই ভোট গণনা করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সোহেল হেলাল নির্বাচনের বেসরকারি ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন কমিশনের সদস্য মোহাম্মদ আবুল কাশেম, একেএম রশিদ আহমেদ, শাহজাহান কবীর, মোহাম্মদ জয়নাল। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের সাবেক সভাপতি ও বাংলাদেশ সোসাইটির নর্বনির্বাচিত সভাপতি আব্দুর রব মিয়া, বর্তমান সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, সাধারণ সম্পাদক জাহিদ মিন্টু, ট্রাস্টি বোর্ডের প্রধান হাজী মফিজুর রহমান, সাবেক সাধারণ সম্পাদক তাজু মিয়া, নবনির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউছুপ জসীম, মোশাররফ হোসেন খোকন, সালামত উল্যাহ, আব্দুস সালাম, উপদেষ্টা মাইন উদ্দিন মাহবুব, নবনির্বাচিত কমিটির সদস্য, নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকরা। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একটি সুষ্ঠু এবং সুন্দর নির্বাচন করার জন্য প্রার্থী, ভোটার, নির্বাচনে দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তাদের ধন্যবাদ জানান। তিনি প্রথমে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিতদের নাম ঘোষণা করেন। বেসরকারিভাবে নির্বাচিতকরা হলেন- সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক, সহ-সভাপতি আবুল বাসার, মোহাম্মদ টি মিয়া, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ ইউছুপ জসীম, সহ-সাধারণ সম্পাদক সালেহ এ চৌধুরী, প্রচার সম্পাদক আসিরুল সোহেল, সোশ্যাল ওয়েলফেয়ার সেক্রেটারি মোহাম্মদ ইব্রাহিম, ক্রীড়া সম্পাদক জাহাঙ্গীর আলম, অফিস সেক্রেটারি গোলাম কিবরিয়া মিরন, কার্যকরি সদস্য জাহিদ মিন্টু, মাহমুদুল হক, আব্দুল মালেক খান, মোহাম্মদ মনির হোসেন, সোহেল আলম ভুইয়া। নির্বাচনে কোষাধ্যক্ষ পদে নির্বাচিত হয়েছেন বর্তমান কোষাধ্যক্ষ মহিউদ্দিন। তার প্রাপ্ত ভোট ৬০৫। তার একমাত্র প্রতিদ্বন্দ্বী হাসানুজ্জামান পেয়েছেন মাত্র ২৬৭ ভোট। সহ-কোষাধ্যক্ষ পদে ৬০৯ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন জামাল উদ্দিন, তার প্রতিদ্বন্দ্বী আমির হোসেন পেয়েছেন ২৬৬ ভোট। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে ৬১৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন নুরুল ইসলাম বাবু এবং তার প্রতিদ্বন্দ্বী শওকত হোসেন চৌধুরী পেয়েছেন ২৫৬ ভোট।

নির্বাচনী ফলাফল শেষে বিজয়ী প্রার্থীদের সমর্থকরা স্কুলের বাইরে উল্লাস প্রকাশ করতে থাকেন। এই উল্লাস ছিলো বাঁধভাঙা উল্লাস। এই সময় সভাপতি নাজমুল হাসান মানিক সকল ভোপার এবং নির্বাচন কমিশনকে ধন্যবাদ জানান এবং আগামীতে সবাইকে নিয়ে গ্রেটার নোয়াখালী সোসাইটিকে আদর্শ সংগঠনে পরিণত করবেন। নবনির্বাচিত কোষাধ্যক্ষ মহিউদ্দিন সকল ভোটার, তাদের সমর্থক, নির্বাচন কমিশন এবং কার্যকরি কমিটিকে ধন্যবাদ জানান।

তবে অনেকেই মত প্রকাশ করে বলেছেন, এই জয় ন্যায়সঙ্গত। এই জয় বর্তমান নেতৃত্বে প্রতি। এই জয় জাহিদ মিন্টুদের। কারণ তাদের মতো নেতা আছেন বলেই নির্বাচনী বৈতরণী প্রার্থীরা সহজে পার হয়েছেন। বিশেষ করে জাহিদ মিন্টু। তার তুলনা কারো সাথে করা চলে না। তার তুলনা তিনি নিজেই। তার মতো আরো নেতা দরকার এই কমিউনিটিতে। যিনি সংগঠনের কথা এবং সর্বোপরি মানবতার কথা ভাবেন।

শেয়ার করুন