২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৮:১৬:৫৪ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৯-০৭-২০২২
নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি


নিউইয়র্কে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়েছে। প্রতিদিনই কেউ কেউ আক্রান্ত হচ্ছেন। বিশেষ করে বাংলাদেশিরা। নিউইয়র্কের বাংলাদেশি অধ্যুষিত এলাকা জ্যাকসন হাইটম, ব্রæকলিন, ওজনপার্ক, ব্রঙ্কস, জ্যামাইকাসহ বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশিরা হামলার শিকার হচ্ছে। নেই কোন প্রতিকার, নেই কোনো প্রতিবাদ। প্রবাসে এতো সংগঠন রয়েছে, কিন্তু কেউ এগিয়ে আসছেন। একের পর এক বাংলাদেশিদের ওপর হামলা করা হচ্ছে। গত ৩০ জুন ওজনপার্কে এক বাংলাদেশি মহিলাকে গুলি করা হয়েছে, ম্যানহাটনে এক বাংলাদেশির ওপর হামলা চালানো হয়েছে, ওজনপার্কে একটি স্কুলে একজন বাংলাদেশি ছাত্রের ওপর হামলা করে আরো ৪ জন ছাত্র।

গুলিবিদ্ধ কামরুন নাহার

গত ৩০ জুন রাত সোয়া আটটার দিকে কাজ থেকে ফেরার পথে বাংলাদেশি মহিলা কামরুন নাহারের (২৫) ওপর গুলি চালিয়েছে এক কৃষ্ণাঙ্গ। কামরুন নাহারের স্বামী কামরুজ্জামান জানান, আমরা প্রায় ৭ বছর ধরে ওজনপার্কে রয়েছি। আমার স্ত্রী কামরুন নাহার প্রায় ৬ বছর ধরে ইস্ট নিউইয়র্কের ৫৪২ ইস্টার্ন পার্কওয়ের একটি ডানকিন ডোনাটে কাজ করেন। প্রতিদিনের মত ঐ দিনও তিনি কাজে গিয়েছিলেন। কাজ শেষ করে রাত সোয়া আটটার দিকে বাসায় আসার জন্য এ ট্রেনের নস্ট্রার্নড অ্যাভিনিউ সাবওয়ের দিকে যাচ্ছিলেন। এই সময় এক কৃষ্ণাঙ্গ আমার স্ত্রীকে লক্ষ্যে করে গুলি ছোড়ে। ভাগ্যভাল এবং আল্লাহর অশেষ রহমত গুলি আমার স্ত্রীর ডান পায়ে লাগে।

দুটো গুলির মধ্যে একটি গুলি বেরিয়ে যায়, অন্য একটি গুলি এখনো হাঁটুর মধ্যে রয়েছে। তিনি আরো জানান, ঘটনার পর কৃষ্ণাঙ্গ পালিয়ে যায় এবং আমার স্ত্রীর মাটির মধ্যে পড়ে যান। পুলিশ কল করার কয়েক মিনিটের মধ্যে পুলিশ এবং অ্যাম্বুলেন্স আসে। অ্যাম্বুলেন্সে করে আমার স্ত্রীকে ব্রæকলিনের কিং কাউন্টি হাসপাতালে নিয়ে যায়। তিনি এখনো সেখানে চিকিৎসাধীন। তিনি আরো বলেন, এই ছয় বছরে আমার স্ত্রী ভোটার কাজে গিয়েছিলেন আবার রাত ১১টায়ও বাসায় এসেছেন। কিন্তু কোনোদিন এ ধরনের কোন ঘটনা ঘটেনি। তিনি বলেন, ৩০ জুন থেকে ৪ জুলাই রাত পর্যন্ত আমার স্ত্রী হাসপাতাল বেডে ছিলেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত ডাক্তার তার পায়ে অপারেশন করেনি। যদিও তার হাঁটুতে একটি গুলি রয়েছে। ডাক্তার অপারেশনের কথা বলেও আজ পর্যন্ত অপারেশন করছে না। কিন্তু কেন অপারেশন করছে না এটা আমার বোধগম্য নয়।

অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, কামরুন নাহারের হাই ডায়াবেটিস। যে কারণে ডাক্তার অপারেশন করতে পারছে না। তবে কামরুজ্জামান জানান, আমার স্ত্রীর পায়ে প্রচÐ ব্যথা। তিনি ব্যথা সহ্য করতে পারছেন না। আরেক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি লোক মুখে শুনেছি পুলিশ কৃষ্ণাঙ্গ যুবককে গ্রেফতার করেছে। কিন্তু পুলিশ আমাকে কিছুই জানায়নি। তিনি অভিযোগ করেন, কেউ আমাকে সহযোগিতা করছে না। তিনি আরো বলেন, প্রতিদিনই বাঙালি আক্রান্ত হচ্ছেন। কিন্তু কেউ কোন পদক্ষেপ নিচ্ছেন না। আল্লাহ আমার স্ত্রীকে বাঁচিয়েছেন। অন্য কেউ এভাবে হামলার শিকার হোক, মা তার সন্তান হারাক, স্বামী তার স্ত্রীকে হারাক বা স্ত্রী স্বামীকে হারাক আমি এটা চাই না। আমি চাই না কোন মায়ের বুক খালি হোক। তিনি বলেন, এখন সময় এসেছে প্রতিবাদ করার। পুলিশ প্রশাসনের টনক নড়ানোর।

উল্লেখ্য, কামরুন নাহারের দেশের বাড়ি বেগমগঞ্জে আর কামরুজ্জমানের দেশের বাড়ি ফেনিতে।

ওজনপার্কে ছাত্র আক্রান্ত

ওজনপার্কের এমএস ২১০ স্কুলের ছাত্র নাবিল হক। প্রতিদিনের মত গত ২২ জুন স্কুলে গিয়েছিলেন। স্কুল ছুটির পর নাবিল হক স্কুল ব্যাক ইয়ার্ডে অন্যান্য ছাত্রদের সাথে খেলা করছিলেন। এই সময় ৪ জন ছাত্র নাবিল হকের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। একটি ভিডিওতে দেখা গেলে, ওই ৪ ছাত্র নাবিলকে ফুটবলের মতো একের পর এক লাত্থি মারছে। তবে কেন হামলা করেছে এই রিপোর্ট পর্যন্ত জানা যায়নি। ঘটনার পর দিন সকাল ১১টায় স্কুল থেকে নাবিলের পরিবারকে কল করা হয় এবং ঘটনার কথা জানানোর হয়। নাবিল হকের মা জানান, মার খাওয়ার পর নাবিল হক বাসায় এসেও কিছু বলেননি। সে সারাক্ষণ ভয়ের মধ্যে ছিলো। স্কুলে যেতে চাচ্ছিলো না। স্কুল থেকে নাবিল হকের মাকে জানানো হয় তারা এই ঘটনা নিয়ে মিটিং বসবেন এবং ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। এদিকে কমিউনিটি নেতা খায়রুল ইসলাম খোকন তার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নাবিলের মা সাক্ষাতকার গ্রহণ করেন এবং ঘটনাটি ১০৬ পুলিশ প্রিসেক্টে জানিয়েছেন। নিয়েছেন হাসপাতাল রিপোর্টও। তিনি এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেন।

ম্যানহাটনে আলী আক্রান্ত

ম্যানহাটনে হামলার শিকার হয়েছেন মো. আলী নামের এক প্রবাসী বাংলাদেশি। হামলায় গুরুতর আহত হলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বর্তমানে মাউন্ট সিনাই হাসপাতালের আইসিইউতে রয়েছেন। জানা গেছে, ২৬ জুন রোববার মো. আলী উডসাইডের বাসা থেকে ম্যানহাটনে যান। সেখানে গাড়ি পার্কিং করার সময় এক দুর্বৃত্ত তার কাছ থেকে সবকিছু ছিনিয়ে নেয় এবং তার ওপর হামলা করে। পরে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ব্যাপারে মো. আলীর মেয়ে বলেন, আমার আব্বুকে মেরে আহত করা হয়েছে।

তার অবস্থা আশঙ্কাজনক। তবে কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে, এর বিস্তারিত আমরা এখনো জানতে পারিনি। হামলাকারীকেও শনাক্ত করা যায়নি। মো. আলী হামলার শিকার হওয়ার পর বাংলাদেশ সোসাইটির পক্ষ থেকে সেখানকার কোষাধ্যক্ষ, বাংলাদেশ আমেরিকান সোসাইটির সভাপতি মোহম্মদ আলী বিষয়টি নিউইয়র্ক সিটির মেয়র অফিসের কমিউনিটি অ্যাফেয়ার্স ব্যুরো সিটি অব নিউইয়র্কের মাইকেল মেনেকাকে জানিয়েছেন। মোহম্মদ আলী বলেন, আমরা দেখছি একের পর এক হামলা ও অপরাধের ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় কমিউনিটিতে আতঙ্ক বাড়ছে।

প্রতিনিয়ত কেউ না কেউ বিভিন্ন ধরনের আক্রমণ ও নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। হত্যাকাÐের শিকার হয়েছেন। দিন যতো যাচ্ছে, আতঙ্ক ততোই বাড়ছে। মানুষের এই আতঙ্ক নিরসন করা জরুরি। পাশাপাশি কমিউনিটির মানুষের সময় এসেছে এগুলো নিয়ে আরো সোচ্চার হওয়ার।

মো. আলীর বাড়ি যশোর জেলায়। তিনি উডসাইডে তার পরিবার নিয়ে থাকেন।

শেয়ার করুন