২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৫:২৫:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


বিএনপিকে প্রতিরোধে কেন আ.লীগের পিছুটান
বিএনপি নয় ষড়যন্ত্রকারীরা আ’ লীগের ভেতরে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৯-২০২২
বিএনপি নয় ষড়যন্ত্রকারীরা আ’ লীগের ভেতরে


বিএনপি’র ডাকে বিভিন্ন কর্মসূচিতে বাধা দিতে হঠাৎ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের তৎপরতায় রাজনৈতিক অঙ্গনে নানান ধরনের প্রশ্ন ও সন্দেহের সৃষ্টি করেছে। আবার দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে রাজপথে বিএনপি ঠেকানো কর্মসূচি বাদ দিতে নির্দেশ দেয়া হযেছে । 

এসব খবর পাল্টা খবরে খোদ আওয়ামী লীগেরই মধ্যেই সন্দেহ- অবিশ্বাস দেখা দিয়েছে। প্রশ্ন দেখা দিয়েছে কারা আসলে বিএনপি’কে ঠেকাতে মাঠে নামতে বলেছিল। আবার কার পরামর্শে এজায়গা থেকে পিছু হটেছে আওয়ামী তা নিয়ে নানান ধরনের গুঞ্জন বাজারে। বিষয়টি নিয়ে আওয়ামী লীগের হাই কমান্ড উদ্বিগ্ন ও তোপের মুখে আছে। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।

সারা দেশে টানা দুই মাস ধরে বিএনপি একের পর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচিতে যোগ দিচ্ছে বিএনপি’র হাজার হাজার নেতাকর্মী। একের পর এক কর্মসূচি পেয়ে বিএনপি’র নেতাকর্মীদের মধ্যে একধরনের সাংগঠনিক তৎপরতা বেড়ে গেছে। এতে করে বিএনপি শীর্ষ পর্যায়ে থেকেই আরো কর্মসূচি দেয়ার চাপ যেমন বাড়ছে তেমনি অংশ গ্রহণও বাড়ছে। খোঁজ নিযে জানা গেছে, বিএনপি’র এসব কর্মসূচি কেবল দেশে এবং আর্ন্তজাতিক অঙ্গনে দলটির প্রতি দৃষ্টি বাড়াতেই নেয়া হচ্ছে তা নয়।

দেশের মধ্যে দলের সাংগঠনিক শক্তির জানান দিতেই এটি করা হচ্ছে বলে শোনা যায়। কারণ সারা দেশে জেলায় জেলায় খুবই সংগোপনে বিএনপি দলটিকে গুছিয়ে ফেলতে কাজ করে ফেলেছে। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান একাজটি করা শুরু করেন খালেদার জিয়া জেলে অবস্থানকালে। জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট দুর্নীতি মামলায় খালেদা জিয়াকে ৫ বছরের কারাদন্ড দিয়েছে আদালত।  অর্থদন্ড ও এছাড়া তারেক রহমানসহ অন্য আসামীদের ১০ বছরের কারাদন্ড দেয়া হয়েছে ২০১৮ সালে। 

যেহেতু খালেদা জিয়া দেশে তাই তাকেই জেলে ঢুকতে হয়েছে। আর তখন থেকে দলের একটি মারাত্মক সাংগঠনিক শূণ্যতা দেখা দেয়। কে ধরবে দলের হাল, চালাবে দল।  এরই মধ্যে চলে আসে ২০১৮ সালের নির্বাচন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাংলাদেশের জাতীয় সংসদের সদস্য নির্বাচনের জন্য ১১তম সাধারণ নির্বাচন, যা ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নিরঙ্কুশভাবে জয় পায়। এতে অবশ্য বিএনপি, গণফোরাম, জেএসডি, নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচনে অংশ নেয়। তবে সব কিছু হলেও বিএনপি পড়ে যায় নানান ধরনের সাংগঠনির স্থবিরতায়। 

এই আন্দোলনে নামছে বা বড়ো কর্মসূচি আসছে বলে বলে দলটি এতোদিন এগুতে থাকে। এনিয়ে দলের ভেতরে বাইরে নানান ধরনের প্রশ্ন দেখা দেয়। আর তখন থেকে দলের একটি মারাত্মক সাংগঠনিক শূন্যতার পাশাপাশি নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দেয় হতাশা। এই শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে দলকে একটি নতুন সাংগঠনিক ধারা সৃষ্টি করা হয়। জেলায় জেলায় বিএনপি ও তার অংগ সংগঠনকে ঢেলে সাজানো হয় নতুন সাংগঠনির আইডিয়ায়। এটি করেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমান। 

নিজে জুম বৈঠক বা সরাসরি কথা বলে বিশ্বস্থ সহকর্মীদের মাঠ পর্যায়ে কাজে লাগিয়ে দলকে এরই মধ্যে আন্দোলনমুখী করে ফেলেন যা ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের চোখে পড়েনি। তারা ব্যাস্ত ছিল দলের ভেতর কোন্দল করে নেতৃত্ব ধরে থাকার প্রাণান্তকর চেষ্টায়। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের একটি বড়ো অংশ নিজেদের ব্যস্ত রেখেছে নিজেদেরকে শহরে আরাম আয়েশের মধ্যে রেখে। 

আওয়ামী লীগে টনক নড়া

এদিকে দলকে গুজিয়ে আন্দোলনমুখী করতে যখন বিএনপি সফল হয়ে যায় এবং মাঠে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতে থাকে এমন সময়ে এতো দিন ঘুমিয়ে থাকা আওয়ামী লীগ নড়ে চড়ে বসে। তাদের টনক নড়ে, অনেক দেরি হয়ে গেছে। শুধু আইন শৃংখলা বাহিনীর ওপর নির্ভর করেই যে তাদের সাংগঠনিক কাজ হবে না তা টের পায়। দীর্ঘদিন ধরে দলটি ক্ষমতায় রয়েছে আওয়ামী লীগ। 

ক্ষমতায় এতো দীর্ঘদিন থাকা আওয়ামী লীগের ক্ষেত্রে বলা যায় গত সাত বছর আরামে আয়েশে কেটেছে। দলীয় সাংগঠনিক কাজ বাদ দিয়ে দলটি কখনো মনোয়নয়ন বাণিজ্য, আবার কেউ কেউ এলাকায় নিজ প্রভাব প্রতিপত্তি বজায় রাখতে জান প্রাণ দিয়ে লড়েছে। তা আবার নিজেদের সাথেই এসব নিয়ে লড়াইয়ে ব্যস্ত ছিল। ফলে তারা তাদের ক্ষমতা দেখানো বেশ জরুরি হয়ে পড়ে। একারণে মাঠে নামে আওয়ামী লীগ বিএনপি’কে ঠেকাতে। তাছাড়া দলের এতো সুযোগ সুবিধা পেয়ে হাই কমান্ডকে দেখাতেও দলটির এক শ্রেণীর নেতা কর্মী বিএনপি’কে শক্তিমত্তা দেখাতে মাঠে নেমে যায়। 

তারপরেও প্রশ্ন

তবে সাংগঠনিক শক্তি দেখাতেই যে আওয়ামী লীগ মাঠে নেমেছে  তা আর এখন মনে করে না খোদ দলের হাই কমান্ড। একারণে নির্দেশ এসেছে বিএনপি ঠেকাতে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মাঠে না নামানোর ব্যাপারে। বলেই ফেলেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর হামলার কেন্দ্রের কোনো নির্দেশনা নেই। নির্দেশনার বাইরে কেউ যদি এসব হামলায় জড়িয়ে পড়েন, আমরা কিন্তু শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেব।’ প্রশ্ন হচ্ছে কেনো ওবায়দুল কাদের এমন সর্তকতা জারি করলেন। এর কারণ খুঁজে জানা গেছে অন্যকথা। দলের হাই কমান্ড মনে করে ক্ষমতার বাইরে অবস্থানকারি দল সরকারের বিরুদ্ধে যড়যন্ত্র করছে না। এর পেছনে রয়েছে আওয়ামী লীগের ভেতরে থাকা ঘাপটি মারা যড়যন্ত্রকারিরাও। আর একারণে ওবায়দুল কাদের এমন সর্তক নির্দেশ দিয়েছেন। 

জানা গেছে, দলের হাই কমান্ড বুজেছে যে দলের জন্য কে কতটা আন্তরিক হয়ে বিএনপি’কে ঠেকাচ্ছে। কারণ মাত্র কয়েকদিন আগে ওবায়দুল কাদের নিজেই সম্প্রতি লালবাগে আওয়ামী লীগের সম্মেলনে গিয়ে মারামারি দেখেছেন। লালবাগ থানা আওয়ামী লীগের সম্মেলনে অন্তত পাঁচবার মারামারি বাধে। তাই ভবিষ্যতে এক লালবাগের আওয়ামী লীগ নেতৃত্ব কতটা ঐকবদ্ধ থাকবে রাজপথে বিএনপি’কে ঠেকাতে-তা নিয়ে আওয়ামী লীগ সন্দিহান। 

কারণ আওয়ামী লীগ মনে করে সারা দেশে দ্বি-ধাবিভক্ত দল বাস্তবে মাঠে নেই বিএনপি’কে ঠেকাতে। এটা কোনো যড়যন্ত্রের অংশ বলেই আপাতত আওয়ামী লীগ মনে করেন। আর সেজন্য মাঠে বিএনপি’কে ঠেকানো থেকে পিছুটান দিয়েছে আওয়ামী লীগ। তবে ইতোমধ্যে দেশে বিদেশে যা সর্বনাশ হওয়ার তা হয়ে গেছে আওয়ামী লীগের। কারণ রাজপথে লাঠি সোটা নিয়ে এভাবে বিএনপি’বে ঠেকাতে গিয়ে আওয়ামী লীগ বড়ো ধরনের যড়যন্ত্রের আচ করেছে নিজ দলের মধ্যেই। আর সে কারণে বিএনপি’কে রাজপথে ঠেকানো বাদ দিয়ে দলটিকে মোকাবেলায় নতুন কৌশল নিচ্ছে বলেই বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে।

শেয়ার করুন