২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৩:৪৪:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


কথার কথকতা
মাইন উদ্দিন আহমেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
কথার কথকতা


এই শোন মাইন, একটা কথা আমাকে বুঝিয়ে বলতো, নিউইয়র্কে মানুষ নাকি গাড়ি দিয়ে রাস্তা সাজিয়ে রাখে! রহস্যটা কি? আমি প্রশ্ন করলাম, তোকে এটা কে বললো? আমার বন্ধুটি ঢাকা থেকে ফোনেই উত্তর দিলো: ফার্মগেটে একটা রেস্টুরেন্টে বসে চা খাচ্ছিলাম, পাশের টেবিলে কয়েকজন ইয়াংম্যান বসে চা-নাশতা খাচ্ছিলো আর গল্প করছিলো। কথাবার্তায় মনে হলো, ওদের একজন আমেরিকা থাকে, দেশে আসা উপলে কয়েক বন্ধু একত্র হয়েছে। গেট টুগেদার এবং চায়ের আড্ডা আর কি!

আমি বিষয়টা পরিষ্কার বুঝতে পারলাম যে, নিউইয়র্কে রাস্তার পাশে গাড়িপার্কিং করে রাখার বিষয়টি সংশ্লিষ্ট লোকটি সম্ভবত একটু শিল্পিত ভঙ্গিতে এই বলে প্রকাশ করছিলো যে, আরে আমেরিকানদের সাথে আমাদের জীবনযাপন তুলনা করে কি পারবি? আমরা করি রিজিকের জন্য কঠিন সংগ্রাম আর ওরা রাস্তা সাজিয়ে রাখে দামি দামি কার দিয়ে! বিষয়টি পরিপূর্ণ বুঝতে পারার পর আমি আমার সহজ-সরল বন্ধুটিকে গাড়ি দিয়ে রাস্তা সাজানোর ব্যপারটি বুঝিয়ে বললাম।

বললাম, দোস্ত শোন, আমেরিকা হচ্ছে কান্ট্রি অব কমিউনিকেশন, ফুল অব ট্রান্সপোর্টস। নিউইয়র্কে আমি দেখেছি, পরিবারে যতোজন মানুষ, ততোটি গাড়ি। বাইরে থেকে আসা মানুষদের ক্ষেত্রে গাড়ির সংখ্যা এক পরিবারে একটি থাকে, সবাই কর্মব্যস্ত হয়ে যাবার পর জনপ্রতি একটি গাড়ি লাগে। নিউইয়র্কে পাবলিক ট্রান্সপোর্ট নেটওয়ার্ক সুগ্রোথিত, ইচ্ছে করলে এর ওপর নির্ভর করেও কাজ সারা যায়। তবে অপো না করে নিজস্ব গতিতে চলতে হলে নিজস্ব গাড়ি লাগে। আর ব্যক্তি মালিকানাধীন গাড়ির সংখ্যা এতো বেশি যে, সেগুলো কিছু নিয়ম মেনে রাস্তার পাশে রাখারও অনুমতি দেয়া হয়। তবে রাস্তার পাশে গাড়ি রাখার নিয়মগুলো না মানলে ষাট, একশো, একশো বিশ, দুশো, এরকম বিভিন্ন অ্যামাউন্টের জরিমানা করা হয়। নিউইয়র্কে গাড়ির সংখ্যা এতো বেশি যে, সব সময়ই রাস্তার পাশে গাড়ি ভরা থাকে। তোর গাড়িটি নিয়ে তুই অফিসে, কর্মস্থলে অথবা বাজার করতে যাবি, গাড়িটা বের করলে যেই স্থানটি খালি হবে কয়েক মিনিটের মধ্যে কেউ না কেউ আরেকটি গাড়ি ওখানে রাখবে। তাই কোনো স্থানই খালি থাকে না। সব সময় ভরাট থাকে। এখানে অন্য দেশ থেকে নতুন আাসা যে কোনো মানুষের কাছেই মনে হবে, মানুষ গাড়ি দিয়ে রাস্তা সাজিয়ে রাখে।

আমাদের এশিয়ান দেশসমূহের বিশেষ করে ঢাকার রাস্তার যানজট এবং দুর্ঘটনার উল্লেখ করে আমার বন্ধুটি তার তুলনায় এখানে দুর্ঘটনা কম বা বেশি হয় তা জানতে চাইলো। অতি বেশিসংখ্যক গাড়ির কারণে দুর্ঘটনা বেশি হবারই সম্ভাবনা রয়েছে বলে সে মন্তব্য করে। আমি বললাম, এখানে গাড়ি বেশি, মানুষও বেশি, আইন-কানুনও বেশি, কিন্তু এগুলো মেনে নিয়ে এগিয়ে যাবার পদ্ধতিও সাবলীল, মেনে চলা সহজ, না মেনে এগোনো কঠিন। তুই ড্রাইভিং লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালাতে পারবি না। পরীা দিয়ে চালকের লাইসেন্স পাওয়ার নিয়মটি স্বাভাবিক, ঘুষ লাগবে না। সরকারি যানবাহন বিভাগের অফিসে গিয়ে কম্পিউটারে বসে রাস্তার নিয়ম-কানুন বিষয়ক কুড়িটা প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, কুড়িতে চৌদ্দ পেলে তুমি পাস। যানবাহন অফিস, যেটা সংক্ষেপে ডিএমভি নামে পরিচিত, ওরা তোকে এই স্তরে একটা কার্ড দেবে যেটাকে ‘লার্নার লাইসেন্স’ বলে। এবার ওদের ডিপার্টমেন্টের স্বীকৃত ড্রাইভিং প্রশিক বা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে প্র্যাকটিক্যালি গাড়ি চালানোর লেসন নিবি এবং এক সময় পরীা দিবি। পাস করলে স্থায়ী ড্রাইভিং লাইসেন্স পাবি। এ স্তরে আলোচনা বা সমালোচনা করার মতো অনেক বিষয় আছে। সেগুলো আরেকদিন আলাপ করবো। আজ শুধু একটা বিষয়ের কথা বলবো। আমার মনে হয়েছে, এ কথাটি এখনি বলা উচিত।

ডিপার্টমেন্ট অব মোটর ভেহিক্যালস (ডিএমভি) রেজিস্ট্রেশনপ্রাপ্ত একজন ড্রাইভিং শিকের কাছে তোকে নির্ধারিত কতগুলো লেসন নিতে হবে রাস্তায় গাড়ি নিয়ে। তারপর ডিএমভি নির্ধারিত এক দিন-তারিখ-সময়ে ডিএমভির পরীকের তত্ত¡াবধানে রাস্তায় গাড়ি চালানোর পরীা দিতে হবে। পাস করলে ড্রাইভিং লাইসেন্স মিলবে আর পাস না করলে আবার পরীা দিতে হবে, যদি পরীার্থী চায়। এ পর্যায়ে একটা বিষয় আমার কাছে অনুচিত মনে হলো। ড্রাইভিংয়ের প্রশিণার্থী যাঁর কাছে লেসন নিলো, পরীার সময় তাকে পরীক হিসেবে রাখা হয় না। এটি একেবারেই অযৌক্তিক। ড্রাইভিং শেখানোর ক্ষেত্রে যান্ত্রিক বিষয়গুলো ছাড়াও ভাষা একটি বড় বিষয়। পাঁচ থেকে ঊনত্রিশটা ড্রাইভিং কাস করালেন যিনি, তিনি একেবারেই আউট, এটা হয় নাকি! নিউইয়র্কে সরকারি প্রজ্ঞাপনে কমপে আটটি ভাষায় বিষয়টি উল্লেখ থাকে। এটি সুদীর্ঘ নিরীণের ফলাফল। যিনি ড্রাইভিং পরীা দিচ্ছেন, তিনি হঠাত করে পাওয়া একজন পরীককে এবং তাঁর নির্দেশনাসমূহ সম্পূর্ণ বুঝতে পারবেন এমন কোনো নিশ্চয়তা নেই। অনেক সময় দেখা যায়, ভাষাগত সমস্যায় বিব্রত হয়ে একজন ভালো চালকও পরীায় ফেল করেন। মাঝে মাঝে পরীক কর্তৃক পরীার্থীর সাথে দুর্ব্যবহার করার অভিযোগও আমাদের কাছে আসে। ডিএমভির কারো সাথে কোনো মানুষ দুর্ব্যবহার করলে তা নিউইয়র্কে প্রথমসারির অপরাধ বলে গণ্য হয়, কিন্তু ডিএমভির কেউ মানুষের সাথে দুর্ব্যবহার করলে কি হয় তা কিন্তু এখানকার আইনে উল্লেখ করা হয়নি। যা-ই হোক, এ বিষয়টির দিকে আইনপ্রণেতারা হয়তো একসময় দৃষ্টি দেবেন। এই মুহূর্তে ড্রাইভিং পরীা সম্পর্কে আমাদের যেই সুপরামর্শ তাহলো, পরীক টিমে ড্রাইভিংয়ের শিককে অন্তর্ভুক্ত করুন, যাঁর কাছে প্রশিণার্থী শিাগ্রহণ করেছে তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী পরীা নিন, ডিএমভির পরীক এবং ট্রেইনার পরীক দুজনের নম্বর যোগ করে ফলাফল দিন। পরীার্থীর তখন সুবিচার ও সুবিবেচনা পাবার রাস্তা প্রশস্ত হবে। ড্রাইভিং প্রশিকদের অবশ গ্রহণে  ডিএমভির পরীা প্রক্রিয়ার ওপর ওরিয়েন্টেশনই সমন্বয়ের জন্য যথেষ্ট। আমরা চাই সবার জন্য গ্রহণযোগ্য নিয়ম এবং নিরাপদ সড়ক। সবাইকে ধন্যবাদ।

শেয়ার করুন