২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৩:১৭:২৭ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশকে ববিতা
কষ্টই আমাকে ববিতা হতে সাহায্য করেছে
আলমগীর কবির
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
কষ্টই আমাকে ববিতা হতে সাহায্য করেছে ফরিদা আক্তার ববিতা


ফরিদা আক্তার ববিতা। গত কয়েক বছর ৩০ জুলাইয়ে জন্মদিনের সময়টা কাটছে ছেলের কাছে। এবারও আছেন কানাডায়। সেখান থেকে জন্মদিন নিয়ে মোবাইলে নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত পাঠকপ্রিয় দেশ পত্রিকার সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি। সাক্ষাতকার নিয়েছেন আলমগীর কবির

প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন ধরে আপনাকে সিনেমায় দেখা যায় না। দেশেও থাকছেন কম। প্রথম সিনেমায় যুক্ত হওয়ার স্মৃতি কি মনে হয়?

ববিতা: প্রথম কোনো কিছুই ভুলা যায় না। ষাটের দশকে ষষ্ঠ শ্রেণিতে পড়াকালীন জহির রায়হান পরিচালিত ‘সংসার’ সিনেমায় রাজ্জাক ও সুচন্দার মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছিলাম। এটি ছিল আমার প্রথম সিনেমা। যদিও সিনেমাটি মুক্তির মুখ দেখেনি। তবে ওই কষ্টটাই আজকে আমাকে ববিতা হতে সাহায্য করেছে। 

প্রশ্ন: আপনি তো সিনেমা নির্মাণেরও ঘোষণা দিয়েছিলেন। ওই প্রজেক্টের কি অবস্থা?

ববিতা: ভেবেছিলাম একটি সিনেমা হলেও নির্মাণ করব। কিন্তু করোনার কারণে চলচ্চিত্রে বলা যায় একটা বিপর্যয়ই নেমে এসেছে। কিন্তু সার্বিক বিবেচনায় মনে হচ্ছে, চলচ্চিত্র এখনো আগের মতো ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি। তাই আমিও আমার সিদ্ধান্ত থেকে সরে দাঁড়ালাম। তাছাড়া এখন বয়সও হয়েছে চাইলেও সব কিছু করতে পারি না।

প্রশ্ন: বয়সের কথা যেহেতু বললেন। এই ৩০ জুলাইয়ে কত বছর পূর্ণ হলো?

ববিতা: সেটা আমি কেন বলব। তোমরা হিসাব করে বের করবা। ১৯৫৩ সালের ৩০ জুলাই বাগেরহাট জেলায় আমার জন্ম। 

প্রশ্ন : বিদেশের জন্মদিন কেমন কেটেছে?

ববিতা: আমার এবারের জন্মদিন ছিল অন্যরকম। ছেলে অনিক সারাদিন আমাকে নিয়ে ঘুরেছে। নানা সারপ্রাইজ দিয়েছে। টরন্টোর সুন্দর সুন্দর বাগান ও ঐতিহাসিক জায়গায় গিয়েছি দু’জনে। একসঙ্গে খাওয়া-দাওয়া সেরেছি। ছেলের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ ভাগাভাগি করলে মন ভরে যায়। মাঝে দু’বার ওর সঙ্গে জন্মদিন উদযাপন করতে পারিনি বলে মন খারাপ করেছিল। এ কারণে জন্মদিনে ছেলের সঙ্গে থাকার চেষ্টা করি।

প্রশ্ন : জন্মদিনে আপনার কাছে সেরা উপহার কোনটি?

ববিতা: মানুষের ভালোবাসাই জন্মদিনে আমার সেরা উপহার। বিশেষ করে ছেলে আমাকে নিয়ে যা আয়োজন করে, এটাই সবচেয়ে ভালো লাগে।

প্রশ্ন : বিশেষ দিনটিতে কী মিস করেছেন?

ববিতা: এই আয়োজনে আমি দেশের অনেককেই মিস করছি। যেমন-বেশ কয়েক বছর আমার জন্মদিনে ডিসট্রেসড চিলড্রেন অ্যান্ড ইনফ্যান্টস ইন্টারন্যাশনালের [ডিসিআইআই] ছোট ছোট শিশু শুভেচ্ছা জানিয়ে আসছে। এই বিশেষ দিনে তারা আমাকে নেচে-গেয়ে-আনন্দে মাতিয়ে তুলতো। তাদের পাশাপাশি বাংলাদেশের অগণিত ভক্ত ও দুই বোন সুচন্দা, চম্পাকে খুব মিস করছি।

প্রশ্ন : জন্মদিন নিয়ে আপনার উপলব্ধি কী?

ববিতা: জন্মদিন শুধু আনন্দের নয়, ভাবনারও। আরও একটি বছর জীবন থেকে পার হয়ে গেল। সবার দোয়ায় ভালো আছি; সুস্থ আছি। এটাই আনন্দের। জীবন অনেক সুন্দর। এ পৃথিবী ছেড়ে সবাই চলে যাবে। তাই যতটুকু সময় আমাদের আছে, তা ভালোভাবে কাজে লাগাতে হবে।

প্রশ্ন : যুক্তরাষ্ট্রে ‘ডালাস বাংলা চলচ্চিত্র উৎসব’-এ আজীবন সম্মাননা পেতে যাচ্ছেন। কেমন লাগছে?

ববিতা: খুবই ভালো লাগছে। এই সম্মান আমার দেশ, জাতি ও পরিবারের। যে কোনো সম্মাননাই একজন শিল্পীর জন্য সম্মানের। তাঁর কাজের মূল্যায়ণ। ডালাস অ্যাঞ্জেলিকা ফিল্ম সেন্টারে ‘সৃজনের হাট’-এর আয়োজনে তিন দিনব্যাপী ডালাসের এই ষষ্ঠ চলচ্চিত্র উৎসব শুরু হবে ৪ আগস্ট। এবারই প্রথম হবে বাংলাদেশি চলচ্চিত্র উৎসবের এই আয়োজন। ডালাসের মেয়র আমাকে আজীবন সম্মাননা জানাবেন। আমার অভিনীত ‘নয়নমনি’ চলচ্চিত্র দিয়ে হবে উৎসবের উদ্বোধন। উদ্বোধনও করব আমি। আর সবকিছু আমাকে ঘিরেই- এটি অনেক আনন্দের। অস্কার, মস্কো, বার্লিন চলচ্চিত্র উৎসবসহ বিশ্বের প্রায় সব বড় চলচ্চিত্র উৎসবে যাওয়ার সুযোগ হয়েছে। দেশি-বিদেশি ৭৫টি পুরস্কার পেয়েছি। কিন্তু ডালাসের এ সম্মাননা আমার কাছে অনেক গৌরবের।

প্রশ্ন : কানাডায় সময় কাটে কী করে?

ববিতা: মা-ছেলে মিলে টরন্টো ঘোরাঘুরি করি। আমার দুই ভাই যুক্তরাষ্ট্রে থাকে। তাদের কাছে যাই। ছেলে সুন্দর বাড়ি করেছে। সেটা সাজিয়ে-গুছিয়ে রাখি। একজন মা ছেলের জন্য সারাদিন যা করে, আমিও তাই করি। মাঝে মাঝে মাছ ধরতেও বেরিয়ে পড়ি।

প্রশ্ন : জীবনকে আপনি কীভাবে দেখেন? 

ববিতা: প্রতিটি মানুষের কাছে জীবন মানে একেক রকমের অনুভূতি। জীবন অনেক সুন্দর।

প্রশ্ন : অভিনয়ে আর ফিরবেন না?

ববিতা: সেরকম ভালো চরিত্র, ভালো গল্প পাচ্ছি না বলে অভিনয় করা হয়ে উঠছে না। পেলে যে কোনো সময়ই অভিনয়ের ইচ্ছে রয়েছে। একজন শিল্পীর অবসর বলে কিছু নেই। ভালো কাজের ক্ষুধা আমাকে সারাক্ষণই তাড়িয়ে বেড়ায়। আমৃত্যু অভিনয়ে থাকতে চাই।

প্রশ্ন : দেশে ফিরছেন কবে?

ববিতা: নভেম্বরে ফিরতে পারব বলে আশা করছি।

শেয়ার করুন