২৯ এপ্রিল ২০১২, সোমবার, ০২:২৩:১০ অপরাহ্ন


দাবি উঠলো ‘শহিদ সেনা দিবস’ ঘোষণার
বিশেষ প্রতিনিধি
  • আপডেট করা হয়েছে : ২৮-০২-২০২৪
দাবি উঠলো ‘শহিদ সেনা দিবস’ ঘোষণার নিহতদের কয়েকজনের লাশ


পিলখানা হত্যাকাণ্ড দেশি-বিদেশি ষড়যন্ত্রে হয়েছিল এমন অভিযোগ করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহিদ সেনা দিবস’ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি-জাগপার সহ-সভাপতি ও ১২ দলীয় জোটের অন্যতম শীর্ষনেতা রাশেদ প্রধান। তিনি বলেন, বাংলার মাটিতে একদিন পিলখানা হত্যায় জড়িতদের বিচার হবে। 

গত রোববার (২৫ ফেব্রুয়ারি) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এক মানববন্ধনে দাবি জানান রাশেদ প্রধান। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের দাবি এবং পিলখানা হত্যাকা-ের প্রতিবাদে জাগপার উদ্যোগে এই মানববন্ধন হয়। 

এ সময় রাশেদ প্রধান বলেন, দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা চরম বিপর্যয়ে। ডলারের সংকটে দেশে আমদানি অর্ধেকে নেমে এসেছে। লুটপাট এবং অর্থপাচারের কারণে ব্যাংকগুলোতে চরম রিজার্ভ সংকট দেখা দিয়েছে। পর্যাপ্ত গ্যাস-বিদ্যুৎ সংকটের কারণে শিল্পকারখানা বন্ধের পথে! দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণে সাধারণ মানুষের জীবন ঝুঁকি মৃত্যু শয্যায়। সুতরাং এই সরকার বেশি দিন ক্ষমতায় থাকলে বাংলাদেশ পঙ্গু রাষ্ট্রে পরিণত হতে পারে। দেশরক্ষার প্রয়োজনে এবং সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত দেশবাসীকে গণতান্ত্রিক আন্দোলনে শরিক হওয়ার আহ্বান জানান ১২ দলীয় জোটের অন্যতম এই শীর্ষনেতা। 

২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির ওই দিনে সকাল ৯টা ২৭ মিনিটের দিকে বিডিআরের বার্ষিক দরবার চলাকালে হলে ঢুকে পড়েন একদল বিদ্রোহী সৈনিক। তাদের একজন তৎকালীন মহাপরিচালকের (শাকিল আহমেদ) বুকে বন্দুক তাক করেন। সূচনা হয় ইতিহাসের সেই নৃশংসতম ঘটনার। তাদের গুলিতে একে একে লুটিয়ে পড়তে থাকেন সেনা কর্মকর্তারা। ঘটনার ৩৬ ঘণ্টা পর এই বিদ্রোহের অবসান হয়। পিলখানা পরিণত হয় এক রক্তাক্ত প্রান্তরে। পরে পিলখানার ভেতরে আবিষ্কৃত হয় গণকবর। সেখান থেকে উদ্ধার করা হয় সেনা কর্মকর্তাদের লাশ। ৩৬ ঘণ্টার এই হত্যাযজ্ঞে ৫৭ জন সেনা কর্মকর্তা, এক সৈনিক, দুই সেনা কর্মকর্তার স্ত্রী, ৯ বিজিবি সদস্য ও পাঁচ বেসামরিক ব্যক্তি নিহত হন। 

বহুল আলোচিত এ ঘটনায় দায়ের করা মামলায় (পিলখানা হত্যা মামলা) ১৩৯ জনের ফাঁসি, ১৮৫ জনকে যাবজ্জীবন এবং ২০০ জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দিয়েছেন হাইকোর্ট। ১৫ বছর অতিবাহিত হলেও চূড়ান্ত নিষ্পত্তি হয়নি কোনো মামলার। দুটি মামলার মধ্যে হত্যা মামলার বিচার আপিল বিভাগে শুনানির জন্য অপেক্ষমাণ। বিস্ফোরকদ্রব্য আইনের অন্য মামলাটি এখনো বিচারিক (নিম্ন) আদালতে সাক্ষ্যগ্রহণের গণ্ডি পার হয়নি। হত্যা মামলার আপিল শুনানি কবে শুরু হবে, তা-ও কেউ নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না। 

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ 

বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ২৫ ফেব্রুয়ারি (বিডিআর বিদ্রোহ) ঘটনার পেছনে যারা কুশীলব, কিছুটা তো আমরা জানি কারা ছিল। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার সকালে বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানার শহিদের কবরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে পুষ্পস্তবক অর্পণ শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। 

ফারুক খান বলেন, ‘আমরা জানি যে, সেদিনের ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বেগম জিয়ার বাসা থেকে কালো রঙের একটি গাড়ি কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়া বেরিয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি জানতেন এমন ঘটনা ঘটবে।’ পিলখানার ঘটনার পেছনে যারা আছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে বলেও জানান তিনি। 

সাংবাদিকদের তরফ থেকে প্রশ্ন ছিল-‘বিশ্লেষকরা বলছে, ঘটনায় জড়িত ৮০০ জনকে খুঁজে পাওয়া গেছে, কিন্তু মাস্টারমাইন্ডরা ধরাছোঁয়ার বাইরে, আপনি সাবেক সেনা কর্মকর্তা হিসেবে কী মনে করেন? জনৈক সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে বেসামরিক বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিষয়ে সব মাস্টারমাইন্ডের খোঁজখবর আমরা করছি। তাদের খুঁজে বের করতে হবে। ২৫ ফেব্রুয়ারির ঘটনার পেছনে যারা কুশীলব, কিছুটা তো আমরা জানি কারা ছিল। আমরা জানি যে, সেদিনের ঘটনার কিছুক্ষণ আগে বেগম জিয়ার বাসা থেকে কালো রঙের একটি গাড়ি কোনো ধরনের প্রটোকল ছাড়া বেরিয়ে গেছে। এতে প্রমাণিত হয় যে, তিনি জানতেন এমন ঘটনা ঘটবে।’ 

মুহাম্মদ ফারুক খান বলেন, ‘বিডিআর বিদ্রোহের ঘটনায় আমাদের সশস্ত্র বাহিনীর চৌকশ অফিসারদের নির্মমভাবে হত্যা সশস্ত্র বাহিনীসহ আমাদের পুরো দেশবাসীর জন্য একটি দুঃখজনক মর্মান্তিক ঘটনা। এ ঘটনা বিচারের আওতাধীন রয়েছে। বিচারকার্যের যে নিয়ম, সেটা আমাদের অনুসরণ করতে হবে। আমরা যতদূর জেনেছি, এই বিচারকার্য এগিয়ে চলেছে, অনেকটা শেষ পর্যায়ে রয়েছে। নিহতের পরিবার এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে আমরা আশা করি দ্রুততম সময়ের মধ্যেই এই বিচার কার্যক্রম শেষ হবে।’ তিনি বলেন, ‘আমরা আশা করি, যারা এই নির্মম ঘটনার সঙ্গে জড়িত, যারা দোষী, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হবে। এ ধরনের ঘটনা যেন বাংলাদেশে আর কখনো ঘটতে না পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ঘটনার পেছনে যারা আছে, তাদের খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় আনা হবে।’ 

বিএনপি 

পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পেছনে কী ছিল, মানুষ সেই সত্যি জানতে চায় বলে জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রোববার রাজধানীর বনানীর সামরিক কবরস্থানে পিলখানা ট্র্যাজেডির ১৫ বছর উপলক্ষে বিএনপির পক্ষ থেকে শহিদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে তিনি এ কথা বলেন। 

মঈন খান বলেন, ‘আমি একটি কথাই বলি, বিচারকার্যে হস্তক্ষেপ করা যুক্তিযুক্ত নয়। আমাদের বিচারকেরা তাদের নীতিতে অবিচল থেকে ন্যায়বিচারের মাধ্যমে বিষয়টি অতি দ্রুত সুরাহা করবেন ১৫ বছর পরে সেই প্রত্যাশা করি।’ 

ড. আব্দুল মঈন খান বলেন, ‘১৫ বছরের আগে বিডিআরে যে শোকাবহ ঘটনা ঘটেছিল, সেই ক্ষত দিয়ে আজও বাংলাদেশের মানুষের বুকের রক্ত ঝরে পড়ছে। আমরা আজও জানি না এই ঘটনার পেছনের ইতিহাস কী। আমরা সেই শোক বয়ে নিয়ে বেড়াচ্ছি।’ তিনি বলেন, দ্বিতীয় মহাযুদ্ধেও এমন কোনো একটি স্থানে এমন ঘটনা ঘটেনি, যেখানে একসঙ্গে ৫৭ জন অফিসার প্রাণ দিয়েছেন। এই ঘটনা কীভাবে ঘটেছে, এই ঘটনার যবনিকার পেছনে কী ছিল, আজকে বাংলাদেশের মানুষ সেই সত্যি জানতে চায়। 

মামলার বিচারকার্য কেন বিলম্ব হচ্ছে তা উল্লেখ করে বিএনপির এই নেতা বলেন, ‘বাংলা ভাষায় একটি কথা আছে-‘বিচারের বাণী নীরবে নিভৃতে কাঁদে।’ আমরা শুনেছি, সেই বিচারকার্য এখনো ঝুলে আছে। কেন ঝুলে আছে? যাদের কারাবন্দি করে রাখা হয়েছে, তারা আজকে পর্যন্ত বিনাবিচারে কারাবাসে রয়েছে। একটি জাতির ইতিহাসে এমন দুঃখজনক ঘটনা কখনো ঘটেছে বলে আমাদের জানা নেই। মঈন খান আরো বলেন, ‘বাংলাদেশের প্রত্যেক নাগরিক যেন সুশাসন ও আইনের মাধ্যমে ন্যায়বিচার ফিরে পায়। অপরাধী শাস্তি পাবে, সে সম্পর্কে আমাদের কিছু বলার নেই।’

শেয়ার করুন