২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০৬:৪৯:৫০ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশটাকে তো নরক বানিয়ে ফেলেছেন : হাইকোর্ট
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১১-১০-২০২৩
দেশটাকে তো নরক বানিয়ে ফেলেছেন : হাইকোর্ট আদিলুর রহমান খান ও এস নাসির উদ্দিন এলান


অবশেষে ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানের করা আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেছেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের জরিমানা স্থগিত করে জামিন মঞ্জুর করেছেন আদালত। এর আগে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে মানবাধিকার সংগঠন। গত  মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) বিচারপতি মো. এমদাদুল হক আজাদের নেতৃত্বাধীন একক হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। আদালতে জামিন আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী ও অ্যাডভোকেট রুহুল আমিন ভুঁইয়া। 

‘দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন’- শুনানিতে এমন মন্তব্য করা হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি মো. ইমদাদুল হক আজাদকে ডেকে কথা বলেছেন প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান। এ সময় আপিল বিভাগের বিচারপতিরা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে বিচারপতি ইমদাদুল হক আজাদকে কথাবার্তার ক্ষেত্রে যত্নশীল হতে বলেন প্রধান বিচারপতি। গত মঙ্গলবার আদিলুর-এলানের পক্ষে জামিন শুনানিতে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মোহাম্মদ রুহুল আমিন ভুঁইয়া। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম। জামিন শুনানি করতে শুরুতে ডায়াসের সামনে দাঁড়ান জ্যেষ্ঠ আইনজীবী এ জে মোহাম্মদ আলী। এসময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. রেজাউল করিম দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমাদেরও বক্তব্য আছে। তখন হাইকোর্ট বলেন, ‘আসামিদের আইনজীবীকে আগে বলতে দিন। আপনি এখনই লাফ দিয়ে উঠছেন কেন? দেশটাকে তো জাহান্নাম বানিয়ে ফেলেছেন।’

এ জে মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘তথ্য প্রযুক্তি আইনের মামলায় আসামিদের দুই বছরের সাজা দেওয়া হয়েছে। ১০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।’ এ সময় ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল রেজাউল করিম বলেন, ‘তাদের বিরুদ্ধে গুজব, তথ্য বিকৃতির অভিযোগে সাজা হয়েছে।’ তখন আদালত বলেন, ‘তাহলে তাদের ২ বছরের সাজা দিলেন কেন? যাবজ্জীবন দ- দিতে পারলেন না।’ শুনানি শেষে আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলানকে জামিন দেন হাইকোর্ট। একইসঙ্গে তাদের ১০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ স্থগিত করা হয়। এর আগে ২০১৩ সালে মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে মৃত্যুর সংখ্যা নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টির অভিযোগের মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল তাদের দুই বছরের কারাদণ্ড দেন। পাশাপাশি তাদের ১০ হাজার টাকা করে জরিমানাও করা হয়।

রায়ের পর ২৫ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান হাইকোর্টে আবেদন করেন। আবেদনে সাজা থেকে খালাস ও জামিন চাওয়া হয়। অপরদিকে তাদের সাজা বাড়াতে ৫ অক্টোবর হাইকোর্টে আপিল করে রাষ্ট্রপক্ষ। 

মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের সমাবেশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে ২০১৩ সালের ১০ জুন মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। ওই প্রতিবেদনে শাপলা চত্বরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে ৬১ জন নিহত হয়েছেন বলে দাবি করা হয়। তবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযান নিয়ে অসত্য ও বিকৃত তথ্য প্রচারের অভিযোগে আদিলুর রহমান খান ও নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা হয়। 

এই মামলায় পুলিশের প্রতিবেদনে বলা হয়, আদিলুর ও নাসির উদ্দিন ৬১ জনের মৃত্যুর ‘বানোয়াট, উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা’ তথ্যসংবলিত প্রতিবেদন তৈরি ও প্রচার করে জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি করেন, আইনশৃঙ্খলা বিঘ্নের অপচেষ্টা চালান এবং আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, সরকার ও রাষ্ট্রের ভাবমূর্তি দেশে-বিদেশে চরমভাবে ক্ষুণ্ণ করেন। পাশাপাশি তারা মুসলমানদের মনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিরুদ্ধে বিরূপ মনোভাবের সৃষ্টি করেন, যা তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের ৫৭(১) ও (২) ধারায় অপরাধ।

একপর্যায়ে ২০১৩ সালের ১২ সেপ্টেম্বর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনের বিরুদ্ধে এই মামলায় অভিযোগ আমলে নেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনাল। এরপর ২০১৪ সালের ৮ জানুয়ারি শুরু হয় এই মামলার বিচার কাজ। কিন্তু উচ্চ আদালতে আসামিদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে তিন বছরের জন্য স্থগিত থাকে বিচার কাজ। পরে ২০১৭ সাল থেকে শুরু হয় এই মামলার শুনানি।

তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি (আইসিটি) আইনের ৫৭ ধারার এই মামলায় গত ১৪ সেপ্টেম্বর মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিনকে দুই বছরের কারাদ- দেন ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক এ এম জুলফিকার হায়াতের আদালত। সেই সঙ্গে আসামিদের ১০ হাজার টাকা করে অর্থদণ্ড দেওয়া হয়। এই রায় ঘোষণার পর আদিলুর রহমান খান ও এ এস এম নাসির উদ্দিনকে কারাগারে পাঠানো হয়।

পরে গত ২৫ সেপ্টেম্বর তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের মামলায় দুই বছরের কারাদণ্ডাদেশের বিরুদ্ধে করা আপিল আবেদন করে জামিন চান মানবাধিকার সংগঠন ‘অধিকার’-এর সম্পাদক আদিলুর রহমান খান ও পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান।

শেয়ার করুন