২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ০৮:৪৬:৩০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি অগণতান্ত্রিক কনসেপ্ট
সামছুদ্দীন আজাদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৯-০৩-২০২২
তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতি  অগণতান্ত্রিক কনসেপ্ট সামছুদ্দীন আজাদ


আমাদের দেশের মূল সমস্যা হলো রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে যোজন যোজন দূরত্ব, সন্দেহ, অবিশ্বাস। যে কারণে রাষ্ট্রীয় কোনো সিদ্ধান্তে দলগুলো ঐকমত্যে পৌঁছাতে পারে না। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি অনৈক্য রয়েই গেছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেয়ায় সহযোগিতা করার পরিবর্তে বিরোধিতার জন্য বিরোধিতা করা, গণতন্ত্রের গলা চেপে ধরে তাকে তার পথে চলতে না দেয়ার কারণেই আজ স্বাধীনতার পঞ্চাশ বছর পরে এসেও তৈরি হয়েছে বিশাল ব্যবধানের এক উঁচু দেয়াল। আমার মনে হয় এই দেয়াল কখনো ভাঙা যাবে না বরং দিন দিন এই দেয়ালের উচ্চতা বেড়েই চলছে। এখন প্রশ্ন আসে কেন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে এতো বিরোধ? কেন পার্থক্য? সন্দেহ আর অবিশ্বাস? বিষয়টি খুব পরিষ্কার। বাংলাদেশ যখন পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশ ছিল অর্থাৎ পূর্ব পাকিস্তান ছিল, সঙ্গত কারণে পাকিস্তানেরই অংশ ছিল। সুতরাং পাকিস্তান নামক রাষ্ট্রের সব নাগরিক সমান রাষ্ট্রীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করবে, সব অধিকার পাবে। কেন্দ্র থেকে প্রদেশ পর্যন্ত সর্বত্রই একই রকম উন্নয়ন হবে। রাষ্ট্রীয় বাজেটেও সব প্রদেশের জন্য একই রকম বাজেট প্রণয়ন করা হবে। কিন্তু তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকার সবসময় অন্যায় আচরণ করেছিল। অর্থনৈতিকভাবে বিমাতাসূলভ আচরণ করেছিল, সম্পদের সুষম বণ্টন হয়নি কোনোদিন। পূর্ব পাকিস্তানের নাগরিকদের মর্যাদা ছিল দ্বিতীয় শ্রেণির। সরকারি চাকরিতে ছিল বিরাট বৈষম্য। যেমন- পাকিস্তান সিভিল সার্ভিসে, সেনাবাহিনীতে অথবা আধাসরকারি প্রতিষ্ঠানে কোনো বাঙালির স্থান হয়নি। যোগ্যতা থাকা সত্ত্বেও ২/১ জন সুযোগ পেলেও সেটা তার মেধার কারণে।  তবে সেটা কোনো পারসেন্টিজে পড়তো না। শুধু তাই নয়-বাংলাদেশের উৎপাদিত সাদা কাগজ যেটি কাপ্তাই পেপার মিলে উৎপাদিত হতো, সেই কাগজ কেন্দ্রীয় সরকার পাকিস্তানে নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের সিল মেরে পূর্ব পাকিস্তানে পাঠাতো আর আমরা বাঙালিরা আমাদের দেশের উৎপাদিত কাগজ পাকিস্তানের চেয়ে বেশি দামে ক্রয় করতে হতো। একই রকম বৈষম্য ছিল পাট ও পাটজাত দ্রব্যের বেলায়। পাট উৎপাদনে ছিল বাংলাদেশ বিশ্বখ্যাত এই পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। এই সোনালি আঁশ দিয়ে তৈরি হতো নানান জাতের বিলাসসামগ্রী আর সেটি বিদেশে বিক্রি হতো সোনার দামে- তাই বাংলার পাটকে বলা হতো সোনালি আঁশ। সেই টাকাও পাকিস্তান সরকার খরচ করতো পাকিস্তানের উন্নয়ন কাজে। পূর্ব পাকিস্তানের জন্য এক টাকাও খরচ করা হতো না। সর্বশেষ তারা আমাদের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে আমাদের ওপর গুলি চালায় ১৯৪৮ সালে, ১৯৫২ সালে। বাংলা ভাষা কেড়ে নিয়ে পাকিস্তানের সংখ্যাঘরিষ্ঠের ভাষা উর্দুকে আমাদের ওপর চাপিয়ে দিতে চেয়েছিল। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে পূর্ববাংলার নেতৃত্ব বিজয়ী হলেও ক্ষমতায় বসতে দেয়া হয়নি। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ পূর্ববাংলার ২৪৯টি আসনের ২৪৭ আসনে বিজয়ী হলেও শেখ মুজিবুর রহমানকে সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হতে দেয়নি। সর্বশেষ পরিণতি ২৫ মার্চের কালরাত্রিতে ঘুমন্ত বাঙালির ওপর আক্রমণ। ৯ মাসের মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লক্ষ মানুষকে হত্যা, ২ লক্ষ মা-বোনকে ধর্ষণ এবং গোটা বাংলাকে মরুভূমি বানিয়ে দিযে গেল পাকিস্তানি বর্বর বাহিনী। নেতৃত্বে ছিলেন ইয়াহিয়া, রাও ফরমান আলী আর টিক্কা খান। আর ২৫ মার্চ বাংলার অবিসংবাদিত নেতা স্বাধীনতার স্বপ্নদ্রষ্টা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে তার ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়ি থেকে অ্যারেস্ট করে পাকিস্তানের রাওয়াল পিণ্ডি কারাগারে বন্দি করে রাখা হয় এবং দীর্ঘ ৯ মাস যুদ্ধের পর স্বাধীন বাংলাদেশের জন্ম হলে পাকিস্তানি সরকার ১৯৭১ সালের ১০ জানুয়ারি জাতির পিতাকে মুক্তি দিলে তিনি তার স্বাধীন দেশে ফেরত আসেন।

তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রসঙ্গে লিখতে গিয়ে কেন পাকিস্তানের শোষণের ইতিহাস ও স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস লিখলাম, আজ যারা বাংলাদেশে বিএনপির রাজনীতি করেন এবং জামাতের রাজনীতি করেন শুধুমাত্র এই দুটি দল আজো পাকিস্তানকে সমর্থন করে। পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থার টাকায় এই দু’টি রাজনৈতিক দল মাঠে সরব, পাকিস্তানের প্রেসক্রিপশনে এরা বাংলাদেশবিরোধী রাজনীতি করে। বাংলাদেশকে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানাতে এরা বার বার এদেশের ওপর আঘাত করার চেষ্টা করছে। যেমন- ’৭৫-এর বঙ্গবন্ধুকে খুনের অভিযোগ রয়েছে এই দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বিরুদ্ধে, একই বছর ৩ নভেম্বরের বর্বরোচিত জেলহত্যা করে জাতীয় চার নেতাকে হত্যা করেছিল। এদেশকে পুনরায় পাকিস্তান বানাতে। একথাগুলো তো চরম সত্য। এভাবে ’৭৫-এ আওয়ামী লীগকে নিশ্চিহ্ন করার অভিপ্রায়ে স্বৈরাচারী জিয়াই পাকিস্তানের এজেন্ট হিসেবে এমন হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছিল। পরবর্তীতে কি হলো-স্বাধীনতার চার স্তম্ভের পরিবর্তন করা হলো, গণতন্ত্রের বদলে স্বৈরতন্ত্র প্রতিষ্ঠা হলো, বাঙালি জাতীয়তাবাদ বদলে দেয়া হলো, স্বাধীনতার সেøাগান জয় বাংলা বদলে দিয়ে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ হলো। বাংলাদেশ বেতারকে পরিবর্তন করে রেডিও বাংলাদেশ করা হলো। মোটামুটি জিয়া তার শাসনামলে গোটা স্বাধীন বাংলার সব চেতনা ধ্বংস করে দিয়ে পাকিস্তানি চেতনাকে প্রতিষ্ঠিত করে ফেললো। এমনকি ’৭৫-এর খুনিদের রক্ষা করার জন্য খুনিদের বিদেশে পালিয়ে যেতে সাহায্য করলো। জাতির পিতাকে তারা জাতির পিতা বলতে রাজি নয়। মুক্তিযুদ্ধকেও তারা মানতে রাজি নয়, জয় বাংলা তো ভারতীয় সেøাগান তাদের ভাষায়।

তাহলে প্রিয় পাঠক আপনারা বিচার করুন কীভাবে বাংলাদেশের রাজনীতির মঞ্চে বিএনপির সাথে আওয়ামী লীগের ঐকমত্য হবে, রাষ্ট্রীয় কোন সিদ্ধান্তে তাদের সাথে বোঝাপড়া হবে? তারা স্বাধীন দেশে বসবাস করে। স্বাধীনতার বিরোধিতা করবে, স্বাধীনতার চেতনা ধ্বংস করবে, দেশে একযোগে ৬৪টি জেলায় বোমা ফাটাবে, বাংলা ভাই আদালত বসিয়ে প্রকাশ্যে মানুষকে ফাঁসি দেবে আর খালেদা জিয়া ২১ আগস্টের সমাবেশে আরজেস গ্রেনেড হামলা করে শেখ হাসিনাকে হত্যা করতে চাইবে। তাহলে সেদেশে কিভাবে ঐক্যমত্য সম্ভব বরং এখানে প্রয়োজন প্রতিহিংসার বদলে প্রতিশোধ।

১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ আরেক স্বৈরাচার এরশাদ ক্ষমতা দখল করে দীর্ঘ সাড়ে নয় বছর ক্ষমতায় থেকে ১৯৯০-এর গণআন্দোলনে এই স্বৈরাচারের পতন হলে তখন আওয়ামী লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলো চিন্তা করতে শুরু করে কীভাবে মিলিটারি শাসকদের ক্ষমতা দখলের প্রক্রিয়া চিরতরে বন্ধ করে গণতন্ত্র কাযেম করা যায় সেই চিন্তা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির কথা চিন্তা করা হয়। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট তার ছোট বোন রেহানাসহ ছিলেন তার স্বামী বিশিষ্ট পরমাণুবিজ্ঞানী ড. ওয়াজেদ মিয়ার কর্মস্থল পশ্চিম জার্মানিতে। জার্মান থেকে রাজনৈতিক আশ্রয় গ্রহণ করেন ইন্ডিয়াতে, ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর একান্ত সহযোগিতায়। দীর্ঘ ৬ বছরের বেশি সময় নির্বাসিত জীবন শেষে ১৯৮১ সালের ১৭ মে শেখ হাসিনা যখন স্বদেশ প্রত্যাবর্তন করেন স্বৈরাচারী শাসক জিয়ার রক্তচক্ষুকে উপেক্ষা করে। এই সময় তাকে তার ৩২ নম্বরের বাড়িতেও ঢুকতে দেয়া হয়নি।

প্রচণ্ড বাধা-বিঘ্নকে উপেক্ষা করে বঙ্গবন্ধুকন্যা দেশে প্রবেশ করে প্রথমেই ঘোষণা দেন এদেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবেন, মানুষের ভোটে ও ভাতের অধিকার নিশ্চিত করবেন। মানুষ যাতে লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দিতে পারেন সেটা নিশ্চিত করবেন। কিন্তু এরিমধ্যে জিয়া এরশাদ ক্ষমতা দখল করে স্বৈরাচারী কায়দায় দেশ শাসন করে। মানুষের আস্থা হারিয়ে ফেলেছে, গণতন্ত্র সম্পর্কে মানুষের মধ্যে একধরনের অনীহা তৈরি হয়েছিল তখন। গণতন্ত্র সম্পর্কে মানুষের আস্থা বিশ্বাস ফিরিয়ে আনতে ’৯০-এর গণআন্দোলনে স্বৈরাচারের পতনের পর শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগ চিন্তা করেছিল কীভাবে একটা ঋৎবব ঋধৎব ঊষবপঃরড়হ করা সম্ভব আর এই চিন্তা থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পদ্ধতির কথা সামনে আসে। কনসেপ্টটা ছিল এরকম সুপ্রিম কোর্টের সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা, কোনো কারণে তিনি অমত প্রকাশ করলে তার আগে যে বিচারপতি অবসরে গেছেন তিনিই হবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান। তিনিও যদি অসম্মতি প্রকাশ করেন তাহলে দেশে যে কোনো সম্মানিত ব্যক্তি যিনি খুব সৎযোগ্য ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং সব মহলে গ্রহণযোগ্য এমন ব্যক্তিও হতে পারবেন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা। তার সাথে থাকবেন ১০ জন উপদেষ্টা, যারা সব রাজনৈতিক দলের মতামতের ভিত্তিতে নির্বাচিত হবেন এবং অন্তবর্তীকালীন সময়ে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করবেন। প্রথমেই ’৯১-এর সংসদ নির্বাচন হলো, বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের নেতৃত্বে আর তখন বিএনপিই ক্ষমতায় আসলো এবং খালেদা জিয়া প্রধানমন্ত্রী হলেন। এরপর দ্বিতীয়বার সংসদ নির্বাচন হল ১৯৯৬ সালে বিচারপতি হাবিবুর রহমানের নেতৃত্বে এবং আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়ে জোটসহ সরকার গঠন করলো। বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা হলেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী। এরপর তৃতীয়বারের মতো তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হলো ২০০১ সালে বিচারপতি লতিফুর রহমানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা করে। আর তখনই শুরু হলো বিএনপির যত ষড়যন্ত্র। বিএনপি কোনোভাবেই মানতে পারেনি আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় থাকা যে কোনো মূল্যে ২০০১ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় না আসতে পারে। বিচারপতি লতিফুর রহমানকে ক্রয় করে ফেলা হলো, সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায়ের সব ক্ষমতাবানদের ক্রয় করা হলো। সেটা আবার পাকিস্তানের টাকা দিয়ে, প্রশাসন থেকে আওয়ামী লীগের নিয়োগ দেয়া সর্বস্তরের সচিবালয় থেকে স্কুলের দফতরি পর্যন্ত বদলি করা হলো। সব জায়গায় বিএনপির প্রেসক্রিপশন মতো জামাতি আর বিএনপির লোকদের বসিয়ে দেয়া হলো এবং বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করা হলো ২০০১ সালের নির্বাচনে এবং যে কাজটি খুব দক্ষতার সাথে করলো বিচারপতি লতিফুর রহমান ও সেনাবাহিনীর উচ্চাভিলাষী কর্মকর্তারা। 

সবার মধ্যে একটা চিন্তা ছিল পরপর তিনবার যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়, তাহলে দেশের মানুষের গণতন্ত্রের প্রতি আস্থা ফিরে আসবে। মানুষ লাইনে দাঁড়িয়ে যখন তিনবার ভোট দিতে পারলো, তখন হয়তো তত্ত্বাবধাযক সরকার পদ্ধতির আর কোনো দরকার হবে না। যে দল রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় থাকে তাদের অধীনে সংসদীয় নির্বাচন হতে পারে যদি তারা নিরপেক্ষভাবে সেই দায়িত্ব পালন করে। কিন্তু সর্বশেষ অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি তত্ত্বাবধায়ক সরকার প্রধান হয়ে নির্দলীয় নিরপেক্ষ নির্বাচনব্যবস্থার গোটা ধারণাকে পাল্টে দিয়েছেন। তিনি দুর্নীতি করে প্রভাব খাটিয়ে বিএনপির বিজয় নিশ্চিত করে দিয়ে গেছেন। এরপর যখন ২০০৬ সালে বিএনপির মেয়াদ শেষ হয় তখন বিএনপি আবার টালবাহানা শুরু করে, যাতে করে তাদের বিদায়ের পর যিনি নতুন তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান হবেন তিনি যেন ১০০ ভাগ বিএনপির দলীয় হন। আর এ লক্ষ্যে বিএনপির আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক এবং সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি কেএম হাসানকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান বানাতে বিচারপতিদের অবসরে যাওয়ার বয়স দু’বছর বাড়িয়ে দেন। এভাবে বিষয়টিকে বিতর্কিত করা শুরু করেছিল, বিএনপির আন্দোলন শুরু হলো এরই মধ্যে আবার নিজদলের রাষ্ট্রপতি ইয়াজউদ্দীনকে বানিয়ে দেয়া হলো তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান., অথচ তখনও তিনি রাষ্ট্রপতি। তখন দেশ একটা অনিশ্চিত যাত্রার শুরু করেলো বিএনপির হঠকারিতার কারণে। এরই মধ্যে মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীন দেশে জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা গ্রহণ করলো। যদিও বিষয়টা ছিল অগণতান্ত্রিক তবুও দেশের মানুষ স্বস্তিতে ছিল বিএনপির সৃষ্ট মরণ যন্ত্রণা থেকে। দীর্ঘ ২ বছর অনিশ্চয়তার পর আবার ২০০৮ সালে মইনুদ্দীন-ফখরুদ্দীনের অধীনে সংসদ নির্বাচন হলো। আর সেই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ জয়ী হয়ে আবার ক্ষমতায় আসলো। এখন প্রশ্ন হলো কেন আবার নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হবে? এটা তো ছিল স্বৈরাচারী ভূত তাড়ানোর প্রক্রিয়া। জিয়া-এরশাদের ভূত যখন বিতাড়িত হলো এখন আর এটির কোনো দরকার নেই। অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি লতিফুর তার সততার পরিচয় দিতে পারেননি। অথচ তাকে নিয়োগ দিয়েছিল বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। আর যারা উপদেষ্টা হিসেবে কাজ করতেন তারা কেউ কোনোদিন রাজনীতি করেননি। বিভিন্ন জন বিভিন্ন পেশার লোক ছিলেন তাদের দেশ পরিচালনার কোনো অভিজ্ঞতাও ছিল না। তাদের আনা হয়েছে অনুরোধে ঢেকি গিলার শামিল। তাদের অনেকে সৎ ছিলেন আবার অনেককে সহজে ম্যানেজ করা গেছে, যার কারণে সর্বশেষ নির্বাচনকে তারাই প্রশ্নবিদ্ধ করে গেছেন, কেবলমাত্র বিএনপিকে ক্ষমতায় আনতে গিয়ে। সুতরাং এটি এখন পুরোনো এবং অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থা, এ ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়ার কোনো সুযোগ নেই। আগামী নির্বাচনও হবে দলীয় সরকারের অধীনে এর কোনো বিকল্প নেই।


লেখক : সহ-সভাপতি, যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগ


শেয়ার করুন