২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৫:৪৬:০০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


শাহীন কামালী ভারপ্রাপ্ত সভাপতি
জালালাবাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ সভা : বদরুল হোসেন খান ও রোকন হাকিমকে বহিষ্কার
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২১-০৬-২০২৩
জালালাবাদের স্বতঃস্ফূর্ত সাধারণ সভা : বদরুল হোসেন খান ও রোকন হাকিমকে বহিষ্কার জালালাবাদের সাধারণ সভায় মঞ্চে উপবিষ্ট নেতৃবৃন্দ


প্রতিহিংসা এবং ইগো সমস্যা কখনো সুফল বয়ে আনতে পারে না। ইট মারলে পাটকেল খেতে হয়-এটা অনেক পুরোনো প্রবাদ বাক্য-কিন্তু স্বার্থের বেলায় কেউ মনে রাখতে চায় না। ক্ষমতা দেখাতে চায়। মোড়লিপনা দেখাতে চায়। গায়ের জোর দেখাতে চায়, সমঝোতায় চেতে চায় না। শুধু ব্যক্তি জীবনে নয়, রাজনৈতিক, সাংগঠনিক ক্ষেত্রসহ সর্বত্রই সমঝোতাই হচ্ছে উত্তম পন্থা। কিন্তু গুটিকতেক ব্যক্তির শুধু ইগোর কারণে প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন এখন অশান্তির দাবানলে জ্বলছে। একটি ভবনকে কেন্দ্র করে জালালাবাদের এই বিভক্তি। সমঝোতা করে এই সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করা যেত। কিন্তু বর্তমান সভাপতি বদরুল হোসেন খান এবং তার অনুসারিদের কারণে তা সম্ভব হয়নি। নাম এসেছে গড়ফাদারের। সেই গড়ফাদারই নাকি নাটের গুরু। তার কারণেই জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনে বিভক্তির কলঙ্ক। পাল্টাপাল্টি বহিষ্কার। গত ১১ জুন কমান্ডো স্টাইলে সাধারণ সভা করে বদরুল ইসলাম খানের নেতৃত্বাধীন অংশটি জনগণের ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম এবং সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে অগঠনতান্ত্রিকভাবে বহিষ্কার করেন। সাধারণ সভা মানেই সব পক্ষের অংশগ্রহণ কিন্তু বদরুল হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন অংশটি আগেই স্থির করে রেখেছে কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে আর কাকে ঢুকতে দেওয়া হবে না। সেই ঢুকতে দেওয়া না দেওয়াকে কেন্দ্র করে সিকিউরিটি ও পুলিশ দিয়ে লঙ্কা কা- বাধিয়ে দেন। সম্মানীত জালালাবাদবাসীকে অপমান এবং অপধস্ত করেছেন। একটি সংগঠনে যে কারো বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকতে পারে। তার সমাধানের পথ হলো সমঝোতা, না হয় একমাত্র পথ সাধারণ সভা। কিন্তু বদরুল হোসেন খান এবং তার পরামর্শদাতাদের সিদ্ধান্ত মোতাবেক মইনুল ইসলামের অনুসারিদের ঢুকতে দেওয়া হয়নি। সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে ঢুকতে গিয়ে ব্যর্থ হয়ে লাইফ মেম্বারের আইডি নিয়ে ঢুকেও টিকতে পারেনি। বের হয়ে আসতে বাধ্য হয়েছিলেন। বাইরে এসে তারা প্রতিবাদ সভা করেন। বিক্ষুব্ধ ছিলেন জালালাবাদের একটি অংশ। দেওয়া হয়নি যাদের বিরুদ্ধে গায়েবি অভিযোগ তাদের আত্মপক্ষ সমর্থনের। ১১ জুনের সাধারণ সভা দেখে এবং পরিবেশ পরিস্থিতি বিবেচনায় ঘরেই বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নিয়ে সাধারণ সভায় আসা হয়। নিজেদের অনুসারীদের নিয়ে সভা করে জি হুজুর মার্কা সিদ্ধান্ত নিয়ে বহিষ্কার করা হয়।

মইনুল ইসলামের অনুসারী এবং জালালাবাদবাসী বিক্ষুব্ধ হয়ে পড়েন। ওই রাতেই এস্টোরিয়ার জালালাবাদ ভবনে গিয়ে সিদ্ধান্ত নেন, পাল্টা সাধারণ সভা করার।

সেই সভা গত ১৮ জুন সন্ধ্যায় উডসাইডের কুইন্স প্যালেসে অনুষ্ঠিত হয়। সভায় সভাপতিত্ব করেন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি শাহীন কামালী এবং সভা পরিচালনা করেন সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম। সভার শুরুতে পবিত্র কোরআন থেকে তেলাওয়াত করেন সাবেক সহ-সভাপতি মওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী। এরপর অ্যাসোসিয়েশনের প্রয়াত সাবেক সভাপতি সিরাজুল ইসলাম, কামাল আহমেদসহ যারা ইন্তেকাল করেছেন তাদের স্মরণে সুরা ফাতেহা পাঠসহ এক মিনিট নিরবতা পালন করা হয়। সভামঞ্চে উপবিষ্ট ছিলেন অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য আব্দুল হাসিব, সাবেক সভাপতি সৈয়দ শওকত আলী, সাবেক সভাপতি এম এ কাইয়ুম, সাবেক সভাপতি ও অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ওয়াহিদুর রহমান মুক্তা, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আজিজুর রহমান সাবু, বাংলাদেশ লীগ অব আমেরিকার সাবেক সভাপতি এমাদ চৌধুরী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সুফিয়ান চৌধুরী, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ, সাবেক সহ সাধারণ সম্পাদক হেলিম উদ্দিন আহমদ, প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ডা. জুন্নুন চৌধুরী ও কাতার জালালাবাদ সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম।

সাধারণ সভায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন সাবেক ছাত্রনেতা শাহাবুদ্দীন, এছাড়াও বক্তব্য রাখেন সিলেট সদর থানা অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি দেওয়ান শাহেদ চৌধুরী, সাবেক কর্মকর্তা পংকি মিয়া, রিয়াজ উদ্দিন কামরান, ইঞ্জিনিয়ার সৈয়দ ফজলুর রহমান, সৈয়দ জুবায়ের আলী, শাহীন আজমল, মামুন আহমেদ, সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউল গণি আসাদ, সাবেক কর্মকর্তা এবাদ চৌধুরী, দরুদ মিয়া রনেল, হুমায়ুন চৌধুরী, মোহাম্মদ মহসিন সেলিম, এম আলাউদ্দিন, মোশাহেদ চৌধুরী, খালেক মিয়া, ইমদাদ চৌধুরী, মোহাম্মদ মহসীন, শাহ মিজানুর রহমান, আলাউদ্দিন, মাওলানা সাইফুল আলম সিদ্দিকী, মাহমুদ  মাহবুব প্রমুখ।

সভায় বক্তারা ১১ জুনের সাধারণ সভা ও সভাপতি বদরুল হোসেন খানের কর্মকা-ের সমালোচনা করে বলেন, ওই সভায় সিকিউরিটি দিয়ে যেভাবে জালালাবাদবাসীকে নাজেহাল করা হয়েছে তার অত্যন্ত দুঃখজনক, নিন্দনীয় এবং সভাপতি বদরুল হোসেন খান সাংগঠনিক নিয়মকানুন ও গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করেছেন। বক্তারা বলেন, ‘জালালাবাদ ভবন’ সময়ের একমাত্র দাবি। আমরা যে কোনো মূল্যে ভবন চাই। গড়ফাদারদের হাত থেকে জালালাবাদকে রক্ষা করতে চাই। আর এই গডফাদার হচ্ছে আজমুল হোসেন কুনু। তার কারণেই আজকে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের এই অবস্থা। সেই সঙ্গে সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতাউর রহমান সেলিম, সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলালের ডিড়বাজি, পুরস্কার পাওয়া ট্রাস্টি বদরুন নাহার খান মিতা, কায়ছারুজ্জমানের তীব্র সমালোচনা করা হয়। তারা বলেন, আগামী নির্বাচিনের মাধ্যমে ট্রাস্টি বোর্ড গঠনের আহ্বান জানান। সেই সঙ্গে গঠনতন্ত্র সংশোধনের দাবি জানান। তারা আরো বলেন, একজনকে আত্মসাৎকারী বলা কোনভাবেই কাম্য নয়। তিনি তো অতীতে জালালাবাদের অর্থ আত্মসাৎ করেছেন, তাদের বিচার হয়নি। অথচ মইনুল ইসলাম ভবন ক্রয় করে অর্থ রেখেছেন, তিনি তো আত্মসাৎ করেননি। তারা আরো বলেন, যেভাবে মইনুল ইসলাম ও মিজানুর রহমানকে বের করে দেওয়া হয়েছে এটা ন্যাক্কারজনক এবং নিন্দনীয়। তারা বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযাীয় ১১ জুনের সাধারণ সভা বৈধ ছিল না। সুতরাং সেই সাধারণ সভায় যে সব সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে তাও অবৈধ। কাউকে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ না দিয়ে, বের করে দিয়ে একপেশে সিদ্ধান্তে বহিষ্কার করাও অবৈধ। এজন্য সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। বক্তারা ক্রয়কৃত ভবন রক্ষার ব্যাপারে একমত্য পোষণ করেন এবং আলোচনার মাধ্যমে উদ্ভুত সমস্যার সমাধানের আহ্বান জানান। এ ছাড়া মইনুল ইসলামের স্ত্রী জালালাবাদ ভনের জন্য ২৫ হাজার ডলার দেওয়ার ঘোষণা দেন, আরো অনেকেই তাদের সাধ্যমত অর্থ দেওয়ার ঘোষণা বক্ত করেন।

অনুষ্ঠানের শুরুতে সভাপতি শাহীন কামালী সবাইকে শুভেচ্ছা এবং সাধারণ সভাকে সফল করার জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, বিগত ৩৮ বছরের প্রবাসী জালালাবাদবাসীর স্বপ্ন ছিলো নিউইয়র্কে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের নিজস্ব ভবন ক্রয় করা। সেই উদ্দেশ্যে বিভিন্ন সময়ে ফান্ড রেইজিং করা হয়েছে। প্রবাসীরা মুক্তহস্তে শত হাজার ডলার দান করলেও ভবন ক্রয় করা সম্ভব হয়নি। ফিলাডেলফিয়ায় বাড়ি ক্রয়-বিক্রয় নিয়েও জনশ্রুতিতে অনেক কথা। বিগত কমিটি ময়নুল-শেফাজ এবং কোষাধ্যক্ষ মইনুল ইসলাম সংগঠনের ফান্ডের অর্থ যথাযথভাবে ব্যবহারের মাধ্যমে ভবন ক্রয়ে ছিলাম অঙ্গীকারাবদ্ধ। সেই নিরিখে মেয়াদ শেষ হওয়ার কিছু দিন আগে নিউইয়র্কের অত্যন্ত আকর্ষণীয় জায়গা এস্টোরিয়ায় অত্যন্ত সুলভে একটি বাড়ি ক্রয় করে বর্তমান সভাপতি বদরুল হোসেন খানসহ কমিটির কাছে হস্তান্তর করি। তিনি স্বাক্ষর করে সবকিছু বুঝে নেন। কিন্তু দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পর থেকে তিনি মত পাল্টিয়ে শুরু করেন ভানুমতির খেলা। কিছু কুচক্রী মহলের জোগসাজশে অত্যন্ত লাভজনক ভবন প্রত্যাখান করে টাকা ফেরত দেওয়ার জন্য বর্তমান কমিটির সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম, বিদায়ী সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল ও বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে চাপ প্রয়োগ করতে থাকেন। কিন্তু আমরা জালালাবাদবাসী জন্য ভবনের পক্ষে দৃঢ় অবস্থান নিই। কারণ আমরা সবাই জানি নগদ অর্থ ফান্ডে থাকলে বিভিন্নভাবে খরচ হয়ে যায়। অতীতে যার ভুরি ভুরি প্রমাণ রয়েছে। সেই লক্ষ্যেই জালালাবাদের সাবেক সভাপতি জনাব শওকত আলী, সিলেটের বিভিন্ন মুরব্বীয়ান, বিভিন্ন থানা ও আঞ্চলিক সমিতির সভাপতি/সাধারণ সম্পাদকবৃন্দ জালালাবাদের ঐক্য ও সম্প্রীতি রক্ষার স্বার্থে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যর্থ হন। উপরোক্ত কারো কথায় ভ্রুক্ষেপ না করে সাধারণ জালালাবাদবাসীর ভোটে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে বাদ দিয়ে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়োগ করে গত ৬/৭ মাস ধরে মিটিং, বক্তব্য, বিবৃতি দিয়ে যাচ্ছেন। যা গঠনতন্ত্রের লংঘন এবং জালালাবাদের ভোটারদের রায়ের প্রতি আবমাননা- অসম্মান ও চপেটাঘাত। এই অবৈধ ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদককে দিয়ে গত ১১ জুন রোববার সাধারণ সভার ডাক দেন। যা গঠনতান্ত্রিক ছিলো না। কিন্তু শত প্রশ্ন নিয়েও জালালাবাদবাসীর ঐক্য ও সম্প্রীতি বজায় রাখার স্বার্থে সাধারণ জালালাবাদবাসীর কাছে সত্য উপস্থাপনের জন্য। সবার অবগতির স্বার্থে ভবন ক্রয়ের কাগজ, হিসাব নিয়ে সাধারণ সভায় উপস্থিত হয়েছিলাম। কিন্তু সেখানে ১৫/২০ জন সিকিউরিটি গার্ড, পুলিশ এবং কিছুসংখ্যক উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তির দ্বারা জালালাবাদবাসীকে নাজেহাল এবং লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমরা যারা ভিতরে প্রবেশ করে নিয়মতান্ত্রিকভাবে কথা বলার চেষ্টা করি। কিন্তু সবাইকে অপমান করে সিকিউরিটি দিয়ে জোরপূর্বক বের করে দেওয়া হয়েছে। যা জালালাবাদের অতীতের সমস্ত ঐতিহ্যকে ম্লান বদরুল খান গংরা এক কলঙ্কময় অধ্যায় রচনা করে। সাধারণ জালালাবাদবাসীকে হল থেকে বের করে কড়া নিরাপত্তার মাধ্যমে সামরিক কায়দায় হাজার হাজার ব্যক্তির সংগঠনকে গুটিকতেক ব্যক্তির উপস্থিতিতে তথাকথিক অবৈধ সাধারণ সভার নামে মিটিং করে নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কারসহ বহু জনস্বার্থ, অকার্যকর এবং গঠনতন্ত্রবিরোধী সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়েছে, যা সংগঠনের ধ্বংস ও প্রবাসে জালালাবাদবাসীর মান, মর্যাদা, ঐক্য, সংহতি বিনষ্ট হবে। এর সব দায়দায়িত্ব বদরুল খান গংরাই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছে দায়ী থাকবেন। আমরা আমাদের বৃহত্তর স্বার্থে এতোদিন ধৈর্য ধরেছি, কোনো কথা বলিনি। সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার, নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদককে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া, সাবেক সভাপতি ময়নুল হক চৌধুরী হেলাল, সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে চরম অবমাননার মধ্য দিয়ে তাদের হীনস্বার্থ এবং কুৎসিত চেহারা প্রবাসীদের কাছে উন্মোচিত হয়েছে। তাই এখন আর বসে না থেকে সাধারণ জালালাবাদবাসীরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে এসব অপকর্ম এবং গডফাদারদের সমুচিত জবাব দিয়ে স্বপ্নের জালালাবাদ ভবন রক্ষা, ঐক্য ও সংহতি বজায় রেখে প্রবাসে মান মর্যাদা রক্ষা এবং ভবিষ্যৎ নির্ভেজাল জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন গড়ে তোলার লক্ষ্যে সোচ্চার হোন।

মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজ তাকে যেভাবে পুলিশ ও সিকিউরিটি দিয়ে বের করে দেওয়া হয় তার সমালোচনা করে বলেন, এটা আমাকে অপমান, পুরো জালালাবাদবাসীকে অপমান করা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, এই ভবন ক্রয়ের পর প্রথম গিয়েছিলাম আজমল হোসেন কুনুর কাছে। তাকে পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেছি, তিনি বলেছেন কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু খেলাটি তিনিই খেললেন।

সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলাম তার রিপোর্ট পেশ করেন। তিনি বলেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের কার্যকরি কমিটির পক্ষ থেকে অদ্যকার সাধারণ সভায় উপস্থিত সবকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা। গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি প্রবাসে বসবাসরত বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের যারা আমাদেরকে ছেড়ে চলে গেছেন তাদের রুহের মাগফেরাত কামনা করছি।

সম্মানিত জালালাবাদবাসী, আপনাদের অবগতিরর জন্য বিগত দিনের সংগঠনের কর্মকা-ের পাশাপাশি আগামী দিনের কর্মসূচি ও কর্মকা- বাস্তবায়নের পরিকল্পনা সংক্ষেপে উপস্থাপন করছি। সিলেটের কৃতীসন্তান গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনকে নিয়ে সংগঠনের পক্ষ থেকে গত ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ সালে মতবনিময় এবং সংবর্ধনার আয়োজন করা হয়। এতে বৃহত্তর সিলেটবাসীর ন্যায্য দাবি এবং প্রবাসীদের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধার দাবি তুলে ধরা হয়।

একি ধারাবাহিকতায় নভেম্বর ৮, ২০২২ সিলেট নগরীর বর্তমান মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সঙ্গে সংগঠনের পক্ষ থেকে মতবিনিময় ও সংবর্ধনার আয়োজন করে সিলেটের প্রবাসীদের বিভিন্ন দাবি তুলে ধরা হয়।

বৃহত্তর সিলেটের বন্যা : স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় প্লাবিত বৃহত্তর সিলেটের বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্গত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর লক্ষ্যে বিগত কমিটি (মইনুল হক-শেফাজ) এবং নবনির্বাচিত কমিটির (বদরুল-মঈনুল) যৌথভাবে কাজ করে প্রবাসীদের কাছ থেকে মোট ৪৩ হাজার ডলার সংগ্রহ করে। তার মধ্যে বিগত কমিটির মাধ্যমে বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত ২০টি পরিবারের মধ্যে প্রতি পরিবারকে ১ হাজার ১৫০ ডলার দিয়ে নতুন ঘর করে দেওয়া হয়। (১১৫০ গুণ ২০)=২৩০০০ ডলার। বাকি ২০ হাজার ডলার বর্তমান সভাপতি বদরুল হোসেন খানের কাছে রাখা হয়।

জালালাবাদ ভবন: জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন অব আমেরিকা ইনকের জন্মলগ্ন থেকে জলালাবাদবাসীর দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন নিউইয়র্কে জালালাবাদবাসীর একটি নিজস্ব ভবন। আজ সেই স্বপ্ন বাস্তবে রূপ দেওয়ায় প্রথমেই সৃষ্টিকর্তার অশেষ শোকরিয়া আদায় করছি। বিগত দিনে সংগঠনের ভবন করার লক্ষ্যে যারা শ্রম দিয়েছেন, প্রাণপণ চেষ্টা করেছেন তাদেরকেও শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি।

সম্মানিত জালালাবাদবাসী, ভবন ক্রয়সংক্রান্ত কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আপনাদের জ্ঞাতার্থে নিয়ে আসা আমার নৈতিক ও সাংগঠনিক দায়িত্ব বলে আমি বিশ্বাস করি। ভূমিকাতে আপনাদের জ্ঞাতার্থে জানিয়ে রাখি, জালালাবাদ ভবন ক্রয়ের লক্ষ্যে প্রথম আলোচনা শুরু হয় ২০২১ সালের ডিসেম্বর মাসের শেষের দিকে। তারপর ভবনের কন্ট্র্রাক্ট সাইন হয় ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের ১৫ তারিখ।

ভবনের মূল্য: ৮ লাখ ৯০ হাজার ডলার। কিন্তু ক্লোজিংয়ের পর্বে আলোচনাসাপেক্ষে ২০ হাজার ডলার ডিসকাউন্ট নিয়ে ৮ লাখ ৭০ হাজার ডলার ভবনের মূল্য নির্ধারণ করে ২০২২ সালের আগস্ট মাসের ১৭ তারিখ ক্লোজিং করা হয়।

নিম্নে তা তুলে ধরা হলো-

Building Price $ 870,000.00

Down Payment & Closing Cost $ 309,049.19

Construction Cost $ 240,982.26

 Monthly Motgage Payment - $ 5,337.50

Rental Income - $ 6,800.00 (Excluding Office & Meeting Place)

Apprisal Value - $ 1,350,000.00

Current Value - $ 1,500,000.00

জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন আগামী দিনের কিছু পরিকল্পনা: 

১) নতুন প্রজন্মকে স্পেসালাইজড হাই স্কুলে ভর্তি হওয়ার সুযোগ করে দেওয়ার জন্য জালালাবাদ ভবনে Weekend Class-এর ব্যবস্থা করা। বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি অফিসে Internship-এর ব্যবস্থা করা।

২) জাতীয় দিবসগুলো যথাযোগ্য মর্যাদায় পালন করা। আগামী ডিসেম্বর মাসে সবার সার্বিক সহযোগিতায় বিজয় প্যারেড করার পরিকল্পনা গ্রহণ করা।

৩) জালালাবাদ Street Fair-এর মাধ্যমে জালাবাদবাসীর মিলন মেলা।

৪) জালালাবাদ ভবনকে আগামী ১ বছরে Mortgage মুক্ত করার সুদৃঢ় পরিকল্পনা গ্রহণ এবং তা বাস্তবায়ন করা।

জালালাবাদ ভবনকে আগামীতে Mortgage মুক্ত করার জন্য আমরা সুনির্দিষ্ট কিছু প্রস্তাবনা আপনাদের নিকট পেশ করছি।

১) আমরা যদি ভবনের জন্য ট্রাস্টি গঠন করে ৫ হাজার ডলার করে ১৭০ জন

ট্রাস্টিতে আনতে পারি, তাহলে আমাদের ভবন ঋণমুক্ত হয়ে যায়।

(১৭০ গুণ ৫,০০০= ৮,৫০,০০০), অথবা

২) জালালাবাদবাসীদের মধ্যে ৪২৫ জন যদি ২ হাজার ডলার করে দেন, তাহলে ভবন ঋণমুক্ত হয়ে যায়। (৪২৫ গুণ ২,০০০= ৮,৫০,০০০)।

৩) যদি উপরোক্ত দুটি প্রস্তাবনায় না গিয়ে আমরা এখন যেভাবে Mortgage

দিয়ে যাচ্ছি, সেভাবে দিয়ে যেতে চান তা-ও পারবেন ভবনের আদায়কৃত ভাড়া থেকে।

তিনি আরো বলেন, আজকের সভায় উপস্থিত জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের সব জালালাবাদবাসী প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা এবং ধন্যবাদ জানাই। আপনাদের সবার উপস্থিতি ও অংশগ্রহণের ফলে আজকের সাধারণ সভা সফল হলো। আমাদের প্রাণপ্রিয় জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনকে আপনাদের সবার অব্যাহত সহযোগিতা কামনা করি। জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন হোক আপনার, আমার সবার প্রিয় সংগঠন। এছাড়াও তিনি ১১ জুন তার সঙ্গে আচরণের প্রেক্ষাপট বর্ণনা করেন।

যে কারণে বদরুল হোসেন খান রোকন হাকিমকে বহিষ্কার করা হলো এবং প্রস্তাবনা উপস্থাপন করেন শাহীন কামালী।

এক. জালালাবাদবাসীর স্বপ্নের ভবনের বিরোধিতা;

দুই. অবৈধভাবে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে সাধারণ সম্পাদককে বহিষ্কার করা;

তিন. সাংগঠনিক সম্পাদককে কমিটি থেকে বাদ দেওয়া;

চার. অগণতান্ত্রিকভাবে সাধারণ সভার আহ্বান;

পাঁচ. আর্মস সিকিউরিটি ও পুলিশ দিয়ে জালালাবাদবাসীকে অপমান করা;

ছয়. সাধারণ সভার নামে অবৈধ সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রবাসে জালালাবাদের ভাবমূর্তি ও সংগঠনকে হুমকির মুখে ফেলে দেওয়া;

সাত. সাবেক সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান চৌধুরী শেফাজকে সভায় ঢুকতে না দিয়ে অপমান করে বের করে দেওয়া;

আট. ফিলাডেলফিয়ার বাড়ি বাজারমূল্য থেকে কমদামে নিজ স্বার্থে বিক্রি করা;

নয়. জালালাবাদের গঠনতন্ত্রকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বা লঙ্ঘন করে মসজিদের সভাপতির পদে থেকেও শপথ দেওয়া;

দশ. বন্যার টাকা আত্মসাৎ করে সভাপতি নজির সৃষ্টি করেছেন;

এগারো. গঠনতন্ত্র অনুযায়ী ৩০ দিনের মধ্যে শপথ গ্রহণ না করা;

বারো. গঠনতন্ত্র অনুযায়ী শপথ গ্রহণের ৯০ দিনের মধ্যে সাধারণ সভা করে সংগঠনের আয়-ব্যয়ের হিসাব জালালাবাদবাসীকে না জানানো। দুই জনকে বহিষ্কারের প্রস্তাবনার সঙ্গে সঙ্গেই সবাই হাত তুলে তা সমর্থন করেন। সেই সঙ্গে শাহীন কামালীকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব দেওয়া হয়। এই সিদ্ধান্ত আগামী ২৫ জুন থেকে কার্যকর হবে।

সাধারণ সভায় ব্যাপকসংখ্যক লোক উপস্থিত ছিলেন। বিশেষ করে সিলেটের বিভিন্ন সংগঠনের প্রতিনিধিদের উপস্থিতি ছিল লক্ষণীয়।

শেয়ার করুন