২৮ এপ্রিল ২০১২, রবিবার, ০১:০২:৫৯ অপরাহ্ন
শিরোনাম :


দেশের ৪৪ জন নাগরিকের বিবৃতি
এমন সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন কাজ মেনে নেয়া যায় না
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
এমন সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন কাজ মেনে নেয়া যায় না কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার


দেশের ৪৪ জন নাগরিক কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের সত্ত্ব দখলীয় ভূমিতে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অমান্য করে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃক পাবলিক টয়লেট নির্মাণ কাজের ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে তার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তারা একই সাথে বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে ঘটনার দ্রুত ও সুষ্ঠু তদন্ত করে বৌদ্ধ বিহারের জমির পরিবর্তে অন্য স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থানান্তর করার জোর দাবি জানিয়ে নিম্নোক্ত বিবৃতি প্রদান দিয়েছেন। তারা বলেন, এমন অসাংবিধানিক নিপীড়নমূলক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন কাজ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। 

বিবৃতিতে তারা বলেছেন, আমরা গভীর ক্ষোভ ও উদ্বেগের সাথে জেনেছি যে, কুয়াকাটার কেরানীপাড়া সংলগ্ন ঐতিহ্যবাহী প্রাচীন শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার- এর স্বত্ত্ব দখলীয় ২.৪৪ একর ভূমিতে যা তৎকালীন খেপুপাড়া কোলোনাইজেশন অফিসার বিগত ১৭/১২/১৯৪৬ ইং তারিখে সম্পাদিত ও ০৭/১১/২০২৪ তারিখে রেজিষ্ট্রিকৃত ০৯ নং চুক্তিপত্র দলিলের মাধ্যমে বৌদ্ধ বিহার নির্মাণের জন্য কেরানীপাড়ার মগগন- এর পক্ষে পাড়া মাদবর নোলাউ মগ বরাবরে এ জমির দখল বুঝিয়ে দেয় এবং এ দলিল মূলে শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ এর মালিকানা লাভ করে। 

কিন্তু অত্যন্ত আশ্চর্যের বিষয় বৌদ্ধ বিহারের দখলীয় রাখাইন মার্কেট সংলগ্ন ভূমিতে কুয়াকাটা পৌরসভা কর্তৃপক্ষ পাবলিক টয়লেট নির্মাণের সেই জায়গাটিকেই বেছে নেয়। এর আগে এখানে কোন স্থাপনা নির্মান না করার জন্য বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষ কর্তৃক উচ্চ আদালতে রীট আবেদন করলে উচ্চ আদালত এখানে স্থগিতাদেশ দেন। এই আদেশের কপি প্রদর্শন করে তারা আপত্তি জানালে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কাজ বন্ধ করে। কিন্তু ২৪/০২/২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ৮টার দিকে দ্রুত গতিতে সবার অগোচরে অনেক শ্রমিক দ্বারা পাবলিক টয়লেটের ছাদ ঢালাই এর কাজ শেষ করে ফেলে। কুয়াকাটা শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধ বিহারের দেয়াল ভেঙ্গে পাবলিক টয়লেটের কাজ তাদের হতভম্ব করে ফেলে। এই ব্যাপারে পৌরসভা কর্তৃপক্ষ কখনই বৌদ্ধ বিহার কর্তৃপক্ষের সাথে কোন আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি। যদিও বাংলাদেশ সংবিধানের মৌলিক অধিকার ভাগে ৪১(১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রত্যেক নাগরিকের যে কোন ধর্ম অবলম্বন, পালন বা প্রচারের অধিকার রহিয়াছে”; এবং ৪১(২) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে- “প্রত্যেক ধর্মীয় সম্প্রদায় ও উপসম্প্রদায়ের নিজস্ব ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের স্থাপন, রক্ষণ ও ব্যবস্থাপনার অধিকার রহিয়াছে”। এমন অসাংবিধানিক নিপীড়নমূলক ও সাম্প্রদায়িক মনোভাব সম্পন্ন কাজ কোনভাবেই মেনে নেয়া যায় না। এলাকার উন্নয়ন কাজ হবে, তা খুবই ভাল কথা, তাই বলে বৌদ্ধ বিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন কখনই সমর্থনযোগ্য নয়। এই কাজটি ধর্মীয় উস্কানী বা সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠীর ধর্মের অবমাননার সামিল ব্যতিত অন্য কিছু নয়। কুয়াকাটা পৌরসভা এলাকায় তাদের অনেক জমি থাকা সত্ত্বেও বৌদ্ধ বিহারের মতো পবিত্র স্থানে পাবলিক টয়লেট স্থাপন উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং সংখ্যালঘু রাখাইন সম্প্রদায়কে তাদের জায়গা থেকে উচ্ছেদের চেষ্টারই সুস্পষ্ট নামান্তর। আমরা এ ঘটনার জন্য তীব্র ক্ষোভ ও নিন্দা জানাচ্ছি। পাশাপাশি আমরা মনে করি এ ঘটনার দায় স্থানীয় প্রশাসন কখনও এড়াতে পাারে না। আমরা জানতে পেরেছি যে, দেরিতে হলেও পটুয়াখালি জেলা প্রশাসক ইতোমধ্যে এ কাজ বন্ধের নির্দেশনা দিয়েছেন এবং পাশাপাশি কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে নির্মান কাজ বন্ধে ব্যবস্থা নিতে বলেছেন। আমরা তাদের এ সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ জানাচ্ছি। পাশাপাশি কেন বৌদ্ধ বিহারের দেয়াল ভেঙ্গে এবং উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ অমান্য করে পাবলিক টয়লেট স্থাপন করার চেষ্টা করা হলো তার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত করে এ ঘটনার জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে কঠিন শাস্তির দাবি জানাচ্ছি। বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন মানবাধিকার কর্মী ও চেয়ারপার্সন, মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশন সুলতানা কামাল, নিজেরা করি ও চেয়ারপার্সন, এএলআরডি, সমন্বয়কারী খুশী কবির, আইন ও সালিশ কেন্দ্র ও আইনজীবী জেড আই খান পান্না, সভাপতি, তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা রাশেদা কে. চৌধুরী, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট রাণা দাশগুপ্ত, বেলার প্রধান নির্বাহী অ্যাডভোকেট সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান, সেন্ট্রাল উইম্যান ইউনিভার্সিটির ভাইস চ্যান্সেলর ড. পারভীন হাসান, নারীপক্ষের সদস্য শিরিন হক, টিআইব’র নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান, আইনজীবী, ১০. ড. ফস্টিনা পেরেরা, অ্যাড. সালমা আলী প্রমুখ।

শেয়ার করুন