২৬ এপ্রিল ২০১২, শুক্রবার, ০৬:৩৫:৩৬ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
‘ব্রাজিল থেকে জীবন্ত গরু আনা সম্ভব, তবে প্রক্রিয়া জটিল’ খালেদা জিয়ার সঙ্গে মির্জা ফখরুলের ঘন্টাব্যাপী সাক্ষাৎ বিশ্বের প্রতি যুদ্ধকে ‘না’ বলার আহ্বান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ৭ জানুয়ারির সংসদ নির্বাচনে গণতান্ত্রিক ধারাবাহিকতা প্রতিষ্ঠা হয়েছে - হাবিবুল মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের প্রতিবেদন অনুমান ও অপ্রমাণিত অভিযোগ নির্ভর- পররাষ্ট্র মন্ত্রনালয় ইউরোপে ভারতীয় ৫২৭ পণ্যে ক্যান্সার সৃষ্টিকারি উপাদন শনাক্ত বাংলাদেশ ব্যাংকে সাংবাদিকদের প্রবেশে কড়াকড়ি বিএনপির আন্দোলন ঠেকানোই ক্ষমতাসীনদের প্রধান চ্যালেঞ্জ বিএনপিকে মাঠে ফেরাচ্ছে আওয়ামী লীগ উপজেলা নির্বাচন নিয়ে অদৃশ্য চাপে বিএনপি


২৫ জুন উদ্ধোধন দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণের স্পন্দন ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু'
চরম উৎকন্ঠায় পদ্মা সেতু উদ্ধোধন উৎসব
মাসউদুর রহমান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-০৬-২০২২
চরম উৎকন্ঠায় পদ্মা সেতু উদ্ধোধন উৎসব


ডেটলাইন ২৫ জুন। অপেক্ষা গর্বের পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধনের মহেন্দ্রক্ষণের। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের অন্তত ১৯ জেলার মানুষ এ সেতুর সুুবিধাভুগী হচ্ছেন। যাদের আজন্ম চাওয়া ছিল এ পদ্মা সেতু। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দৃঢ়তায় এ সেতু তৈরি হয়েছে। তিনি ওই দিন দক্ষিণাঞ্চল মানুষের ‘প্রাণের স্পন্দন পদ্মা সেতু’র উদ্ধোধন করবেন। এ নিয়ে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগেরও অনেক পরিকল্পনা-প্লান। পদ্মা পাড়ে, মাদারীপুর- শিবচরের কাঁঠালবাড়ী বর্তমান ফেরি ঘাটের এক প্রান্তে আয়োজন করা হয়েছে বিশাল জনসভা। যে জনসভাতে অন্তত ১০ লাখ লোকের উপস্থিতির পরিকল্পনা আওয়ামী লীগের। দলের শীর্ষ পর্যায় থেকে এ নিয়ে ব্যাপক প্রস্তুতি।

বিশেষ করে ফরিদপুর,মাদারীপুর,বরিশাল,শরীয়তপুরসহ ওই অঞ্চলের মানুষের বিশাল উপস্থিতি ঘটাতে অনেক আয়োজন। তৈরি করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলা হয়েছে গোটা পদ্মা সেতু ও সমাবেশ অঞ্চল। সাঝ সাঝ রব সর্বত্র। প্রস্তুতিটাও একেবারেই শেষ পর্যায়ে। সড়ক ও জনপদ ২৪ জুন সকাল থেকে ২৬ জুন সকাল পর্যন্ত ওই রুটে (বুড়িগঙ্গা,ধলেশ্বরী,আড়িয়াল খাঁ মোট তিনস্থানে) কোনো টোল না নেয়ার ঘোষণা দিয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়। আওয়ামী লীগ মনে করছে, বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের সমাবেশের মত জনতার ঢল নামবে কাঁঠালবাড়ীতেও। মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে ব্যাপক আগ্রহ। কী হতে যাচ্ছে। কী হবে। উদ্বোধনটা কিভাবে হবে। কতক্ষণে পদ্মা সেতুটা পাড়ি দিয়ে একটু শান্ত¦না নেয়া যাবে- এমন অনেক কিছু। 

মানুষের এমন ব্যাপক আগ্রহের মধ্যেও ২৫ জুনকে কেন্দ্র করে আছে উৎকন্ঠা,দুশ্চিন্তাও। গত ১৮ মে শেখ হাসিনার স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে দলীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে গণভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, “খালেদা জিয়া বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে। ’পদ্মা সেতুতে নিয়ে গিয়ে ওখান থেকে (খালেদা জিয়াকে) টুস করে নদীতে ফেলে দেওয়া উচিত। আর যিনি আমাদের একটা এমডি পদের জন্য পদ্মা সেতুর মতো সেতুর টাকা বন্ধ করেছেন, তাকেও আবার পদ্মা নদীতে নিয়ে দুই চুবানি দিয়ে উঠিয়ে নেওয়া উচিত। মরে যাতে না যায়। একটু পদ্মা নদীতে দুইটা চুবানি দিয়ে সেতুতে তুলে দেওয়া উচিত। তাহলে যদি এদের শিক্ষা হয়।’’

সে সময় তিনি আরো বলেছিলেন,‘খালেদা জিয়া বলেছিল ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে।’ কারণ বিভিন্ন স্প্যানগুলো যে বসাচ্ছে, ওটা ছিল তার কাছে জোড়াতালি দেওয়া। তো বলেছিল, ‘জোড়াতালি দিয়ে পদ্মা সেতু বানাচ্ছে, ওখানে চড়া যাবে না, চড়লে ভেঙে পড়বে। ’ তার সঙ্গে তার কিছু দোসররাও। এখন তাদের কী করা উচিত?’’  ওই বক্তব্যের পর নড়েচড়ে বসে বিএনপি। প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়াকে হত্যার হুমকি দিয়েছে এ অভিযোগও করেন দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল। একই সঙ্গে পদ্মা সেতু তৈরির হিসেব নিয়ে চট্টগ্রামের (২৭ মে) এক জনসভায় পদ্মাসেতুর ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায় জানতে চেয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘পদ্মা সেতুতে বাড়তি ৩০ হাজার কোটি টাকা খরচ দেখানো হয়েছে। ১০ হাজার কোটি টাকার সেতু ৪০ হাজার কোটি টাকা। বাকি ৩০ হাজার কোটি টাকা কোথায়? আমরা জানি কোথায় গেছে। এগুলো সব বের হবে।’

এ নিয়ে দুই দলের শীর্ষ পর্যায়ে তোলপাড়। বিশ্ববিদ্যালয় এলাকাতে ছাত্রদল ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ,মামলা মকদ্দমা। পরবর্তিতে সীতাকুন্ডের বিএম কন্টেইনার ডিপোতে অগ্নিকান্ড ঘটনার পর একের পর এক অগ্নিকান্ড। এটাকে ভাল চোখে দেখছিলনা কেউই।

 গত ১৩ জুন সোমবার তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, সীতাকুন্ডের বিএম ডিপো এবং পরবর্তীতে একাধিক ট্রেনে অগ্নিকান্ডের পেছনে নাশকতার বিষয়টি স্পষ্টতর হচ্ছে। ওইদিন সচিবালয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘বিএম ডিপোর অগ্নিকান্ডের ব্যাপারে আমি প্রথম থেকেই বলে আসছিলাম যে, সেখানে নাশকতা ছিলো কি না সেটা খতিয়ে দেখা দরকার। আস্তে আস্তে বিষয়টি স্পষ্ট হচ্ছে। আপনারা জানেন, সিলেটের ট্রেনে আগুন লেগেছে টয়লেট থেকে, তারপর দাঁড়ানো অবস্থায় খুলনাগামী ট্রেনে আগুন লেগেছে। প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে এগুলোর সাথে নাশকতার যোগ আছে। আসলে সারাদেশে যে আনন্দ-উল্লাস, তা ম্লান করার জন্য, দেশে একটি আতঙ্ক তৈরি করার জন্য এগুলো করা হচ্ছে বলে আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি।’ 

‘যারা অগ্নিসন্ত্রাস করেছে, মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করেছে, গুজব রটিয়েছে, বিভিন্ন সময় গুজব রটায় তারাই এই কাজগুলোর সাথে সংশ্লিষ্ট’ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘তদন্ত হচ্ছে, তদন্তের মাধ্যমে সেটি আরো স্পষ্ট হবে। আমি ব্যাক্তিগতভাবে মনে করি এগুলোর সাথে নাশকতার যোগ আছে।’  


প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা/ফাইল ছবি   

এর পরপরই ১৫ জুন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের (পিএমও) শাপলা হলে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের (এসএসএফ) ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ নিয়ে কঠোর সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন। মূলত: প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যের পর এ নিয়ে উত্তেজনার পারদ ক্রমশ উর্ধ্বমুখী হচ্ছে। 

২৫ জুন পদ্মা সেতুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের বিরোধিতাকারীরা যেন কোনো রকম ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড চালাতে না পারে, তা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সশস্ত্র বাহিনীসহ সব বাহিনীকে সজাগ থাকারও নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানতে পেরেছি, এমন একটা ঘটনা ঘটানো হবে, যাতে ২৫ তারিখে আমরা উদ্বোধনী অনুষ্ঠান করতে না পারি। বিরোধিতাকারীরা কী করবে, তা কিন্তু আমরা জানি না।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের মতো এত বড় একটা চ্যালেঞ্জ নিয়ে সেতু নির্মাণের কাজ আমরা সম্পন্ন করেছি। কিন্তু যারা সেতু নির্মাণের বিরোধিতা করেছিল, তাদের একটা উদ্দেশ্য রয়েছে। যার কিছু কিছু তথ্যও আমরা পেয়েছি।’ অনুষ্ঠানে উপস্থিত তিন বাহিনী প্রধান, পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবি এবং আনসার ও ভিডিপির প্রধানদের উদ্দেশ্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে। সব বিষয়ই একটু রহস্যজনক। এ জন্য সবাইকে বলব একটু সতর্ক থাকতে হবে এবং আমাদের গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনার দিকেও সবাইকে নজর দিতে হবে। সেগুলোর নিরাপত্তা দিতে হবে।’

শেখ হাসিনা আরও বলেন, ‘ইতিমধ্যে আপনারা দেখেছেন, রেলে আগুন, লঞ্চে আগুন, ফেরিতে আগুন এমনকি সীতাকুণ্ডে যে আগুনটা সেটা একটা জায়গা থেকে লাগতে পারে, কিন্তু বিক্ষিপ্তভাবে কয়েকটা জায়গায় আগুন লাগে কীভাবে? আর রেলের আগুনের বিষয়ে একটি ভিডিও পাওয়া গিয়েছে, যেখানে দেখা গেছে রেলের চাকার নিকটে আগুন জ্বলছে। সেটা কী করে সম্ভব?’ 

প্রধানমন্ত্রীর এমন নিদের্শনার পর থেকে নিরাপত্তা ব্যাবস্থা বাড়িয়ে দেয়া হয়। পুলিশ বলেছে, তারা ঢাকার বিভিন্ন মেস ও হোটেলেও তল্লাশী চালাবে। এছাড়াও গত কিছুদিন আগে বেতনভাতা বাড়ানোর দাবিতে অন্তত এক সপ্তাহ মিরপুর উত্তরাতে গার্মেন্টস শ্রমিকদের বিক্ষোভসহ অশান্তির একটা প্রচেষ্টা ছিল। ফলে ওই সমস্ত স্পটে এখন নিরাপত্তা জোড়দার করা হয়েছে। বিভিন্ন পয়েন্টে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। 

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের কী নাশকতা হবে বলে প্রধানমন্ত্রী যে কথা বলেছেন যে তার কাছে তথ্যপ্রমাণআছে- সেটা কী ওই বিষয়টা জনসমক্ষে ক্লিয়ার করার আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। প্রধানমন্ত্রীর উক্ত বক্তব্য উল্লেখ করে গত ১৮ জুন এক অনুষ্ঠানে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘এখন তারা (সরকার) নতুন একটা গান শুরু করেছে। সেই গানটা কী? বাংলাদেশে এই যে পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন হবে, সেখানে নাকি একটা বড় দুর্ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। জাতির সামনে বলেন, সেই দুর্ঘটনা কী, কারা করছে- পরিষ্কার করে বলেন।’ তিনি আরো বলেন,‘আমরা দেখছি যে বরাবরই আপনারা এই সমস্ত কথা বলেন।নিজেরা দুর্ঘটনা ঘটান, তারপর এটা বিএনপির ওপরে চাপিয়ে দেন। এটা হচ্ছে আপনাদের চরিত্র, এটা আপনাদের নীতি।’

মির্জা ফখরুল সীতাকুণ্ডে কনটেইনার ডিপোতে বিস্ফোরণের ঘটনার উল্লেখ করে বলেন, ‘কনটেইনার ডিপোতে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা আপনাদের ব্যর্থতার কারণেই। যে ডিপোতে আগুন লেগেছে, সেই ডিপোর মালিক আওয়ামী লীগের নেতা। সেখানে তাঁকে গ্রেপ্তার না করে, তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে যাঁরা আহত হয়েছেন, তাঁদের আসামি করে মামলা দেওয়া হয়েছে। এর অর্থটা হচ্ছে, তারা ওই সব কাজ করবে, অর্থ আয় করবে আর বিএনপির লোকজন যারা কাজ করে, তাদের বিরুদ্ধে মামলা দেবেন। এসব করে কোনো লাভ হবে না। জনগণ আপনাদের প্রকৃত পরিচয় জেনে গেছে।’ 

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের সময় যতই ঘনিয়ে আসছে ততই বাড়ছে উজান থেকে নেমে আসা অস্বাভাবিক ঢল। ইতিমধ্যে সিলেটের প্রায় সব অঞ্চল তলিয়ে গেছে। মানুষ চরম নিরাপত্তাহীনতায়। খাবার নেই। বিশুদ্ধ পানির অভাব। পানি দ্রুত বেড়ে যাওয়ায় সেখানে অনেকেই ঘরবাড়িতে আটকা পরেছেন। বিদ্যুৎ ষ্টেশনগুলোতে পানি ঢুকে অনেক স্থানে বিদ্যুতের খাম্বা নড়বড়ে ও পরে যাওয়ায় বিদ্যুৎই বন্ধ করে দিতে হয়েছে। ফলে অনেক স্থানে মোবাইল চার্জ দেয়ার অভাবে যোগাযোগও বিচ্ছিন্ন। মানুষ অসহায়ের মত দিক-বিদিক ছুটাছুটি করছে। অনেকেরই ঘরে ছিল ধান,গোয়াল ঘরে গরু,ছাগল,হাসমুরগী। এগুলো সম্পূর্ণরূপে নষ্ট হয়ে গেছে। ভেসে গেছে মাছের চাষ প্রকল্প, সহ ফসলাদি। মানুষ এখন শুধু বেঁচে থাকার জন্য আপ্রাণ লড়াই করছে।

এরই মধ্যে সারাদেশে (১৯ জুন) শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা অর্নিদিষ্টকালের জন্য স্থগিত ঘোষণা করা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি দেখে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ার পর পরীক্ষার তারিখ চূড়ান্ত হবে। সিলেটের সঙ্গে বিমান ও রেল যোগাযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সেখানে অবশ্য বানভাসিদের নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিতে সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে। যারা নিরবিচ্ছিন্নভাবে উদ্ধারতৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন। এক মাসের ব্যাবধানে এমন বন্যা ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ করে ফেলেছে সিলেটীদের। আবহাওয়ার পূর্ভাবাস বলছে শুধু সিলেটেই নয়, উত্তরবঙ্গেও উজানের পানি বাড়তে শুরু করেছে।

এতে করে উত্তরাঞ্চলসহ দেশের মধ্যাঞ্চলেও পানিতে তলিয়ে যাবার শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সব মিলিয়ে উত্তরাঞ্চলে পানি বৃদ্ধি পাওয়ার অর্থ ফসলী জমি নষ্ট হয়ে যাওয়া। এতে করে শাকশব্জির সঙ্কটসহ নানা জটিলতা দেখা দেবে। সরকার বিরোধীরা কঠোর সমালোচনা করে বলছেন, সরকার বন্যা পরিস্থিতি আড়াল করে পদ্মা উদ্ধোধন নিয়েই মহা ব্যাস্ত হয়ে পড়েছেন। পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করায় ইতিমধ্যে গত ২১ জুন মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি নিজ চোখে দেখতে ছুটে গেছেন। সেখানে তিনি হেলিকাপ্টার যোগে বিভিন্ন অঞ্চল ঘুরে দেখার পর তিনি সিলেটের দুই মাঝার জেয়ারতও করেন। 

এদিকে পদ্মা সেতুর উদ্ধোধনের ঠিক আগ মুহূর্তে গত (১৭ জুন) ঢাকাস্থ মার্কিন রাষ্ট্রদুতের নিজস্ব ইউটিউব চ্যানেল ‘এমটক’ এ বাংলাদেশ প্রসঙ্গে নানা প্রসঙ্গ নিয়ে খোলামেলা কথা বলেন। সেখানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বিভিন্ন সেক্টরে যে সহায়তা দিয়ে যাচ্ছেন সেগুলোর একটা ফিরিস্তিও তুলে ধরেছেন। এক পর্যায়ে তিনি বলেন, তাঁর মনে হয়, ‘লোকজন র‌্যাবের নিষেধাজ্ঞার ওপর খুব বেশি মাত্রায় মনোযোগ দিচ্ছেন। তাঁরা চলমান অন্যান্য সহযোগিতার বিষয়গুলো এড়িয়ে যাচ্ছেন। আইন প্রয়োগ, সন্ত্রাসবাদ দমন ও সামুদ্রিক নিরাপত্তার ক্ষেত্রে দুই দেশের পারস্পরিক সহযোগিতা রয়েছে। এসব বিষয়ে গভীর ও দীর্ঘস্থায়ী সহযোগিতা রয়েছে।’ মার্কিন রাষ্ট্রদূত আরো বলেন, ‘আমরা বিচার বিভাগ, আইনজীবী ও পুলিশের জন্য প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে থাকি।’ 

উল্লেখ্য, কোভিড-১৯ এ যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের দুঃসময়ে বিশ্বের অন্যদেশের তুলনায় সর্ববৃহৎ টিকা পেয়েছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়েবসাইটে উল্লেখ রয়েছে যে, ‘বাংলাদেশ বিশ্বের সব দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের অনুদানকৃত কোভিড-১৯’র টিকার সর্ববৃহৎ গ্রহীতা হয়ে উঠেছে এবং এখন পর্যন্ত  (ফেব্রয়ারি ’২২) মোট ৬১ মিলিয়ন (৬ কোটি ১০ লক্ষ) ডোজ টিকা প্রদান করা হয়েছে।’ 

অপরদিকে পদ্মা সেতু ও শেখ হাসিনার ভুয়াসী প্রশংসা করেছেন ঢাকায় নিযুক্ত চীনা রাষ্ট্রদূত লি জিমিং । ১৯ জুন এক অনুষ্ঠানে সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘কোনো সাধারণ নেতার পক্ষে এ কাজ করা সম্ভব হতো না। রাষ্ট্রদূত বলেন, বিদেশি কিছু উন্নয়ন অংশীদার বিশ্বাসই করতে পারেনি যে বাংলাদেশ সরকার নিজস্ব অর্থায়নে এ ধরনের একটি বৃহৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে পারবে।

বৈদেশিক তহবিল বন্ধ সত্ত্বেও দেশীয় অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে তিনি (প্রধানমন্ত্রী) অসীম সাহস দেখিয়েছেন। সত্যিই আমার সন্দেহ হয়, এ ধরনের কঠিন সিদ্ধান্ত অন্যদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হতো কি না।’লি জিমিং বলেন,‘সেতু সম্পর্কে ভাবতে গেলেই তিনটি শব্দ আমার মনে ভেসে ওঠে। তা হলো সাহস, সংকল্প এবং সমৃদ্ধি। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি স্বপ্ন থেকে সেতুটি আজ দৃঢ় বাস্তবে রূপ নিয়েছে এবং এখন থেকে কেউ সন্দেহ করতে পারবে না যে বাংলাদেশ পারে না। আর পদ্মা সেতুকে ঘিরে বাংলাদেশের ওপর আস্থা আরও বেড়েছে চীনের।

রাষ্ট্রদূত বলেন, এটি দক্ষিণ এশিয়ার যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবদান রাখবে এবং এটি চীন ও বাংলাদেশের ভ্রাতৃত্বের  উজ্জ্বল বন্ধন হিসেবে কাজ করবে।’ পদ্মা সেতু নির্মাণে চীনা কোম্পানির সংশ্লিষ্টতা থাকায় গর্ববোধ করেন রাষ্ট্রদূত লি। তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত সম্ভবত এটাই সবচেয়ে বড় সেতু যা চীনা কোম্পানিগুলো এ যাবত চীনের বাইরে তৈরি করেছে। সুতরাং আমি মনে করি, চীনের পক্ষেও এ চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করা একটি সাহসী পদক্ষেপ।’  

এদিকে বাংলাদেশ ও ভারতের বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে বার্তা সংস্থা এএফপি জানিয়েছে, এ দু’দেশের বন্যায় অন্তত ৪১ জন লোক মারা গেছেন। আহতের সংখ্যা অনেক। এর মধ্যে অধিকাংশ অবশ্য ভারতেরই মেঘালয় ও ওইসকল অঞ্চলের। তবে গত ২১ জুন পর্যন্ত সিলেট বিভাগে সর্বমোট ২২ জনের মৃত্যুর খবর দিয়েছে সেখানকার স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। সব মিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতি নিয়ে প্রায় গোটা দেশেই একটা ভীতিকর অবস্থা বিরাজ করছে। বন্যা কবলিত ওই অঞ্চলের শাকশব্জিসহ অনেক কিছুই দেশের একটা বড় অংশ চাহিদা মেটাতো। বন্যায় সব ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় তার প্রভাব সারাদেশের মানুষের উপর পরবে এটাই স্বাভাবিক। সব মিলিয়ে একটা অস্বস্তিকর পরিস্থিতি বিরাজ করছে এ মুহূর্তে সারাদেশেই। আর এ সময়ের মধ্যেই উদ্ধোধন দক্ষিণাঞ্চলের প্রাণের স্পন্দন ‘স্বপ্নের পদ্মা সেতু।’


শেয়ার করুন