০৫ ডিসেম্বর ২০২৫, শুক্রবার, ০১:৩১:৩২ অপরাহ্ন
শিরোনাম :
স্ন্যাপ সুবিধা ফিরলেও কঠোর নিয়মে বিপাকে ৪০ মিলিয়ন মানুষ মসজিদে ধারাবাহিক হামলা, উদ্বেগে মুসলিম সম্প্রদায় ফেব্রুয়ারি ১ থেকে রিয়েল আইডি ছাড়া বিমানযাত্রায় লাগবে ৪৫ ডলারের ফি নিউইয়র্কে শীতকালে ঘর গরম রাখার জন্য এনার্জি সহায়তার আবেদন শুরু দারিদ্র্যপীড়িত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন স্থায়ীভাবে বন্ধের আহ্বান ট্রাম্পের ১৯ দেশের গ্রিনকার্ডধারীদের পুনর্মূল্যায়ন শুরু তারেকের ‘ফেরা ইস্যু’ ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে চেষ্টা বিডিআর বিদ্রোহের নৃশংস হত্যাকাণ্ডের কমিশন রিপোর্টে তোলপাড় রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ মর্যাদায় খালেদা জিয়া ১১ মাসে ২৮ জন বাংলাদেশী ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী কর্তৃক নিহত হয়েছে


৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ চৌধুরীকে প্রবাসী ফোরামের সংবর্ধনা
এসএম সোলায়মান
  • আপডেট করা হয়েছে : ২২-১০-২০২৫
৬ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রতিষ্ঠাতা মোশাররফ চৌধুরীকে প্রবাসী ফোরামের সংবর্ধনা মোশাররফ হোসেন খানকে ফুলেল অভিনন্দন


মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। তিন যুগেরও বেশি সময় নিউইয়র্কে ট্যাক্সি চালান কিংবা স্ট্রিট ফল বিক্রি করেন। থাকেন জ্যাকসন হাইটসের একটি রুম শেয়ার বাসায়। যুক্তরাষ্ট্রে নেই নিজের কোনো বাড়ি কিংবা গাড়ি। ভাড়ায় ট্যাক্সি চালিয়ে যা পান। ডাল-ভাত খেয়ে আয়ের সবটুকু দিয়েই প্রতিষ্ঠা করেছেন কুমিল্লার ব্রাহ্মণপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয় কলেজ, আবদুল মতিন খসরু মহিলা কলেজ, আবদুর রাজ্জাক হাইস্কুলসহ ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। প্রতি শিক্ষাবর্ষে ৬ হাজারের বেশি শিক্ষার্থী পড়ালেখা করছে এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। প্রচারবিমুখ এবং শিক্ষা প্রসারে মহৎ প্রাণ মোশাররফ খান চৌধুরীকে এবার সংবর্ধনা দিলেন প্রবাসী বাংলাদেশি ফোরাম ইউএসএ।

গত ১৮ অক্টোবর নিউইয়র্কের জ্যাকসন হাইটস জুইস সেন্টারে আয়োজিত সর্বদলীয় সংবর্ধনায় সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ সোসাইটির সাবেক সেক্রেটারি ও মূলধারার রাজনীতিবিদ ফখরুল আলম, কমিউনিটি বোর্ড মেম্বার আহসান হাবিব ও সামছুদ্দিন আহমেদ শামীমের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন সম্বর্ধিত অতিথি মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী। প্রধান অতিথি ছিলেন প্রবীন সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ। বিশেষ অতিখি ছিলেন আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও লেখক হাসান ফেরদৌস, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট কাজি আশরাফ হোসেন নয়ন, হাজী আমির হোসেন, বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতা সরকার ইসলাম, বাংলাদেশ সোসাইটির ট্রাস্টি বোর্ড সদস্য কাজী আজহারুল হক মিলন, রাজনীতিবিদ আব্দুস সবুর।

অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সিনিয়র সহ-সভাপতি ইউনুস সরকার, প্রফেসর মনির হোসেন খান, কমিউনিটি অ্যাকটিভিস্ট আবু নাসের, ইমরান সরকার, সাপ্তাহিক প্রবাস সম্পাদক মোহাম্মদ সাঈদ, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী বিলাল চৌধুরী, জিকরুল আমিন জুয়েল, সাংবাদিক শেখ সিরাজ, হাকিকুল ইসলাম খোকন, মূলধারার নেতা জয়নাল আবেদীন, সুব্রত বিশ্বাস, খোরশেদ চৌধুরী, সংগঠনের উপদেষ্টা শেখ শাহজাহান, ইঞ্জিনিয়ার আলতাফ হোসেন, রফিকুল ইসলাম ফিরোজ, কাজী শাখাওয়াত হোসেন আজম, রাব্বি সাঈদ, মোশারফ খানের ছোট ভাই হাবিব খান চৌধুরী, রানো ফেরদৌস, নতুন প্রজন্মের সামান্তা খানসহ নিউইয়র্কে বাংলাদেশি কমিউনিটি নেতৃবৃন্দ। অনুষ্ঠানের শুরুতেই মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরীর জীবনী ও শিক্ষাক্ষেত্রে নিয়ে প্রবন্ধ পাঠ করেন তিতুমীর কলেজের প্রফেসর তাহমীনা মেহজাবিন।

যুক্তরাষ্ট্রে প্রবাসী বাংলাদেশিদের দেওয়া সংবর্ধনায় আবেগাপ্লুত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, আমি যা করেছি তার জন্য কৃতজ্ঞ আমার পরিবারের কাছে। যাদের থেকে আমি দূর প্রবাসে একাকী। কৃতজ্ঞতা আজকের সভাপতি ফখরুল আলমসহ নিউইয়র্কের প্রবাসি ভাই বোন এবং সব সাংবাদিকের কাছে। যাদের সার্বিক সহযোগিতা এতগুলো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করতে পেরেছি। অনেক অনেক কৃতজ্ঞতা ও গভীর শ্রদ্ধা বুড়িচং ব্রাহ্মণপাড়ার প্রয়াত দুই জনপ্রিয় নেতা সাবেক সাংসদ আবদুল মতিন খসরু ও অধ্যাপক ইউনুস সরকারের প্রতি। দলমতের ঊর্ধ্বে থেকে উনারা আমার প্রতিষ্ঠানগুলোর পাশে দছাড়িয়েছেন। তিনি বলেন, দেশ ও সমাজের জন্য ভালো কিছু করতে সবার আগে লাগে নিজের ইচ্ছে শক্তি। স্থানীয় জনগনের মতামত নিয়ে শুরু করলে মহান আল্লাহই সাহায্য করবেন। সংবর্ধনা সভায় সকলের উদ্দেশ্যে মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো করতে আমি কারো থেকে আর্থিক কোনো সাহায্য নিইনি। মাঝেমধ্যে ধারদেনা করেছি। কিন্তু রোজগার করে শোধ করেছি। কিন্তু অর্থের চাইতে যে সহায়তা পেয়েছি তাহলো সবার উৎসাহ আমাকে এ কাজে এগিয়ে যেতে সহায়তা করেছে।

মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, গত তিন যুগেরও বেশি সময় আমি আমেরিকায় একাকি বাস করছি। অনেকের প্রশ্ন- স্বপ্নের প্রতিষ্ঠানগুলো করতেই জীবনের এতোটা সময় পরিবার স্বজন থেকে একাকী থাকা।

তিনি বলেন, নিউইয়র্কের রাস্তায় কখনো ফল বিক্রি করেছি। কখনো খাবার বিক্রি করেছি। ট্যাক্সি চালিয়েছি। এতে আমার কোন অসম্মান হয়নি। সৎভাবে জীবন যাপনের জন্য যা করার সবই করেছি। ডাল-ভর্তাভাত খেয়ে আয়ের বাকিটা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়সহ ৬টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান করেছি। একটি ডায়বেটিস হাসপাতালের জন্য দেড় কোটি টাকার জায়গা দান করেছি। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজনীয় আড়াইশ বছরের পুরোনো একটি বটগাছকে রক্ষা করতে দান করেছি। দেশের যেকোন স্থানে অসহায় কাউকে সহায়তার চেষ্টা করেছি। তিনি বলেন, আর্থিক অভাবে আমি সর্বোচ্চ শিক্ষিত হতে পারিনি। কিন্তু আমার শ্রমে গড়া কুমিল্লা ব্রাহ্মণপাড়া মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বিশ্ববিদ্যালয়ে ১০টি সাবজেক্ট অনার্স ও মাস্টার্স পাস করে দেশ-বিদেশে সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বলেন, আমার মরহুম শিক্ষক বাবার আদর্শকে লালন করতেই আমি শিক্ষাবিস্তারে কাজ করছি।

নিউইয়র্কে সর্বদলীয় জনাকীর্ণ সংবর্ধনায় আবেগাপ্লুত মোশাররফ হোসেন খান চৌধুরী বলেন, আমি বেঁচে না থাকি আপরারা এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্ম এই শিক্ষ প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে নিয়ে যাবে ইনশাআল্লাহ।

প্রধান অতিথি সৈয়দ মোহাম্মদ উল্যাহ বলেন, মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী আমাদের জন্য উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। তার পথ অনুসরণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কমিউনিটির সবাইকে নিজ নিজ ক্ষেত্রে অবদান রাখতে হবে।

কলামিস্ট এবং জাতিসংঘে কমরত হাসান ফেরদৌস বলেন, মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী হচ্ছে সেই প্রদীপের মতন, নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন সমাজের সেবায়।

অনুষ্ঠানে সভাপতি ও সংগঠনের আহ্বায়ক ফখরুল বলেন, একটা মোমবাতি থেকে হাজার মোমবাতি জ্বালানো যায় কিছু তাতে তার আলো কমে না, মোশারফ হোসেন খান চৌধুরী আমাদের সমাজের তেমনই আলোর প্রতীক, যাকে অনুসরণ করে আমরা সমাজের উন্নয়ন করতে পারি। আরেকটি কথা বলা প্রয়োজন আর তা হলো আজকাল অর্থের কাছেই সব কিছু বিক্রি হয়ে যাচ্ছে। যেমন অনুষ্ঠান এবং অনুষ্ঠানের চেয়ার। গুণীজনের কদর যেন কমে যাচ্ছে।

কমিউনিটি নেতা সরকার ইসলাম বলেন, একুশে পদক দেওয়ার জন্য কুমিল্লা থেকে বারবার আবেদন জানানো হয়েছে। আমি আজকের এই গণসংবর্ধনা থেকে একুশে পদকের দাবি জানাচ্ছি।

অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত ছিলেন বৃহত্তর কুমিল্লা সমিতির সাধারণ সম্পাদক এ বি সিদ্দিক পাটোয়ারী, নাবেক সাধারণ সম্পাদক মিয়া মোহাম্মদ দুলাল, সামছুদ্দীন আহমেদ শামিম, গাজী গোলাম আজম বাদল, দানবির ইসলাম সরকার, নাদির সরকার, ব্রাহ্মণপাড়া বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজী আমির হোসেন, শাহআলম হেডমাস্টার, আবুল হাসেম, সাবেক চেয়ারম্যান ও তাজুল ইসলাম, হালিম মুন্সী, আব্দুল লতিফ, হাবিব খান চৌধুরী, উপাকুন্ড, ফারহানা রুমা, এমরান সরকার, কেনু খান, সামান্তা সবুর, অ্যাডভোকেট রফিকুল ইসলাম ফিরোজ, শামসুন্নাহার মনু, ফেরদৌস খান চৌধুরী, মোহাম্মদ বায়েজিদ ভূঁইয়া প্রমুখ।

শেয়ার করুন