৩০ এপ্রিল ২০১২, মঙ্গলবার, ০৩:৪৭:৪৩ পূর্বাহ্ন
শিরোনাম :
‘বিশেষ চাহিদা সম্পন্নদের প্রতিভা বিকাশে কোন ধরনের প্রতিবন্ধকতা রাখা যাবে না’ সরকার ও বেসরকারি উদ্যোগে দরিদ্রমুক্ত দেশ গড়ে উঠবে - আসাদুজ্জামান খান কামাল ৭০ শতাংশ মৃত্যু অসংক্রামক রোগে, বাজেটে বরাদ্দ বৃদ্ধির দাবি ‘বিদেশে দেশবিরোধী অপপ্রচারকারীদের বিরুদ্ধে স্থানীয় আইনে ব্যবস্থা নিন’ ভূল স্বীকার করে সরে দাড়ানোয় একজনের বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার বাফেলোতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে দুই বাংলাদেশী নিহত ‘শেরে বাংলা আপাদমস্তক একজন পারফেক্ট বাঙালি ছিলেন’ বিএনপির বহিস্কৃতদের জন্য সুখবর! মে দিবসে নয়পল্টনে বিএনপির শ্রমিক সমাবেশ উপজেলা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জের, বিএনপির বহিস্কার ৭৬


ক্ষমতাসীনদের উস্কানিতে পা দেবে না বিএনপি
ডেটলাইন ২৮- কঠোর অহিংস আন্দোলনই থাকবে বিএনপি
সৈয়দ মাহবুব মোর্শেদ
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৫-১০-২০২৩
ডেটলাইন ২৮- কঠোর অহিংস আন্দোলনই থাকবে বিএনপি


দিনটিা ছিল চলতি বছরের জুলাই মাসের ১০ তারিখ। বৈঠক চলছে বিএনপি’র গুলশান কার্যালয়ে। ঢাকার সমাবেশ থেকে সরকার পতনের একদফা আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিতে যাচ্ছিল বিএনপি। এতে একদফা দাবির ভিত্তিতে ঢাকাকেন্দ্রিক সিরিজ কর্মসূচির কথা ভাবা হচ্ছিল দলটির পক্ষ থেকে। ঢাকা জুড়ে মানববন্ধন বা মানবপ্রাচীর অথবা বিক্ষোভের মধ্য দিয়ে একদফার আন্দোলনের সূচনার বিষয়ে আলোচনাও হচ্ছিল।

ঠিক এ মাসেই ঢাকায় চলছিল ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) প্রতিনিধিদলের ঢাকা সফর। এ সময়ে মধ্যে যুগপৎ আন্দোলন শুরুর কথাবার্তাও চলছিল বিএনপির সাথে আন্দোলনে শরিকদের। বিএনপিসহ যুগপতের শরিকরা যার যার প্লাাটফর্ম থেকে একদফার আন্দোলন ও নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করার সিদ্ধান্ত হয়। মতামত উঠে আসে বিএনপি একদফা কর্মসূচি দেয়ার দিন নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে এ যাবৎকালের সর্ববৃহৎ সমাবেশ করে ঘোষণা দেবে। আর গণতন্ত্র মঞ্চ ওইদিন জাতীয় প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করে ঘোষণা দেবে।


রাজধানীর গুলশানে ১০ জুলাই রাতে চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত গণতন্ত্র মঞ্চের সঙ্গে বিএনপির বৈঠকে এ ব্যাপারে প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়। রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল বৈঠকে কর্মসূচি নির্ধারণসহ সার্বিক ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হওয়ার কথা ছিল। গণতন্ত্র মঞ্চ ছাড়াও এলডিপি ও গণঅধিকার পরিষদের রেজা কিবরিয়া অংশের সঙ্গেও বৈঠক করেছে বিএনপি। এর আগের সপ্তাহে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট, ১২-দলীয় জোট এবং গণফোরাম ও পিপলস পার্টির সঙ্গে বৈঠক করেছে বিএনপি। সেখানে জোটগুলোর কাছ থেকে যেমন কর্মসূচির প্রস্তাবনা নিয়েছে, তেমনি বিএনপি কী ধরনের কর্মসূচির কথা ভাবছে-তাও জানানো হয়েছে। বিএনপি সমাবেশ ও ঘেরাওয়ের মতো কর্মসূচির কথা ভাবছে বলে শরিকদের জানায়। তবে এসব বৈঠক থেকে ঢাকামুখী রোডমার্চ ও লংমার্চের মতো নিয়মতান্ত্রিক শান্তিপূর্ণ কর্মসূচির পাশাপাশি হরতাল, অবরোধ ও অসহযোগ আন্দোলনের ব্যাপারেও মত দেন জোট নেতারা। তবে সে-ই বৈঠকে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর হরতালের প্রস্তাব নাকচ করে দিয়ে বলেছেন, এ ধরনের কর্মসূচির নেতিবাচক দিক বেশি। শুরুতে এই কর্মসূচি দেওয়া যাবে না। সরকারের বিরুদ্ধে একদফার আন্দোলনে যাওয়ার আগে এমনটাই ছিল বিএনপি’র রাজনৈতিক কৌশল। অর্থ্যাৎ বার্তা পরিস্কার- বিএনপি তার সাথে আন্দোলনে অংশ নেয়া সমমনাদের নিয়ে সরকারের বিরুদ্ধে যে কোনো ধরনের আন্দোলন করা হবে তা হবে পুরোপুরি ‘অহিংস’। আর সে আন্দোলন করতে গিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যতোই প্রতিরোধ প্রতিঘাত আসুক না কেনো বিএনপি কোনোভাবে এসবের জবাব দিবে না সহিংস বা জ্বালাও-পোড়াও নীতি অবলম্বন না করে। অর্থাৎ বিএনপি বর্তমান ক্ষমতাসীন  আওয়ামী লীগ সরকারের বিরুদ্ধে কোনো আন্দোলনেই সহিংস হবে না। জানা গেছে, আগামী ২৮ অক্টোবর রাজধানীতে বিএনপি পক্ষ থেকে মহাসমাবেশটিকে ডাকা হয়েছে সে কর্মসূচিকে অহিংসভাবে পালন করতেই সর্বাত্মক চেষ্টা করা হবে । বলা চলে একটি কঠোর শান্তি সমাবেশ। এমন অহিংস বার্তা দিয়ে দিয়েছে বিএনপি’র সাথে আন্দোলনরত সমমনাদের। এসব তথ্য জানা গেছে, বিএনপি ও দলাটির সাথে যুগপৎ আন্দোলনে অংশ নেয়া অন্যসব রাজনৈতিক দলের নেতাদের সাথে একান্তে কথা বলে।

যে কারণে বিএনপি অহিংস আন্দোলনে সরকার পতনের এক দফা দাবি আদায়ে ১৮ সেপ্টেম্বর কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় বিএনপি’র পক্ষ থেকে। এর আগে বিএনপি সারাদেশে সমাবেশসহ সব শেষে খোদ রাজধানীতেই মহাসমাবেশ ডেকেছে। বিএনপি’র নেতাদের অভিযোগ, এসব সমাবেশকে বিশেষ করে যখনই ঢাকায় বড়ো ধরনের কর্মসূচি নেয়া হয় তখনই  সরকার দেশে বিদেশে নানভাবে রং চং লাগিয়ে এই দলের (বিএনপি) বিরুদ্ধে প্রপাগান্ডায় নামে। প্রচার করা হয় যে বিএনপি জ্বালাও পোড়াও নীতি নিয়েছে সরকার হটাতে। আবার বলা হচ্ছে বিএনপি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধমে ক্ষমতা বদল করতে চায় না। চায় অগণতান্ত্রিক সরকাকে ক্ষমতায় বসাতে। তাছাড়া পশ্চিমারা অতীত বিশ্লেষণ করে দেখেছে যেভাবেই হোক না কেনো ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনে সহিংসতা হয়েছে। আর এই সহিংসতার দায়ভার পড়েছে বিএনপি’র ঘাড়ে। যদিও বিএনপি এখন পর্যন্ত ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনের পরের সহিংস ঘটনার ব্যাপারে তাদের দায়বদ্ধতা এড়াতে সক্ষম হয়নি। আর একারণে এবারে বিএনপি যেমন রাজনৈতিক সংহিসতা চাচ্ছে না তেমনি দেশে- বিদেশে বাংলাদেশের স্বাধীনতায় বিরোধীকারী সাম্প্রদায়িক মৌলবাদী দল হিসাবে পরিচিত জামায়াতে ইসলামীর সাথে কোনো ধরনের সর্ম্পক রাখতে নারাজ। বিএনপি এখন মনে করে ২০১৪ বা ২০১৮ সালের নির্বাচনে জামায়াতের সম্পৃক্ততায় বিএনপির আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনে সম্পৃক্ত ছিল। অন্যদিকে জামায়াত তাদের নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়ন করতে বিএনপির ঘাড়ে চেপে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে সহিংস আন্দোলনে সম্পৃক্ততা সবধরনের কলকাঠি নেড়েছে। বিএনপি এখন এমন পরিস্থিতিতে আর পড়তে চায় না। অন্যদিকে পশ্চিমারাও যে অহিংস আন্দোলন চায় তা স্পস্ট করে বেশ কয়েকবারই বিভিন্ন গণমাধ্যমে বলেছেন বিএনপির সর্বোচ্চ নীতিনির্ধারণী ‘স্থায়ী কমিটি’র সদস্য ও বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। 

২৮ অক্টোবর কি সাপ-লুডু খেলবে বিএনপি?

প্রশ্ন হচ্ছে বিএনপি’র ভাষায় ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকার মামলা-মোকাদ্দমা, নিপীড়ন-নির্যাতন, গুম-খুন করে তাদের দলটিকে কোনাঠাসা ও ভয়ের মধ্যে রেখেছে দীর্ঘ পনেরটি বছর। এই অবস্থায় বিএনপির কি হবে ২৮ অক্টোবর? সাপ-লুডু খেলবে বিএনপি? প্রশ্ন দেখা দিয়েছে রাজনৈতিক মাঠে বিএনপি’র ফুল শার্ট-প্যান্ট পরে মার্চপাস্ট করে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে বেড়াবে? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা লাঠি-সোটা নিয়ে নামলে বিএনপি কি মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে থাকবে? এব্যাপারে রাজপথে দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রামে থাকা বিএনপি’র একজন প্রভাবশালী নেতা দলটির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু দেশ পত্রিকাতেই সম্প্রতি প্রকাশিত এক সাক্ষাৎকাকে বলেছেন, ’এ সরকার তো পতনের চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। মন্ত্রীদের কথাবার্তা, প্রধানমন্ত্রীর ভাষণ এবং সংবাদ সম্মেলন। আপনি নিশ্চয়ই বুঝেবেন বা লক্ষ্য করেছেন এ সরকার কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে? তাদের অবস্থা তো এখন কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলে মনে হচ্ছে না। এটা-তো অহিংস আন্দোলনেরই ফসল। এই সাক্ষাৎকারে শামসুজ্জামান দুদু  আরো বলেন, আমাদের আন্দোলনের ধরনটা অনেক ভিন্ন। এমন আন্দোলনের মাধ্যমেই ভারতবর্ষে স্বাধীনতা এসেছিল। তিনি বলেন, মহাত্মা গান্ধিজির অহিংস আন্দোলন। সে আন্দোলনের মাধ্যমে ভারতবর্ষে স্বাধীনতা এসেছিল। আর বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছিল শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের সশ্রস্ত্র অংশগ্রহণের মাধ্যমে। আমাদের এখন আন্দোলনের ধারাটা হচ্ছে অহিংস। ঠিক এমনটাই বলেছেন, গত ২৩ অক্টোবর সোমবার বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। সরকার পদত্যাগের একদফার সমাধান শান্তিপূর্ণ আন্দোলনেই আসবে বলে আশা করছেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সব রাজনৈতিক দলগুলো এক সঙ্গে হয়েছি। সরকার পদত্যাগের এক দফার মধ্যে এসেছি। দেশের মানুষ সবসময় প্রমাণ করেছে, ঐক্যবদ্ধ চেষ্টার মধ্য দিয়ে শান্তিপূর্ণ আন্দোলন জয়ী হয়েছে। এবারও বিশ্বাস করি, দেশের জনগণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলনের মধ্য দিয়ে গণতন্ত্রকে পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হবে। আরেকজন বিএনপি’র নেতা দেশ প্রতিনিধির সাথে একান্তে আলাপে বলেন, তাদের (বিএনপি’র) মতে, আওয়ামী লীগের একটি বড়ো অংশই এখন নানান ধরনের আতঙ্কে আছেন। আছেন নিজেরা নিজেদের মধ্যে নানান কোন্দলে। ঐক্যবদ্ধ হয়ে মাঠে বিএনপি’কে প্রশাসনের সাহায্য ছাড়া মোকাবেলা করতে সাহসই হবে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক চাপে আর নানান ধরনের গুঞ্জনে আওয়ামী লীগের হতাশা বিরাজ করছে। তাই তারা মনে করে আন্তর্জাতিক চাপে আওয়ামী লীগ কোনোভাবে ২০২৩ কিংবা ২০২৪ সালে এতটা সহিংস হয়ে উঠতে সাহসী হবে না। তাই বিএনপি’র হাইকমান্ড মনে করে শান্তিপূর্ণ মহাসমাবেশ করে ব্যাপক শোডাউনই টার্গেট তাদের। লাখ লাখ জনতাকে ঢাকায় এনে বিএনপি তার জনসমর্থন আর দলের সাংগঠনিক দক্ষতা দেশে বিদেশে জানান দিতে চায়।


মোটকথা, আগামী ২৮ অক্টোবরে রাজধানীতে একটি মহাসমাবেশের মাধ্যম বাংলাদেশে গণতন্ত্র উদ্ধারের সংগ্রামকে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে তুলে ধরতে ব্যাপক শোডাউন মূল লক্ষ্য বিএনপি’র। এমন লক্ষ্য নিয়েই বিএনপি এগুচ্ছে। তবে দলটির (বিএনপি’র) এমন শান্তিপূর্ণ অহিংস কর্মসূচি ব্যর্থ করে দিতে ক্ষমতাসীনরা কি কূটকৌশল নিতে যাচ্ছে বা নিতে পারে এবং সে ধরনের মোকাবেলা করাই বিএনপি’র এখন প্রধান চ্যালেঞ্জ- এমনটাই মনে করে রাজনৈতিক পর্যবেক্ষক মহল।

শেয়ার করুন