২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৪:৪৭:৩৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


প্রস্ততি শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের
সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের কথা কেন উঠছে?
খন্দকার সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০৪-২০২২
সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের কথা কেন উঠছে? রাষ্ট্রপতির সঙ্গে নতুন নির্বাচন কমিশন, ছবি/সংগৃহীত


বাংলাদেশে প্রস্ততি শুরু হয়েছে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের। অনেক আলোচনা পর্যালোচনার পর নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব নিয়েছেন। দীর্ঘদিন পর একটি নির্বাচন কমিশন আইন পাস করে সেই আইনের বিধান অনুযায়ী গঠিত কমিশনের নিরপেক্ষতা বা সক্ষমতা নিয়ে মন্তব্য করার সময় এখনো আসেনি। কিন্তু সরকারিদল এবং বিরোধীদল ইতিমধ্যেই নির্বাচন নিয়ে দৌড়ঝাঁপ শুরু করেছে। প্রতিদিনই অন্যতম বিরোধীদল বিএনপি, কথায় কথায় সরকার পতন আন্দোলন শুরুর করার আস্ফালন করছেন। সরকারের মন্ত্রীরা এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রী সরকার পতনের আলামত দেখতে পারছেন বলে প্রসঙ্গ টানছেন। 

এমনিতেই করোনা অতিমারী খেটে খাওয়া প্রান্তিক  মানুষদের দারিদ্র্যসীমার নিচে নিয়ে গেছে। নিত্যপণ্যের অগ্নিমূল্য মধ্যবিত্তর জীবনেও অভিশাপ হয়ে এসেছে। সরকার কিন্তু কৃষি এবং কৃষকদের প্রণোদনা দিয়ে খাদ্য দ্রব্যাদি সরবরাহ অব্যাহত রেখেছে। কিন্তু করোনার আগ্রাসন এবং ইউক্রেনে যুদ্ধের কারণে অস্থির বিশ্ব বাজার থেকে কেনা কিছু পণ্য বিশেষ করে জ্বালানি দেশে সংকট সৃষ্টি করেছে। সরকার ব্যাবসায়ীদের প্রণোদনা দিয়েছে।বিশেষত রফতানিবাণিজ্যে প্রবৃদ্ধি ঘটায় বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ সন্তোষজনক আছে।

দুর্নীতির মহামারী সত্ত্বেও প্রবৃদ্ধি হয়েছে, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অনেক দেশের চেয়েও বেশি। কিছু কিছু মানুষ বাংলাদেশ শ্রীলঙ্কার মতো দেউলিয়া হওয়ার অমূলক আশঙ্কা করছে। বাংলাদেশের পাকিস্তানের মতো পরিণতি হবার শঙ্কা নেই। তবু কেন সরকার প্রধান সরকার পতনের ষড়যন্ত্রের কথা বলছেন? 

এদেশে স্বাধীনতার সপক্ষের সরকার কখনো বিরোধীদলের আন্দোলনে ক্ষমতা হারায়নি। প্রতিবার নৌকার পতন ঘটেছে নিজেদের ভারে। ১৯৭৫ দুঃখজনক পরিণতির জন্য খন্দকার মোশতাক, মাহবুব বাল্ব চাষিরা মূলত ষড়যন্ত্রের জাল বুনেছিল। ১৯৯০ নিজেদের ভুলে ক্ষমতায় যেতে পারেনি। একমাত্র ২০০১ সরকার পরিবর্তনে কিছুটা কৌশলের ভুল ছিল। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে সরকার দুর্নীতি নির্মূল, নিজ দলে শুদ্ধি অভিযান করতে পারলে কোনো বিরোধী জোট এই সরকারের পতন ঘটাতে পারবেনা। তবে অর্থনীতি, জ্বালানি নীতি, কূটনীতি নিয়ে সতর্ক এবং কৌঁসুলি হওয়াপ্রয়োজন। 

সরকারকে হয়তো আসন্ন বাজেটে অতিরিক্ত ভর্তুকি দিতে হবে জ্বালানি,সার, নিত্যপণ্য আমদানি খাতে। ব্যাপক কৃচ্ছ্রতাসাধন প্রয়োজন সরকারি বরাদ্দে। সরকার পরিচালনায় নিরঙ্কুশ আমলা নিয়ন্ত্রণ সামাল দেয়ার জন্য সরকার প্রধান, জুলাই ২০২২ থেকে মন্ত্রিপরিষদে কয়েকজন অভিজ্ঞ বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ এবং কয়েকজন স্বাধীনতার সপক্ষের পেশাদারদের দায়িত্ব দিতে পারেন। 

আমলা আর ব্যবসায়ীরা তরল পানির মতো। পাত্র বদল হলে নতুন পাত্রের রূপ ধারণ করবে। সংকট ঘনীভূত হলে ওদের খুঁজেও পাওয়া যাবে না। কিছু বর্ষীয়ান অভিজ্ঞ রাজনীতিবিদ যেমন মতিয়া চৌধুরী, তোফায়েল আহমেদ, আমির হোসেন আমু, রাশেদ খান মেনন, ফরাসউদ্দিন আহমেদ, ইলেকশন ক্যাবিনেটে মূল্যবান অবদান রাখতে পারবেন। সেই সঙ্গে দলে বা সরকারে শেখ রেহানার ভূমিকা সুস্পষ্ট হয় উচিত। সজীব ওয়াজেদ জয় এবং সায়েমা পুতুলের অবস্থান নিশ্চিত হয় জরুরি। নানা কানাঘুষার অবসান ঘটিয়ে ওদের অবস্থান দলের স্বার্থে জরুারি। এবার কিন্তু ২০১৪ বা ২০১৮ মতো নির্বাচন করে পার পাওয়া যাবেনা। 

জানিনা নেপথ্যে অনেক হিসাব-নিকাশ হচ্ছে। সরকার প্রধানের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়- এমন কিছু করা শুভ হবে না। নানা কারণে প্রশাসনের সকল পর্যায়ে সরকারবিরোধী বর্ণচোরা মহল অনুপ্রবেশ করেছে। ওরা বসে বসে ইঁদুরের মতো ছিদ্র করছে। বিদেশি কিছু মিশনেও ওরা আছে। তাই তো কিছু দেশে সরকারবিরোধী প্রোপাগান্ডা জোরদার। কিছু কিছু বিদেশি মিশনে পরিবর্তনও জরুরি। 

মনে করি না পদ্মা বহুমুখী সেতু, কর্ণফুলী নদী  তলদেশের সুড়ঙ্গপথ, মেট্রোরেল প্রথম পর্যায়, এলেভেটেড এক্সপ্রেস সড়কের প্রথম পর্যায়, হজরত শাহজালাল (আ.) বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল চালু হয়ে গেলে বিরোধীদল হালে পানি পাবে। কিন্তু সবকিছু নির্ভর করবে সরকারিদল থেকে হাইব্রিড সুযোগসন্ধানীদের কৌশলে ছেটে ফেলা, দলের দুর্নীতিবাজদের বাদ দিয়ে তৃণমূলে জনপ্রিয় জনপ্রতিনিধিদের নির্বাচনে মনোনয়ন। 

নির্বাচন সামনে রেখে সতর্কতার সাথে বিরোধীদলগুলোকে রাজনৈতিক কার্যক্রম চালানোর সুযোগ উন্মুক্ত করা যেতে পারে। কি বিকল্প আছে বিএনপি বা ওদের সমমনা দলগুলোর কাছে? ওদের দুই প্রধান নেতা দণ্ডে দণ্ডিত। শীর্ষ নেতৃত্বের মধ্যে বিভেদ আছে,নির্বাচন আসলে নির্বাচন ইস্যুতে বিভেদ চাঙ্গা হবে।

 এদেশে স্বাধীনতাবিরোধী শক্তি আর কোনোদিন ক্ষমতায় আসতে পারবে না- যদি না সরকারি দল ভুল না করে। নিজেদের ভুলে পা পিছলে না গেলে শেখ হাসিনা সরকারের জুজুর ভয় দেখার কারণ আছে বলে মনে করি না।


শেয়ার করুন