০২ মে ২০১২, বৃহস্পতিবার, ১১:৪৫:৫৬ অপরাহ্ন


দেশকে আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম
মনে হচ্ছে বন্দুকের নলে এরা ক্ষমতায় আসতে চায়
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
মনে হচ্ছে বন্দুকের নলে এরা ক্ষমতায় আসতে চায় আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম


আওয়ামী লীগের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বলেছেন, অতীতে আমরা দেখেছি যারা অরাজনৈতিক ও অগণতান্ত্রিক শক্তি, স্বৈরাচারের দোসর, রাজনৈতিকবির্বজিত-এমন ধরনের মানুষের কণ্ঠে এসব বক্তব্য শোনা যায়। মনে হচ্ছে, বন্দুকের নলে এরা ক্ষমতায় আসতে চায়। আমেরিকা থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকায় সমসাময়িক বিষয়ের ওপর এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। সাক্ষাৎকারটি নিয়েছেন পত্রিকার বিশেষ প্রতিনিধি সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ

দেশ: নেতাকর্মীদের উদ্দেশে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য বা ভারত কি বলল এটা নিয়ে মাথা ঘামানোর দরকার নেই। আমাদের মানুষ কি বলছে এটা জানা দরকার। আমাদের মানুষ পরিষ্কার করে বলছে, বিদায় হও। আর সময় নেই। এই সরকারকে যেতে হবে- এমন বক্তব্য কিভাবে দেখেন?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: (মৃদু হেসে..)..এটাতো সম্পূর্ণ স্বৈরাচারি কথা। অতীতের আমরা দেখেছি যারা অরাজনৈতিক এবং অগণতান্ত্রিক শক্তি, স্বৈরাচারের দোসর, রাজনৈতিক বির্বজিত-এমন ধরনের মানুষের কণ্ঠে এসব বক্তব্য শোনা যায়। কোনো রাজনৈতিক দলের মুখ থেকে এ ধরনের বক্তব্য, হুংকার? এটাতো সামরিক জান্তারা....যারা অতীতে বিভিন্ন দেশে সামরিক জান্তা স্বৈরাচাররা যেভাবে (একটু ব্যাঙ্গাত্বক হাসি দিয়ে) হুমকি দেয়....এর চেয়ে বাইরে ভিন্ন কিছু না। মনে হচ্ছে বন্দুকের নলে এরা ক্ষমতায় আসতে চায়। বন্দুকের ভাষায় এরা কথা বলতে চায়। মনে হচ্ছে কামানের গোলা নিক্ষেপ করে। এ ধরনের রাজনৈতিক শিষ্টাচার শব্দ প্রয়োগের মধ্য দিয়ে এরা আসলে কি বোঝাতে চায়? তারা কি নির্বাচনে অংশ নিতে চায়? অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের বলিষ্ঠ অঙ্গীকার আমরা করেছি। এব্যাপারে আমাদের অবস্থান খুবই পরিস্কার। সাংবিধানিকভাবেই নির্বাচন কমিশন গঠন হয়েছে। আইন অনুযায়ী প্রথ একটি স্বাধীন নির্বাচন কমিশন। সেখানে নির্বাচনের অংশ নিতে মানুষ উদগ্রীব হয়ে আছে। নির্বাচনে অংশ নিতে আমরাও প্রস্তুতি নিচ্ছি। দেশের মানুষ সব্বাই প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর এমন সময় তারা বলে যাচ্ছে যে সময় দেবে না। বলে বেড়াচ্ছে সরকারের সময় ঘনিয়ে আসছে..সময় শেষ..চারদিনের সময় দিলাম..পদত্যাগ কর..(আবারো হেসে হেসে..)..উৎখাত করে ফেলবে..এই ভাষায় কথা বলা..তাদেরকে কে ক্ষমতা..? আমি এ প্রসঙ্গে নাম নিয়েই বলি। বিএনপি’র মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবসহ সেই দলের বেশ কয়েকজন নেতারা এভাবেই কথা বলে যাচ্ছেন। প্রশ্ন হচ্ছে তাদেরকে এমন অধিকার কে দিয়েছে? কোথা থেকে তারা এই অধিকার পেলেন? এই হুমকিতো বাংলাদেশের ১৬কোটি মানুষকেই দেয়া হচ্ছে। 

দেশ: কিন্তু বিএনপি যে বলে যাচ্ছে দেশে একটা সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের কোনো ধরনের পরিবেশ নেই। আর এই কারণেই তারা নির্বাচন অংশ নিতে চায় না। এবিষয়টি কিভাবে দেখেন?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম : নির্বাচন তো হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। দেশে শান্তি শৃংখলা আছে..আইন শৃংখলা আছে..। মানুষ ভোট কেন্দ্রে যেতে চায়..। জনগণের এমন ইচ্ছা আকাংখার প্রতিফলনতো আমরা বারবার দেখতে পাচ্ছি। এখানে মানুষ শান্তিতে বসবাস করতে চায়। জনগণের ইচ্ছা-আকাঙ্ক্ষার প্রতিফলন ঘটাতে তারাতো প্রস্তুত। নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে তো সব ধরনের প্রস্তুতি নেয়া শেষ। এসব খবরতো আমরা গণমাধ্যমের মাধ্যমে জানতে পারি। এখানে বিএনপিতো জানে জনগণ তাদেকে ভোট দেবে না..। তারা ক্ষমতায় থাকাকালীন সময়েতো অপকর্ম করেছে। সাম্প্রদায়িক সংঘাত সৃষ্টি করেছে। ধর্ষণ করেছে। দেশের শান্তি বিনষ্ট করেছে। উন্নয়ন বিনষ্ট কাজ করেছে। দীর্ঘদিন ধরে তারা ক্ষমতায় ছিল। কিন্তু তারা পারেনি জনগণের কিছু করতে। তাদেরতো কোনো নীতি নৈতিকতা আদর্শ বলে কিছু নেই। তারা দুর্নীতিবাজ। তারা নিজেদের স্বার্থে নির্বাচনে যেতে চায় না। তাদেরতো জনগণ ভোট দেবে না..তারাতো দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন..। তাদের শাসনামলে আইন শৃংখলার বিন্দুমাত্র উন্নতি হয়নি। তাদের শাসনামলে মানুষ মনে করতো মৃত্যু উপত্যাকায় বাস করতো..। একারণে তারা মনে করে নির্বাচন হলে জনগণ তাদেরকে ভোট দেবে না। ভোট পাওয়ার মতো কোনো কাজ তারা করেনি। তাদের শাসনামলে এমন দুঃশাসন তারা চালিয়েছে যে মনে হচ্ছে জনগণের তারা শত্রু। জনগণনে যারা দুঃশাসন উপহার দেয় তাদেরতো জনগণ ভোট দেবে না। তারা স্বৈরাচারি কায়দায় ক্ষমতা দখল করতে চায়। জনরায় নিয়ে বা জনগণের ভোটে তারা যেহেতু তারা অংশ নিতে পারবে না তাই তারা বলে বেরাচ্ছে যে নির্বাচনের পরিবেশ নেই। তারা এখন নির্বাচনকে নানাভাবে প্রশ্নবিদ্ধ করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। বির্তকিত পরিবেশ তৈরি করতে চায়। এবং কোনো পজিটিভ বা ভালো কথা বিএনপি জামায়াতের নেতাদের মুখে শোনেনি। শুনতে পায়ওনি..। বিএননি মনে করে বিদেশীরাই তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। বিদেশী প্রভুরা তাদের ক্ষমতায় বসিয়ে দিলে ক্ষমতায় বসবে..এই ধরনের স্বপ্নে তারা বিভোর। 

দেশ: দেশের সার্বিক পরিস্থিতি বিশেষ করে আপনাদের শাসনামল নিয়ে বিএনপিসহ বিরোধী দলের বক্তব্য দেখে কি মনে হচ্ছে?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: জনগণের সাথে আমাদের গভীর সম্পর্ক। আমরা গ্রামে প্রান্তিক পর্যায়ে মানুষের কাছে যাচ্ছি। আমরা মানুষের চোখের ভাষা বোঝার চেষ্টা করছি। আমরা জানি নির্বাচনী মান্ডেট পেতে জনগণের কাছেই যেতে হবে। কারণ জনগণ ভোট না দিতে পারলে আমরা বিজয়ী হতে পারবো না। সুতরাং আমরা জনগণের কাছে যাই, কারণ আমরা নির্বাচনে বিশ্বাস করি। আজকে বাংলাদেশ একটি দ্রুত উন্নয়নশীল রাষ্ট্রে পরিণত হয়েছে। এটা এমনি এমনি হয়নি। এখন বাংলাদেশকে সারাবিশ্বে মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। উন্নত দেশের পাশাপাশি সম্পদশালি দেশ বাংলাদেশের এমন উন্নয়নকে স্বীকার করে নিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের মানুষ আওয়ামী লীগকে ..বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনাকে ভোট দেয়া ও তাদের ব্যাপক সমর্থন জানাতে প্রস্তুত হয়ে আছে। সেজন্যইতো বিএনপি জামায়াত নির্বাচনে অংশ না নিয়ে একে বির্তকিত করার অপচেষ্টা করে যাচ্ছে। 

দেশ: এমন অবস্থায় আপনি বিএনপি ও তার সাথে আন্দোলনরত বিরোধী দলকে কি পরামর্শ দিতে চান?

আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম: আমি মনে করি ক্ষমতা বদলের শান্তিপূর্ণ একমাত্র পথ হচ্ছে নির্বাচন। যে নির্বাচন করার আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি। আমরাতো জাতির কাছে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ যে, দেশে একটি সুষ্ঠু সুন্দর নির্বাচন করে যাবো। আমরা প্রত্যয় ব্যক্ত করেছি। আমরা এই ব্যাপারে সহযোগিতা করবো। এবং সকল রাজনৈতিক দলকে এব্যাপারে সহযোগিতা করা উচিত। তারা যেনো জনগণের ম্যান্ডেট আদায়ের চেষ্টা করে। ক্ষমতা পরির্বতনের একমাত্র গণতান্ত্রিক পদ্ধতি হচ্ছে নির্বাচন। এর চাইতে ভালো পথ নেই। এখানে রাগ বা গোসস্সা করে, জনগণের ভোট পাবো না বলে জনগণ ও নির্বাচন থেকে দূরে সরে থেকে গণতন্ত্রকে শক্তিশালি করা যাবে না। জণগণের আস্থা অর্জন করা যাবে না।

শেয়ার করুন