০১ মে ২০১২, বুধবার, ০৯:২২:২৯ অপরাহ্ন


দেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বাড়ছে
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৫-০৭-২০২৩
দেশে মানবাধিকার লংঘনের ঘটনা বাড়ছে


দেশে মানবাধিকার লংঘনের এই ঘটনাগুলো ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ার অভিযোগ এনে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন (এমএসএফ) গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করছে। একই সাথে এসব ঘটনা রোধে সরকারের নিষ্ক্রীয়তারও তীব্র নিন্দা জানানো হয় এমএসএফের পক্ষ থেকে। পাশাপাশি মানবাধিকার লংঘনকারীদের বিচার ও ভূক্তভোগীদের জন্য সুবিচারের দাবি জানানো হয়। এর পাশাপাশি ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যবহারের বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে বলেও বলা হয়। 

মানবাধিকার পরিস্থিতি মনিটরিং প্রতিবেদন জুন ২০২৩ উপস্থাপন করে এমএসএফ’র পক্ষ থেকে এসব কথা বলা হয়। গণমাধ্যমে এ সংক্রান্ত রির্পোট দিয়ে বলা হয়, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু, নির্যাতন, হয়রানি, কারা হেফাজতে মৃত্যু বেড়েছে। রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের গ্রেফতার ও পুলিশি বলপ্রয়োগের ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের অপব্যবহার, অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা এবং মতামত প্রকাশের সংবিধানপ্রদত্ত অধিকার প্রয়োগের পথ রুদ্ধ করার ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এর পাশাপাশি সীমান্তে হতাহতের মতো ঘটনা বেড়েই চলেছে। ধর্ষণসহ নারী ও শিশুদের উপর সহিংসতার ঘটনা ধারাবাহিকভাবে ঘটেই চলেছে এবং তা উদ্বেগজনক। অজ্ঞাতনামা লাশ উদ্ধারের ঘটনা অস্বাভাবিকভাবে বেড়েই চলেছে। অপরদিকে গণপিটুনির মতো ঘটনা কমছে না। 

পুলিশ পরিচয়ে তুলে নেয়া-অপহরণ-নিখোঁজ

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পরিচয়ে তুলে নেয়া, একজনকে চোখ বেঁধে তুলে নেয়ার পর লাশ উদ্ধার করা গেছে ও অপর একজন নিখোঁজের দশ দিন পরও সন্ধান মেলেনি। এসব তথ্য উপস্থাপন করে এমএসএফ মনে করে, অপহরণ ও নিখোঁজের নামে অপতৎপরতাগুলো গুরুতর অপরাধ ও মানবাধিকারের চরম লঙ্ঘন। যা রোধ করার দায়িত্ব আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর। এ নিয়ে নাগরিক জীবনে চরম উৎকন্ঠা ও আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত আস্থাহীনতা বেড়ে যাচ্ছে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হেফাজতে মৃত্যু

গত জুনে আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে দুই জনের মৃত্যু হয়েছে। আইন-শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনীর হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়টি অনাকাঙ্খিত ও অগ্রহণযোগ্য। পুলিশী হেফাজতে আসামির মৃত্যুর বিষয়ের যথাযথ নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া আবশ্যক বলে এমএসএফ মনে করে।

আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে অনৈতিক তৎপরতার 

বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী, জুন মাসে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর বিরুদ্ধে নির্যাতনসহ কয়েকটি অপরাধের সাথে জড়িত থাকার বিষয় উত্থাপিত হয়েছে। এমএসএফ মনে করে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর যে অপতৎপরতা চলছে তা বেআইনী, ক্ষমতার অপব্যবহার, মানবাধিকারের চরম লংঘন ও ন্যায়বিচারের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলি প্রদর্শনেরই নামান্তর। এটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক যা নাগরিক জীবনে চরম উৎকণ্ঠা ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি ক্রমাগত অবিশ্বাস ও আস্থাহীনতার জন্ম দিচ্ছে।

কারা হেফাজতে মৃত্যু

এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুন  মাসে কারা হেফাজতে ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে যা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত মাসে কারা হেফাজতে মৃত্যুর সংখ্যা ছিল ১১ জন। এ মাসে কারা হেফাজতে মৃতদের মধ্যে ৮ জন কয়েদি ও ৮ জন হাজতি রয়েছে।

সীমান্তে পরিস্থিতি ও হতাহত

সীমান্তে হত্যা ও নির্যাতন বন্ধ করতে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) কার্যকর পদক্ষেপ না নেয়ার কারণে সীমান্ত হত্যা ও নির্যাতনের ঘটনা বন্ধ হচ্ছে না বরং বেড়েই চলেছে। এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক গুলিতে ৩ জন নিহত, ৫ জন গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত, গুলি ও গ্রেনেড বিস্ফোরণে এক বাংলাদেশী যুবক গুরুতরভাবে আহত হয়েছেন ও ভারতীয় সীমান্ত থেকে নিখোঁজের ৮ দিন পর এক বাংলাদেশী যুবকের লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ।

রাজনৈতিক সহিংসতায় হতাহত

গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে বিরোধী দল বিএনপি ও বিরোধী দলীয় কর্মসূচি বাস্তবায়নে আইন শৃঙ্খলারক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক বল প্রয়োগ, শান্তিপূর্ণ সভা, মিছিলে বাধাদান অব্যাহত ছিল। এ মাসে রাজনৈতিক, নির্বাচনী সহিংসতা ও সভা সমাবেশে বাধার ২৯টি ঘটনায় সহিংসতার শিকার হয়েছেন ১ জন নিহতসহ মোট ১৮৫ জন। 

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ব্যবহার-অপব্যবহার

ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন প্রবলভাবে সমালোচিত হওয়া সত্ত্বেও এ আইনে মামলার নামে হয়রানি অব্যাহত রয়েছে ও এর যথেচ্ছ অপব্যাবহারের বিষয়টি ক্ষোভ ও উদ্বেগের সৃষ্টি করেছে। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহীত তথ্য অনুযায়ী জুন মাসে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের ৭টি মামলা করা হয়। 

মতপ্রকাশের অধিকারের লংঘন

সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনে যেভাবে বাধা সৃষ্টি করা হচ্ছে এবং তাদের যেভাবে শারীরিকভাবে আক্রমণ, হয়রানি, হুমকি ও লাঞ্চিত করা হচ্ছে তা শুধুমাত্র অনাকাঙ্খিতই নয় বরং বস্তুনিষ্ঠ ও সৎ সাংবাদিকতার কণ্ঠরোধ করার সামিল। স্বাধীন সাংবাদিকতা ও পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় সাংবাদিকেরা নানাভাবে হুমকি, হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন যা ছিল উদ্বেগজনক। গণমাধ্যমে প্রকাশিত ও এমএসএফ কর্তৃক সংগৃহিত তথ্য অনুযায়ী জুন, ২০২৩ সময়ে সাংবাদিকদের পেশাগত দায়িত্ব পালনের সময় অন্তত ১১ জন সাংবাদিক নানাভাবে নিপীড়ন, হয়রানি, নির্যাতন, হত্যা ও হত্যার হুমকির শিকার হয়েছেন।

শেয়ার করুন