২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০২:০৮:০৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের মতবিনিময়
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় ঐক্য পরিষদের মতবিনিময় সভায় অংশগ্রহণকারীরা


গত ৪ অক্টোবর বুধবার নিউ ইয়র্ক শহরের ফ্লোরাল পার্কের ফ্লেভার অফ  ইন্ডিয়া রেস্তোরাঁয় কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদ নেতৃবৃন্দের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাড়ে তিন ঘণ্টাব্যাপী এক মতবিনিময সভা অনুষ্ঠিত হয়। সংগঠনের অন্যতম সভাপতি নবেন্দু দত্তের সভাপতিত্বে এবং সাধারণ সম্পাদক ডক্টর দ্বিজেন ভট্টাচার্য ও যুগ্ম সম্পাদক বিষ্ণু গোপের যৌথ পরিচালনায় অনুষ্ঠিত এই মতবিনিময সভায় উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, সাংগঠনিক সম্পাদক পদ্মাবতী দেবী ও সহকারী আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য। সভায় উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদের ডিরেক্টার, কর্মকর্তা, উপদেষ্টা, সদস্য ও দু’একজন অতিথির মধ্যে ছিলেন সংগঠনের অন্য দুই সভাপতি ডক্টর টমাস দুলু রায় ও রণবীর বড়ুয়া, ডক্টর জিতেন রায, শিতাংশু গুহ, ডাক্তার প্রভাত দাস, সুশীল সাহা, রূপকুমার ভৌমিক, চন্দন সেনগুপ্ত, প্রদীপ মালাকার, ভজন সরকার, প্রদীপ কুন্ডু, পার্থ তালুকদার, তপন সেন, নিতাই নাথ, রণেশ চক্রবর্তী, অমিত চৌধুরী, অসীম সাহা, রিণা সাহা, সুকান্ত দাস টুটুল, কুমার বাবুল সাহা, অজিত চন্দ, মতিলাল নাথ, আলপনা গুহ, সুবর্ণা সেনগুপ্ত, পরেশ ধর, মৃন্ময় ব্যানার্জী, দিলীপ চক্রবর্তী, হরিগোপাল বর্ম্মণ, ভবতোষ মিত্র, ডক্টর দিলীপ নাথ, শ্যামল চক্রবর্তী, সুশীল সিনহা, সোমনাথ ঘোষ, এডওয়ার্ড হলসানা, রাজেশ রায়, মৈত্রিশর বড়ুয়া, পিন্টু দাস, পিযুষ প্রমুখ।         

সভায় আলোচনার মুখ্য বিষয় ছিল চারটি: (১) ২০১৮ সালের নির্বাচনী ইশতেহারে প্রতিশ্রুতি সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনটি অর্থবহ হওয়ার জন্য তাতে কী কী ধারা অন্তর্ভুক্ত থাকা আবশ্যিক এবং কেন চলতি সেশনেই আইনটি পাস করা জরুরি; (২) আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে সংখ্যালঘু নাগরিকদের ভোটাধিকার প্রয়োগের অধিকার এবং নির্বাচনের পূর্বাপর কালে তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তার জন্য কার কার সঙ্গে কথা বলা দরকার; এবং, (৩) সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের সাংসদগণ সংখ্যালঘু নির্যাতনের বিরুদ্ধে কখনো একটি কথাও বলেন না কেন: এবং, বাংলাদেশে চলমান সংখ্যালঘু নির্যাতন চিরতরে বন্ধ করতে কেন শুধু সরকার নয়, বিরোধী দলগুলোর নেতৃবৃন্দ, সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব ও পুলিশ প্রধান, যারা বিদেশে সুনামের সঙ্গে মানবাধিকার লঙ্ঘন প্রতিহত করেন এবং শান্তি রক্ষা করেন, তাদের সঙ্গেও কথা বলা দরকার।   

সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্যে কেন্দ্রীয় কমিটির নেতা-কর্মকর্তাদের অনুরোধ করা হয় যে, ক্ষমতাসীন সরকার রাষ্ট্রধর্ম আইনকে সাংবিধানিকভাবে পাকাপোক্ত দেওয়ার পরও নিজেদের ‘সংখ্যালঘু’ স্বীকার করতে ইতস্তত না করে বরং তারা যেন সাংবিধানিকভাবে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সমূহকে ‘সংখ্যালঘু’ হিসেবে স্বীকৃতি আদায় করে যুক্তরাষ্ট্র ঐক্য পরিষদ কর্তৃক প্রধানমন্ত্রীকে পাঠানো ‘সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইনের’ বিলটি পাস করানোর জন্য সর্বাত্মক প্রয়াস করেন। সংগঠনের পক্ষ থেকে আরো বলা হয় যে, সরকার অক্টোবর সেশনে শুধু ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়ে গণ-অনকুরত বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চাকে অনশন প্রত্যাহার করিয়েছে, কিন্তু ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ সংখ্যালঘু নির্যাতন ঠেকাতে পারবে না; যা করেত হবে তাহলো, ঠিক যুক্তরাষ্ট্রে যেমন ‘হেইট ক্রাইম ও স্পিচ ল’ রয়েছে, যার সুবাদে বিচার বিভাগের প্রত্যক্ষ হস্তক্ষেপে এফবিআই. কর্তৃক তদন্তক্রমে সরকার বাদী মামলার মাধ্যমে অপরাধীর বিচার ও শাস্তি হয় এবং নির্যাতনের নিগৃহীত, নির্যাতিত সংখ্যালঘু নাগরিকগণ দ্রুত সুবিচার পান, বাংলাদেশেও ঠিক সে ব্যবস্থাই করতে হবে, যাতে ধর্মীয় মৌলবাদীরা সংখ্যালঘু নির্যাতন করার দুঃসাহস না করে। সংগঠনের বক্তব্যে এটাও বলা হয় যে, সাইবার সিকিউরিটি আইন যেমন দ্রুতগতিতে পাস করা হলো ঠিক তেমনি পূর্ণাঙ্গ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন পাস করতে সরকারের কোনো অসুবিধে হওয়ার কথা নয়, কারণ বিলটির খসড়া তৈরি করে প্রধানমন্ত্রীকে দেওয়া হয়েছে; তবে, কোনো কারণে যদি সেটা এই মুহূর্তে সম্ভব না হয়, অর্থাৎ যদি বিলটির অংশবিশেষ এখন পাস করতে হয়, তাহলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়গুলোকে সাংবিধানিকভাবে ‘সংখ্যালঘু’ স্বীকৃতি প্রদান করে ঠিক যুক্তরাষ্ট্রের মতো একটি ‘হেইট ক্রাইম ও স্পিচ ল’ পাস করা হোক, ‘সংখ্যালঘু কমিশন’ এবং অন্যান্য ধারাগুলো পরে সংযুক্ত করা যাবে।  

ইতিমধ্যেই যে ধর্মীয় সম্প্রদায়িক গোষ্ঠী দুর্গা প্রতিমা ভাঙার কাজ শুরু করে দিয়েছে তা উল্লেখ করে একাধিক প্রশ্নকর্তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসা করেন ২০২১ সালের পুজোর সময়কার মতো নারকীয় তা-বের সম্ভাব্য পনরাবৃত্তি ঠেকানোর জন্য তারা কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন এবং ২০০১ সালের অক্টোবরের নির্বাচনের মতো যদি ধর্মীয় জাতীয়তাবাদী এবং উগ্রপন্থী জোট আবারও ক্ষমতায় আসে তখন সংখ্যালঘু নাগরিকদের রক্ষা করার জন্য কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদ কী ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে।

কালেভদ্রে দুয়েকটি কেস ছাড়া সংখ্যালঘু নির্যাতকদের বিচার হয় না বলে অত্যাচারের মুখে দেশত্যাগে বাধ্য হওয়ার ফলে সংখ্যালঘুরা ১৯৭০ সালে যেখানে ছিল দেশের মোট জনসংখ্যার ২০ শতাংশ আজ মাত্র ৯.১ শতাংশে নেমে এসেছে এবং আগামী ২৫ বছরে সম্পূর্ণ বিলুপ্ত হতে চলেছে বলে উল্লেখ করে, একাধিক প্রশ্নকর্তা কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জিজ্ঞাসা করেন ২০১১ সালে জজ্ সাহাবুদ্দীন কর্তৃক সরকারের কাছে জমাকৃত হাজার হাজার সংখ্যালঘু নির্যাতকের বিচার আজও শুরু হল না কেন।   

কেন্দ্রীয় ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দের পক্ষে প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ একে একে সব প্রশ্নের উত্তর দেন। তিনি বলেন যে, ‘আমরা অবশ্যই ধর্মীয় সংখ্যালঘু, নইলে সংখ্যালঘু কমিশন চাচ্ছি কী করে। উত্তর দিতে গিয়ে তিনি এক পর্যায়ে বলেন, ‘আপনাদের এই প্রশ্নগুলোর অধিকাংশই আমাদেরও প্রশ্ন।’ তিনি দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন যে, ‘বঙ্গবন্ধুকন্যা প্রধানমন্ত্রী সংসদের বর্তমান সেশনেই একটি কঠোর সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন বিল পাস করে সংখ্যালঘু নির্যাতনের একটা স্থায়ী সমাধান করবেন বলে আমাদের বিশ্বাস’। কাজল দেবনাথ আরও জানান যে, ইতিমধ্যেই তারা সরকারের কাছে ২০২২ সালের পুজোর সময়কার মত নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা দাবি করেছেন, এবং সংখ্যালঘুবান্ধব নির্বাচন ও ২০১৮ সালের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি বাস্তবায়নের দাবিতে আগামী ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে মহাসমাবেশের ঘোষণা দিয়েছেন।  

সভার পক্ষ থেকে বাংলাদেশ হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ ও ধর্মীয়-জাতিগত সংখ্যালঘু সংগঠনগুলোর ঐক্য মোর্চা যৌথভাবে ৪ নভেম্বর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যে মহাসমাবেশে করতে যাচ্ছে এর প্রতি পূর্ণ সংহতি প্রকাশ করা হয় এবং এর সমর্থনে একটি সংহতি-সমাবেশ আয়োজন করারও সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

শেয়ার করুন