২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:৫৭:০৬ অপরাহ্ন


আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা
দেশ রিপোর্ট
  • আপডেট করা হয়েছে : ২০-০৯-২০২৩
আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক আলোচনা সভা প্রধান অতিথিকে ফুলেল অভ্যর্থনা


গত ১৫ সেপ্টেম্বর শুক্রবার সন্ধ্যায় জ্যাকসন হাইটসের বাংলাদেশ প্লাজার হলরুমে অভিবাসী বাঙ্গালি নাগরিক সমাজের উদ্যোগে ‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস : উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ভূমিকা’ শীর্ষক আলোচনা সভা বিশিষ্ট টিভি উপস্থাপক শামীম আল আমিনের সঞ্চালনায় অভিবাসী বাঙ্গালি নাগরিক সমাজ যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বায়ক নুরুল বাতেনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত হয়। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই) মহাপরিচালক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যোগাযোগ বৈকল্য বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা উপন্যাসিক অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নিউ ইয়র্কে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা।

অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি অধ্যাপক ড. হাকিম আরিফ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট (আমাই)) প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট ও কার্যক্রমের বিস্তারিত বর্ণনায় বলেন, বিশ্বে প্রায় সাত হাজার মাতৃভাষা রয়েছে, অনেক ভাষা মরে যাচ্ছে কিন্তু বিশ্বে যতদিন বাঙ্গালি থাকবে, বাংলাদেশি থাকবে, বাংলাদেশ থাকবে ততদিন বাংলাভাষা মরবে না। বর্তমানে বিশ্বের ১৭৫টি দেশে দেড় কোটি অভিবাসী ও প্রবাসী বসবাস করে। মজার বিষয় হল প্রথম প্রজন্মে বাঙ্গালিত্ব, বাংলাভাষায় পঠন, লিখন চালু রাখে- বিপত্তিটা শুরু হয় দ্বিতীয় প্রজন্ম থেকে, তারা কথা বুঝে কিন্তু ঠিক মত বলতে পারে না, বাংলায় লিখতে এবং পড়তেও জানে না। এ ভাবে চললে অভিবাসী দেশে বাংলাভাষা প্রতিষ্ঠিত না হয়ে তৃতীয় প্রজন্ম থেকেই ভাষা বিলীন হয়ে যাবে। তাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট উত্তর আমেরিকায় দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের বাংলাভাষার অবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য একটি গবেষণা কার্যক্রম পরিচালনা করবে। গবেষণার ফলাফলের ওপর ভিত্তি করে তাদেরকে বাংলা ভাষা শিখানোসহ তা ধারণ ও লালনে উৎসাহিত করতে প্রাথমিকভাবে  ল্যাংগুয়েজ লাভার্স অব দ্যা ওয়ার্ল্ড সোসাইটি ইউএসএ চ্যাপ্টার থেকে প্রাপ্ত অনুদানের দশ হাজার ডলার ব্যয় করা হবে। আমরা ইউনেস্কোর মাধ্যমে প্রতিটি দেশে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে শহীদ মিনারকে প্রতীক হিসেবে ব্যবহারের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি।

ড. আরিফ বলেন, আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটে একটি অনুবাদ কেন্দ্র চালু আছে, বাংলা ও ইংরেজিতে পাঁচ খন্ডে মাতৃভাষা বিশ্বকোষ প্রকাশিত হবে, বহুভাষিক পকেট অভিধান প্রকাশিত হচ্ছে; পাঁচটি বইয়ে পনেরটি ভাষা অন্তর্ভুক্ত হবে। তিনি  আরো বলেন, অভিবাসী ও প্রতিটি প্রবাসী নাগরিক বাংলাভাষা ও বাংলাদেশের প্রতিনিধি তাই সবাইকে বাংলা সংস্কৃতির প্রসারে একুশের পাশাপাশি নববর্ষ উদযাপন, বইমেলা, লালন-রবীন্দ্র- নজরুল বিভিন্ন সম্মেলনে দ্বিতীয় প্রজন্মকে ব্যাপক হারে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। না হলে আপনারা শুধু টার্কিই খাবেন, টার্কি দিবসই পালন করবেন-পান্তাভাত, শুঁটকি-ইলিশের স্বাদও ভুলে যাবেন। মনে রাখবেন একটি জাতির ভাষা আগে মরে এবং সব শেষে বিলীন হয় খাদ্যভ্যাস। আমরা সবাই মিলিতভাবে বাংলাভাষা ও বাংলা সংস্কৃতিকে বিশ্বব্যাপি প্রজন্মের পর প্রজন্ম এগিয়ে নিয়ে যাবো।

নিউ ইয়র্কে নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদা বলেন, নিউইয়র্কে বাঙালি জনসমাজে এটাই আমার প্রথম অনুষ্ঠান। অভিবাসীদের বাংলাভাষা ও সংস্কৃতির লালন ও দরদ দেখে আমি অভিভূত, আমি যতদিন দায়িত্বে আছি- দ্বিতীয় প্রজন্মের মাঝে ভাষা ও সংস্কৃতি বিকাশে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখবো এবং সিটির স্কুলে বাংলাভাষা শিক্ষার ব্যপারে সমস্যা চিহ্নিত করে দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নিবো।

আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসঃ অভিবাসীদের ভূমিকা শীর্ষক মূল আলোচনায় মুক্তধারা ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা বিশ্বজিত সাহা একুশ উদযাপন ও নিউ ইয়র্ক বাংলা বইমেলার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস তুলে ধরে বলেন, বিগত বত্রিশ বছর সবকিছুই সম্ভব হয়েছে উত্তর আমেরিকা অভিবাসীদের ঐকান্তিক ইচ্ছা এবং সহায়তায়। তাই এই গৌরবের কৃতিত্ব সবার। বাংলা ভাষা এবং সংস্কৃতি রক্ষায় আমাদের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে বাংলাভাষা সংস্কৃতিকে বাঁচিয়ে রাখার লক্ষ্যে দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানের জন্য আরও ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করা হবে।

কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির সিনিয়র প্রোগ্রামিং লাইব্রেরিয়ান সেলিনা শারমিন তার বক্তব্যে বাংলাভাষায় কুইন্স পাবলিক লাইব্রেরির বিভিন্ন কার্যক্রম ও সাফল্য তুলে ধরেন।

নাট্যকার তোফাজ্জল হোসেন লিটনের সঞ্চালনায় দ্বিতীয় পর্বে আলোচনা অনুষ্ঠানের প্রশ্নোত্তর পর্বে প্রধান অতিথিকে বিভিন্ন প্রশ্ন করেন কবি সামস আল মমিন, কবি ফকির ইলিয়াস, আইটিভির পরিচালক ও সাংবাদিক রিমন ইসলাম, সাংবাদিক সঞ্জীবন কুমার সরকার, অ্যাকটিভিস্ট হাবিব রহমান হারুন প্রমুখ। অনুষ্ঠানে নিউ ইয়র্কে বসবাসরত বিভিন্ন পত্রিকার সম্পাদক, সাংবাদিক, শিক্ষক ও বিভিন্ন পেশাজীবী, কিশোরগঞ্জ জেলাবাসীসহ বিপুল সংখ্যক অভিবাসী উপস্থিত ছিল।

কিশোরগঞ্জের কৃতী সন্তান ড. হাকিম আরিফ ও পত্নী অধ্যক্ষ শিরীন সুলতানাকে ফুলের তোড়ায় শুভেচ্ছা জ্ঞাপন করেন কিশোরগঞ্জ ডিস্ট্রিক্ট এসোসিয়েশনের সভাপতি মো.আব্দুর রাজ্জাক ও সাবেক সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার মো. ফজলুল হক, বরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সাবেক সভাপতি হেলাল উদ্দিন আহমেদ, সাবেক সভাপতি হাবিব রহমান হারুন, সাবেক উপদেষ্টা হাকিকুল ইসলাম খোকন, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, মো সালাউদ্দিন, নয়ন কুমার সাহা, মাসুদ রানা প্রমুখ।

অনুষ্ঠানের সভাপতি অভিবাসী বাঙ্গালি নাগরিক সমাজ যুক্তরাষ্ট্রের আহ্বায়ক  নুরুল বাতেন তার সমাপনী বক্তব্যে বলেন, এই প্রথম আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক নিউ ইয়র্কে আগমন, আমরা তাকে বরণ করতে পেরে আনন্দিত ও গর্বিত। পাশাপাশি নবনিযুক্ত কনসাল জেনারেল মো. নাজমুল হুদাকে নিউ ইয়র্কে আমাদের এই অনুষ্ঠানে যোগদানে মাধ্যমে কমিউনিটিতে প্রথম উপস্থিতির জন্য শুভেচ্ছা জ্ঞাপন ও ধন্যবাদ জানাই। ভবিষ্যতে প্রধান অতিথি ও বিশেষ অতিথির পরামর্শে ও সহযোগিতায় বাংলাভাষা ও সংস্কৃতিকে অভিবাসী সমাজ বিশেষ করে দ্বিতীয় প্রজন্মের সন্তানদের কাছে পৌঁছে দিতে কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে।

শেয়ার করুন