২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৮:৫৫:৩৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


সরকারবিরোধী আন্দোলনকে গণআন্দোলন বলা যাবে কি?
সালেক সুফী
  • আপডেট করা হয়েছে : ০৪-১০-২০২৩
সরকারবিরোধী আন্দোলনকে গণআন্দোলন বলা যাবে কি?


বাংলাদেশ ১৯৯০, ১৯৯৫, ২০০৬ গণআন্দোলন দেখেছে।  তৎকালীন সরকারগুলোর বিরুদ্ধে তখন সম্মিলিত বিরোধী রাজনৈতিক নেতৃত্বের অধীনে কৃষক-শ্রমিক-ছাত্র-জনতা একতাবদ্ধ হয়ে দুর্বার গণআন্দোলন গড়ে তুলেছিল। ১৯৯৫-৯৬ সরকারি কর্মকর্তাদের এক বিশেষ অংশ পেশাদার সংগঠনগুলোর সঙ্গে সংযুক্ত হয়ে জনতার মঞ্চ গড়ে তুলেছিল। সামরিক বাহিনীর পরোক্ষ সমর্থন ছিল। দুর্বার গণআন্দোলনের মুখে তৎকালীন সরকারগুলো গণদাবি মেনে নিতে বাধ্য হয়েছিল। 

এবার সরকারবিরোধী আন্দোলনে সর্বস্তরের জনগণের কিন্তু তেমন সম্পৃক্ততা দেখা যায় না। বিরোধীদলগুলো আন্দোলনে জনসম্পৃক্ত বিষয়সমূহ সম্পৃক্ত করে জনগণের কাছে বিকল্প পরিকল্পনা তুলে ধরতে পারেনি। বরং নিজেদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশি দেশ এবং শক্তিকে সম্পৃক্ত করে দেশের ভাবমূর্তি কালিমালিপ্ত। মনে রাখতে হবে যুক্তরাষ্ট্রসহ পশ্চিমা রাষ্ট্রগুলো কিন্তু বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে পাকিস্তানের গণহত্যাকারীদের পক্ষ অবলম্বন করেছিল। ওরা মানবাধিকারের ধুয়া তুলে বাংলাদেশের ওপর নিজেদের প্রভাব-বলয় সৃষ্টি করতে চায়। তাই নিজেদের আন্দোলনে সর্বস্তরের আপামর জনগণকে সম্পৃক্ত করতে ব্যর্থ হওয়ায় সরকারবিরোধী আন্দোলন সফল হওয়ার কোনো সুযোগ আপাতত সফল হবে-এমনটা দেখা যাচ্ছে না। নির্দিষ্ট সময় শেখ হাসিনা সরকারের অধীনেই নির্বাচন হবে আর সেই নির্বাচনে প্রধান বিরোধীদলসহ অধিকাংশ নির্বাচনমুখী দল অংশগ্রহণ ছাড়া গত্যন্তর থাকবে না। 

অনেকেই মনে করছেন, প্রধান বিরোধীদল বিএনপির কৌশলে অনেক ভুল আছে। দলের চেয়ারম্যান প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী দীর্ঘদিন কারারুদ্ধ। এখন না অসুখ-বিসুখে জীবন আশঙ্কায়। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক জিয়া দণ্ডপ্রাপ্ত। বাংলাদেশের মতো জটিল রাজনীতির দেশে একজন দণ্ডপ্রাপ্তের দূর থেকে নিয়ন্ত্রণ করে আওয়ামী লীগের মতো শক্তিশালী সরকারের বিরুদ্ধে কার্যকর আন্দোলন গড়ে তোলা সম্ভব নয়। যারা দলকে নেতৃত্ব দিচ্ছে, তাদের অনেকেরই জনতার কাছে স্বচ্ছ ভাবমূর্তি আছে বলে মনে হয় না। এমতাবস্থায় যদিও বর্তমান সরকারের দেশ পরিচালনায় অনেক ব্যর্থতা আছে। তবুও সেই ব্যর্থতাগুলো কাজে লাগিয়ে সরকারবিরোধী কার্যকর তীব্র আক্রমণ গড়ে ওঠেনি। ছাত্র, শ্রমিক, কৃষক, জনতা আন্দোলনে জড়িত হয়নি। কৃষকের কিন্তু সমস্যা নেই, শ্রমিকদের কিন্তু কাজের অভাব নেই, ব্যবসায়ী সমাজ কিছুটা সমস্যায় থাকলেও ব্যবসা-বাণিজ্যে স্বাভাবিক গতি ব্যাহত হয়নি। তবে নিশ্চিত সর্বগ্রাসী ভয়াবহ দুর্নীতি আছে। দেশ থেকে বিপুল পরিমাণ মুদ্রা পাচার হয়ে গেছে। অর্থনৈতিক সংকট ঘনীভূত হয়েছে। কিন্তু প্রশাসন, সরকারি দল এবং বিরোধীদল সবাই কমবেশি দুর্নীতিতে লাভবান হওয়ায় দুর্নীতির বিষয়টি চাপা পড়ে আছে।

আমি মনে করি, সরকারবিরোধী আন্দোলনে যেহেতু গতি নেই। মার্কিন ভিসানীতি জুজুর যেহেতু ভয় আছে, বিরোধী দল এবং সরকারি দল ন্যূনতম ইস্যুর ভিত্তিতে সংলাপ করে নির্বাচকে কতটা স্বচ্ছ এবং নিরপেক্ষ করা যায়, সেটি নিশ্চিত করা উচিত। বর্তমান আন্দোলনে সরকার পতন হবে না, শেখ হাসিনাকে পদত্যাগ করানো অসম্ভব। বরং নির্বাচনী তফসিল ঘোষণার পর শেখ হাসিনা নেতৃত্বে সরকারি দল জনতার ঘনিষ্ঠ হলে জনগণ বর্তমান উন্নয়নের ধারা বাজি রাখার জন্য সরকারি দলের দিকে ঝুঁকে পড়ার সম্ভাবনা। অবশ্যই সরকারপ্রধানকে নিজ দলের তৃণমূল পর্যায়ে জনপ্রিয় জনবান্ধব, সৎ মানুষদের মনোনয়ন দিতে হবে। বহুল প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের আইনের আওতায় আনতে হবে এবং আমলাদের নিরঙ্কুশ নিয়ন্ত্রণ থেকে বেরিয়ে সঠিক পেশাদারদের মেধার ভিত্তিতে সঠিক স্থানে পদায়নের সুস্পষ্ট অঙ্গীকার করতে হবে। এটা এখন বাস্তব যে, এবার আর কিন্তু ২০১৪ বা ২০১৮-এর মতো নির্বাচন হওয়ার সম্ভাবনা নেই।

শেয়ার করুন