২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০৯:১১:২৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান


প্রচণ্ড অস্বস্তি ও হতাশা আওয়ামী লীগে
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ০২-০৮-২০২৩
প্রচণ্ড অস্বস্তি ও হতাশা আওয়ামী লীগে


প্রচণ্ড হতাশা আর অস্বস্তি দেখা দিয়েছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে। এমন অস্বস্তি কেবল তৃণমূলেই নয়, বরং ক্ষমতার শীর্ষে থাকা বিভিন্ন পর্যায়ের অনেকের মধ্যেও দেখা গেছে। এধরনের পরিস্থিতিতে দলকে চাঙ্গা রাখতে হাইকমান্ডের পক্ষ থেকে নানান ধরনের উৎসাহব্যাঞ্জক বক্তব্যও রাখা হচ্ছে। তারপরেও তাদের মধ্যে যেমন শঙ্কা কাজ করছে তেমনি রয়যছে অস্বস্তি আর হতাশা। এসব তথ্য পাওয়া গেছে, আওয়ামী লীগের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সাথে একান্তে কথা বলে। 

বিএনপি’র লাগাতার কর্মসূচিতে বিপাকে আওয়ামী লীগ

সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের একদফা দাবিতে লাগাতার কর্মসূচি শুরু করে দিয়েছে বিএনপি। সম্প্রতি ঢাকায় শুক্রবার মহাসমাবেশ থেকে লক্ষ্যে পৌঁছার আগ পর্যন্ত রাজপথে থাকার ইঙ্গিত দিয়েছে তারা। এর মধ্য দিয়েই ধারণা করা হচ্ছে যে, বিএনপি দৃশ্যত হার্ডলাইনে চলে গিয়েছে। টানা দু’চবছর ধরে বিএনপি একের পর পর কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। এসব কর্মসূচির একটাই ম্যাসেজ- তা হলো বর্তমান ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের অধীনে বিএনপি কোনোভাবেই নির্বাচনে অংশ নেবে না। আর বিএনপি এ দাবি আদায়ে সাথে নিয়েছে আরো ৩৬টি রাজনৈতিক দলকে। ইতোমধ্যে এসব দল বিএনপি’র সাথে যুগপৎ কর্মসূচি দিয়ে আন্দোলনকে খুব দ্রুতগতিতে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। বিএনপি ও তার নেতৃত্বে থাকা ৩৬ দলের এসব কর্মসূচিতে বিপাকে পড়েছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

তাদের ধারণা ছিল, সরকারের পদত্যাগ কিংবা সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবিতে বিএনপি বা তার নেতৃত্বে মাঠ তেমন গরম করতে পারবে না। তাদের আরো ধারণা ছিল, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক বিচক্ষণতা দিয়ে রাজনৈতিক সঙ্কট কাটিয়ে উঠা সম্ভব হবে। কিন্তু দিনের পর দিন পরিস্থিতি উত্তপ্তই হচ্ছে। আর বিএনপি’র আন্দোলনে দাবি দেশে বিদেশে জোরালো সমর্থন পেয়ে যাচ্ছে। বিএনপি’র নেতৃত্বে বাংলাদেশে অবরুদ্ধ গণতন্ত্র মুক্তির আন্দোলন চলছে। সবচেয়ে বড়ো যে বিষয়টি আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমনকি শীর্ষ নেতাদের মধ্যে ঘুরপার খাচ্ছে, বিএনপি’র আন্দোলন ধীরে ধীরে চরম পর্যায়ে চলে যাচ্ছে কি? তারা এমনও মনে করেন, এভাবে বিএনপি’র থামিয়ে দেয়া বা বাধাগ্রস্থ করার আর কোনো সুযোগ আওয়ামী লীগের হাতে নেই। এভাবেই আন্দোলনকে বিএনপি হয়তবা আরো চরম পর্যায়ে নিয়ে যাবে। বিএনপি’র ভাষায় গণতন্ত্র মুক্ত করার আন্দোলনে কর্মসূচিতে তেমন বিরতি আওয়ামী লীগ দেখছে না। তাদের মনে প্রশ্ন দেখা দিয়ে কি কারণে বিএনপি একের পর এক বড়ো ধরনের কর্মসূচি দিয়ে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন নেতার সাথে এই প্রতিনিধি কথা বলে জেনেছেন তাদের শঙ্কা ও হতাশার বিভিন্ন দিকটি। 

তাদের মতে, বিএনপি একটি একদফা কর্মসূচি দিয়ে পল্টনে সমাবেশ করেছে গত ১২ জুলাই। আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে রাজধানীর নয়াপল্টনে বিশাল সমাবেশ করে সেই একদফা ঘোষণা করেই মাত্র একদিন পরই আরো বড়ো কর্মসূচি দিয়ে দেয় দলটি ও তার শরিকরা।  এরপর বিএনপি তারুণ্যের সমাবেশ করে। সেই সমাবেশ থেকে থেকে সরকারের পদত্যাগের এক দফা দাবিতে বিএনপি ২৭ জুলাই ঢাকায় মহাসমাবেশের কর্মসূচি ঘোষণা করে। যা অবশ্য পরের দিন পালন করে দলটি সরকারের নানান ধরনের নাটকীয়তার মধ্যে। রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে তারুণ্যের সমাবেশে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর মহাসমাবেশের নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করেন। এরপরই ঢাকার বিভিন্ন প্রবেশমুখে গত শনিবার অবস্থান পালন করে বিএনপি। শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারের পদত্যাগ ও নির্দলীয় সরকারের অধীনে নতুন নির্বাচনসহ বিভিন্ন দাবিতে শনিবার ঢাকার সব প্রবেশপথে পাঁচ ঘণ্টার অবস্থান কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছিল যা পালন করে দেশে বিদেশে বিভিন্ন ধরনের সহানুভতি পেয়েছে। কারণ এসব কসূচিতে একদিকে যেমন পুলিশের একশ্যান ছিল, তেমনি দেখা গেছে নানান ধরানের নাটকীয়তা। কিন্তু এর পরেও আরো কর্মসূচি দেয়া হচ্ছে যা ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে এধরনের মানসিক চাপ সৃষ্টি করছে। কেননা এতোদিন তারা ধরে নিয়েছিল শক্ত প্রশাসন দিয়ে বিএনপি’র যেকোনো ধরনের কর্মসূচি হাইকমান্ড ম্যানেজ করে ফেলতে পারবে। কিন্তু র‌্যাবের ওপর নিষেধাজ্ঞা দেওয়ার পাশাপাশি আমেরিকার নয়া ভিসানীতি সর্বোপরি সরকারের ওপর বিভিন্ন ধরনের আন্তর্জাতিক চাপে বলা চলে প্রশাসন চেষ্টা করছে নিরপেক্ষভাবে দায়িত্ব পালনে। একারণে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়ে বাড়তি চাপ। কারণ তারা এখন ঘরে বসে বসে সাংগঠনিক কাজ আর স্বাচ্ছন্দে করতে পারছে না। কথায় কথায় ডাক পড়ছে মাঠে। করত হচ্ছে যখন তখন শান্তি সমাবেশের ব্যানারে নানান ধরনের কর্মসূচি, যা তাদের ধারণাতেই ছিল না। 

সচিবদের বৈঠক বিব্রত সরকার

এদিকে সম্প্রতি সচিবদের একটি বৈঠক হয়ে গেছে। তবে সচিবালয়ে সচিবদের যে বৈঠক নিয়ে কৌতূহল তৈরি হয়েছিল, সেই বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মো. মাহবুব হোসেন বলেছেন, এটা সচিব সভা ছিল না। তিনি কৌতুহলি মহলকে জানিয়েছেন প্রশাসনিক উন্নয়ন সংক্রান্ত সচিব কমিটির বৈঠক ছিল এটি। তবে এনিয়ে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনা ঝড় উঠে। কেউ কেউ মনে করে বিশেষ একটি দলের পক্ষ থেকে অনলাইনে বার্তা দেয়া হয়। তারপরে সরকারের শীর্ষমহল নড়ে চড়ে বসে। এবং এধরনের বৈঠকটি করে তা সামাল দেয়ার চেষ্টা করা হয়। তবে ঠিক এমন সময়ে সচিবদের এমনভাবে বসা নিয়ে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন বিভিন্ন পর্যায়ে মারাত্মক কৌতুহল দেখা দেয়, যা এখনো চলছে। 

শান্তি সমাবেশ নিয়েও ভালো নেই আওয়ামী লীগ

ধারণা ছিল প্রশাসন দিয়ে মাঠে বিরোধী দলকে মোকাবেলা করা হয়ে যাবে ক্ষমতাসীনদের দ্বারা। কিন্তু এমন অবস্থা দেখা যাচ্ছে না বলেই অনেকে মনে করেন। সেকারণে আওয়ামী বিএনপি’র নেয়া কর্মসূচির বিপরীতে শান্তি সমাবেশের ডাক দিয়েছে। এবং শান্তি সমাবেশ করেও যাচ্ছে। কিন্তু এই শান্তি সমাবেশে বড়ো একটি কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ঢাকাতেই। আর  রাজধানীতে এমন কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন মহাবিপাকে। ইতোমধ্যে রাজধানী শান্তি সমাবেশ করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের বেশ কয়েকজন তাজা প্রাণকে হারাতে হয়েছে। রাজধানীর গুলিস্তানে আওয়ামী লীগের দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষে রেজাউল করিম নামে এক যুবক নিহত ও অন্তত চারজন গুরুতর আহত হয়েছেন। 

গত শুক্রবার সন্ধ্যায় শান্তি সমাবেশ থেকে ফেরার পথে এ ঘটনা ঘটে। অস্ত্রের আঘাতে নিহত যুবক দলীয় কর্মী কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। আহত চারজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তারা হলেন- কেরাণীগঞ্জের যুবলীগ কর্মী নোমান হোসেন রনি (৩২), স্কুলছাত্র জুবায়ের হোসেন (১৬), দিনমজুর মোবাশ্বের (২৩) ও রাজমিস্ত্রি আরিফুল ইসলাম (১৮)। তারা কেউই শঙ্কামুক্ত নন। অভিযোগে বলা হচ্ছে ঢাকা-২ আসনের সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য কামরুল ইসলাম এবং কেরানীগঞ্জ আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা চেয়ারম্যান শাহীন আহমেদের অনুসারীর মধ্যে এ সংঘর্ষ হয়। শাহীন আহমেদের অভিযোগ, তার কর্মীদের ওপর হামলা চালান সংসদ সদস্যের অনুসারীরা। তবে এমপি জানিয়েছেন, তার কর্মীদের সঙ্গে কারও সংঘর্ষ হয়নি। কিছুদিন আগেও রাজধানীতে আওয়ামী লীগের শান্তি সমাবেশে কামরুল ও শাহীন গ্রুপের মধ্যে চেয়ার ছোঁড়াছুড়ি হয়। আর এসব কারণে এধরনের পরিস্থিতিতে দলটি বিএনপিকে কিভাবে রাজনৈতিকভাবে মোকাবেলা করবে সে ব্যাপারে সন্দিহান তারা।  

শেষ কথা

এতো সব শঙ্কা আর হতাশার মধ্যেই আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কারণ নেই বলে আশ্বস্ত করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। জনপ্রশাসন কর্মকর্তাদের উদ্দেশেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দৃঢ়প্রত্যয় পুনর্ব্যক্ত করে বলেছেন, দেশবাসীর ভাগ্য নিয়ে কাউকে ছিনিমিনি খেলতে দেওয়া হবে না। আন্দোলন নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে তার পক্ষ থেকে এমন বক্তব্যের আরেকটি অংশ হচ্ছে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না। যতক্ষণ জনগণ আমাদের সঙ্গে আছে ততক্ষণ ভয়ের কিছু নেই। আমরা অগ্নিসংযোগ-সন্ত্রাসকে আর বরদাশত করব না। এটা কখনোই মেনে নেওয়া হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে কারা ভয় পাচ্ছে? কেনো ভয় পাচ্ছে? এমন আশ্বাসের বাণী তিনি কা-কে দিলেন?  দলকে না প্রশাসনকে-এমন প্রশ্নই ঘুরপাক খাচ্ছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল মনে করেন, দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এমন অভয় বাণী দেয়ার পেছেনে অনেক কিছুই আছে, যা হয় সামনের দিনে ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে। অনেকে মনে করে জন প্রশাসনেরই একটি অনুষ্ঠানে এমন অভয় দেয়ার পাশাাশি প্রধানমন্ত্রী বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসামান্য কাজের জন্য ২৮ জন কর্মকর্তা ও দুটি সরকারি দপ্তরকে পুরস্কার দিয়েছেন । এটা তাদের মনেবাল বাড়ানোর একটি টনিক কি-না তা নিয়ে চলছে নানান ধরনের আলোচনা সমালোচনা। প্রশাসনে এমন পুরস্কার প্রাপকরা তাদের নামের শেষে টাইটেল হিসাবে ‘বিপিএএ’ শিরোনাম ব্যবহার করতে পারবেন বলেও বলা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী সকলকে অভয় দিয়ে বলেছেন যে সামান্য আন্দোলন দেখে ভয় পাবেন না-সেদিক থেকেই বিষয়টি বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। আর এদিকে এমন পরিস্থিতিতে পাশে নেয়া হলো আওয়ামী লীগেরে নেতৃত্বাধীন দীর্ঘদিনের মিত্র জোট ১৪ দল কে। বিএনপি ও তাদের মিত্রদের চলমান এক দফার আন্দোলনের বিরুদ্ধে এবার জোটগতভাবে রাজপথে কর্মসূচি নিয়ে নামার ঘোষণা দিয়েছে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ১৪ দল। ২ আগস্ট থেকে পরবর্তী এক সপ্তাহ ঢাকায় নানা কর্মসূচি পালন করবে ক্ষমতাসীনদের এই জোট। কর্মসূচির মধ্যে থাকতে পারে সভা-সমাবেশ, মানববন্ধন ও মিছিল। রাজনৈতিক অঙ্গনে এটিও বেশ তাৎপর্যপূর্ণ। 

যে ১৪দলীয় জোটকে আওয়ামী লীগ তেমন এরকটা গুরুত্ব দেয়নি বিগত বেশ কয়েকটি বছর ধরে। আর এখন সেই তাদেরকেই আবারো কাছে টানার সংবাদটি বেশ ইঙ্গিতপূর্ণ। সামনে দিনে দেখা যাবে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা কতটা চাঙ্গা অনুভব করছেন।

শেয়ার করুন