২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ১১:১৫:০৬ পূর্বাহ্ন


অন্যপক্ষ সাধারণ সভার নিশ্চিত ভাঙনের পথে জালালাবাদ
বহিষ্কারের ব্যাপারে গঠনতন্ত্র কী বলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে একপক্ষ
দেশ রিপোর্ট:
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৪-০২-২০২৩
বহিষ্কারের ব্যাপারে গঠনতন্ত্র কী বলে মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে একপক্ষ


প্রবাসের অন্যতম আঞ্চলিক সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। এই সংগঠনের মধ্যে বিভেদ ছিল, বিরোধী ছিল, কিন্তু কখনো ভাঙনের মুখে পড়েনি। কিন্তু এবার জালালাবাদ ভবন ক্রয়কে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসরত সিলেটবাসী বাংলাদেশিদের ৩৮ বছরের পুরোনো সংগঠন জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশান বর্তমানে ভাঙনের মুখে পড়েছে। শুধু গুটিকতক ব্যক্তির ইগোর কারণে ভাঙনের মুখে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। অতীতে যখনই জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনে সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, প্রতিবারই সমঝোতার মাধ্যমে তার সমাধান করা হয়েছে। কিন্তু এবার সমাধানের পথে না গিয়ে মামলা এবং সংগঠনকে ভাঙনের পথে নিয়ে যাচ্ছেন। বর্তমান কার্যকরি কমিটির বিভক্তিকে কেন্দ্র করে তৃতীয়পক্ষ সুযোগ নিচ্ছে। মূলত তাদের ইন্ধনের আগুনে পুড়ছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন। সর্ব শেষ জানা গেছে, সাধারণ সম্পাদককে যারা সমর্থন করেন, যারা ভবনের পক্ষে এবং বদরুল হোসেন খানের গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে তারা অচিরেই সাধারণ সভা ডাকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

 সর্বশেষ নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদক মইনুল ইসলামকেসাসপেন্ডএবং সদ্য সাবেক কমিটির সভাপতি মইনুল হক চৌধুরী হেলাল সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান শেফাজকে শোকজ নোটিশ জারিকে কেন্দ্র করে বিরোধ আরো চরম আকার ধারণ করেছে। এতদিন সমঝোতার কিছুটা আলামত দেখা গেলেও এখনো পরিষ্কার জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন বিভক্ত হয়ে পড়ছে। বদরুল হোসেন খানের নেতৃত্বাধীন কমিটি অগঠনতান্ত্রিকভাবে সাধারণ সম্পাদককে সাসপেন্ড করে সহসাধারণ সম্পাদককে ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পদকের দায়িত্ব দিয়েছেন। যা জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠার পর আর দেখা যায়নি। যে ভবন নিয়ে বিরোধ, যুক্তি দেয়া হচ্ছে গঠনতন্ত্র ফলো করা হয়, কিন্তু বদরুল খান যে বারবার গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করছেন তার জবাব দেবে কে? তার অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশনের গঠনতন্ত্র যেন তার কাছে জলভাত। নিজে যা করবেন তা ঠিক অন্যকে করলে পাপ।

যদিও নিয়ে সংগঠনের সাবেক সভাপতি শওকত আলী গত ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় জালালাবাদ ভবনে বলেছেন, সংগঠনের গঠনতন্ত্রে সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত ব্যতীত সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে সাসপেন্ড কিংবা বহিষ্কার করার কোনো বিধান নেই। কার্যকরি কমিটি বড়জোর শোকজ করতে পারে যা সাধারণ সভায় ড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। একজন নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাসপেন্ড করার ইক্তেহার একমাত্র সাধারণ সদস্যদের। তিনি আরো বলেন, কার্যকরি কমিটি গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কোন অবস্থাতেই দায়িত্ব হস্তান্তর করা সাবেক সভাপতি সাধারণ সম্পাদককে শোকজ নোটিশ জারি করতে পারেন না। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বর্তমান কমিটি গঠনতন্ত্র বিরোধী কাজটিও করেছে। প্রসঙ্গে তিনি সাবেক সভাপতি সদ্য নির্বাচিত উপদেষ্টা বদরুন নাহার খান মিতার বিরুদ্ধে সভাপতি থাকাকালে কার্যকরি পরিষদের ১৮ জন সদস্যের অনাস্থা প্রস্তাবের কথা উল্লেখ করে বলেন, সে সময় সভাপতি পদ থেকে বদরুন নাহার খান মিতাকে সাসপেন্ডও করা হয়নি, কিংবা কাউকে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্বও দেওয়া হয়নি। উল্লেখ করা যেতে পারে যে সাধারণ সভায় বদরুন নাহার খান মিতার বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব উপস্থাপন করা হয়েছিল সে সভাতে বদরুন নাহার খান মিতাই সভাপতিত্ব করেছিলেন। অবশ্য বদরুন নাহার খান মিতার বিরুদ্ধে কার্যকরি পরিষদের ১৮ জন সদস্যের উপস্থাপিত প্রস্তাবও সাধারণ সভায় বাতিল হয়ে গিয়েছিল।

ইয়ামীন রশীদ বলেন, আমাদের সময়ক্ষেপণ করা চলবে না। আমাদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তারা একের পর এক গঠনতন্ত্রবিরোধী কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি নির্বাচিত সাধারণ সম্পাদককেও সাসপেন্ড করার সাহস দেখিয়েছে। তিনি দ্রুত সাধারণ সভা ডেকে জালালাবাদবাসীর মতামত গ্রহণের কথা উল্লেখ করেন। তিনি আরো বলেন, আমরা জালালাবাদ ভবন চাই। ভবন ক্রয়ের সময় যদি কোনো ত্রুটি থেকে থাকে তা দূর করতে চাই সমঝোতার মাধ্যমে।

সাহাবুদ্দীন বলেন, জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশন কারো একার নয়। যে কোনো সংগঠনে বিরোধ হতে পারে, তাই বলে গঠনতন্ত্র লঙ্ঘন করে কাউকে বহিষ্কার করা সমীচিন নয়। তিনি সাধারণ সভা ডেকে সমঝোতার আহ্বান জানান।

সাবেক কোষাধ্যক্ষ আতাউল গনি আসাদও একই মত প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ সভা হচ্ছে জালালাবাদ অ্যাসোসিয়েশানে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের স্থান। কার্যকরি কমিটি সদস্যদের ভোটে একজন নির্বাচিত সভাপতি কিংবা সাধারণ সম্পাদককে সাসপেন্ড কিংবা কাউকে ভারপ্রাপ্ত বানাতে পারে না। এটা অন্যায় সংগঠনের স্বার্থবিরোধী।

মিজানুর রহমান বলেন, আমরা এই অবস্থা চাই না। আমরা এর অবসান চাই। আমরা সমঝোতা চাই। আমরা চাই না সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জালালাবাদ নিয়ে মানুষ খারাপ মন্তব্য করুক। তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদককে যেভাবে সাসপেন্ড করা হয়েছে এটা অসাংগঠনিক।

সুব্রত বিশ্বাস বলেন, এই অবস্থা নিয়ে আমি সভাপতিসহ অনেকের সঙ্গে আলোচনা করেছি কিন্তু তার জবাবে আমি সন্তুষ্ট হতে পারিনি। তার মনোভাবে মনে হয়েছে তিনি সমঝোতা চান না।

এই সভায় অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাবেক কর্মকর্তা মাওলানা সাইফুল ইসলাম সিদ্দিকী, আব্দুল করিম, বর্তমান সহ সভাপতি শাহীন কামালি, দরুদ মিয়া রুনেল, মোহাম্মদ লায়েক, ফজলুর রহমান, ইশতিয়াক আহমেদ রূপু, সুব্রত বিশ্বাস, ফজলু মিয়া, মুজাহিদুল ইসলাম, হুমায়ুন চৌধুরী, মইনুজ্জামান চৌধুরী প্রমুখ।

সর্বশেষে জানা গেছে, গত সপ্তাহে সাবেক সাধারণ সম্পাদকদের নিয়ে বর্তমান সভাপতিসহ আরো কয়েকজন বৈঠকে বসেছিলেন। সেই বৈঠকে সবাই সমঝোতার প্রস্তাব দিয়েছিলেন। সেই সমঝোতা প্রস্তাবে সভাপতি সমর্থন দিয়েছেন এবং তাদেরকে সমঝোতার দায়িত্ব দিয়েছেন।

 

 

শেয়ার করুন