৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৫:৪৫:১২ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


অ্যাসাইলাম আবেদন ৬ মাসে নিষ্পত্তির নতুন আদেশ
মঈনুদ্দীন নাসের
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩১-০৩-২০২২
অ্যাসাইলাম আবেদন ৬ মাসে নিষ্পত্তির নতুন আদেশ


অ্যাসাইলাম অফিসারকে অ্যাসাইলামের আবেদন নিষ্পত্তির অধিকতর দায়িত্ব দিয়ে এবং ইমিগ্রেশন জাজদের দায়িত্ব কমিয়ে বাইডেন প্রশাসন অ্যাসাইলাম আবেদনকারীদের প্রচলিত ব্যবস্থা নতুন করে ঢেলে সাজানোর একটি পরিকল্পনা চূড়ান্ত করেছে। অনেক বিশেষজ্ঞ বলছেন, এই ব্যবস্থা বিগত ২৫ বছরে ইমিগ্রেশন কোর্টের ব্যাকলগ কমানোর জন্য একটি ব্যাপক পরিবর্তন। ডিপার্টমেন্ট অব হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ও ডিপার্টমেন্ট অব জাস্টিজ একত্রে এই অ্যাসাইলাম প্রক্রিয়া বিধি জারি করেছে। 

গত বৃহস্পতিবার প্রশাসন এই নতুন পলিসি প্রকাশ করেছে। বলা হচ্ছে, এই বিধি হচ্ছে অন্তর্বর্তীকালীন চূড়ান্ত বিধি। কতিপয় মাইগ্র্যান্ট যারা অ্যাসাইলাম চাচ্ছে আমেরিকায় তাদের আবেদনের শুনানি ও মূল্যায়ন ইমিগ্রেশন জাজদের পরিবর্তে অ্যাসাইলাম অফিসারদের দ্বারা সম্পন্ন করা হবে। এর লক্ষ্য হচ্ছে, সমগ্র প্রসেস ৬ মাসের মধ্যে সম্পন্ন করার ব্যবস্থা। যেখানে এই প্রসেস শেষ করতে গড়ে ৫ বছর লেগে যায়। এই পরিকল্পনার মধ্যে রয়েছে অনেক অ্যাসাইলাম আবেদনকারীকে প্যারোলের মাধ্যমে ছেড়ে রেখে প্রক্রিয়া সমাধানের সুযোগ দেয়া। কিন্তু এর সমালোচকরা বলছেন, এই ব্যবস্থা সীমান্তে আরো আশাবাদী অনেক মাইগ্র্যান্টকে টেনে আনবে। সাম্প্রতিক সপ্তাহে অভ্যন্তরীণভাবে সংগৃহীত ডাটা উল্লেখ করে নিউইয়র্ক টাইমসে বলা হয়, প্রতিদিন হাজারেরও বেশি অনাগরিক লোককে সীমান্ত থেকে আটক করা হয়েছে।

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প কর্তৃক চার বছর ধরে ইমিগ্রেশন ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির পর বাইডেন প্রশাসন প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, অ্যাসাইলাম ব্যবস্থায় মানবিকতা স্থাপন করা হবে। কিন্তু এখন এই ওভার বারডেন ব্যবস্থায় লাগাম টেনে ধরার সময় এসেছে। গত ফেব্রুয়ারি মাসে ইমিগ্রেশন কোর্টে পেন্ডিং মামলার সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬ লাখ ৭০ হাজারে।

[গত সপ্তাহে এই দেশ পত্রিকায় একটি সংবাদের শিরোনামে লেখা হয়েছিল অ্যাসাইলাম ক্যাটাগরিতে গ্রিনকার্ডের আবেদনের জন্য ’৫২ সপ্তাহ অপেক্ষা করতে হয়। আসলে তা হবে ৫২ মাস অর্থাৎ প্রায় ৫ বছর অপেক্ষা করতে হয়। সংবাদের ভেতরের হিসাবটি ঠিক আছে।]

এই নতুন বিধি এসেছে এমন একসময় যখন দক্ষিণ-পশ্চিম সীমান্তের কর্মকর্তারা রেকর্ড-সংখ্যক মাইগ্র্যান্ট ব্যবস্থাপনায় নিয়োজিত হাজার হাজার কাগজপত্রহীন মাইগ্র্যান্টকে দেশের মধ্যে ইতিমধ্যেই ছেড়ে দেয়া হয়েছে। প্রতিদিন তাদের ছাড়া হচ্ছে। অনেককে অ্যাসাইলাম আবেদনের প্ল্যান দেয়া হচ্ছে।

সিরাকুশ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইমিগ্রেশন এনফোর্সমেন্ট ডাটা বিশ্লেষণকারী এক ভূগোল বিশেষজ্ঞ অস্টিন সি খোকার বলেন, ‘দীর্ঘদিন পরে এই পরিকল্পনা অ্যাসাইলাম ব্যবস্থা সংস্কারে উল্লেখযোগ্য নীতি হতে পারে। এই ব্যবস্থা ট্রাম্পের নীতিকে শুধুই অকার্যকর করবে না, বরং তা অর্থবহ কাঠামোগত সংস্কার প্রতিষ্ঠা করবে। ট্রাম্প প্রশাসন অ্যাসাইলাম আবেদনের ব্যবস্থার সীমারেখা টেনে দিয়েছিল। চূড়ান্ত বিধি গত আগস্ট মাসে প্রস্তাবিত ভার্সন থেকে বেশি পরিবর্তিত নয়। সে সময় তা প্রায় ৫ হাজার জনের কাছ থেকে কমেন্ট পেয়েছিল।

আমেরিকান ইমিগ্রেশন এজেন্সির কর্মকর্তা ও নির্বাহী কর্মকর্তারা, যারা ইমিগ্রেশন পর্যালোচনা নিয়ে কাজ করে এবং যেখানে অ্যাসাইলাম মামলা নাড়াচাড়া করা হয়, তারা নিজেদের নাম গোপন রাখার শর্তে ইমিগ্রেশন রিপোর্টারদের বলেছেন, এই প্রক্রিয়া ধীরে ধীরে প্রসারিত করা হবে। তারা এমন কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি কীভাবে, কোথা থেকে তা শুরু করা হবে অথবা কত মাইগ্র্যান্ট এর সঙ্গে যুক্ত হবে। এই পরিকল্পনা পুরো কার্যকর করতে সরকারকে শত শত নতুন অ্যাসাইলাম অফিসার নিয়োগ করতে হবে, যাতে বছরে অন্তত ৭৫ হাজার অ্যাসাইলাম আবেদনকারী হ্যান্ডেল করা যায়।

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি সেক্রেটারি আলেজান্দ্রো মেওরকাস এক বিবৃতিতে বলেন, ‘যে বিধি তৈরি হচ্ছে, তা অনেক বেশি কার্যকর হবে এবং তা অর্থবহ অ্যাসাইলাম ব্যবস্থা চালু করবে, যাতে যেসব আবেদনকারী অ্যাসাইলাম পাওয়ার যোগ্য তারা যাতে দ্রুত প্রোটেকশন পায় আর যারা প্রোটেকশনের যোগ্য নয়, তারা যাতে দ্রুত রিমুভ হয়ে যায়।

ইমিগ্রেশন কোর্টে কম মামলা গেলে তা ব্যাকলগ কমাবে। প্রায় ১৭ লাখ কেস ব্যাকলগে ৪০ শতাংশ মামলা অ্যাসাইলাম মামলা, অনেক ইমিগ্রেশন অ্যাডভোকেট মনে করেন, বিচার দ্রুত করলে বিচারপ্রার্থীদের আইনগত প্রক্রিয়া থেকে বঞ্চিত করা হবে। 

হিউম্যান রাইটস ফার্স্টের রিফিউজি প্রোটেকশনের ডাইরেক্টর এলিনর আসের বলেন, ‘দ্রুত অ্যাসাইলাম বিচার নিষ্পন্ন করা হলে তাদের লিগ্যাল প্রতিনিধিত্ব জোগাড়ে, অ্যাভিডেন্স জোগাড়ে অথবা মামলা প্রিপারেশনে কম সময় পাওয়া গেলে তাতে অসফলতা এবং কাউন্টার প্রোডাক্টিভের চাপ থেকে যাবে। 

সেখানে আরো উদ্বেগ থেকে যায় যে, সেখানে দ্রুত রিমুভাল হতে পারে। সেটা ১৯৯৬ সালের আইনে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে, কেউ যদি ফিরে গেলে ভয় নেই বলে উল্লেখ করে তাদেরকে শুনানি অথবা অ্যাটর্নি নিয়োগের সুযোগ না দিয়ে বিদায় করা হবে। 

দ্রুত রিমুভাল প্রক্রিয়ায় সীমান্তে অফিসাররা জিজ্ঞেস করবে মাইগ্র্যান্টদের, তারা দেশে ফিরে যেতে ভয় পায় কি না। যেসব মাইগ্র্যান্ট ফিরে যেতে ভয় পায়, তাদের অ্যাসাইলাম অফিসারের কাছে সাক্ষাৎকারের জন্য পেশ করা হবে। 

সেসব মাইগ্র্যান্টদের অনেকেই ইমিগ্রেশন জাজদের সামনে উপস্থিত হবার জন্য বছরের পর বছর অপেক্ষা করে আছে এবং আনুষ্ঠানিকভাবে অ্যাসাইলামের জন্য আবেদন করতেও সময়ের দরকার। কিন্তু বর্তমান পদ্ধতিতে অ্যাসাইলাম অফিসারের কাছে অ্যাসাইলামের আবেদন করবে প্রথম বাছাইয়ের পর, এই প্রক্রিয়ায় জাজের সামনে যাওয়ার পূর্বে কম সঙ্গতিপূর্ণ এবং সেখানে সরকারি উকিলদের কেস করতে হয়। এক সরকারি বিশ্লেষণে দেখা যায়, এক দ্রুত রিমুভাল প্রসিডিংয়ে স্বদেশে নির্যাতনের ভয়ে ভীত হবার কথা ২০০৬ সালে যেখানে মাত্র ৫ শতাংশ ভয়ের সাক্ষাৎকার দিতে রাজি ছিলেন সেখানে ২০১৮ সালে তাদের সংখ্যা ৪২ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। 

সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের এক ফেলো বলেন, এই সংখ্যা বেড়েছে। কারণ ২০০৯ সালে ধৃত অ্যাসাইলাম প্রার্থীদের প্যারোলে ছেড়ে দেয়া হয়েছিল। এই ফেলো বলেন, দেশে ফিরে গেলে ভয় পায় এ ধরনের কথা বললে আপনি মুক্ত হবেন। কাজেই নতুন বিধি সে রকম পরিস্থিতির মাধ্যমে আরো নতুন মাইগ্র্যান্ট ডেকে আনতে পারে। 

বাইডেনের সময় ধৃত মাইগ্র্যান্টের সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে উল্লেখযোগ্যভাবে। অনেকেই সহিংসতা এড়িয়ে আসছে, কিন্তু সারা বিশ্ব থেকে অর্থনৈতিক সুবিধার জন্য ইমিগ্র্যান্টরা আসছে। 

এই নতুন রুল ফেডারেল রেজিস্টারে প্রকাশের ৬০ দিনের মধ্যে কার্যকর হবে। এ সময়ে নতুন কমেন্ট চাইবে। 

এখনকার মতো এই আবেদন কোভিড-সংক্রান্ত পাবলিক হেলথ নির্দেশনা মেনে চলতে হবে। 


শেয়ার করুন