২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ৬:৫৩:১৫ অপরাহ্ন


সিটিতেই জাতীয় নির্বাচনের পালস
বিএনপিতে নতুন উকিল খুঁজছে আ’লীগ
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ১২-০৪-২০২৩
বিএনপিতে নতুন উকিল খুঁজছে আ’লীগ উকিল আবদুস সাত্তার


বাংলাদেশে এখন বইছে নির্বাচনী হওয়া। প্রায় প্রতিটা রাজনীতিবিদদের মুখেই নির্বাচন প্রসঙ্গ ডাইরেক্ট বা ইনডাইরেক্ট। বহুদিন আগ থেকেই বিএনপি নির্বাচনবিমুখ। এক দফা। এ সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনেই অংশ নেবে না তারা। অপরদিকে আওয়ামী লীগ এটা প্রথমত পাত্তা না দিলেও এখন আন্তর্জাতিক পর্যায় থেকে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের অব্যাহত চাপের প্রেক্ষিতে তারা বিএনপিকে প্রচন্ডভাবে নির্বাচনে চাচ্ছে। আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন সামনে রেখেই নির্বাচন কমিশন নেমেছে ৫ সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানে। নির্বাচন কমিশন গত ৩ এপ্রিল এই ৫ সিটি নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। ওই তফসিল অনুসারে, গাজীপুর সিটিতে আগামী ২৫ মে, খুলনা ও বরিশাল সিটিতে ১২ জুন এবং সিলেট ও রাজশাহী সিটিতে ২১ জুন ভোটগ্রহণ হবে। 

এই পাঁচটি সিটি করপোরেশন নির্বাচনের জন্য দলীয় মনোনয়ন ফরম বিক্রি শুরু করেছে আওয়ামী লীগ। এ নিয়ে দলের অভ্যন্তরে অর্থাৎ ওই পাঁচ সিটিতে নির্বাচনি আমেজ। গত রোববার (৯ এপ্রিল) সকালে রাজধানীর ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ফরম বিক্রি শুরু হয়। ফরম সংগ্রহ করে মনোনয়ন প্রত্যাশীরারা চেষ্টা করছেন দলের মনোনয়ন পেতে। গুডবুকে থাকারা সেটা পেয়েও যাবেন। এ ছাড়া দল যাকে মনোনয়ন দেবে তার পক্ষেই কাজ করার কথাও জানান দলটির (আওয়ামী লীগের) দলের দফতর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া। তিনি বলেন, সব ধরনের সাংগঠনিক প্রস্তুতি নিয়েই সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে আওয়ামী লীগ। পাশাপাশি অন্য দলগুলোকে নির্বাচনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান তিনি।

কিন্তু বিএনপি বলছে, নির্বাচনে তারা অবশ্যই যাবে- তবে এ দলীয় সরকার পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে যে নির্বাচন হবে, কেবল সে নির্বাচনেই অংশ নেবেন তারা। সমস্যাটা এখানেই। কোনোভাবেই বিএনপিকে বাগে আনা যাচ্ছে না। এদিকে জাতীয় নির্বাচনের দিনক্ষণও চলে আসছে। বছর নয়, এখন কয়েক মাসের ব্যাবধানে অনুষ্ঠিত হবে ওই নির্বাচন। অর্থাৎ আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যেই সম্পন্ন হতে হবে। তার অন্তত ৯০ দিন আগে হয়তো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কাছে অথবা বর্তমান প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশন ওই নির্বাচনের যাবতীয় আয়োজনের ব্যাবস্থা করবেন।

এদিকে পাঁচ সিটি নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টি। ইতিমধ্যে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেন, ৫ সিটিতেই প্রার্থী দেবে জাতীয় পার্টি। এ সিদ্ধান্ত দলীয়ভাবেই নেয়া হয়েছে। কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ১৪ বছর আওয়ামী লীগের শাসনামলে দেশে পরিস্থিতি স্বাভাবিক নেই। সেই বিবেচনায় সাধারণ মানুষ আওয়ামী লীগকে বর্জন করবে এবং জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ভোট দেবে। এদিকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ প্রত্যেক সিটিতে দলীয় প্রতীক নৌকা মার্কার প্রার্থী দেবে। জাতীয় পার্টিও দলীয় প্রার্থী দেবে। তবে এবার নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে দলীয় প্রার্থী দেবে। মহাজোটের সাথে লিয়াজোঁ করে কোনো প্রার্থী দেওয়া হবে না। মহাজোট শুধু জাতীয় নির্বাচনে একক প্রার্থী দেবে।  

৫ সিটি নির্বাচনে নিজ দলে বিএনপি’র হুঁশিয়ারি   

বিএনপি ৫ সিটি নির্বাচনে অংশ না নেয়ার ঘোষণা আগভাগেই দিয়ে রেখেছে। এর কারণও আছে। বিগত সময়ে অনেকেই দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যেয়ে নির্বাচনে অংশ নিয়েছেন। এবার তেমনটা হলে দলীয় শৃংখলা ভঙ্গের দায়ে কঠোর সাংগঠনিক শাস্তি এমনকি বহিষ্কারও করা হতে পারে বলে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। এ ব্যাপারে মির্জা ফখরুল বলেন, “দলের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী বিএনপির কোনো নেতা সিটি নির্বাচনে যাবেন না। আর যদি কেউ যায়, তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগে কঠোর সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” 

বিএনপি আগভাগে সতর্কতার ঘোষণা দেয়ার অর্থ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সংসদ উপনির্বাচনে উকিল আবদুস সাত্তারের মতো ’নতুন কোনো উকিল’-এর আবির্ভাবেরও আশঙ্কা থেকে। 

ওবায়দুল কাদের, সাধারণ সম্পাদক আওয়ামী লীগ 

আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে উদ্দেশ্য করে মন্তব্য করেছেন। মঙ্গলবার (১১ এপ্রিল) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক মতবিনিময়সভায় তিনি বলেছেন, আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি সরাসরি না এলেও ঘোমটা পরে আসবে। এটা তাদের রাজনীতির আরেক ভ-ামি। একই সঙ্গে জাতীয় নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, নির্বাচনে ৩০টি সিট জুটবে কি না সেটা ভেবে বিএনপি নির্বাচন বানচালের চক্রান্ত করছে। এছাড়া তিনি আরো এক বক্তৃতায় বলেছেন, বিএনপির অনেকেই গোপনে যোগাযোগ করছেন জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য। বিএনপিতে উকিল আব্দুস সাত্তারের অভাব নেই। 

তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ 

আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আমরা চাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে বিএনপিসহ সব রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করুক। তবে যে কোনো রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে কী করবে না, সেটি তাদের নিজস্ব সিদ্ধান্তের ব্যাপার। কিন্তু বিএনপির মধ্যে সব সময়ই নির্বাচন নিয়ে দোদুল্যমানতা  থাকে। তারা কোনো কোনো সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছে, আবার কোনো কোনোটায় অংশগ্রহণ করেনি। এই দোদুল্যমানতাই বিএনপির জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল 

সিটি নির্বাচন প্রসঙ্গে কথা বলতে যেয়ে তিনি বলেন, আগেই তো এ নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেবেনা সেটা বলে দিয়েছি। কারণ পাতানো ফাঁদে পা দেবে না বিএনপি। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব আরো বলেন, “দেশের গণতন্ত্র ও নির্বাচন ব্যবস্থা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগ। বিগত দুটি জাতীয় নির্বাচন এবং স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলোতে তা প্রমাণিত। আওয়ামী লীগ ও নির্বাচন কমিশনের অধীনে আগামীতে সিটি করপোরেশনসহ কোনো নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।” বিএনপি মহাসচিব আরো বলেছেন, “সিটি নির্বাচন আসলে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের একটি ফাঁদ। কাজেই বিএনপি এতে পা দেবে না।”   

বিএনপি’র সিটি নির্বাচনে অবস্থান 

বিএনপি ২০১৩ সালে এই সিটিগুলোর নির্বাচনে সবগুলোতেই অংশ নিয়ে বিএনপির মেয়র নির্বাচিত হন। উল্লেখ্য সিটি করপোরেশনের ওই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল ২০১৪ সালের জাতীয় নির্বাচনের আগে। ঠিক এবারের প্রেক্ষাপটে। কিন্তু ২০১৮ সালে সিটিগুলোর মধ্যে গাজীপুর, রাজশাহী, বরিশাল ও খুলনা নির্বাচন বিএনপি বর্জন করে। কিন্তু সিলেটে শেষ পর্যন্ত আর নির্বাচন বর্জন করেনি। সেবার সিলেটে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি প্রার্থী আরিফুল হক। জানা গেছে, তিনি লন্ডনে বিএনপির ভাইসচেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। যার উদ্দেশ্য আসন্ন সিটি করপোরেশন নির্বাচন বলে অনেকেই ধারণা করছেন। তবে বিএনপি যখন দলগতভাবে এ সিটি নির্বাচন বর্জনের সিদ্ধান্ত সেখানে সিলেটেও হয়তো আর অংশ নেবেনা বিএনপি।   

জাতীয় নির্বাচনের আগে সিটি নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক 

জাতীয় নির্বাচনে সব দলের অংশগ্রহণ ও একটি সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য দেশ বিদেশে প্রচন্ড চাপ রয়েছে। এর প্রাক্কালে ৫ সিটির নির্বাচনের গুরুত্ব অনেক। এ নির্বাচনের পানে আন্তর্জাতিক মহলেরও দৃষ্টি থাকবে। বিশেষ করে বিএনপির অংশ না নেয়াটা বড় ধরনের একটা ইঙ্গিত বহন করছে যে তারা হয়তো জাতীয় নির্বাচনেও দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার যে ঘোষণা দিয়েছে তাতে অবিচল থাকবে। ফলে এখান থেকে হিসেব নিকেষ আরেকটু জটিলভাবেই কষতে শুরু করবে সবাই। কারণ সিটির নির্বাচন অনেকটাই জাতীয় নির্বাচনের ড্রেস রিহের্সাল ভাবছেন তারা। বিএনপি অংশ না নিলে এ নির্বাচনও পূর্বের নির্বাচনসমূহের মত এক তরফাই করে ফেলবে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। 

যদিও আওয়ামী লীগ যথাসাধ্য চেষ্টা করছে বিএনপিকে আনার। অন্তত উকিল আব্দুস সাত্তার টাইপের হলেও। ওবায়দুল কাদের বলেছেনও। সেটা ভিন্ন কথা। কিন্তু বিএনপি শেষ পর্যন্ত সিটিতে  না এলে জাতীয় নির্বাচন নিয়েও তারা নতুন করে হিসেব কষবে তারাও। ফলে এটা আর বলার অপেক্ষা রাখে না- জাতীয় নির্বাচন ঘিরে একটা ধোয়াশাচ্ছন্ন পরিবেশ ক্রমশ স্পষ্ট হতে শুরু করবে সিটি নির্বাচনের পর থেকেই।

শেয়ার করুন