২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:৫২:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সুষ্ঠু নির্বাচন প্রমাণে জামায়াতের সহযোগিতা পাচ্ছে আওয়ামী লীগ
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
সুষ্ঠু নির্বাচন প্রমাণে জামায়াতের সহযোগিতা পাচ্ছে আওয়ামী  লীগ


দেশে বিদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণ করতে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা পাচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার। এর পাশিাপাশি হেফাজতে ইসলামীর পক্ষ থেকেও সে নির্বাচনে সহযোগিতা করা হবে, বিভিন্ন ধরনের ধর্মীয় বয়ানের মাধ্যমে। তবে শরিক বাম প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলির পাশাপাশি বিশিষ্ট ব্যক্তিরা এমন পরিকল্পনা বিরুদ্ধে দাঁড়ালেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ অনড়। আওয়ামী লীগের এখন একমাত্র লক্ষ্য আগামীতেও ক্ষমতায় থাকা ও বিএনপি’কে মোকাবেলা। এবং ক্ষমতায় যেতে বিএনপি’কে ঠেকাতে প্রয়োজনে যা লাগে সবই তারা করবে। দলের ভেতরে বাইরে যে যা বলুক কোনো কিছুই আওয়ামী লীগ কানে তুলবে না। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। 

আওয়ামী লীগ জামায়াতকে নেয়ার কৌশলের নেপথ্যে..

আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক ছাড়া দেশে বিদেশে গ্রহণযোগ্য হবে না। এনিয়ে প্রচন্ড চাপে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। একদিকে যেমন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের চাপ অন্যদিকে রয়েছে ই্উরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশেরও। ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের জন্য একটি নতুন ভিসানীতি করেছে। এই নীতির কারণে ক্ষমতাসীন সরকার প্রশাসনসহ রাজনৈতিক এমনকি ব্যবসায়ীকদের বিভিন্ন ফোরামে চাপের মুখে পড়েছে। সরকার মনে করে, নির্বাচনের আগে এমন পরিস্থিতিতে রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি’র বিভিন্ন ধরনের হুঙ্কাবে সরকার অস্থস্তিতে। আওয়ামী লীগ মনে করে বিএনপি এখনই ঘোষণা দিয়ে তেমন উচ্চবাচ্য না করলেও দলটি একপর্যায়ে ঠিকই একদফার আন্দোলনে মাঠ গরম করে ফেলবে। এমন পরিস্থিতিও বিএনপি তৈরি করে ফেলতে পারে যেনো এসরকারের অধীনে কেউই যে নির্বাচনে অংশ না নিতে পারে। আর এজন্য ক্ষমতাসীন আওয়ামী বিএনপি’কে ঠেকাতে জামায়াতে ইসলামীর দিকেই হাত বাড়িয়েছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ মনে করে, বিএনপি সাথে বর্তমানে জোটবদ্ধ হয়েছে তাদের ভোট নেই। ভোটের রাজনীতিতে জামায়াতে ইসলামীইকে তাদের দরকার। আওয়ামী লীগ মনে করে, জামায়াতে ইসলামীকে নির্বাচনে এনে সারা বিশ্বে প্রমাণ করা যাবে নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হবে। কারণ জামায়াতে ইসলামী ছাড়াও আওয়ামী লীগ সরকারকে ক্ষমতায় রেখেই নির্বাচনে অংশ নেবে জাতীয় পার্টিসহ সরকারের বাকি শরিকরা। রাজনৈতিক মাঠে জাতীয় পার্টি, জামায়াতে ইসলামী এবং বাকিরা বামদলগুলি (এখন সরকারের সাথে যারা আছে) সঙ্গে থাকলে আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনটি হয়ে যাবে অংশগ্রহণমূলক।

মার্কিন ব্লেসিং কাজে লাগাবে আওয়ামী লীগ..

র‌্যাবের ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞা পাওয়ার পর থেকে সরকার ধীরে ধীরে কাহিল হতে শুরু করেছে। বলা যায়, ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের মধ্যে এক ধরনের অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এই অস্থিরতায় ঘি ঢেলে দিয়েছে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নতুন ভিসানীতি। কিন্তু এটা আওয়ামী লীগের জন্য অস্বস্তি তৈরি করলেও রাজনৈতিক মাঠে জামায়াতে ইসলামীর মতো দলকেও দারুণ সুবিধা এনে দেয়। শধু তা-ই না এই জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে মার্কিনীদের দুর্বলতা ফুটে উঠেছে সম্প্রতি প্রকাশিত মানবাধিকার কমিশন রির্পোটেও। এই রিপোর্টের এক জায়গায় বলা হয়েছে সরকার যেনো বাংলাদেশের এই স্বাধীনতা বিরোধী, গণহত্যা, ধর্ষণে পাক হানাদার বাহিনীর সক্রিয় সহযোগী জামায়াতে ইসলামীকে সাংবিধানিক রাজনৈতিক অধিকারের দেয়। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মানবাধিকার প্রতিবেদনে জামায়াত ও দলটির ছাত্র সংগঠন ইসলামী ছাত্রশিবিরের ওপর নিপীড়নের প্রসঙ্গ আসে। দেশটির ঢাকার দূতাবাস জামায়াত নেতাদের যুক্তরাষ্ট্রের স্বাধীনতা দিবসের আসন্ন অনুষ্ঠানেও আমন্ত্রণ জানিয়ে রেখেছে। পাশাপাশি সরকারের মন্ত্রীদের সাম্প্রতিক বক্তব্যে জামায়াত বিষয়ে নমনীয়তা দেখা যায়। এতদিন তারা দলটিকে নিষিদ্ধের কথা বললেও জামায়াতকে সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পক্ষে নানা যুক্তি দেন।  ২৫ মে মার্কিন ভিসা নীতি ঘোষণার পর এক দশক পরে ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পায় জামায়াত। ১০ জুন ঢাকায় তারা সমাবেশও করে। আর এর পর থেকে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মনে করেন জামায়াতে ইসলামীর ব্যাপারে মার্কিনীদের দুর্বলতাকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কাজে লাগানো যেতে পারে। তাদেরকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা গেলে মার্কিনীরা সন্তুষ্ট থাকবে। আর সেথেকেই সরকারের বিভিন্ন সেক্টর এনিয়ে কাজ করে। অবশ্য এর আগে থেকেই জামায়াতে ইসলামীর সাথে বিভিন্ন পর্যায়ে সখ্যতা গড়ে উঠে, যার চূড়ান্ত রূপ এখন দেখা যাচ্ছে। এক দশক পর ঢাকায় প্রকাশ্য সমাবেশ করে। আর সেই সমাবেশ থেকে সরকার এবং সব দলকে নিয়ে জানানো হল আলোচনা এবং সরকার ও বিরোধীদের ‘ঐক্যের’ আহ্বান।  জামায়াতের কেন্দ্রীয় নায়েবে আমির সৈয়দ আব্দুল্লাাহ মো. তাহের এই আহবান জানান। তার ভাষায় এই ‘ঐক্যের’ মধ্য দিয়ে একটি ‘সঠিক বাংলাদেশ’ গড়ার কথা বলেছে দলটি। ২০১৩ সালের পর এই প্রথম রাজধানীতে নির্বিঘ্নে কোনো কর্মসূচি পালন করতে পেরেছে জামায়াত। কিন্তু ২০১৩ সালের ৯ ফ্রেরুয়ারি মতিঝিল সড়কে বিক্ষোভ মিছিল করেছিল জামায়াত। এরপর বহুবার সমাবেশ ও মিছিলের ডাক দিয়েও বাধাহীনভাবে তা শেষ করতে পারেনি দলটি। নানা সময় ঝটিকা মিছিল বের করলে দলটিতে পুলিশ বাধা দিয়েছে, দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষও হয়েছে। সেসব কর্মসূচি থেকে অনেক নেতা-কর্মীকে আটকও করা হয়।

সরকার-জামায়াত সর্ম্পক এবার বিএনপি’র মুখে

গত ৩০ জুন ঠাকুগাঁওয়ে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ স্পষ্ট’ বলে বিএনপি মহাসচিব মন্তব্য করেছেন বলে কয়েকটি দৈনিক ও অনলাইনে প্রকাশিত হয়। যদিও এ ব্যাপারে বিএনপি মহাসচিব গণমাধ্যমকে অন্যকথা বলেন। এটা কি কেনো শুধরিয়ে বলতে গেলে তা অবশ্য জানা যায়নি। তবে তিনি বলেন, আমার বক্তব্যকে  কয়েকটি গণমাধ্যমে ভুলভাবে প্রকাশিত হয়েছে। আমি সাংবাদিকদের কাছে বিষয়টি পরিষ্কার করেছি। এটা বলতে গিয়ে তিনি আরো বলেন, আমি বলেছি যে, সরকারের বিরুদ্ধে যেসব রাজনৈতিক দল আন্দোলন করছে তাদের সকলকে আমরা ওয়েলকাম করি। ঠাকুরগাঁওয়ে আমার বক্তব্যকে বিকৃত করা হয়েছে। আমি ঠাকুরগাঁওয়ে বুঝাতে চেয়েছি, সরকার প্রমাণ করতে চায় জামায়াতের সাথে তাদের স্পষ্ট যোগাযোগ আছে। তবে এটা ঠিক যে মুখে না করলেও  বিএনপি টের পেয়েছে সরকার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে করে ফেলতে পারে জামায়াতের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে।  তবে একটি গণমাধ্যমে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, সাংগঠনিক দূরত্ব বজায় রাখলেও বিএনপি চাইছে আন্দোলনে জামায়াত থাকুক। তাই ‘সরকারের সঙ্গে জামায়াতের যোগাযোগ রয়েছে’ বক্তব্য দিয়েও অবস্থান বদল করেছে বিএনপি। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেছেন, জামায়াত ইস্যুতে কূটরাজনীতি চলছে। 

শেষ কথা..

সরকার মুখে শিকার না করলেও দেশে বিদেশে একটি অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন প্রমাণ করতে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতা চেয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার-এমনটাই বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে। আবার এরই পরিপ্রেক্ষিতে জামায়াত যে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে তা-ও স্পস্ট। সম্প্রতি সমাপ্ত পাঁচঠি সিটি নির্বাচনে জামায়াতের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী কাউনিসলর পদে নির্বাচনে অংশ নেয়। সরকারের মেয়াদের শেষ সময়ে অনুষ্ঠিত এই পাঁচটি সিটি কর্পোরেশনে বিএনপি কোনোভাবেই অংশ নেয়নি। তবে তাদের বেশ কয়েকজন কাউন্সিল পদে প্রার্থী হন দলের সমর্থন ছাড়াই। এর খেসারত অবশ্য দিতে হয়েছে ওইসব কাউন্সিলর প্রার্থীদের। তাদেরকে কোথাও কোথাও আজীবনের জন্য বহিষ্কার করা হয়। দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে অংশ নেয়া বিএনপির বিভিন্ন পর্যায়ের ২৯ জন কাউন্সিলর প্রার্থীকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার করেছে দলটি। কিন্তু একেক্ষেত্রে জামায়াতে ইসলামী ব্যক্তিক্রম। এখানে জামায়াতের কেউ বহিষ্কার হননি। অন্য একটি সিটির নির্বাচন বিশেষ করে খুলনা নগরের ৩১টি ওয়ার্ডের মধ্যে জামায়াত ১, ৩, ৪, ৬, ৯, ১২, ১৮, ১৯, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে আলাদা করে কাউন্সিলর প্রার্থী দেয়। কিন্তু কেউ বহিষ্কার হয়নি। বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জামায়াতে ইসলামীর সমর্থন নিয়ে কাউন্সিলর পদে লড়েছেন চার প্রার্থী। এই চারজন জামায়াতে ইসলামীর বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মী ও সমাজসেবক। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকমহল মনে করেন জামায়াত ১৯৮৬ সাথে আওয়ামী লীগের সাথে স্বৈরাচার এরশাদ সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। ১৯৮৬ সালে এরশাদের পাতানো নির্বাচনে বিএনপিকে বাদ দিয়ে আওয়ামী লীগ ও জামায়াত একসাথে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেছিল এবং যথারীতি সংসদেও যোগ দেয়।

১৯৯১ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর সরকার গঠনে জামায়াত বিএনপিকে সমর্থন দিলে আওয়ামী লীগ নাখোশ হয় দলটির উপর। পরে সেই নাখোশ ভাব কাটাতে রাষ্ট্রপতি পদে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিচারপতি বদরুল হায়দার চৌধুরী জামায়াতের সমর্থন লাভের জন্য অধ্যাপক গোলাম আজমের সাথে সাক্ষাত করে। সে সময় আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের সাথে জামায়াত নেতাদের মধুর সম্পর্ক দেখা যায়। দেয়া গোলাম আযমকে তসবিহ, জায়নামাজ ও কোরআন শরীফ উপহার। ১৯৯৪ সালের ২৪ ফ্রেরুয়ারি, সংসদের আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন সববিরোধী দল ও গ্রুপের সাথে যৌথ বৈঠক করে। সে সভায় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে যৌথ আন্দোলন করতে তারা ঐক্যমতে পৌঁছান। ১৯৯৪, সালে ২৭ জুন জাতীয় প্রেসক্লাবে আওয়ামী লীগ, জামায়াত ও জাতীয় পার্টি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা ঘোষণা করে যৌথ আন্দোলনের ঘোষণা দেয়। এমনও চাওর আছে শুধু আওয়ামী লীগ নয় মহাজোটের অনেক নেতার এখনো জামায়াতের সাথে গভীর সর্ম্পক আছে। আর সে পরিপ্রেক্ষিতে বলা চলে জামায়াতে ইসলামী কোনোভাবেই সরকারের সাথে আঁতাত করে নির্বাচন যাবে না-এটা ঠিক না বলেই পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন। একিই ঘটনা আওয়ামী লীগের বেলাতেও সঠিক বলে তারা মনে করেন। তারাও জমায়াতের সাথে যে গভীর সম্পর্ক রেখেছে তা স্পস্ট। আর সেকারণেই আসলে আওয়ামী লীগ জামায়াতের ঐক্য দেশের রাজনীতি কোন দিকে নিয়ে যায় তা বুঝতে আগামী কয়েকটি মাস খুবই গুরুত্বপূর্ণ। 

শেয়ার করুন