২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৭:৪৫:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


মানব সেবার লক্ষ্যে প্রতিষ্ঠা করেন আরএস টেকনোলজি এনওয়াই
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান : মানব সেবাই যার প্রত্যয়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৭-০৫-২০২৩
ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান : মানব সেবাই যার প্রত্যয় ক্লাশ নিচ্ছেন ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান


ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান পরিবারসহ আমেরিকায় আসেন উন্নত জীবনের আশায়। একজন কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার হয়েও এখানে এসে চাকরির পাশাপাশি কম্পিউটারের ওপর অনেকগুলো কোর্স এবং ডিপ্লোমা নিয়েছেন। তিনি অনেক আগেই বুঝে গিয়েছিলেন এই শতাব্দি হবে কম্পিউটারের শতাব্দী। প্রবাসে বাংলাদেশিরা এসে নানা সীমাবন্ধতার কারণে তাদের অড জব করতে হচ্ছে। হয়ত এই অড জবের মাধ্যমেই তাকে সারাটা জীবন কাটাতে হচ্ছে। ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহানের মনেন এবং চিন্তায় ছিল ভিন্ন কিছু। সেই ভিন্নতা হচ্ছে কম্পিউটার কোর্সের ওপর প্রতিষ্ঠান করা এবং সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশি কমিউনিটির পাশে দাঁড়ানো। যে প্রত্যয় সেই অনুযায়ী কাজ। কয়েকজন বন্ধু মিলে প্রতিষ্ঠা করেন স্মার্ট টেক আইটি প্রতিষ্ঠান। তারা জানতেন বাঙালি মেধাবি জাতি। একটু গাইড এবং সহযোগিতা ফেলে তাদের জীবন পরিবর্তন করা সম্ভব। মানুষের জীবন পরিবর্তনের সিঁড়িটি ছিল স্মার্ট টেক আইটি। শপথ নিলেন প্রবাসী বাংলাদেশিদের সহযোগিতা করবেন। অড জব থেকে তাদের স্বপ্নে জগতে নিয়ে আসবেন। সেই লক্ষ্যেই তারা কাজ শুরু করেন। ইতিমধ্যেই বহু বাংলাদেশি স্মার্ট টেক আইটিতে কোর্স করে স্বপ্নের দেশে স্বপ্নের চাকরি পেয়েছেন এবং স্বপ্নের জীবন শুরু করেন। তাদের মূল লক্ষ্য অর্থ ছিল না, মূল লক্ষ্য ছিল মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন। যার যার সুবিধা মতো তারা ক্লাস নিচ্ছেন এবং অর্থ না থাকলে সহযোগিতা করছেন। শুধু তাই নয় যারা কোর্স করছে তাদের চাকরি দিচ্ছেন। সোজা কথা শুধু কোর্স নয়, জব প্লেসমেন্টটাও তারা করছেন।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান শুধু নতুন প্রজন্ম বা তরুণ প্রজন্মের কথা চিন্তা করছেন না। চিন্তা করছেন এই প্রবাসে আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কথা। অনেকের হয়তো অর্থ আছে, কিন্তু কমিউনিটি সেবায় তারা হয়ত নেই। কিন্তু ইঞ্জিনিয়ার ছোবহান চিন্তা করলেন আমাদের বয়স্ক জনগোষ্ঠীকেও বেসিক কম্পিউটার কোর্স এবং বেসিক ইংরেজি ভাষায় দক্ষ করে তাদের কাজে লাগানো যায়। সেই লক্ষ্যে তিনি আরএস টেকনোলজি এনওয়াই প্রতিষ্ঠা করেন। সেই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বয়স্কদের ফ্রি ট্রেনিং দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করবেন। ভালো মানুষ না হলে ভালো চিন্তা করা সম্ভব নয়, মানসেবায় ব্রতী না থাকলে এমন উদ্যোগ নেওয়াও সম্ভব নয়। এ ছাড়াও আব্দুস ছোবহান প্রবাসে অনেক সমাজিক সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। তার লক্ষ্যে মানব সেবা এবং বাংলাদেশি কমিউনিটির উন্নয়ন। এই ব্যাপারে তিনি কমিউনিটির সর্বস্তরের লোকজনের সমর্থন চেয়েছেন। তিনি বলেন, আমাদের কমিউনিটির সমস্যা হচ্ছে আমরা ঐক্যবদ্ধ নই, আমরা নানাভাবে বিভক্ত। কিন্তু বর্তমান সময়ে আমাদের প্রয়োজন ঐক্যবদ্ধ কমিউনিটি। তিনি বলেন, আমি বিশ্বাস করি একাই বল, একতাই শক্তি। সেই সঙ্গে মানুষের মননের চিন্তার পরিবর্তন। ইচ্ছা শক্তিই হচ্ছে বড় শক্তি। ইচ্ছা থাকলে সব কিছুই জয় করা সম্ভব।

একনজরে আব্দুস ছোবহান

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান তার কর্মজীবন শুরু করেন ১৯৯৪ সালে রব্বানী কম্পিউটারসের সঙ্গে কম্পিউটার ইন্সট্রাকটর হিসেবে। রব্বানী কম্পিউটারের পক্ষ থেকে তিনি ঢাকা হলিক্রস কলেজ ও ঢাকা শাহীন কলেজে কম্পিউারের ক্লাস করাতেন। যার উদ্দেশ্য ছিল যাতে করে নবম শ্রেণিতে কম্পিউটার সাবজেক্টটি অন্তর্ভুক্ত করা হয়। রব্বানী কম্পিউটারে কর্মরত অবস্থায় ১৯৯৬ সালে সৌদি রয়েল কমিশনের প্রজেক্টে সহকারী অ্যাডমিনের দায়িত্ব নিয়ে সৌদি আরব চলে যান। সৌদির চুক্তি শেষে তিনি দেশে ফিরে এসে নিউ এশিয়া লিমিটেডের সঙ্গে মাইক্রোসফ্ট সফটওয়ার সেলস ডিপার্টমেন্টে চ্যানেল ম্যানেজার হিসেবে ১৯৯৯ সাল ২০০২ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি সিরামিক ইঞ্জিনিয়ারিং শেষ করার পর কম্পিউটার সাইন্সে ডিপ্লোমা সম্পন্ন করেন। এবং পরবর্তীতে তিনি কম্পিউটার সায়েন্সে ব্যাচেলর করেন। ব্যাচেলর শেষে তিনি নিজে ব্যবসা করার লক্ষ্যে আরএস টেকনোলজি নামে একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন। এই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে তিনি বাংলাদেশে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কম্পিউটার সেলস সার্ভিস দেন। এই প্রতিষ্ঠানটি বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান।

ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস ছোবহান উন্নত জীবনের আশায় পরিবারসহ আমেরিকায় চলে আসেন ২০১৫ সালে। আমেরিকায় এসে তিনি বিভিন্ন কাজের পাশাপাশি সফটওয়ার ট্রেস্টিংয়ের ওপর কোর্স করেন এবং পিটসবার্গ ফ্যাডএ্যাক্স কোম্পানিতে অটোমিশন ইঞ্জিনিয়ার হিসাবে যোগদান করেন। ২০১৯ সালে কয়েকজন সমমনা ইঞ্জিনিয়ারের সঙ্গে স্মার্ট টেক আইটি সলিউশন নামে প্রতিষ্ঠান গঠন করেন এবং সেই প্রতিষ্ঠানের ডাইরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। একই সঙ্গে তিনি স্মার্ট টেক’র ইন্সট্রাকটর হিসেবে কাজ করছেন। এই প্রতিষ্ঠানে কোর্স করে অনেকেই বর্তমানে ৮০ হাজার ডলার থেকে ১ লাখ ২০ হাজারের চাকরি করছেন।

তিনি বাংলাদেশি কমিউনিটির বয়স্ক লোকদের স্কিল ডেভেলপমেন্ট করার জন্য আরএস টেকনোলজি এনওয়াই নামে আরেকটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। যার মাধ্যমে বয়স্ক লোকদের বেসিক কম্পিউটার ও ইংরেজিতে পারদর্শী করে চাকরির ব্যবস্থা করতে পারেন। তিনি বয়স্ক লোকদের ফ্রি কম্পিউটার শেখাবেন। কথা প্রসঙ্গে জানালেন তিনি সহসায়ই মানুষের উপকারে আসে এই কাজটি শুরু করবেন। অতি সম্প্রতি তিনি নবান্ন পার্টি হলে প্রতিমন্ত্রী ফজিলাতুন নেসা এক সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে তার বক্তব্যে বাংলাদেশ সোসাইটির সদস্যদের ফ্রি কম্পিউটার শেখানোর ঘোষণা দেন এবং তা লিখিতভাবে বাংলাদেশ সোসাইটির কর্মকর্তাদের জানিয়েছি।

এ ছাড়াও তিনি ওয়ার্ল্ড হিউম্যান রাইটস ডেভেলপমেন্টের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। সেই সঙ্গে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠান ছায়া সিডিসিতে ভলেন্টিয়ার হিসেবে কাজ করছেন। সম্প্রতি তিনি অ্যাথনিক হিউম্যানেস্টি সোসাইটি অব কুইন্সের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন। এছাড়াও তিনি বহু মানবিক সংগঠনের জড়িত। সেবা দিয়ে যাচ্ছেন কমিউনিটিতে।

শেয়ার করুন