২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৩২:২৫ পূর্বাহ্ন


শপথ নিলেন শাহ নেওয়াজ ও রাসেলের কমিটি
নিউইয়র্ক বাংলাদেশি-আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের অনিন্দ্য সুন্দর অভিষেক
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ৩০-০৮-২০২৩
নিউইয়র্ক বাংলাদেশি-আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের অনিন্দ্য সুন্দর অভিষেক কেক কাটছেন শাহ নেওয়াজ


সবকিছুই ছিল যেন ছবির মতো। একবাক্যে বলা যায়, অনিন্দ্য সুন্দর। অডিটোরিয়ামে ঢোকার পরই ভিন্ন এবং আভিজাত্যের পরশ পাওয়া গিয়েছিল। নিউইয়ক বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাবের আগেও অনুষ্ঠান করেছে কিন্তু এবারের অনুষ্ঠান সব অনুষ্ঠানকে ছাড়িয়ে গিয়েছে। তবে অনুষ্ঠানের কোনো কোনো অংশ ঝুলে যাওয়াতে অনুষ্ঠানের শ্রীহানি হয়েছে। তবে এটাতে আয়োজকদের কিছু করার ছিল না। কারণ আমন্ত্রিত অতিথিই যদি শ্রীহানির কারণ হন, তাহলে আয়োজকরাই বা কী করবেন? তা-ও আবার মূলধারার, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি। এক্ষেত্রে চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আয়োজকদের আর করার কিছুই থাকে না। তবে সময়টা বেঁধে দিলে এটা এড়ানো যেত। সে যাই হোক বলছিলাম নিউইয়র্ক বাংলাদেশি-আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের অভিষেকের কথা। এটা ছিল তাদের দশম কমিটির অভিষেক। চমৎকার এবং ভিন্নধর্মী আয়োজনের জন্য ধন্যবাদ পেতে পারেন আহ্বায়ক রকি আলিয়ান, সদস্যসচিব ফেড রকিসহ তাদের কমিটিকে। সঙ্গে অবশ্যই ধন্যবাদের দাবিদার বর্তমান এবং বিদায়ী কমিটি।

নিউইয়র্ক বাংলাদেশি-আমেরিকান লায়ন্স ক্লাবের বর্ণিল ও অসাধারণ অভিষেক অনুষ্ঠিত হলো গত ২৬ আগস্ট শনিবার নিউইয়র্কের ম্যারিয়ট হোটেলের বল রুমে। অভিষেখ অনুষ্ঠানে গোল্ডেন এজ হোম কেয়ারের প্রেসিডেন্ট লায়ন শাহ নেওয়াজ ও বিশিষ্ট ব্যবসায়ী লায়ন জে এফ এম রাসেলের নেতৃত্বাধীন কমিটি (২০২৩-২০২৪) দায়িত্ব গ্রহণ করলেন। হলভর্তি দেশি-বিদেশি অতিথি, লায়ন্স ক্লাব মেম্বার ও তাদের পরিবারের সদস্য এবং কমিউনিটির গণ্যমান্য ব্যক্তিদের তুমুল করতালি এবং ঢোলের আওয়াজের মধ্যে নতুন কমিটি দায়িত্ব গ্রহণ করেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার লায়ন মোহাম্মদ সাঈদ নবনির্বাচিত কমিটিকে শপথ বাক্যপাঠ করান। এর পরপরই বিদায়ী কমিটির সভাপতি আহসান হাবিব ও সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানী নতুন কমিটির সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের হাতে দায়িত্ব হস্তান্তর করেন। দুই পর্বের এই অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বের বেল বাজিয়ে সূচনা করেন বিদায়ী সভাপতি লায়ন আহসান হাবিব এবং দ্বিতীয় পর্বে নতুন সভাপতি শাহ নেওয়াজ বেল বাজিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে নতুন কমিটির কার্যক্রমের ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানের শুরুতে আমেরিকায় প্রকৃতি দুর্যোগে এবং যেসব লায়ন সদস্য প্রাণ হারিয়েছেন তাদের সম্মানে দাঁড়িয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। বিদায়ী সাধারণ সম্পাদক হাসান জিলানী ইনভোকেশন করেন, লায়ন এ এফ মিসবাউজ্জামান উপস্থিত সবাইকে শপথ পাঠ করান। পরিবেশন করা হয় বাংলাদেশ এবং আমেরিকার জাতীয় সংগীত। সাবেক সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলামের টোস করার পরই আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়।

অভিষেক অনুষ্ঠানে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র আসার কথা থাকলেও তিনি আসতে পারেননি। তবে তার প্রতিনিধি পাঠিয়েছেন। প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আল হারমাইন গ্রুপের কর্ণধার, দেশে ও প্রবাসের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মাহতাবুর রহমান নাসির। স্পেশাল গেস্ট হিসেবে উপস্থিত ছিলেন লায়ন্স ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর রেমন স্মিথ, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিওম্যান জেসিকা গঞ্জালেজ রোহাস, অ্যাসেম্বলিওম্যান জেনিফার রাজ কুমার, নিউইয়র্ক স্টেট অ্যাসেম্বলিম্যান ডেভিড উইপ্রিন, নিউইয়র্ক স্টেট সিনেটর জন ল্যু, সাবেক কাউন্সিলম্যান হায়রাম সনসুরাত, নিউইয়র্ক সিটি মেয়রের প্রতিনিধি সাউথ এশিয়ান কমিউনিটি লিয়াজোঁ শুকরানী ধানপত, ও সাবেক ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর মেদাদি সাই প্রমুখ। অনুষ্ঠান পরিচালনায় ছিলেন এফ ই এম ডি রকি, এ এফ মিসবাউজ্জামান ও ফাহাদ সোলায়ান।

লায়ন্স ক্লাবের অভিষেক অনুষ্ঠানকে সফল করার জন্য গঠিত আহ্বায়ক কমিটিতে লায়ন রকি আলিয়ান আহ্বায়ক ও লায়ন এফ ই এম ডি রকি সদস্য সচিবের দায়িত্ব পালন করেন। নতুন কমিটির নির্বাচিত কর্মকর্তারা হলেন-সভাপতি শাহ নেওয়াজ, ফার্স্ট ভাইস প্রেসিডেন্ট রকি আলিয়ান, ভাইস প্রেসিডেন্ট এ কে এম রশীদ, রেজা রশীদ, সাইফুল ইসলাম ও রুহুল আমীন, সেক্রেটারি জে এফ এম রাসেল, জয়েন্ট সেক্রেটারি আবুল কাশেম চৌধুরী, কামরুল মজুমদার ও ট্রেজারার মশিউর রহমান মজুমদার, টেলটুইসটার লিটু আনাম, টেমার আজমাইন নিশান, ডিরেক্টর আমেনা নেওয়াজ, ফাহাদ সোলায়মান, নূরুল আজিম, আব্দুর রশীদ বাবু।

অভিষেক অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন প্রেসিডেন্ট শাহ নেওয়াজ, সেকেন্ড ভাইস ডিস্ট্রিক্ট গভর্নর আসেফ বারী টুটুল, সাবেক প্রেসিডেন্ট মতিউর রহমান, সাবেক প্রেসিডেন্ট আহসান হাবিব, সাবেক সভাপতি মোহাম্মদ সাঈদ, সাবেক সেক্রেটারি হাসান জিলানী ও সাইফুল ইসলাম, লায়ন ফাহাদ সোলায়মান, আলমগীর খান আলম।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাহতাবুর রহমান নাছির আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি এই দেশে প্রথম আসি ১৯৮১ সালে। সেই সময় আমি প্রায় ৮৭ হাজার ডলার নিয়ে এসেছিলাম। এয়ারপোর্টে সেই অর্থ নিয়ে আমাকে প্রশ্ন করা হয়। আমি বলেছিলাম সুযোগ থাকলে আমি এই দেশে বিনিয়োগ করবো। তিনি আরো বলেন, বাংলাদেশে এখন বিনিয়োগের উত্তম স্থান। তিনি প্রবাসীদের বাংলাদেশে দুবাইয়ে বিনিয়োগ করার আহ্বান জানান।

জেসিকা গঞ্জালেস নবনির্বাচিত কমিটিকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, আমার নির্বাচনী এলাকায় এই সংগঠন। আজকের এই অনুষ্ঠানে আসতে পেরে আমার কাছে ভালো লাগছে। তিনি বলেন, আমরা এলাকার উন্নয়নে সম্মিলিতভাবে কাজ করতে চাই। জেসিকা সংগঠনের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদকে সাইটেশন প্রদান করেন।

জন লু বলেন, আমি গত ২৫ বছর ধরে বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করছি। আগামীতেও বাংলাদেশি কমিউনিটির সঙ্গে কাজ করবো। জন ল্যু সভাপতিকে সাইটেশন প্রদান করেন।

জেনিফার রাজকুমার বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতি সম্মান জানিয়ে বলেন, আমি আপনাদের প্রতিনিধি। আমাদের উদ্যোগেই বাংলাদেশ ইনডিপেনডেন্ট ডে পালন করা হয়। জেনিফার রাজকুমার কমিউনিটিতে ব্যাপক সেবা প্রদানের জন্য লায়ন শাহনেওয়াজকে ‘প্রোক্লেমেশন’ প্রদান করেন। এছাড়াও সাইটেশন প্রদান করেন বি কামাল, রফিকুল ইসলাম ডালিম, মোস্তফা আনিক রাজ, ফাহাদ সোলায়মান, রকি আলিয়ান, সিপিএ সরওয়ার চৌধুরী, আলমগীর খান আলম, হারুণ ভুইয়া, ফেড রকি, জে এফ এম রাসেল, আমেনা নেওয়াজ, আহসান হাবিবকে।

সভাপতি শাহ নেওয়াজ অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্যে বলেন, লায়ন্স ক্লাবকে এগিয়ে নিতে সবার সহযোগিতা চাই। কমিউনিটির কল্যাণে নিউইয়র্ক বাংলাদেশ লায়ন্স ক্লাব আগামীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবো ইনশাআল্লাহ।

আসেফ বারী টুটুল নতুন কমিটিকে অভিনন্দন জানান এবং আহ্বায়ক কমিটিকে ধন্যবাদ জানান এতো সুন্দর অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য। তিনি নতুন সদস্যদের উদ্দেশ্য বলেন, আপনারা যারা নতুন সদস্য হয়েছেন আশা করি তারা সংগঠনকে সময় দেবেন এবং মিলেমিশে কাজ করবে। তিনি বলেন, আমরা সুন্দর সুন্দর কাজ করেই লায়ন্স ক্লাবকে আজকের এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছি।

অনুষ্ঠানে চন্দ্রা ব্যানার্জি ড্যান্স গ্রুপ নৃত্য পরিবেশন করে অতিথিদের প্রশংসা কুড়িয়েছে। অন্যদিকে ভ্রাতৃত্ব, নেতৃত্ব ও সম্মান প্রদর্শনের একটি অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত স্থাপন হয় এই অভিষেক অনুষ্ঠানে। অনুষ্ঠানে আসেফ বারী টুটুল ও মুনমুন বারীকে ভালোবাসার আলিঙ্গনে ক্রেস্ট দিয়ে বরণ করে নেন শাহ নেওয়াজ ও রানো নেওয়াজ। এ সময় হলভর্তি অতিথি ও লায়ন্স সদস্যরা করতালি দিয়ে এ দৃশ্যকে স্বাগত জানায়। আবার আসেফ বারী টুটুলও বলেছেন, আমরা মিলেমিশে কাজ করবো এবং এই সংগঠনকে এগিয়ে নিয়ে যাবো।

অনুষ্ঠানে প্রধান নির্বাচন কমিশনার মোহাম্মদ সাঈদ, সাবেক কর্মকর্তাদের আওয়ার্ড প্রদান করা হয়। নতুন সদস্য যারা হলেন তারা হলেন-এ কে এম ফজলুল হক, শাহ জে চৌধুরী, হুসনেআরা চৌধুরী, বেলায়েত হোসেন, মইনুজ্জামান চৌধুরী, মনোয়ারুল ইসলাম, আফরোজা ইসলাম, এ এস এম মাইনুদ্দিন পিন্টু, আরিফ চৌধুরী, সুমান, জাহিদুল ইসলাম, মিজানুর রহমানসহ ২১ জন। তাদের শপথ বাক্য পাঠ করান নবনির্বাচিত সভাপতি শাহ নেওয়াজ।

শেয়ার করুন