২৭ এপ্রিল ২০১২, শনিবার, ১০:৩৭:২৮ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬ থাইল্যান্ডের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর আহ্বান ‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয়


কী বলবেন ইইউয়ের প্রতিনিধিদল
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ১৩-০৭-২০২২
কী বলবেন ইইউয়ের প্রতিনিধিদল


বাংলাদেশে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচন,মানবাধিকার, গণতন্ত্র,বাণিজ্যসহ বিভিন্ন ইস্যুতে পশ্চিমাদের আগ্রহ ক্রমশ বাড়ছে। বিশেষ করে উন্নয়নসহযোগী বা দাতা দেশসমূহের এমন তৎপরতাকে কেউ কেউ ইতিবাচক নিলেও কেউ এটাকে একটু বেশি বাড়াবাড়ি মনে করছেন। যেহেতু বিভিন্ন ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রায় ১৬ কোটি মানুষের পাশে দাঁড়ায় এসকল দেশ। ফলে তাদের কিছুটা ন্যায্য চাওয়া অমূলক নয়। তবে সত্যিকারের গণতন্ত্রমনা মানুষ এটাতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন না। কারণ বাংলাদেশ নিজ থেকেও নিজেদের অভ্যন্তরীণ ইস্যুতে উন্নয়নসহযোগীদের কারো কারো সাহায্য সহযোগিত চেয়ে আসছেন।     

এমনই কিছু ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশ সফরে আসছেন ৬ সদস্যের একটি ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সংসদের ৬ সদস্য। আগামী ১৭ জুলাই বাংলাদেশে আসবেন তারা এবং ২০ জুলাই পর্যন্ত অবস্থান করে বিভিন্ন পর্যায়ে আলোচনা করবেন তারা। তাদের ওই সফরের মূল বিষয় বাণিজ্য ইস্যু হলেও ওই আলোচনাগুলো করবেন তারা গণতন্ত্র,মানবাধিকার ও সুশাসনের মতো ইস্যুগুলোতে। এটা নিশ্চিত করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী এম শাহরিয়ার আলম। এ ব্যাপারে তিনি সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, ইইউ, যুক্তরাষ্ট্র বা পশ্চিমা বিশ্বের কোনো দেশের নাম আসলেই এটাকে মানবাধিকারের দিকে ঠেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়।

 কিন্তু আমাদের সম্পর্কের ব্যাপ্তি অনেক ব্যাপক। শাহরিয়ার আলম বলেন, ইইউয়ের এ সফরটি একটি বাণিজ্যবিষয়ক সফর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক উন্নতি, নির্বাচন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে। মূলত এটি একটি বাণিজ্য প্রতিনিধিদল। যারা ব্যক্তিমালিকানাধীন কারখানাগুলো সফর করবেন। বাংলাদেশের বর্তমান উন্নয়ন দেখবেন। গত ৫ জুলাই পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে গিয়েছিলেন ঢাকার ইইউ রাষ্ট্রদূত চার্লস হোয়াইটলি। ইইউয়ের ৬ সংসদ সদস্যদের এ সফর নিয়ে আলোচনা করেছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলমের সঙ্গে।

ওই বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ইইউ রাষ্ট্রদূত বলেন, আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কমিটি বাংলাদেশ আসছে। বাংলাদেশ ও ইইউয়ের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক বাড়ানোর বিষয়ে আগ্রহী। বিভিন্ন মন্ত্রী ও প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে বৈঠক করবে এ প্রতিনিধিদল। বর্তমানে ইইউ সংসদে জিএসপি বিষয়টি আলোচনার টেবিলে রয়েছে বলেও জানান তিনি। জানা গেছে, এ ধরনের সফর আগে হতো। কিন্তু করোনা পরিস্থিতির কারণে দীর্ঘদিন বন্ধ ছিল। পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে ২০১৪ ও ২০১৮-এর নির্বাচনসহ আগামী নির্বাচন নিয়ে আলোচনা হয়েছে ইইউ রাষ্ট্রদূতের। 

এখানে উল্লেখযোগ্য যে বিষয়টি সেটা জিএসপি সুবিধা। যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন ইস্যুতে অসন্তুষ্ট হয়ে জিএসপি স্থগিত করেছে। বাংলাদেশ এ ব্যাপারে অনেক আলোচনা করেও ওই স্থগিতকরণ রহিত করতে ব্যর্থ হয়েছে। একইভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নও বিভিন্ন শর্তাদির কথা শোনাচ্ছে। বিশেষ করে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা,মানবাধিকারের ইস্যুগুলো নিয়ে সুস্পষ্ট বক্তব্য না প্রদান করা হলে তারাও তাদের জিএসপি সুবিধা স্থগিত করতে পারে বলে ইতিপূর্বে জানিয়েছে। এটাই বর্তমানে বাংলাদেশের জন্য চ্যালেঞ্জিং বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মার্কিনিদের সঙ্গে ইইউয়ের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। বলতে গেলে একই নীতিতে চলেন তারা। তাছাড়া বাংলাদেশের গার্মেন্টস শিল্পের বিশাল বড় একটা মার্কেট ইউরোপ। ফলে ইইউ যেটা চাচ্ছে সেটা প্রতিষ্ঠা না পেলে যুক্তরাষ্ট্রের মতো জিএসপি সুবিধাপ্রাপ্তি নিয়ে ঝামেলার কারণ হয়ে যেতে পারে। ফলে এ প্রতিনিধিদলের সফরটা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ মনে করা হচ্ছে। কারণ এরা কী আলোচনা করবেন, কাদের কাদের সঙ্গে। এখান থেকে ফিরে কী রিপোর্ট দেবেন। তার গুরুত্ব কতখানি হবে এসব ভাববার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

তবে ৫ জুলাইয়ের এ ঘোষণার পর আরেকটা বিষয় অনেকের দৃষ্টি কেড়েছে। সেটা হলো বাংলাদেশে নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিংয়ের ১ মিনিটের একটি ভিডিওবার্তা। ৬ জুলাই প্রকাশিত ওই বার্তায় তিনি দাবি করেন, শিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক শ্রম সম্পর্কিত যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। এটা উল্লেখ করে ঢাকায় নিযুক্ত চীনের রাষ্ট্রদূত লি জিমিং বলেছেন, এ বিষয়ে বাংলাদেশ সতর্ক না হলে তা দেশটির গার্মেন্টস শিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

সেখানে লি জিমিং বলেন, এটা আমার নজরে এসেছে যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃক আনিত তথাকথিত ‘শিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক শ্রম’সংক্রান্ত অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে, বাংলাদেশের একটি নির্দিষ্ট তৈরি পোশাক (আরএমজি) শিল্প সংগঠন সম্প্রতি তাদের সদস্যদের চীন থেকে তুলা আমদানির ক্ষেত্রে ঝুঁকি সম্পর্কে সতর্ক করেছে। আমি আরো লক্ষ করেছি যে, সংগঠনটির সঙ্গে কিছু মার্কিন সংস্থার অধিভুক্ত ‘ইন্দো-প্যাসিফিক সুযোগ প্রকল্প’-এর দুই প্রতিনিধির একটি বৈঠকের পরে ওই সতর্ক বার্তাটি দেয়া হয়েছে।

এই তথাকথিত ‘শিনজিয়াংয়ে জোরপূর্বক শ্রম’সম্পর্কিত অভিযোগটি সম্পূর্ণ মিথ্যা। কিন্তু তারা কেন মিথ্যা বলছে? এটি এখন ইন্টারনেটে প্রচারিত হয়েছে যে, পূর্বে গুয়াংজুতে দায়িত্বরত দুই মার্কিন কূটনীতিক ২০২১ সালে কথিতভাবে স্বীকারোক্তি দিয়েছেন, যা আমি উদ্ধৃত করছি, ‘শিনজিয়াংয়ে কোনো সমস্যা নেই, কিন্তু শিনজিয়াংকে আন্তর্জাতিক শিল্পব্যবস্থা থেকে বিচ্ছিন্ন করার এবং উইঘুরদের অসন্তুষ্ট ও অশান্ত করে তুলে চীনা সরকারের বিরুদ্ধে যুদ্ধে লেলিয়ে দেয়ার একটি কার্যকর উপায় হলো তাদের মানবাধিকার নীতিমালাকে আক্রমণ করা’, বলেন তিনি।

সবশেষে , চীনা রাষ্ট্রদূত বলেন, এই প্রকাশটি ২০১৮ সালে একজন প্রাক্তন উচ্চপদস্থ মার্কিন কর্মকর্তার দেয়া একটি বিবৃতির অনুকরণ। স্পষ্টতই, ওয়াশিংটন শিনজিয়াং সম্পর্কে এই মিথ্যাটি ব্যবহার করেছে চীনকে কলঙ্কিত ও অপমান করতে, যার চূড়ান্ত লক্ষ্য চীনকে নিয়ন্ত্রণ করা। যে কারণে আমি আজ বিষয়টি এখানে তুলে ধরলাম তাহলো, বাংলাদেশি জনগণ সতর্ক না হলে, এই মিথ্যা বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে। আপনিও কি তাই মনে করেন না?

চীনা রাষ্ট্রদূতের এমন বক্তব্যের পর ইইউয়ের ৬ সংসদ সদস্যদের সফরের গুরুত্বটা একটু বেশিই মনে হচ্ছে। তবু তারা কোন কোন বিষয়ে আলোচনা করবেন, সেটা দেখার পরই মূলত এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানা যাবে। 

পররাষ্ট্রপ্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলমের বক্তব্যে এটা ইইউয়ের রুটিন সফর। তিনি বলেছেন, ইইউয়ের এ সফরটি একটি বাণিজ্যবিষয়ক সফর। বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নতি, সামাজিক উন্নতি, নির্বাচন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালীকরণের মতো বিষয়গুলো আলোচনায় আসতে পারে। বাণিজ্যের বাইরে যেয়ে অন্য ইস্যুগুলো নিয়েও তাদের কথা বলাটাই মূলত গুরুত্বের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। 

উল্লেখ্য, ক’দিন আগেও উন্নয়নসহযোগীর প্রায় ১৪ দেশের বাংলাদেশে নিযুক্ত রাষ্ট্রদূতরা নির্বাচন কমিশনার হাবিবুল আউয়াল কমিশনের সঙ্গে দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে কথা বলেন, নির্বাচন কমিশনের অফিসে যেয়ে। একইসঙ্গে আলাদাভাবে যুক্তরাষ্ট্র, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূতরাও দেখা করছেন নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে। আলাদাভাবে কথা বলতে যান তারা পররাষ্ট্র দফতরেও। এমনি মুহূর্তেই ইইউ, সাংসদদের এমন সফর হওয়ায় বিষয়টা আলোচিত হচ্ছে।


শেয়ার করুন